যেসব বৈশিষ্ট্য থাকলে আপনিও পাল্টে দিতে পারেন পৃথিবী

সৃষ্টিশীল মানুষেরা একরোখা, অন্যের দেখানো পথে সচরাচর চলে না, ঘুরে দাড়ায়, প্রশ্ন করে, নতুন পথ তৈরি করে।

মানুষ কত প্রকার? সৃষ্টিশীলতার দিক থেকে বিচার করলে মানুষ দুই প্রকার। এক: যরা সৃষ্টিশীল, দুই: যারা সৃষ্টিশীল না। যারা সৃষ্টিশীল না তারা সাধারণ। এই সাধারণ শ্রেণীর মানুষের কোন বিশেষত্ব নেই, তারা আম জনতা। সবাই খায় তাই তারাও খায়, সবাই ঘুমায় তাই তারাও ঘুমায়, সবাই চাকরি করে তাই তারাও চাকরি করে। সবাই হেরে গেলে কাঁদে, তাই তারাও কাঁদে। এক কথায় এই শ্রেণীর মানুষ সবসময় অন্যের দেখানো পথে চলে।

সৃষ্টিশীল মানুষেরা একরোখা, অন্যের দেখানো পথে সচরাচর চলে না, ঘুরে দাড়ায়, প্রশ্ন করে, নতুন পথ তৈরি করে।  photo source: behindthehustle.com

কিন্তু সৃষ্টিশীল মানুষ সব সময় আলাদা। তারা একরোখা, অন্যের দেখানো পথে সচরাচর চলে না, ঘুরে দাড়ায়, প্রশ্ন করে, নতুন পথ তৈরি করে। আর এই ভিন্ন পথ অবলম্বী হওয়ার কারণে তাদের সব ক্ষেত্রে ঝুঁকি এবং বাধা আসে ক্ষণে ক্ষণে। এসব বাধা আর ঝুঁকিকে তারা প্রশ্ন করে, হটিয়ে দেয় আর সৃষ্টি করে পৃথিবীবাসির জন্য নতুন নতুন চমক।

কিন্তু সাধারণে বারংবার তাদের ভুল বুঝতে থাকে। কেননা, তারা তো নতুন পথের দিশা জানে না, তারা চেনা পথের অনুসারীকেই বাহবা দেয়। কিন্তু শেষ অব্দি সব বাধা অতিক্রম করে যখন একজন সৃষ্টিশীল মানুষ নতুন পথের সন্ধান দেয় তখন তিনি হয়ে ওঠেন সাধারণের চোখে ঈশ্বরতুল্য।

চলুন পৃথিবী পাল্টে দেওয়া সৃষ্টিশীল মানুষের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করি। তবে আগে ভাগেই বলে রাখছি, সৃষ্টিশীল মানুষের বৈশিষ্ট্যগুলো আমাদের সংজ্ঞায় সবসময় সাফল্য লাভের পথ বলে মনে নাও হতে পারে। মনে রাখবেন, আমি বলতে চেষ্টা করছি সৃষ্টিশীল মানুষের বৈশিষ্ট্য, আর্থিক বা ব্যক্তিক সাফল্য লাভের পথ নয়।

সৃষ্টিশীল মানুষের স্থিতিস্থাপক হওয়ার অসামান্য ক্ষমতা আছে।  photo source: tiny buddha

স্থিতিস্থাপকতা

শব্দটা দূরবোধ্য হয়ে গেল, না? স্থিতিস্থাপক অর্থ নমনীয়। যা বাকানো যায়, টানলে লম্বা হয়, চাপলে সংকুচিত হয়, কিন্তু ছেড়ে দিলে অর্থাৎ স্বাভাবিক হওয়ার সুযোগ দিলে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়। সৃষ্টিশীল মানুষের এই স্থিতিস্থাপক হওয়ার অসামান্য ক্ষমতা আছে। তারা যদি কোন কিছুর পিছে লাগে, তো কোনভাবেই তাদের সেখান থেকে নিবৃত করা যায় না। যদি তার হাতে তাৎক্ষণিক সেই কাজ বাস্তবায়নের সার্বিক প্রস্তুতি নাও থাকে, তো সুযোগের অপেক্ষা করে। সুযোগ পেলেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে লেগে পড়ে। তাকে জোর করে তার কাজ থেকে দূরে সরিয়ে রাখলেও সুযোগ পেলেই আবার তার কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

তারা সারাক্ষণ ভাবে নিজের সেরাটা যেন সে দিতে পারছেন না। তিনি আরও ভাল করতে চান। আরও বেটার কিছু দিতে চান।

অসন্তুষ্টি

না, এই অসন্তুষ্টি অন্যের উপর না, নিজের কাজের উপর। তারা সিংহভাগ ক্ষেত্রে নিজের কাজে সন্তুষ্ট হতে পারে না। তারা সারাক্ষণ ভাবে নিজের সেরাটা যেন সে দিতে পারছেন না। তিনি আরও ভাল করতে চান। আরও বেটার কিছু দিতে চান। আর তাই কোন কাজ শেষ করার পরও তা নিয়ে ভাবনা, গবেষণা অব্যাহত রাখেন। কিছুদিন বাদে আগের কাজটা নতুন করে আরও ভালভাবে করতে তৎপর হন। সৃষ্টিশীল মানুষের এই স্বাভাবটা তার চারপাশের মানুষের কাছে অস্বাভাবিক বলে মনে হয়, তার নিজের জন্যও এটা এক বিড়ম্বনা।

সৃষ্টিশীল মানুষের বসের নির্দেশ পালন করার মানসিক প্রস্তুতি থাকে না।   photo source: The Remarkable Leader

অনধীনস্থতা

এই শ্রেণীর মানুষ বেশিদিন কারো অধীনস্থ থাকতে পারে না। সোজা কথায়, বসের নির্দেশ পালন করার মানসিক প্রস্তুতি থাকে না। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পছন্দ করে, তাই এদের দ্বারা কখনো দীর্ঘমেয়াদী চাকরি করা সম্ভব হয় না। সবসময় আবিষ্কার আর নতুন কিছু করার নেশায় মত্ত সৃষ্টিশীল মানুষ যে কোন মুহূর্তে লাখ টাকা সেলারির চাকরি ছেড়ে দেওয়ার মানসিক ক্ষমতা রাখে। নতুন পথ খোঁজা এই মানুষগুলো আত্মকর্মসংস্থানের দিকে বেশি মনোযোগী হয় বলে জীবনে অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়, কখনো কখনো স্বীকার করতে হয় অবর্ণনীয় কষ্ট।

সৃষ্টিশীল মানুষেরা স্বপ্নবাজ।  photo source: partfaliaz

স্বপ্নবাজ

সৃষ্টিশীল মানুষেরা স্বপ্নবাজ। নতুন কিছু করার চিন্তা মাথায় এলে তা নিয়ে প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখতে থাকে। কাজ শেষ করার পর কী হবে তার বাস্তব রুপ স্বপ্নেই আবিষ্কার করে ফেলে। সেই স্বপ্ন পূরণ হতে না হতেই নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। আবার কখনো কখনো নতুন স্বপ্ন মাঝপথে ফেলে রেখে আরও একটা নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। এদের স্বপ্নের শেষ নেই, তাই অসম্পূর্ণ অনেকগুলো স্বপ্ন নিয়েই তারা পৃথিবী ত্যাগ করে।

অস্থির

সৃষ্টিশীল মানুষ কিছুটা অস্থির স্বভাবের। তারা বেশিদিন কোন নিয়ম বা অভ্যাসে থিতু থাকতে পারে না। কিছুদিন একটা অবস্থায় বা কাজে থাকলে তারা ক্রমশ অস্থির হয়ে ওঠে আর হাওয়া বদলের জন্য ব্যাকুল হয়ে যায়। সৃষ্টিশীল মানুষের পক্ষে আবিষ্কার করা সম্ভব হলেও বেশিলভাগ ক্ষেত্রে সেই আবিষ্কার নিয়ে ব্যবসা বা ক্রমাগত কাজ করে যাওয়া সম্ভব হয় না। সৃষ্টিশীল মানুষের এটা আরও একটা বিড়ম্বনা।

সৃষ্টিশীল মানুষের সময় জ্ঞান থাকে না।   photo source: Los Angeles Times

সময় জ্ঞানহীন

সৃষ্টিশীল মানুষের সময় জ্ঞান থাকে না। পছন্দের কাজ করার সুযোগ পেলে সময় জ্ঞান ভুলে কাজে মত্ত হয়ে থাকে। খাওয়া, ঘুম এমনকি অফিস টাইম ভুলে কেবল কাজই করে যায়। এই শ্রেণীর মানুষকে তার জানা কোন কাজ করতে দিলে সময়মত ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হলেও যখন পাওয়া যায় তখন সে ফলাফল হয় অসামান্য।

শিশুসুলভ

সৃষ্টিশীল মানুষের ছোট সংস্করণ দেখতে চাইলে শিশুকে দেখুন, বুঝে যাবেন সৃষ্টিশীল মানুষ কেমন হয়। এরা শিশুর মত কৌতুহলী, চঞ্চল, অল্পতেই বিরক্ত, আর সদা প্রাণবন্ত হাসি খুশি হয়ে থাকে। কাজ এবং জীবন নিয়ে সৃষ্টিশীল মানুষের আবেগ সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি।

নাইট গার্ড, সিধেল চোর, দিওয়ানা প্রেমিক আর সৃষ্টিশীল মানুষেরা সবাই রাত জাগে।  photo source: wildlife habitat

নিশাচর

নাইট গার্ড, সিধেল চোর, দিওয়ানা প্রেমিক আর সৃষ্টিশীল মানুষেরা সবাই রাত জাগে। সৃষ্টিশীল মানুষ রাত জেগে ভাবতে, কাজ করতে পছন্দ করে। পৃথিবী যখন ঘুমিয়ে থাকে সৃষ্টিশীল মানুষের তখন একে পাহার দেয় আর এর কল্যাণ সাধন করে আবার পৃথিবী যখন জেগে থাকে তখন সৃষ্টিশীল মানুষেরা ঘুমায়।

যখন যা নিয়ে ব্যস্ত থাকে তা সম্পূর্ণ মনোযাগ দিয়ে দেখে পর্যবেক্ষণ করে।  photo source: care2

পর্যবেক্ষক

এরা সবকিছু খুব ডিটেল দেখে। যখন যা নিয়ে ব্যস্ত থাকে তা সম্পূর্ণ মনোযাগ দিয়ে দেখে পর্যবেক্ষণ করে। কেননা, গভীর পর্যবেক্ষণই তাদের কাজকে বিশিষ্টতা দান করে।

এই বৈশিষ্টগুলো কি আপনার সাথে মেলে? যদি মেলে তো আপনি সৃষ্টিশীল মানুষ আর আপনার মধ্যে আছে আবিষ্কারের অপার সম্ভাবনা। আছে অনন্য হয়ে ওঠার সুপ্ত শক্তি। এই শক্তিকে কাজে লাগান, নিজের সাফল্যে নিজে বিস্মিত হয়ে যাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *