শিষ্টাচার মানবজাতির একটি অন্যতম প্রধান ধর্ম৷ এটি মানুষের আত্মার সাথে সম্পৃক্ত। একটি শিশু থেকে শুরু করে প্রতিটি মানুষ বেড়ে ওঠার সাথে সাথে শিষ্ঠাচার শিখে আসছে। মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাছাড়া শিষ্ঠাচারের মাধ্যমে মানুষের ভদ্রতা, সৌজন্যতা এবং ব্যক্তিত্ব ফুটে ওঠে। তাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতা ও সম্মানার্জনের জন্য শিষ্ঠাচার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অফিসের শিষ্ঠাচার নিয়মগুলো মেনে চলা উচিত; Source: iloveqatar.net

ব্যক্তিজীবনের পাশাপাশি পেশাগত জীবনেও শিষ্ঠাচার মেনে চলা জরুরী।এক্ষেত্রে যেহেতু একটি কার্যালয়ে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হয়, সেহেতু কেউ যদি অফিসের শিষ্টাচারের একটি সাধারণ নিয়মও ভঙ্গ করে, তাহলে তার সহকর্মীদের পক্ষে ব্যাপারটা মেনে নেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। অর্থাৎ আপনি যখন অন্যের সাথে একটি কর্মক্ষেত্র ভাগ করে নিচ্ছেন, তখন শিষ্টাচারের সমস্ত নিয়ম কানুন অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলুন জেনে নেওয়া যাক অফিস শিষ্টাচারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৭টি নিয়ম।

১. অফিসে ঢুকে সালাম/ শুভেচ্ছা বিনিময় করুন

সালাম মানুষের অন্তরকে রাখে শান্ত ও শিথিল। আপনি যদি প্রতিদিন সকালে অফিসে ঢুকেই সহকর্মীর সাথে সালাম, হাসি বিনিময় এবং শুভ সকাল বলে হালকা খোঁজ খবর নেন তাহলে তার সাথে আপনার সম্পর্কটা থাকবে খুবই মধুর। সালাম-নমষ্কার বা খোঁজ খবর আদান প্রদান নিজেদের মধ্যকার হৃদ্যতা বাড়ায় যা অফিসের কর্মীদের পরষ্পরের প্রতি সহমর্মী করে তোলে।

আপনার সহকর্মীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করুন; Source: naco.org

তাছাড়া এই সামান্য নিয়মটাই অফিসের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে একটি উষ্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করে। এই খোঁজখবর নেওয়ার মাধ্যমেই পরষ্পরের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক সুবিধা-অসুবিধা ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়। সর্বোপরি পারষ্পরিক এই আদান প্রদানের মাধ্যমে একটি সুস্থ-সুন্দর কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত হয়।

২. সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মানুষের অন্যতম প্রয়োজনীয় একটি অনুষঙ্গ। প্রতিদিন গোসল করা, পরিষ্কার জামা-জুতা পরাসহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা প্রতিটি মানুষের অবশ্য কর্তব্য। আপনি যদি পরিষ্কার থাকেন তাহলে আপনার সহকর্মীরা বিরক্ত হবে এবং আপনার নানা শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হবে। তাই নিয়মিত পোশাক ধোয়া, দাঁত ব্রাশ করা, গোসল করা এবং মোজা ধুয়ে পরা উচিত।

সবসময় খেয়াল রাখবেন যেন আপনার মুখ, শরীর, পোশাক, মোজা থেকে কোনো বিকট গন্ধ না বের হয়। কারণ এই বিষয়গুলো আপনার ব্যক্তিত্বের উপরও দারুনভাবে প্রভাব ফেলে। তাছাড়া অফিসে নিজের ডেক্সটা সবসময় পরিষ্কার করে রাখুন। অনেকেই অফিসের ডেক্সে নিজের নিত্য ব্যবহার্য প্রসাধনী সামগ্রীসহ নানান জিনিস রাখেন। তবে যাই রাখুন না কেন খুব গুছিয়ে এবং পরিষ্কার করে রাখুন। যাতে আপনার জন্য অফিসের পরিবেশে কোনো অসামঞ্জস্য দেখা না দেয়।

৩. অসুস্থ অবস্থায় কাজ করতে আসবেন না

সর্দি হলে, হাঁচি দিলে, চোখের কোনো অসুখ হলে অথবা অন্য কোনো ছোঁয়াচে রোগ হলে অফিসে না আসাই বেশি যুক্তিযুক্ত। কেননা এতে অফিসের পরিবেশ বিপর্যস্ত হয়। উদাহরণস্বরুপ কেউ চাইবে না যে তার খাবার প্রস্তুতকারী ব্যক্তি এই ধরণের কোনো অসুস্থতা নিয়েও কাজে আসুক। কারণ এটি ব্যবসা এবং কর্মচারী উভয়ের পক্ষেই বিপজ্জনক। তাই অসুস্থ থাকার সত্ত্বেও যদি আপনার কাজটা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয় তাহলে বাড়িতে বসে কাজটি করুন অথবা সেই দিনগুলোতে ভালোভাবে বিশ্রাম নিন।

৪. কাজের সময় অন্যদের বিরক্ত করবেন না

কিছু কিছু ব্যক্তির অভ্যাস হলো ‘তারা কথা বলতে বলতে কাজ করলে সবচেয়ে ভালো কাজ করতে পারে।’ যদিও এই অভ্যাসটি খুবই প্রশংসনীয় তবে আসল প্রশ্নটি হলো, আপনি যদি আপনার সহকর্মীদের সাথে কথা বলতে বলতে কাজ করেন তাহলে তারা কী সুষ্ঠভাবে কাজ করতে পারবে? না।

কাজের সময় অন্যদের বিরক্ত করবেন না; Source: Entrepreneur

খুব অল্পসংখ্যক লোকই কথা ও কাজ একসাথে করতে পারে। বরং বেশিরভাগ মানুষ শান্ত পরিবেশে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে কাজ করলে তাদের কাজের ফলাফল ভালো হয়। তাই নিজের সুবিধার জন্য অন্যদের কাজে সমস্যা সৃষ্টি করবেন না। সবাইকে যার যার নিজস্ব নিয়ম অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ করে দিন।

৫. সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করবেন না

সোশ্যাল মিডিয়া বর্তমানে একটি মারাত্মক রুপ ধারণ করেছে। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বয়স্করা পর্যন্ত ক্রমাগত এর প্রতি ঝুঁকছে। যার দরুন এখন প্রায়ই সকল পেশার মানুষদের কাজের ফাঁকে স্যোশাল মিডিয়ায় সময় কাটাতে দেখা যায়। যা কখনোই কাজে ভালো ফলাফল বয়ে আনতে পারে না। আপনি যদি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে কাজ না করেন, তাহলে নিশ্চয়ই আশানুরূপ ফল পাবেন না।

তাছাড়া এটি সম্পূর্ণ অফিসের নীতিবিরুদ্ধ একটি বিষয়। তাই আপনার বিরতি ব্যতীত অফিসে কাজের সময় স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহার থেকে সম্পূর্ণরুপে বিরত থাকুন। এছাড়াও আপনার কাজ, সহকর্মী ইত্যাদি সম্পর্কে অভিযোগ করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়াটিকে প্ল্যাটফর্ম হিসাবে ব্যবহার করবেন না।

৬. অতিরিক্ত গন্ধযুক্ত সুগন্ধি ব্যবহার করবেন না

অনেকের অতিরিক্ত গন্ধযুক্ত সুগন্ধিতে এলার্জি আছে। তাই অফিসে যাওয়ার সময় এই ধরণের সুগন্ধি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। এটি মানুষকে আপনার ব্যক্তিত্ব ও রুচি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেয়। আপনার পছন্দের সুগন্ধিটিই অন্যদের বিরক্তির কারণ হতে পারে। তাই সুগন্ধি যথাসম্ভব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।

৭. সহকর্মীদের প্রতি সদয় হোন

একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে গেলে অনেক সময় সহকর্মীদের সাথে ঝগড়া ও মনোমালিন্য হয়। যা প্রতিষ্ঠানের কর্মপরিবেশে ব্যাঘাত ঘটায়। আবার অনেক সময় ঊর্ধ্বতনরা অধস্তনদের নানা কারণে শাসন করে। যার ফলে কিছু কর্মীর ঊর্ধ্বতনদের প্রতি খারাপ মনোভাব সৃষ্টি হয়।

সবসময় সহকর্মীদের প্রতি সদয় হোন; Source: Reader’s Digest

তাই প্রতিষ্ঠানের সকল ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন কর্মীদের এবং সহকর্মীদের পারষ্পরিক সমঝোতা এবং ক্ষমা করার মানসিকতা গড়ে তোলা উচিত। তাছাড়া সহকর্মীদের একজনের বিপদে অন্যজনের সর্বদা সাহায্যের মনোভাব নিয়ে পাশে থাকা উচিত। এই বিষয়গুলো কাজের ইতিবাচক পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে আপনার নিজের সন্তুষ্টির মূল চাবিকাঠি।

Featured Image Source: hypotheekvisie.nl