Believe yourself, Colorful words on blackboard.

নিজেকে আবিস্কার করুনঃ আপনার মত আর কেউ নেই

Believe yourself, Colorful words on blackboard.

“ছোট বয়সে আমি অত্যন্ত স্পর্শ কাতর আর লাজুক ছিলাম। বয়সের তুলনায় আমার ওজন বড্ড বেশি ছিলো আর আমার ফোলা ফোলা গাল দুটোর জন্য আমাকে আরো মোটা দেখাতো। আমার মা ছিলেন একেবারে সেকেলে ধরনের, তার ধারণা ছিল সুন্দর পোশাক বানানো হলো  বোকামি। তিনি সবসময় বলতেনঃ ঢিলেঢালা পোশাক টেকে বেশি, আটো পোশাক ছিঁড়ে তাড়াতাড়ি। সেই ভাবেই তিনি আমাকে পোশাক পরাতেন। আমি কোনদিন কোন অনুষ্ঠানে যোগ দিতাম না, কোন আনন্দও করতাম না। তাছাড়া যখন স্কুলে যেতাম অন্য সব ছেলেমেয়েদের সংগে কোন ব্যাপারে যোগ দিতাম না। এমন কি খেলাধুলোতেও না। আমি অস্বাভাবিক রকম লাজুক ছিলাম। আমার খালি মনে হতো আমি বাকি সবাইয়ের চেয়ে আলাদা আর আমাকে কেউই চায় না।

আমি যখন বড় হলাম তখন আমার চেয়ে বেশ কয়েক বছরের বড় একজনকে বিয়ে করলাম। কিন্তু আমার কোন রকম পরিবর্তন হলো না। আমার শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়-স্বজনেরা সবাই বেশ ফিটফাট আর আত্মবিশ্বাসে ভরপুর ছিলো। তাদের মনোগত ইচ্ছে ছিলো আমিও তাদের মত হই, কিন্তু কিছুতেই তা আর হলো না। আমি আপ্রাণ চেষ্টায় তাদের মত হতে চাইলেও পারলাম না। তারা যতোই আমাকে খোলসের মধ্য থেকে বাইরে টেনে আনার চেষ্টা চালালো আমি ততই যেন আরো বেশি করে খোলসের মধ্যে থেকে বাইরে টেনে আনার চেষ্টা চালালো আমি ততই যেন আরো বেশি করে খোলসের মধ্যে ঢুকে চলতেও শুরু করলাম আমি। এমনই অবস্থাটা খারাপ হয়ে দাঁড়ালো যে দরজার ঘন্টা বাজার শব্দ শুনতে পেয়েও আমি ভয়ে সিটিয়ে থাকতাম! আমি বুঝতে পারতাম আর আমার খালি ভয় হতো আমার স্বামী সব একদিন টের পেয়ে যাবেন। তাই যখনই আমরা বাইরে বেরোতাম, আমি হাসিখুশি থাকতে চেষ্টা করতাম এবং  তাতে ভয়ে বেশ একটু বাড়াবাড়িই করে ফেলতাম। আমি বুঝতে পারতাম এই বাড়াবাড়িটা, এবং এরপর কয়েকদিন বেশ মনমরা অবস্থায় কষ্টে কাটাতাম। শেষ পর্যন্ত আমি এমনই অসুখী হয়ে উঠলাম যে মনে হতো আর আমার বেঁচে থাকারই বোধহয় কোন যুক্তি নেই। আমি আত্মহত্যা করার কথা ভাবতে শুরু করলাম।”

 

কথাগুলো বলেছিলেন নর্থ ক্যারোলিনার মিসেস আলরেড। এই অসুখী মহিলার জীবনধারা কেমন করে বদলে গেলো জানেন? আচমকা বলা একটা মন্তব্যের মধ্য দিয়ে।

আচমকা বলা একটা মন্তব্যই আমার সমস্ত জীবনটাই বদলে দিলো।  আমার শাশুড়ি একদিন  বলেছিলেন কিভাবে তিনি তার ছেলেমেয়েদের মানুষ করে তোলেন। তিনি বললেন- “যাই ঘটুক  না কেন আমি সব সময়েই তাদের নিজের মত চলতে দিতাম”… এই মন্তব্যটাই সব কিছু  ওলোট পালোট করে দিলো। একটা বিদ্যুতের পরশেই যেন আমি বুঝতে পারলাম, যে অবস্থার সঙ্গে আমার খাপ খায় না আমি তার মধ্যেই কেবল আমাকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে চলেছি।

