ভার্চুয়াল লাইফের কারণে আমরা সবাই কমবেশী হারাচ্ছি সামনাসামনি কথোপকথনের দক্ষতা। দেখা যায়, স্ক্রিনের ওপাশের মানুষটা সামনাসামনি এসে দাঁড়ালে বেশ ইতস্তত বোধ করতে শুরু করি। মেসেজ বা চ্যাটিং এ দক্ষ মানুষটা বাস্তবে কথোপকথনে কতটা অপরিপক্ক তা কেবল সামনাসামনিই বোঝা যায়। শুধু তাই নয়, ক্যারিয়ারের স্বার্থেও বাকপটু হওয়া অত্যন্ত জরুরী। অনেকক্ষেত্রে, কথোপকথনের শুরুটা হয়ত করতে হতে পারে আপনাকেই। কিন্তু কিভাবে অপরিচিত কোনো ব্যাক্তির সাথে আলাপচারিতা শুরু করা যেতে পারে? কি হতে পারে আলাপের বিষয়বস্তু। আজকে আমরা আলোচনা করবো এমন ৯টি উপায় নিয়ে যার মাধ্যমে আপনি হয়ে উঠতে পারেন বাক্যালাপে পটু।

১. ছোটখাট আলাপ এড়িয়ে চলা

“আজকের আবহাওয়া কেমন?” বা  “আজকের খেলাটি দেখেছ?” এ ধরণের প্রশ্ন যেকোনো কথোপকথন শুরু করার জন্য উপযুক্ত নয়। একটি সুন্দর আলাপের জন্য প্রয়োজন একটি সুন্দর আরম্ভ। তাই শুরুটা হতে হবে অনন্য। একঘেয়ে বিষয়বস্তু বাদ দিয়ে নতুন কিছু বাছাই করে নিতে হবে।

আলোচনার বিষয়বস্তু যেন হয় গতানুগতিক আলোচনা থেকে ভিন্ন; ছবিসূত্রঃ share.america.gov

২. মতামত জিজ্ঞাসা

প্রত্যেকের নিজস্ব মতামত থাকে। বিভিন্ন মতামত জানার আগ্রহ করতে পারে একটি সুন্দর কথোপকথনের সৃষ্টি। মতামত হতে পারে যেকোনো বিষয়ে। হতে পারে কোনো খাবারের পছন্দ অপছন্দ নিয়ে, হতে পারে কোনো প্রিয় সিনেমা নিয়ে, হতে পারে সংগীত নিয়েও। বিভিন্ন মতামত জানার মাধ্যমে একটি সুন্দর কথোপকথন সৃষ্টির সাথে সাথে, মানুষটির বিভিন্ন পছন্দ অপছন্দ সম্পর্কেও জানা হয়।

যেকোনো ব্যাক্তির মতামত চাওয়ার মাধ্যমে তাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়; ছবিসূত্রঃ wikihow.com

৩. পরামর্শ চাওয়া

যেকোনো ব্যাপারে পরামর্শ  চাওয়া হতে পারে একটি সুন্দর আরম্ভ। সেটি হতে পারে যেকোনো জামা কাপড় নিয়ে বা হতে পারে যেকোনো গল্পের বই নিয়ে। রেস্তোরাঁয় বসে খাবার সম্পর্কেও পরামর্শ চাওয়া যেতে পারে।

ছবিসূত্রঃ huffpost.com

৪. পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে মন্তব্য

কথোপকথন শুরু করার জন্য সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো পারিপার্শ্বিক অবস্থা। আমাদের চারিদিকেই রয়েছে বিভিন্ন বিষয়বস্তু। চারপাশের যেকোনো কিছু, যেমন রেস্তোরায় বসে থাকলে সেটির সংগীত বা খাবার ইত্যাদি নিয়েই মন্তব্য করে শুরু করতে পারেন কথা বলা। কোনো পার্কে গেলে পার্কের অবস্থা সম্পর্কে কথা বলা। এমনকি অচেনা কারো সাথে লিফটে আটকে গেলেও এই পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে।

ছবিসূত্রঃ ak8.picdn.net

৫. সহজ প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া

যে ব্যক্তির সাথে কথোপকথন শুরু করতে চান তার সম্পর্কে বা তার কর্মজীবন সম্পর্কে যদি হালকা ধারণা রাখা যায় তবে এই পদ্ধতি কার্যকরী। ধরুন, কোনো ব্যক্তির কাজ আইটি সেক্টরে। তবে তাকে আইটি সেক্টরের কাজ সম্পর্কে প্রশ্ন করা যেতে পারে। কিন্তু অতি জটিল প্রশ্ন এড়িয়ে সহজ প্রশ্ন নির্বাচন করাই উচিত। এতে কথোপকথন সুন্দর ও সাবলীল হয়।

একজন মানুষ তার কাজ নিয়ে কথা বলতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে; ছবিসূত্রঃd2v9y0dukr6mq2.cloudfront.net

৬. কাজের অগ্রগতি জিজ্ঞাসা

যদি ব্যক্তির সাথে আপনার পূর্বেও দেখা হয়ে থাকে বা তার যেকোনো কাজ সম্পর্কে আপনি অবগত হয়ে থাকেন, তবে সেটি হতে পারে কথোপকথনের বিষয়বস্তু। তার কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া কথোপকথনের সাথে সাথে আপনার আন্তরিকতাও প্রকাশ করে। যেমন যদি কেউ নতুন কোনো ব্যবসা শুরু করে থাকে তবে তাকে তার ব্যবসা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।

ছবিসূত্রঃ wemagazineforwomen.com

৭. বিস্তারিত উত্তরের প্রশ্ন নির্ধারণ

যেকোনো বিষয়ে প্রশ্ন যেমন কথোপকথন শুরু করতে পারে, আবার প্রশ্নের উত্তরে কথোপকথন শেষ হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। প্রশ্নের উত্তর যদি “হ্যাঁ” বা “না” তেই শেষ হয়ে যায়, তবে এমন হতে পারে আরেকটি প্রশ্নের মাধ্যমে কথোপকথন চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এভাবে প্রশ্নের কারণে সামনের ব্যক্তির কাছে আপনি কিছুটা বিরক্তির পাত্র বলেও বিবেচিত হতে পারেন। তাই যেকোনো প্রশ্ন করার আগে ভেবে নিতে হবে উত্তর যেনো হয় বিস্তারিত। সেই বিস্তারিত উত্তরের মাঝেই আপনি খুঁজে পাবেন আপনার দ্বিতীয় প্রশ্ন বা মন্তব্য।

ছবিসূত্রঃ timedotcom.files.wordpress.com

৮. অনুমানমূলক প্রশ্ন

আমরা সকলেই অনুমান করতে ভালবাসি। নিজের মতো সব কিছু চিন্তা করতে ভালবাসি। তাই বিভিন্ন অনুমানমূলক প্রশ্ন হতে পারে কথা বলার বিষয়বস্তু। “একদিনের জন্য যদি দেশে কোনো আইন না থাকত, তবে কি করতে?” কিংবা “যদি অনেক সম্পদের মালিক হতে, তবে কি করতে?” ইত্যাদি প্রশ্ন একটি সুন্দর আলাপের সূচনা করতে পারে। শুধু তাই নয়, এই আলাপের মাধ্যমে দুইজন ব্যক্তি তাদের চিন্তা ভাবনা সম্পর্কে জানতে পারবে। শুধু প্রশ্ন করেই নয়, নিজেও এধরণের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সামনের ব্যক্তির কাছে মন্তব্য জানতে চাওয়া যেতে পারে। এতে করে সেও ধারণা পাবে এবং আপনিও।

নিজের ভাবনাগুলো কে তুলে ধরা যায় একটি সুন্দর কথোপকথনের মাধ্যমে; ছবিসূত্রঃd2v9y0dukr6mq2.cloudfront.net

৯. পছন্দের প্রশ্ন

মানুষ সবচেয়ে বেশী উত্তর দিতে ভালবাসে তখনি যখন প্রশ্নটা তার পছন্দের কোনো বিষয় নিয়ে হয়। এর ফলে উত্তর হয় বেশ বিস্তারিত। একজন মানুষের কাছে যদি গৃহপালিত কুকুর থাকে, সে যদি তার প্রতি বেশ দুর্বল হয় তবে তাকে তার কুকুর নিয়ে প্রশ্ন করা যেতে পারে। তাছাড়া যে ব্যক্তির সাথে আলাপ করতে চাচ্ছেন তিনি যদি বিবাহিত হন তবে তার পরিবার আর যদি সন্তান থাকে তবে তাদের সম্পর্কেও জানতে চাওয়া যেতে পারে। শুধু তাই নয়, চাকরি ক্ষেত্রে যদি বসের সাথে আড্ডা জমাতে চান তবে তুলে ফেলতে পারেন বসের প্রিয় কোনো ভ্রমণের গল্প কিংবা প্রিয় কোনো মূহুর্ত অথবা সে সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশও করতে পারেন।

ছবিসূত্রঃ tapestri.org

বর্তমান যুগে শুধুমাত্র মিষ্টভাষা দিয়েই জয় করা যায় অনেক কিছু। একজন সদালাপী ব্যক্তির জন্য জীবনে অনেক কিছুই অনেকটা সহজ হয়ে যায় যা একজন স্বল্পভাষীর জন্য হয় না। তাই ঘরকুনে না থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নিজেকে পরিচিত করাতে হবে পৃথিবীর সাথে।