ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে গেছেন সেটা পুরনো খবর। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো যে আর স্পেনে থাকছেন না অনেক দিন আগে থেকেই সেই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে সেটা বাস্তবায়ন হলো মাত্র। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ভালো সময় কাটিয়েছেন সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে। দলীয় শিরোপা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত শিরোপা, অনেক কিছু জিতেছেন স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে। বছর দুয়েক আগে থেকেই গুঞ্জন উঠে পর্তুগিজ তারকা আবারো তার পুরনো ক্লাব ম্যানইউতে ফিরে যাবেন। কিন্তু সেই সব গুঞ্জন বার বার ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো; Source: edigitalagency.com.au

তবে রাশিয়া বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে পর্তুগাল বাদ পড়ার জোর গুঞ্জন উঠে রিয়ালে মাদ্রিদ ছেড়ে যাচ্ছেন সিআর সেভেন। তবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে নয়, তিনি যাচ্ছেন তুরিনের ওল্ড লেডি জুভেন্টাসে। এরপরও স্পেনের অনেক পত্রিকা খবর প্রকাশ করে যে রিয়ালের সাথে নতুন চুক্তি করছেন রোনালদো। কিন্তু ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো তার ফেসবুক পেজে এক পোস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত করেন রিয়ালের সাথে নতুন চুক্তির সব খবর মিথ্যা। তখনই নিশ্চিত হয়ে যায় মাদ্রিদে আর থাকছেন না পাঁচ বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। কিন্তু কেন রিয়ালের সাথে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক চুকে ফেললেন রোনালদো? ফুটবল বিশেষজ্ঞরা রোনালদোর রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়ার বেশ কিছু কারণ খুঁজে বের করেছেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক যে কারণে রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়লেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।

বেতন বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি না রাখা

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সাথে লিওনেল মেসির সবকিছুতেই প্রতিযোগিতা প্রায় সমানে সমান। কিন্তু ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো বেতনের দিক থেকে লিওনেল মেসি এবং নেইমারের চেয়ে বেশ পিছিয়ে ছিলেন। নেইমার সারা বছরে পিএসজি থেকে বেতন পান ৩৬ মিলিয়ন ইউরো এবং লিওনেল মেসি পান ৪৬ মিলিয়ন ইউরো। কিন্তু ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর বেতন ছিলো মাত্র ২৫ মিলিয়ন ইউরো, যা মেসি এবং নেইমারের চেয়ে অনেক কম ।

রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের সাথে রোনালদো; Source: mirror.co.uk

তাই রিয়ালের কাছে তার দাবি ছিলো মেসির সমান না হোক, অন্তত কাছাকাছি বেতন যেন তাকে দেওয়া হয়। রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে কথা দিয়েছিলেন তিনি ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের পর নতুন চুক্তি করে তার বেতন বৃদ্ধি করা হবে। কিন্তু রিয়ালকে চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা এনে দেওয়ার পর টালবাহানা শুরু করেন পেরেজ।

কারণ ২০১৭-১৮ মৌসুমের শুরুতে রোনালদোর ফর্ম কিছুটা খারাপ হয়ে যায়। এ কারণে পেরেজ তার বেতন বৃদ্ধি করতে আগ্রহী ছিলেন না। এই বিষয়টি ক্রমেই রোনালদোর আত্মমর্যাদায় আঘাত করতে থাকে। তিনি সান্তিয়াগো বার্নাব্যূ ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়েন। ফলে তিনি রিয়াল ছাড়ার চিন্তাভাবনা করেন এবং শেষ পর্যন্ত তিনি ১০০ মিলিয়ন ইউরোতে রিয়াল থেকে জুভেন্টাসে যোগ দিয়েছেন। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়ার সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে এটি বিবেচনা করা হচ্ছে। জুভেন্টাসে তিনি বেতন পাবেন বছরে ৩০ মিলিয়ন ইউরো।

রোনালদোর উত্তরসূরীর দিকে রিয়ালের নজর দেওয়া

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো দলে থাকা অবস্থায় তার জায়গায় অন্য খেলোয়াড়দের কথা ভাবতে শুরু করে রিয়াল মাদ্রিদ। বিশেষ করে রিয়াল মাদ্রিদ নজর দেয় পিএসজি’র ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমারের দিকে। স্প্যানিশ ক্লাবটি এর আগেও একবার নেইমারকে দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু সফল হতে পারেনি। আবারও তারা রোনালদোর রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে নেইমারকে দলে ভেড়াতে চাচ্ছে। রিয়াল মাদ্রিদ চেয়েছিলো ২০১৮-১৯ মৌসুম শেষ হওয়ার তারা নেইমারের সাথে চুক্তি করবে।

২০১৬ সালে ইউরো জেতেন রোনালদো; Source: UEFA official

সে জন্য তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে প্রস্তুত। সেই সাথে নেইমারকে বিশাল অঙ্কের বেতন দিতেও রাজি রিয়াল। বিষয়টি ভালো লাগেনি রোনালদোর। গত ৫ বছরে রিয়ালকে ৪টি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা এনে দিয়েছেন রোনালদো। অথচ তার বেতন বৃদ্ধির কথা না ভেবে রিয়াল বিপুল পারিশ্রমিকে নেইমারকে দলে আনতে চাওয়ায় তার মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সেই ক্ষোভ থেকে তিনি রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়েছেন।

রোনালদোর পাশে না থাকা

রোনালদোর রিয়াল ছাড়ার অন্যতম একটি কারণ দুর্দিনের সময় তার পাশে ক্লাবের না থাকা। তিনি যখন খারাপ সময়ের ভিতর দিয়ে গেছেন তখন রিয়াল মাদ্রিদ তার পাশে দাঁড়ায়নি। ২০১৭-১৮ মৌসুম শুরুর আগে স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে দ্বিতীয় লেগে লাল কার্ড দেখার পর রেফারির গায়ে আঘাত করার কারণে তাকে পাঁচ ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হয়। তখন রোনালদোর পাশে একমাত্র কোচ জিনেদিন জিদান ছাড়া আর কেউ পাশে দাঁড়ায়নি।

গত বছর লাল কার্ড দেখে নিষিদ্ধ হন রোনালদো; Source: dailypost.ng

তখন রোনালদো ভাবলেন রিয়ালে তিনি অরক্ষিত এবং তিনি যদি কয়েক ম্যাচে গোল করতে না পারেন তাহলে ক্লাব ম্যানেজমেন্ট থেকে সমর্থক সবাই তার বিপক্ষে কথা বলবে। তার অর্জনগুলো তাদের চোখে পড়বে না। এমন ভাবনা থেকেও তিনি রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়ার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করেন।

কর নিয়ে ঝামেলা

রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়ার আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে তার সাথে স্প্যানিশ কর বিভাগের ঝামেলা। কর নিয়ে শুধু তাকে না লিওনেল মেসিকেও ভুগতে হয়েছে। তবে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো মোট ১৮.৮ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা এবং এক বছরের সাসপেন্ডেড জেল মেনে নিতে রাজি ছিলেন। কিন্তু তাকে যদি এর বাইরে শাস্তি দেওয়া হয় কিংবা অন্য কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা হয় তবে তাকে সত্যি সত্যি জেলে যেতে হতো।

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ; source: marca.com

রোনালদো স্পেনে করের এই ঝামেলা নিয়ে থাকতে চাননি। এ কারণে তিনি রিয়াল মাদ্রিদ এবং স্পেন ছেড়ে ইতালিতে পাড়ি জমিয়েছেন।

করের মামলায় রোনালদোর পাশে রিয়ালের না থাকা

ক্রিস্টিয়ানোর রোনালদোর করের মামলার বিষয়ে রিয়াল প্রত্যক্ষভাবে রোনালদোর পাশে দাঁড়ায়নি যেভাবে বার্সেলোনা পাশে থেকেছিলো লিওনেল মেসির। রোনালদোর মামলা শুরু হয় ২০১৬ সালের মে মাসে।

বিমর্ষ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো; Source: impulsonegocios.com

কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদ রোনালদোর পাশে থাকার ঘোষণা দেয় তিন সপ্তাহ পরে। কিন্তু তার পর থেকেও রিয়াল মাদ্রিদ রোনালদোর পাশে থাকেনি। এটা রোনালদোকে রিয়াল ছাড়ার বিষয়ে ভাবতে বাধ্য করেছে এবং শেষ পর্যন্ত তিনি রিয়াল ছেড়ে জুভেন্টাসে পাড়ি জমিয়েছেন।

Featured Image: deviantart.com