রাতারাতিই আমি পালটে গেলাম। আমি নিজেকে ফিরে পেয়ে নিজের মতই হতে শুরু করলাম এবং কি ছিলাম সেটা জানতে চেষ্টা করতে লাগলাম। আমি, আমার দোষ-গুণ সম্পর্কে কি আছে বারবার সেটা জানার চেষ্টা করলাম। আমি রং আর পোশাকের কায়দা-কানুন পর্যালোচনা করে আমাকে যা মানায় সেই পোশাক পরতে শুরুও করে দিলাম। এরপর  বন্ধুত্ব লাভের জন্য হাত বাড়িয়ে  দিলাম। একটা প্রতিষ্ঠানে আমি যোগদানও করলাম। সেখানে আমি ভয়ে সিঁটিয়ে গেলাম, যখন দেখলাম তারা আমাকে একটা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার ব্যবস্থা করলো। কিন্তু প্রতিবার কথা বলার পর থেকেই একটু একটু করে আমার সাহস বেড়ে গেলো। এসবে বেশ সময় লেগেছে সেটা ঠিক- তবে আজ আমি যে রকম সুখী তা কোন কালে সম্ভবপর বলে স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। আমার নিজের ছেলেমেয়েদের মানুষ করে তোলার কাজে আমি বিশেষভাবেই তাদের এটাই শিখিয়েছি। যে তিক্ত অভিজ্ঞতা আমার জীবনে ভোগ করতে হয়েছে, আর আমি যে শিক্ষাটি লাভ করেছি তা হলোঃ যাই ঘটুক না কেন সব সময় নিজের মত হই

 

আমাদের প্রায় সবার মধ্যে এই একটা বিষয় পরিলক্ষিত হয় আর সেটা হল আমরা নিজেকে খুব ছোট ভাবি। আমরা মনে করি “আমি যদি আমার বন্ধুর মত হতে পারতাম ” … “আমাকে দিয়ে কিছু হবে না, আমার তো তেমন কিছুই নেই” …. এরকম ভাবনা গুলো আমরা প্রতিনিয়ত ভাবি আর একটু একটু করে নিজেকে হারিয়ে ফেলি।

অথচ আমরা কেউ নিজেকে আবিস্কার করি না।  আমরা কখনো ভাবি না- যাই ঘটুক না কেন সব সময় নিজের মত হব। কিন্তু এই ধারনাটাই আমাদের জীবনকে মুহূর্তের  মধ্যে বদলে দিতে পারে।  আমরা যতক্ষন নিজেকে সম্মান না করতে পারব ততক্ষন অন্য কাউকে সম্মান করতে পারব না।

ডেল কার্নেগী সুন্দর ভাবে লিখে

এই পৃথিবীতে আপনারও কিছু নতুনত্ব আছে। আজ পর্যন্ত, সময়ের আদিকাল থেকে ঠিক  যআপনার মত কেউ জন্মায়নি, আর আগামী হাজার হাজার বছরেও ঠিক আপনার মতই আর কখনই জন্মাবেনা।

একবার অক্সফোর্ড এর ইংরেজী সাহিত্যের অধ্যাপক স্যার ওয়াল্টার বলেছিলেনঃ শেকসপীয়ারের মত কোন বই আমি লিখতে পারি না তবে আমি নিজের যোগ্য বই লিখতে পারি

একবার সোকোনি- ভ্যাকুয়াম অয়েল কোম্পানির চাকুরি সংক্রান্ত নিয়োগ বিষয়ক ডাইরেক্টর পল বয়েন্টনকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, চাকরির আবেদন করার সময় মানুষ সবচেয়ে বড় ভুল কি করে? তার একথা জানা আছে অবশ্যই কারণ জীবনে তিনি ষাট হাজারেরও বেশি আবেদনকারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এছাড়াও তিনি আবার চাকরি পাওয়ার টি উপায়  নামে একখানা বইও রচনা করেছেন। তিনি জবাবে বলেছিলেন: “চাকরির আবেদন করার  সময় মানুষ সবচেয়ে বড় যে ভুল করে তা হলো তারা আত্মবিস্মৃত হয়ে পড়ে। নিজেদের প্রকৃত তথ্য গোপন রেখে তারা মোটেই খোলাখুলি সব কথা খোলাখুলি সব কথা বলতে চায় না, বরং এটা না করে তারা এমন সব উত্তর দেয় যা তারা মনে করে আপনি এতে খুব খুশী হবেন। তবে এতে কাজ হয় না। কারণ কেউই গোপনীয়তাপ্রিয় মানুষকে চায় না। যেহেতু কোন মানুষই জাল মুদ্রা চায় না।

 

এই ব্যাপারটা একজন গাড়ির কন্ডাক্টারের মেয়েকে বেশ কষ্ট করেই শিখতে হয়েছিলো। তার নাম ক্যাস ডেলি। সে একজন গায়িকা হতে চেয়েছিলো, কিন্তু ওর দুর্ভাগ্যের কারণ হয়ে উঠেছিলো ওর মুখখানা। ওর মুখ বেশ বড় আর দাঁতগুলো সামনের দিকে বেরোনো অবস্থায় থাকতো। সে যখন প্রথম জনসাধারণের সামনে গানে অংশ নেয় সে বারবার গান গাওয়ার ফাঁকে উপরের ঠোট দিয়ে দাঁত ঢাকার চেষ্টা করছিল। সে অবশ্য আপ্রাণ চেষ্টায় নিজেকে সুন্দরী প্রমাণ করতে চাইছিলো। এর ফল কি হলো? সে নিজেকে হাস্যকর করে তুললো। ব্যর্থতার দিকেই সে এগিয়ে চলছিলো।

যায় হোক, ওই নাইট ক্লাবে একজন ছিলেন, তিনি মেয়েটিকে গান গাইতে দেখে বুঝেছিলেন ওর প্রতিভা আছে। “এই যে শোনো” ভদ্রলোক সোজাসুজি বলে ফেললেন, “আমি তোমাকে  গান গাইতে দেখেছিলাম আর আমি জানি তুমি কি লুকোবার চেষ্টা করছো। তুমি তোমার দাঁতের জন্য লজ্জা পাচ্ছো। মেয়েটি বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেলো, তবুও ভদ্রলোক বলে চললেন, এতে হয়েছে কি? এরকম  দাঁত থাকা কি অপরাধ? এটা লুকাবার চেষ্টা করো না! মুখ খুলেই গান গাইবার চেষ্টা করো তাতে শ্রোতারা বুঝতে পারবে তুমি লজ্জিত নও। তাছাড়া ভদ্রলোক বেশ দূরদৃষ্টি নিয়ে বললেন, যে দাঁত তুমি লুকানোর চেষ্টা করছো তাই হয়তো তোমাকে একদিন ঐশ্বর্য এনে দেবে!

মেয়েটি ভদ্রলোকের উপদেশে সত্যিই দাঁতের কথা ভুলে গেলো। ওই সময় থেকেই মেয়েটি শুধু ওর শ্রোতাদের কথাই ভাবতে লাগলো। সে মুখ খুলে এমন দরাজস্বরে আর আনন্দে গাইতে শুরু করলো যে অল্পদিনের মধ্যেই সে বেতার আর চলচ্চিত্র শিল্পী হয়ে উঠলো। পরে অন্যান্য কমেডিয়ানরা তাকেই নকল করা চেষ্টা করেছে।

আমরা অনেক সময় ভাবি- যদি ওর মতো হতে পারতাম! কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এসব কথা ভেবে আর এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করা উচিত নয়। পৃথিবীতে আপনারও কিছু নতুনত্ব আছে। আজ পর্যন্ত, সময়ের আদিকাল থেকে ঠিক আপনার মতো কেউ জন্মায়নি, আর আগামী হাজার হাজার বছরেও ঠিক আপনার মতই আর কেউ কখনো জন্মগ্রহণ করবে না। আধুনিক বিজ্ঞান থেকে জানা যায় আপনি হলেন আপনার বাবা আর মায়ের প্রত্যেকের দেওয়া চব্বিশটি করে ক্রোমোজোম থেকে জন্ম নেওয়া একজন। এই চব্বিশটি আর চব্বিশটি অর্থাৎ আটচল্লিশটি ক্রোমোজোমই জানিয়ে দিচ্ছেআপনি যা তাই!

চার্লি চ্যাপলিন যখন প্রথম ছবি বানাতে শুরু করেন, ছবির পরিচালক তাকে সে যুগের একজন বিখ্যাত জার্মান হাস্যরসিক নকল করার কথা বলেন। নিজের মত অভিনয় না করা পর্যন্ত চ্যাপলিন প্রায় দাঁড়াতেই পারেননি। বব হোপেরও একই রকম অভিজ্ঞতা হয়- তিনি বহু বছরনাচগানের অভিনয় করেও কোথাও পৌছাতে পারেননি – শেষ পর্যন্ত সব ঝেড়ে ফেলে নিজের মত হয়ে ওঠার পরেই তার খ্যাতি  আসে।

কবি ডগলাস তার কবিতায় বলেছেন-

“তুমি যদি পাহাড়ের বুকে দেবদারু না হতে পারো

তবে হয়ে উঠো উপত্যকায় কোন ঝোপ।

তুমি ঝোপও যদি না হতে পারো,

তবে হয়ে উঠো এক মুঠো ঘাস।

যদি দলপতি না হতে পারো

হয়ে উঠো কিছু সেনা

যদি রাজপথ না হতে পারো

হতে চেও কোন সরু পথ।”

আসলে মূলকথাটি হলো আমাদের সকলেরই নিজের মত কিছু করার রয়েছে সেটাকেই কাজে লাগানো চাই।

তাই নিজেদের আবিষ্কার করে আসুন নিজেদের মতই হয়ে উঠি

 

মোঃ দেলোয়ার জাহান সোহাগ

প্রতিষ্ঠাতা, চুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাব &

কমিউনিকেশন ম্যানেজার, ইয়ুথ কার্নিভাল

তথ্য সূত্রঃ ডেল কার্নেগী শ্রেষ্ঠ রচনা সমগ্র