শিক্ষা জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সবার আকাঙ্ক্ষা থাকে সুন্দর কর্মজীবনের শুরু করার। কর্মজীবন হিসেবে সিংহভাগ তরুণ-তরুণীর পছন্দ চাকরি করা। তাই পছন্দের চাকরি খুঁজে পেতে শুরু হয় প্রাণান্তর চেষ্টা। বুঝে না বুঝে নানান জনের কাছে নানাভাবে তদবির শুরু হয় একটি ভাল চাকরির জন্য। কিন্তু এই দুর্মূল্যের বাজারে চাকরি যেন শোনার হরিণ, দূরে দেখা যায়, কিন্তু ছোঁয়া যায় না।

আপনি কি সঠিক পন্থায় চাকরি খুঁজেছেন? কাঙ্ক্ষিত চাকরি পেতে সম্ভাব্য সব রকম উপায়ে কি আপনি চেষ্টা করেছেন? photo: bookboon blog

পছন্দের চাকরি খুঁজে পেতে গলধগর্ম তরুণ তরুনীদের বলছি, আপনি কি সঠিক পন্থায় চাকরি খুঁজেছেন? কাঙ্ক্ষিত চাকরি পেতে সম্ভাব্য সব রকম উপায়ে কি আপনি চেষ্টা করেছেন? সম্ভবত না। যদি করতেন তাহলে নিশ্চয়ই এতদিনে একটা চাকরি জুটিয়ে ফেলতে পারতেন। কাঙ্ক্ষিত চাকরি খোঁজে পেতে কিছু কৌশল জানা খুব জরুরী।

স্থিতি

পড়াশোনা শেষ করার কয়েক দিনের মধ্যেই অনেকে চাকরির পেতে চায়। এই চাওয়া দোষের না, কিন্তু তাড়াহুড়ো করে অন্য অনেক কিছু করা গেলেও ভাল চাকরি পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তাড়াহুড়ো করে শুরু করা চাকরির অভিজ্ঞতা সবসময় সুখকর হয় না। কাজেই তাড়াহুড়ো নয় ধীরস্থির হয়ে চাকরি খুঁজুন, কাঙ্ক্ষিত চাকরি পাবেন।

নিজের চাওয়া

হঠাৎ কোথাও থেকে পাওয়া যে কোন চাকরির প্রস্তাব গ্রহণ বা চাকরি করতে হবে তাই যে কোন চাকরি শুরু করা উচিত না। তাতে ফল ভাল নাও হতে পারে। ‘চাকরি করার জন্য চাকরি বা শুধু টাকার জন্য চাকরি’ এই ধারণা থেকে বের হওয়া জরুরী। কেননা অনেক চাকরি আছে নির্দিষ্ট সময়ের আগে অব্যাহতি নেওয়া যায় না। এমন কোন চাকরি যদি হঠাৎ শুরু করেন তবে পরে সেই চাকরি আপনার জন্য বিভীষিকাময় হয়ে উঠতে পারে। তাই আগে ভাবুন, নিজের পছন্দ ঠিক করুন। তারপর চাকরি নিন।

একটি গোছালো জীবনবৃত্তান্ত বা সিভি সার্টিফিকেটের মতই গুরুত্বপূর্ণ। photo: the balance

জীবনবৃত্তান্ত

একটি গোছালো জীবনবৃত্তান্ত বা সিভি সার্টিফিকেটের মতই গুরুত্বপূর্ণ। ভাল জীবনবৃত্তান্তের বদৌলতে আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত চাকরি পেয়ে যেতে পারেন। কেননা চাকরিদাতা প্রথম আপনার সম্বন্ধে জানেন আপনার সিভির মাধ্যমে। আপনি যদি সিভির মাধ্যমে প্রথম দর্শনেই চাকরিদাতার মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেন, তাহলে আপনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাব্যতা বেড়ে যাবে বহুগুণ। আপনার চেহারা নয়, যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতার বিচারেই চাকরি পাবেন। আর সিভিতে যদি তা যথাযথভাবে ফুটিয়ে তোলা যায় তাহলে চাকরি পাওয়া সহজ হবে। প্রয়োজনে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিন, ইন্টারনেটে সার্চ করুন, এভাবে ভাল সিভি লেখা আয়ত্ত করুন।

কোথায় নিজেকে কেমনভাবে প্রকাশ করবেন, তা জানা খুব জরুরী। কেননা সাক্ষাৎতের অভিজ্ঞতার উপর আপনার চাকরি অনেকাংশে নির্ভর করে। photo: student job

কৌশলী সাক্ষাৎকার

সব চাকরিতে কিন্তু একই রকম সাক্ষাৎকার চলবে না। চাকরির ধরণ বুঝে সাক্ষাৎকারে নিজের প্রকাশভঙ্গি নির্ধারণ করতে হবে। কোন চাকরির ইন্টারভিউতে একেবারে ধোপদুরস্ত হয়ে উপস্থিত হতে হবে আবার কোনটিাতে ক্যাজুয়াল পোশাকে উপস্থিত হতে হবে। কোথাও ব্যাকরণ মেনে মেপে মেপে কথা বলতে হবে, কোথাও সাধারণ আলাপের মত কথা বলতে হবে। কোথায় নিজেকে কেমনভাবে প্রকাশ করবেন, তা জানা খুব জরুরী। কেননা সাক্ষাৎতের অভিজ্ঞতার উপর আপনার চাকরি অনেকাংশে নির্ভর করে।

জব সাইট

চাকরির বিজ্ঞাপন নিয়ে বিভিন্ন জব সাইট আছে। এইসব সাইটে নিয়মিত খোঁজখবর রাখুন। অনেক জব সাইটে অ্যাকাউন্ট খুলে নিজের প্রফাইল তৈরি করা যায়। এই প্রাফাইল দেখে প্রতিষ্ঠান নিজেই আপনাকে খুঁজে নিবে। সুতরাং চাকরি খোঁজার সহজ মাধ্যম হতে পারে জব সাইট।

স্বপ্নের চাকরি খুঁজে পাওয়ার আরও একটি কার্যকর মাধ্যম হতে পারে সামাজিক যেগাযোগ মাধ্যম। photo: make a websitehub

সামাজিক যোগাযোগ

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট নেই, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুধু বন্ধু হয় তা কিন্তু নয়, এখান থেকে যোগাযোগ করা সম্ভব বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের সাথে। স্বপ্নের চাকরি খুঁজে পাওয়ার আরও একটি কার্যকর মাধ্যম হতে পারে সামাজিক যেগাযোগ মাধ্যম। তবে শুধু ফেসবুক নয়, টুইটার, লিংকড-ইনের মত প্রফেশনাল সাইটেও প্রফাইল তৈরি করে রাখা ভাল।

নিজেকে সচল রাখা

নিজের পরিচিত গণ্ডির মধ্যে সবসময় সচল থাকুন। বন্ধু, বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই, এলাকার পরিচিতজন, আত্মীয় স্বজন সবার সাথে সুসম্পর্ক ও যোগাযোগ রাখুন। সুযোগ বুঝে আপনার চাকরি প্রত্যাশার ব্যাপারে জানিয়ে রাখুন। এমন পরিচিতজনদের হাত ধরে পেয়ে যেতে পারেন আপনার কাঙ্ক্ষিত চাকরি।

নিজের পরিচিত গণ্ডির মধ্যে সবসময় সচল থাকুন। বন্ধু, বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই, এলাকার পরিচিতজন, আত্মীয় স্বজন সবার সাথে সুসম্পর্ক ও যোগাযোগ রাখুন। photo: the colorful perspective

বিভিন্ন জনের সাথে যেগাযোগ

বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মরত ভিন্ন ভিন্ন মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলুন। তার প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে প্রশংসা করুন, এমন কি কখনো সুযোগ হলে এমন প্রতিষ্ঠানে কাজ করার আগ্রহ তাকে জানিয়ে রাখুন। এতে যেমন আপনার যেগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে তেমন নতুন কোন চাকরি পাওয়ার সম্ভাব্যতাও বৃদ্ধ পাবে। কেননা আপনার সাথে যেগাযেগা থাকা ব্যক্তিদের চোখে যদি আপনি যোগ্য হয়ে থাকেন, তবে সুযোগ সৃষ্টি হওয়া মাত্রই সে আপনাকে ডেকে নিবে।

আপডেট

ভাল চাকরি পেতে সবসময় আপডেট থাকুন। কাঙ্ক্ষিত সব প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সাম্প্রতিক অবস্থায় নজর রাখুন। যেসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন, তার খোঁজখবর রাখুন। না হলে হয়তো নির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও আপনি চাকরি হারাতে পারেন। আর যেসব প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেছেন, তারা সাক্ষাৎতে ডাকার আগে সেই প্রতিষ্ঠান সম্বন্ধে ভাল ধারণা নিন। সব মিলিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করুন।

ভাল চাকরি পাওয়া সম্পূর্ণ নির্ভর করে আবেদনকারীর দক্ষতা ও যোগ্যতার উপর। তবুও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেকে জানেন না ঠিক কি কি করনীয় আছে ভাল চাকিরি খুঁজে পাওয়ার জন্য। ভাল সিজিপিএ থাকার পরও অনেকে বাহ্যিক কিছু প্রচেষ্টার অভাবে ভাল চাকরি খুঁজে পায় না। আশা করি এই নিবন্ধ তাদের কাজে আসবে।