সাফল্যের পথ কতটা দীর্ঘ?

সাফল্যের পথ কত দীর্ঘ?

সাম্প্রতিক সময়ে সম্ভবত বাংলাদেশে সবচেয়ে চর্চিত শব্দ ‘সাফল্য’। পূর্বের যে কোনো সময়ের চেয়ে তরুণ প্রজন্ম এখন অনেক বেশি সচেতন। তারা স্বপ্ন দেখতে জানে, বিশ্বাস রাখতে জানে আর জানে স্বপ্ন জয়ের বাসনায় কলম্বাসের মত ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে অনিশ্চিত যাত্রায় বেরিয়ে পড়তে। কিন্তু এক বুক আশা নিয়ে অনিশ্চিত যাত্রায় সামিল হওয়ার পর অধিকাংশ তরুণ মাঝপথে গিয়ে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে, দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে হাঁপিয়ে ওঠে। কেউ কেউ রণে ভঙ্গ দিয়ে ফিরে আসে।

সাফল্যের পথ কত দীর্ঘ? photo: dreamsetachieve.com

সাফল্যের পথ কি আসলেই খুব দীর্ঘ? চলুন, আজ গজ ফিতা দিয়ে মেপে দেখি সাফল্যের পথ কতটা দীর্ঘ!

তরুণ প্রজন্মের চোখে মুখে হরেক রকম স্বপ্ন। কেউ ডাক্তার হতে চায়, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ পাইলট, কেউ ব্যাংকার, কেউ বড় ব্যবসায়ী, কেউবা চলচ্চিত্র অভিনেতা/অভিনেত্রী। কিন্তু এই হরেক রকম স্বপ্ন দেখতে দেখতে শেষ পর্যন্ত সিংহভাগ স্বপ্নবাজের জায়গা হয় কোনো সরকারী বা বেসরকারী অফিসের খুব সাধারণ কোনো চাকুরে ডেস্কে। কিন্তু কেন এমন হয়? কেন সবাই শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারে না?

পারে না, কারণ তারা স্বপ্ন দেখে সত্য কিন্তু স্বপ্ন আর সাফল্যের মধ্যকার দূরত্ব জানে না। চলুন, মেপে দেখি স্বপ্ন আর সাফল্যের দূরত্ব কত!

স্বপ্ন যত বড় হবে, শুরু থেকেই আপনাকে তত দূর্বার গতীতে ছুটতে হবে; photo: transportconsultancysolutions.com

গতি নির্ধারণ

ধরুন, আপনাকে বলা হল, ২৪ ঘন্টা সময় ব্যয় করে আপনি বাড়ি থেকে ২ কিলোমিটার দূরের ক্যাফেটেরিয়ায় অপেক্ষারত বন্ধুর সাথে দেখা করবেন। আপনি কি ২৪ ঘন্টা সময় ব্যয় করে ২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে কোনো উচ্চগতি সম্পন্ন যানবহনের ব্যবস্থা করবেন? নিশ্চয় না। বরং দুপুরে খাওয়ার পর খরগোস – কচ্ছপের গল্পের মত একটা আয়েশী ঘুম দিয়ে তারপর বের হবেন। কেননা মাত্র ২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য আপনার হাতে থাকা ২৪ ঘন্টা সময় অনেক বেশি।

কিন্তু যদি বলা হয় ঐ একই অর্থাৎ ২৪ ঘন্টা সময়ে নিউইয়র্কের কোনো এক ক্যাফেটেরিয়ায় অপেক্ষারত বন্ধুর সাথে দেখা করতে হবে। তবে নিশ্চয় দুপুরের ঘুমের কথা ভুলে যাবেন আর চটজলদি নিউইয়র্কগামী কোনো বিমানে চেপে বসবেন।

আসলে স্বপ্ন যত বড় হবে, শুরু থেকেই আপনাকে তত দূর্বার গতীতে ছুটতে হবে। সাফল্যের চূড়ায় তারাই পৌঁছাতে পারে, যারা স্বপ্ন দেখার শুরুতেই নিজের গতি ঠিক করে নিতে জানে। আপনার স্বপ্নের ক্যারিয়ার গড়তে হলে শুরু থেকেই নিজেকে স্বপ্নের উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালান, সাফল্য আসবেই।

আপনার হাতে সময় নির্দিষ্ট আর আপনাকে কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌছাতেই হবে। photo: rcn.com

থেমে না থাকা

কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাওয়ার অন্যতম পূর্বশর্ত হলো ক্যারিয়ার গঠনের কোনো স্তরে থেমে না থাকা। ধরা যাক, আপনি ব্যস্ত ঢাকা শহরের বাসিন্দা। আপনি শ্যামলী থেকে বাসে চেপে মতিঝিল যাবেন। শ্যামলী থেকে যে বাসটি সরাসরি মতিঝিল যায়, আপনি স্টপেজে পৌঁছানোর ঠিক পূর্বেই সেই বাসটা ছেড়ে গেছে। পরবর্তী বাস কখন আসবে জানা নেই। এ অবস্থায় আপনি যদি নিজেকে ‘এলিট’ ভেবে সুনির্দিষ্ট ওই বাসের পরবর্তি পরবর্তী কোচ আসার অপেক্ষা করেন। তাহলে আপনি ভুল করবেন। শেষ পর্যন্ত আপনি যথাযথ সময়ে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাতে নাও পারেন।

সুতরাং থেমে থাকা যাবে না। সামনে যে বাস পান, তাতে উঠে পডুন। নিকট দূরত্বে গিয়ে আবার বাস পাল্টে অন্য বাসে উঠুন। প্রয়োজনে আরও কয়েকবার বাস পাল্টান। মনে রাখবেন, আপনার হাতে সময় নির্দিষ্ট আর আপনাকে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাতেই হবে।

কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছাতে হলে যাত্রাপথের পুরোটা সময় নিজেকে এভাবে গতিশীল রাখতে হবে। আপনি শেষ পর্যন্ত হতে চান একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। কিন্তু তাই বলে পড়াশোনা শেষে সূচনা হিসাবে অন্য কোনো চাকরিতে ঢুকবেন না, এই ধারণা ভুল। পড়াশোনা শেষ করে কাঙ্ক্ষিত চাকরির জন্য বসে থাকাটা বোকমি। নিকট দূরত্বের বাসে চেপে বসার মত ছোট কোনো চাকরিতে যোগ দিন আর ব্যাংক জবের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকুন। তাতে অভিজ্ঞাতার পাল্লাও ভারি হবে এবং ব্যাংকে চাকুরী পাওয়াও সহজ হবে।

যাদের কাছে সুযোগ মুখ্য, কাজ গৌণ, তারা কখনো সুযোগ পায় না। আর যাদের কাছে কাজ মুখ্য, সুযোগ গৌণ, সুযোগ তাদের কিছু ছাড়ে না। photo: editor and publisher

সুবর্ণ সুযোগের অপেক্ষা

যদি ৫ লাখ টাকা পেতাম তবে একটা ব্যবসা শুরু করতাম। এই যদি হয় আপনার ব্যবসায়িক ধারণা তবে আপনি ব্যবসায়ী নন, শুধু সুযোগ অন্বেষণকারী। সুযোগ কখনো আপনা থেকে আসে না, সুযোগ তৈরি করতে হয়।

আমি বলতে চাইছি, সুযোগ পেলেই কেবল কাজ করব, না পেলে নয় – এই ধারণা থেকে বের হতে হবে। বরং ভাবতে হবে, আমি কাজটা করব, আর তার জন্য সুযোগ তৈরি করে নিব। যাদের কাছে সুযোগ মুখ্য, কাজ গৌণ। তারা কখনো সুযোগ পায় না। আর যাদের কাছে কাজ মুখ্য, সুযোগ গৌণ, সুযোগ তাদের পিছু ছাড়ে না।

কাজে নেমে পড়ুন, সাফল্যের পথ তৈরি হয়ে যাবে; Image Source: jeffshore.com

সুতরাং কবে ভাগ্য দেবতা মুখ তুলে চাইবেন আর আমি সাফল্যমন্ডিত হব। তার আশায় বসে থাকা বোকামি। কাজে নেমে পড়ুন, সাফল্যের পথ তৈরি হয়ে যাবে।

আসলে সাফল্যের কোনো সংক্ষিপ্ত পথ নেই। আবার নির্দিষ্ট দূরত্বও নেই। আছে কেবল সময়। সাফল্যের পথ বলতে তাই আমাদের বোঝা উচিত সময়কে যা সব অবস্থার জন্য ধ্রুব, নির্দিষ্ট এবং বহমান।

কর্মজীবন শুরু করতে মোটামুটিভাবে সব তরুণের সামনে সমান সময় থাকে। কিন্তু যা থাকে না তা হল গতি। যাদের প্রচেষ্টায় গতি থাকে, তারাই সফল হয়। সুতরাং সব মানুষের জন্য সাফল্যের দূরত্ব সমান। কেননা গন্তব্য মতিঝিল তো ব্যক্তি বিশেষের জন্য যাত্রাবাড়ি হয়ে যাবে না। প্রয়োজন উদ্যোম, প্রচেষ্টা আর গতি। তাহলেই দেখা দেবে সাফল্য নামের সোনার হরিণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *