পত্রিকার পাতা থেকে টিভির পর্দা, ফেসবুকের নিউজ ফিড থেকে পরিচিতজনের সাথে আড্ডা রোজ কোনো না কোনো দুর্ঘটনার কথা শোনাই যায়। এসব দুর্ঘটনার বেশিরভাগই অপরাধ সংক্রান্ত। ছিনতাই, ইভ টিজিং, ডাকাতিসহ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে অতর্কিত হামলা করার জন্য ওঁত পেতে থাকা মানুষের অভাব নেই চারিদিকে। আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর উপর ভরসা করেও সবসময় পার পাওয়া যায় না। তাই নিজে সাবধান থাকার পাশাপাশি জেনে রাখা উচিত আত্মরক্ষার কিছু কৌশল। আজ জানা যাক এমন ১০টি আত্মরক্ষার কৌশল যা আপনাকে বাঁচিয়ে দিতে পারে মারাত্বক বিপদের সময়।
১. হাত শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করা
সাধারণত অতর্কিত হামলার ক্ষেত্রে হাত প্রশস্ত করে রাখার চাইতে হাত মুষ্টি করে রাখাটাই বেশি কাজে দেয়। হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলী অনেক সময় উইক পয়েন্ট হিসেবে কাজ করে। এটিকে বাকি চার আঙ্গুলের সামনে নিলে হাতের মুষ্টিতে এবং হামলাকারীকে প্রতিহত করার ক্ষেত্রে জোর পাওয়া যায়।
২. হাত বাঁধা থাকলে
হাত বাঁধা থাকলে হামলাকারীকে প্রতিহত করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে যখন হাত বাঁধা হয় তখন যদি একটু বুদ্ধি খাটানো যায় তবে বাঁধন খুলতে বেশি বেগ পেতে হবে না। হাত বাঁধার সময় হাতে মুষ্টি করে যত বেশি সম্ভব জায়গা নিয়ে রাখতে হবে যাতে মুষ্টি ছেড়ে দিলে বাঁধন ঢিলা হয়ে পড়ে। মুষ্টি করার সময় জোরে শ্বাস নিলে বুকের প্রস্থ বেড়ে আরেকটু জায়গা তৈরি হয়। হাত যদি প্লাস্টিক টেপ দিয়ে বাঁধা থাকে সেক্ষেত্রে দুই হাত ধীরে ধীরে উপরের দিকে তুলে দুইদিকে চাপ দিতে হবে যাতে টেপ ছিঁড়ে যায়।
৩. শত্রুর শরীরের উইক জোনে আঘাত করুন
আপনি যতই শক্তিশালী হোন না কেন হঠাৎ আক্রমণে আপনার ধরাশায়ী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এক্ষেত্রে আপনার নিজের অবস্থা বুঝে উঠতে আক্রমণকারী অনেকখানি সুযোগ পেয়ে যায়। তাই শক্তি প্রয়োগ করেও ছাড়া পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। এক্ষেত্রে আপনার জেনে রাখা উচিত শরীরের কিছু উইক জোন যেখানে আঘাত করে আপনার চেয়ে শক্তিশালী আক্রমনকারীকেও ধরাশায়ী করতে পারবেন। চোখ, কান, নাক, গলা, উরু, হাটু- এসব উইক জোনে আঘাত করে হামলাকারীর কবল থেকে বেরোনো সম্ভব।
৪. গলা চেপে ধরলে এবং পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলে
অতর্কিত আক্রমনে অনেক সময় শত্রু পেছন থেকে আঁটকে ধরতে গলা টিপে ধরে। এতে খুব সহজেই ভিকটিমকে ধরাশায়ী করা যায়। এমন অবস্থায় পড়লে যথাসম্ভব শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করতে হবে যাতে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহে ঘাটতি না হয়। নিজের দুই হাত দিয়ে তো শত্রুকে বাধা দিতেই হবে সাথে দুই পায়েরও ব্যবহার করতে হবে। কোনোভাবে হাত বা পায়ের সাহায্যে শত্রুর শরীরের উইক জোনে সজোরে আঘাত করতে পারলে এ যাত্রায় নিস্তার পাবেন।
৫. সংকেত ব্যবহার করা
ছোটবেলায় আমরা নানারকম সংকেত আর নিজেদের ভাষা তৈরি করতাম খেলার সময়। এরকম কিছু সংকেত প্রিয়জনকে জানিয়ে রাখা উচিত। যাতে বিপদের সময় চিরকুট লিখে, ফোন কল বা ম্যাসেজের মাধ্যমে সেটি পাঠানো যায়। সংকেত বা ছদ্মনামের মাধ্যমে ঠিকানা ও অন্যান্য ডিটেইলসও দেওয়া সম্ভব। তৈরি করে আজই কাছের মানুষদের জানিয়ে দিন আপনার জরুরি সংকেত।
৬. হাতের কাছে যা পাবেন সেটিই ব্যবহার করুন
শত্রু আক্রমণ করতে পারে যেকোন সময় যার জন্য আপনি প্রস্তুত নাও থাকতে পারেন। সেক্ষেত্রে হাতের কাছে যা থাকে তাই দিয়ে হামলাকারীকে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করুন । হামলাকারীর হাতে ছুরি থাকলে হাতের ব্যাগ বা পার্সটি দিয়ে বাঁধা দিতে পারেন। স্কার্ফ বা ওড়না দিয়ে শত্রুর গলা পেঁচানো যেতে পারে সম্ভব হলে। ছাতা, রুমাল, চাবি এমনকি চুলের কাঁটা দিয়ে হলেও হামলাকারীকে বাঁধা দিন। যথেষ্ট দুরত্ব তৈরি করে চিৎকার করুন, সুযোগ পেলে দৌড় দিন।
৭. হামলাকারী যদি চুল চেপে ধরে
সজোরে চুল চেপে ধরলে হামলাকারী আপনার শরীরের নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যাবে সহজে। সেক্ষেত্রে দুই হাত দিয়ে শত্রুকে যথাসম্ভব বাঁধা দিতে হবে। একদিকে হাত দিয়ে বাঁধা দিয়ে শত্রুর মনোযোগ হাতের দিকে এনে পায়ের ব্যবহার করতে হবে। পা দিয়ে শত্রুর শরীরে জোরে আঘাত করতে হবে যাতে করে শত্রু আপনার থেকে দূরে সরে যেতে পারে।
৮. লিফটে থাকাকালীন
লিফটে অপরিচিত মানুষ কিংবা সন্দেহভাজন ব্যক্তি থাকলে লিফট থেকে নেমে যাওয়াই উত্তম। এক্ষেত্রে যদি আপনি আগে থেকে লিফটে থাকেন তবে লিফটের বাটনের দিকে সরে যান যাতে প্রয়োজনে ইমার্জেন্সি বাটন কিংবা যেকোনো ফ্লোরে নামতে পারেন। কখনো লিফটের দরজার দিকে পিঠ দেবেন না। এতে করে হামলাকারী সহজে সুযোগ পাবে।
৯. গাড়িতে থাকলে
অনেকসময় একা ভ্রমণ করার সময় গাড়িচালকেরা সুযোগ নেয়। এক্ষেত্রে একা যাত্রা করার আগে গাড়ির নাম্বার ভালোভাবে দেখে নিন। সম্ভব হলে গাড়ির নাম্বার ও গাড়িচালকের ছবি তুলে কাছের মানুষকে পাঠান। যদি যাত্রাপথে সন্দেহজনক কিছু দেখেন তবে ফোনে ড্রাইভারকে শুনিয়ে কোথায় যাচ্ছে, কোন রাস্তায় আছেন এগুলো বলুন। রাতে পারতপক্ষে একা গাড়িতে উঠবেন না।
No Comments Yet