ক্যারিয়ারে সফলতার অন্যতম একটি মাধ্যম হলো শক্তিশালী  যোগাযোগ গড়ে তোলা সবার সাথে। আর একটি স্বচ্ছ এবং কার্যকরী যোগাযোগ গড়ে তুলার জন্য অবশ্যই কথোপকথনের মাধ্যমে জেনে নিতে হবে তাদের সম্পর্কে। আর এই সাধারণ বাক্যালাপের বিষয়টি যতটুকু সহজ এবং সাধারণ মনে হোক না কেন, আমরা কিন্তু অনেকসময়ই সবার সাথে সহজে মিশে গিয়ে আমাদের কথোপকথন চলমান রাখতে পারি না অথবা আমাদের কি বলা উচিত সেটা বুঝতে পারি না। আর তাই অপরের কথা শুনতে হবে,এবং নিজেকেও সঠিক কথা বলা শিখতে হবে। এবং কর্মক্ষত্রে হোক অথবা কোন সামাজিক অনুষ্ঠান নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সঠিক প্রশ্ন করা জানতে হবে এবং একইসাথে অযাচিত বিষয়ে কথা বলার অভ্যাসগুলো এড়িয়ে যেতে হবে যেমন- রাজনীতি বিষয়টি নিয়ে যখন তখন যেকোন জায়গায় কারো সাথে এরুপ বিষয়ে কথোপকথনের অভ্যাসগুলো এড়িয়ে চলা শিখতে হবে।

বাহ্যিক আচার আচরণ এবং গলার স্বরের প্রতি হতে হবে মনোযোগী যাতে একঘেয়েমি ব্যাপারটি প্রকাশিত না হয়। মস্তিষ্ককে এমনভাবে প্রশিক্ষণ দিতে হবে যাতে করে অপরের প্রতি আবেগ এবং হাসিখুশি থাকার মনোভাব তৈরি হয়। আপনার পাশে যখন কেউ হাসবে আপনাকেও হাসতে হবে তার সাথে একাত্মতার জন্য, পরিস্থিতি কোন কারণে অনুকুলে না থাকলে সেই পরিস্থিতিকে শান্ত করার মতো দক্ষতা থাকতে হবে।

একজন আর্কষণীয় ব্যক্তিত্ব হতে হলে সঠিক প্রশ্ন করা জানতে হবে এবং এভাবেই অপরের নিকট থেকে সঠিক তথ্য এবং উত্তরগুলো জানা যাবে।

অপরের গল্প, অর্জন, আবেগের জায়গাগুলোর ব্যাপারে জানতে চাওয়ার আগ্রহই হলো পারস্পারিক সমঝোতার জায়গাটাকে প্রতিষ্ঠিত করার অন্যতম সূত্র। এই কৌশলের আরেকটি সুফল হলো এভাবে বিশ্বাসের অবস্থানগুলো পাকাপোক্ত হয়। এতে আপনি যেদিকেই কথোপকথন নিয়ে যেতে চাইবেন অপর ব্যক্তি সেদিকেই ধাবিত হবে।

যদি আপনি কারো সাথে কর্মক্ষেত্রে কাজের ব্যাপারে কথা বলছেন অথবা মিটিং এ আছেন ব্যবসায়ের ব্যাপারে কথা বলার জন্য তাহলে শুরুতেই আপনার জন্য শ্রেষ্ঠ পদক্ষেপ হলো প্রথমেই কাজ বা ব্যবসা নিয়ে কথা শুরু না করা। ওই ব্যক্তির সাথে কিছু সাধারণ কথাবার্তা শুরু করুন,ধীরে ধীরে কথোপকথনরত অবস্থায় কাজ অথবা ব্যবসা নিয়ে জিজ্ঞেস করুন,অপর ব্যক্তিটির কাছে কথোপকনের মাধ্যমে একটি আস্থার জায়গা তৈরি করে নিলে আপনার জন্য যেকোন বিষয়ে তথ্য জানার বিষয়টি হবে সহজ। এককথায়, যেকোন বিষয়ে কারো সাথে কথোপকথনের গভীরে যেতে হলে তার আগে ব্যক্তিটি সম্পর্কে জানতে হবে। আমাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো ভালোভাবে কথা বলা শুরু করতে পারি না, বা অনেকেই হয়তো শুরুতেই এত কথা বলার অভ্যাসটি ধারণ করেন না, কাজেই আপনাকে জানতে হবে কোথায় কখন কোন কথাগুলো দিয়ে বাক্যবিনিময় শুরু করলে আপনি কথোপকথনের গভীরে যেতে পারবেন।

 ১. কোন বিষয়গুলো আপনার মাঝে উদ্দীপনা জাগায়?

লেখক David Burkus এর মতে এই প্রশ্নটির উত্তর যেকোন দিকে যেতে পারে ( কর্ম জীবন,ব্যক্তিগত জীবিন ইত্যাদি) । এই প্রশ্নটির একটি বড় উত্তর আপনার ব্যক্তিগত বা কর্ম জীবনের সাথে কোথাও মিলেও যেতে পারে, যা কিনা আপনার কথোপকথন সামনে এগুনোর রাস্তা তৈরি করে দিবে। এছাড়া এই প্রশ্নটি উত্তরদাতা কোন কোন বিষয়ে আগ্রহী সে ব্যাপারে জানবারও একটি কার্যকরী মাধ্যম।

source: chobibazar.com

২. কী কী বিষয় নিয়ে আপনি জানতে বেশি উন্মুখ?

এই প্রশ্নটি আগেরটির মতোই তবে Burkus এর মতে এই প্রশ্নটির উত্তর দিতে হলে উত্তরদাতাকে অবশ্যই বিশদ বিশ্লেষণ করেই বলতে হবে।

৩. এই বছরে সবচেয়ে ভালো কোন ঘটনাটি ঘটেছে আপনার সাথে?

এই প্রশ্নটি উত্তরদাতাকে যেকোন একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তর দিতে হবে। পরবর্তী কথাবার্তা এগুনোর জন্য ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আপনিও অনেক কিছুই বলতে পারবেন একই সাথে পরবর্তী আলোচনার জন্য নতুন কিছু বিষয় খুঁজে পাবেন।

source : chobibazar.com

৪. কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আমার আপনার সম্পর্কে জানা উচিত বলে আপনি মনে করেন?

এই প্রশ্নটি যদিও ব্যক্তিটির ব্যাপারে একটি সরাসরি প্রশ্ন তবে এই প্রশ্নটি করতে হবে যেকোন কথার পরিপ্রেক্ষিতে। এইরকম প্রশ্ন আপনি অবশ্যই কাউকে প্রথমেই করবেন না এমনকি দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রশ্নেও না, অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তি সম্পর্কে একটি ধারণা পোষণ করতে এই প্রশ্নটি আপনাকে সামঞ্জস্য একটি পরিস্থিতিতেই করতে হবে।

৫. আপনার গল্প বলুন

এই প্রশ্নটি উত্তরদাতার জন্য একটি খোলা জায়গা তৈরি করে দেয় যেখানে যে কেউ মন খুলে তার গল্প তার ঘটনাগুলোকে বলতে পারে। আত এই মন খুলে কথা বলার সুযোগটি অপর ব্যক্তিটির সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা দিবে,একই সাথে পরবর্তী কথোপকথন এগুনোর একটি সহায়ক প্রশ্ন এটি।

source: chobibazar.com

৬.এমন একটি মুহুর্তের কথা বলুন যা আপনাকে সংজ্ঞায়িত করে?

এটি এমন একটি প্রশ্ন যা একটি ব্যক্তি সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে সহায়তা করে এবং একইসাথে ব্যক্তিটির সাথে সম্পর্ক স্থাপনেও সহায়তা করে।  অবশ্যই এর আগে কিছু সাধারণ প্রশ্ন করে একটি অবস্থান তৈরি করতে হবে যাতে উত্তরদাতা তার গভীর  বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী হতে পারে।

৭. আপনি কেন এই পেশা বেছে নিলেন?

এই প্রশ্নটির আগে অবশ্যই আপনি কি করছেন? এইরকম কিছু সাধারণ প্রশ্ন করতে হবে।  এই প্রশ্নটির উত্তর ব্যক্তিটি জীবনের বিভিন্ন বিষয়ের ধারণা দিতে পারে। এই প্রশ্নের উত্তরে জানা যাবে তিনি কোন বিষয়গুলোর মূল্যয়ন করেন,কোন বিষয়গুলো তাকে প্রেরণা জোগায়, এবং কোন কাজগুলো করতে তিনি ভালোবাসেন এরকম অনেক বিষয়ের স্বচ্ছ ধারণা,পাওয়া সম্ভব এই প্রশ্নটির মাধ্যমে।

৮. কোন বইটি বর্তমানে পড়ছেন?

হতে পারে উত্তরদাতা আর আপনার প্রিয় লেখক একই এবং এরুপ বিষয়গুলোর মাধ্যমে কথোপকথনের গভীরে যাওয়া  সম্ভব। একইসাথে আপনি বই পড়ার জন্য কিছু পরামর্শও নিতে পারেন যা কিনা উত্তরদাতার সাথে আপনার সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক হবে।

source: chobibazar.com

৯. আমি কিভাবে এই মুহুর্তকে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

আপনার কথোপকথনকে সর্বোচ্চ মূল্যবান করতে চাইলে, আস্থার একটি জায়গা তৈরি হলে,  ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস কিরতে পারেন আপনি কিভাবে তাকে সাহায্য করতে পারেন হতে পারে তা ব্যক্তিগত  কিংবা পেশাগতভাবে। আপনি বিস্মিত হয়ে যাবেন দেখে, কিভাবে সবাই আপনার এরকম চিন্তাশীল আচরণে কতটা খুশি অনুভব করবে।

আপনার প্রকৃত আগ্রহ,কথা এবং সম্পর্কক স্থাপনের প্রবল ইচ্ছা  আপনার কথোপকথন কে করে তুলবে আর্কষনীয়যা কিনা ভবিষ্যৎ অনেকে সু্যোগের দরজাকে দিবে খুলে। আপনি যে প্রশ্নই করার পরিকল্পনা করে থাকেন না কেন সবসময় খোলা এবং সহজ প্রশ্ন করবেন এবং কাজ ও সম্পর্কিত প্রশ্নগুলো এড়িয়ে চলবেন,কাংখিত ব্যক্তিটির সাথে অবশ্যই আপনার সুসম্পর্ক স্থাপিত হবে।