স্নাতক ডিগ্রী ছাড়াও যে চাকরিগুলো থেকে উপার্জন করা সম্ভব

photo: webascender

চলুন চটজলদি এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে সফল কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং তাদের উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটু আলোচনা করি। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কোম্পানিগুলোর একটি মাইক্রোসফট। আমার বিশ্বাস মাইক্রোসফট তাদের সেবা বন্ধ করে দিলে পৃথিবীর কোটি কোটি কম্পিউটার এবং অফিস অকেজো হয়ে যাবে। এরপর বলুন তো, পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত এবং অভিজাত প্রযুক্তিপণ্য প্রতিষ্ঠান কোনগুলো? নিঃসন্দেহে অ্যাপলের নাম আপনি বলবেন। অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস।

photo: blog.pitchcv

এবার বলুন, পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত, সুপরিচিত এবং সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ ব্যবহারকারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কোনটি? নিঃসন্দেহে ফেসবুক! ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। বিল গেটস কয়েক বছর টানা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনী ব্যক্তি ছিলেন, মার্ক জাকারবার্গ এখন পৃথিবীর চতুর্থ শীর্ষ ধনী ব্যক্তি। উপরিউক্ত বিশ্বখ্যাত এই তিনজন উদ্যোক্তার কারো বিশ্ববিদ্যালয় সনদ নেই।

কাজেই আপনার বিশ্ববিদ্যালয় সনদ না থাকা নিয়ে কেন দুশ্চিন্তা করছেন? জীবনে সফল হতে সবক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় সনদের প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন হয় আত্মবিশ্বাস এবং দক্ষতার। আজকের নিবন্ধে এমন কয়েকটি চাকরি বা কাজ নিয়ে আলোচনা করবো যা করে উচ্চহারে বেতন পাওয়া যায় অথচ এই কাজগুলো পেতে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদের তেমন প্রয়োজন হয় না।

১. ওয়েব ডেভেলপার

প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা: সম্পর্কিত বিষয়ের কোর্স।

ইন্টারনেট ব্যবহার করেন এমন প্রতিটি মানুষই জানেন ওয়েবসাইট কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টারনেটের মাধ্যমে যারা ব্যবসা পরিচালনা করেন বা কোনো সুনির্দিষ্ট কাজ করেন, তাদের কাছে ইন্টারনেট সংযোগ এবং একটি ওয়েবসাইট খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাছাড়া দিনের পর দিন আমাদের প্রযুক্তির উপর নির্ভরতা ক্রমশ বাড়ছে। এমন বাস্তবতায় ওয়েব ডেভলপার সময়ের একটি প্রয়োজনীয় পেশা। অথচ এই কাজের জন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রী প্রয়োজন হয় না। শুধু সম্পর্কিত বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারলেই হয়।

photo: webascender

চাহিদা অনুযায়ী, ওয়েবসাইট তৈরি করা, ওয়েবসাইটের নকশা করা এবং এ সম্পর্কিত সার্বিক কাজ সম্পাদন করে প্রচুর টাকা আয় করা যায়। এমনকি বিশ্বখ্যাত অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানে উচ্চ বেতনে চাকরি করা ওয়েব ডেভলপারদের অনেকের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রী নেই, অথচ তারা লক্ষ ডলারের সম্মানী পেয়ে থাকেন। আপনার যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি না থাকে, কিন্তু কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহ থাকে, তবে আপনিও প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে একজন দক্ষ ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন।

২. বৈদ্যুতিক লাইন মেরামতকারী

প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা: উচ্চমাধ্যমিক, ডিপ্লোমা বা সমতুল ডিগ্রিধারী।

একবার চিন্তা করে দেখুন, বিদ্যুতের উপর আমাদের কতটা নির্ভরশীলতা। এই বিদ্যুৎ সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে প্রয়োজন হয় দক্ষ বিদ্যুৎ শক্তি সরবরাহ কর্মীর। এই কর্মীদের কাজ মূলত বিদ্যুৎ লাইন মেরামত করা ও নতুন লাইন স্থাপন করা।

photo: vault

এই কর্মী দলকে ফায়ার সার্ভিসের মতো সব সময় প্রস্তুত থাকতে হয়। এলাকার কোথাও বিদ্যুৎ লাইনে ত্রুটি দেখা দিলে দ্রুত সেখানে ছুটে যেতে হয়। অনেক দেশে বিদ্যুৎ লাইন রক্ষণাবেক্ষণকারীরা টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাপনাও কাজ করেন। ২০১২ সালের পরিসংখ্যান মতে, উন্নত বিশ্বে এই কাজ করে মাসে প্রায় ৬৩ হাজার মার্কিন ডলার আয় করা যায়।

৩. রূপসজ্জা শিল্পী

প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা: প্রশিক্ষণ

রূপসজ্জা শিল্পীদের কাজ হলো মঞ্চ নাটক, অভিনয়, চলচ্চিত্র বা এ জাতীয় প্রদর্শনীর পূর্বে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের চরিত্র অনুযায়ী যথার্থভাবে সাজিয়ে দেওয়া। নাটক ও চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী অভিনেতা-অভিনেত্রীদের খুব দ্রুত সাজিয়ে দিতে পারেন রূপসজ্জা শিল্পীরা।

photo: fee

তবে কাজ শুরু করার পূর্বে শিল্পীরা অভিনয়ের স্ক্রিপ্ট এবং অভিনেতার চরিত্র ভালোভাবে বুঝে নেন। এ কাজের জন্য অনেক উচ্চ বেতন পাওয়া যায়। অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে এই ক্ষেত্রে বেতনের অংকও বাড়তে থাকে। ইউরোপ আমেরিকায় রূপসজ্জা শিল্পীরা মাসে প্রায় ৬৫ হাজার মার্কিন ডলার আয় করে থাকেন। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে কোনো কোনো রূপসজ্জা শিল্পীর সম্মানী অপেক্ষাকৃত পশ্চাৎপদ দেশের প্রধান অভিনয় শিল্পীদের চেয়েও বেশি। বাংলাদেশেও দক্ষ রূপসজ্জা শিল্পীর প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

৪. গেমিং ম্যানেজার

প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা: মাধ্যমিক স্কুল পাস বা সমমান।

বিশ্বব্যাপী গেমিং শিল্প ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ইতিমধ্যে বিশ্ব বাজারে একটি বিরাট অর্থনৈতিক অবস্থান সৃষ্টি করেছে। এই খাতে যেমন বিনিয়োগ বাড়ছে তেমনি এই গেম পরিচালনার জন্য কর্মীর চাহিদাও বাড়ছে। অবশ্য এখন পর্যন্ত ক্যাসিনো বা এজাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে এমন কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। এই কাজের জন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রী প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র মাধ্যমিক স্কুল পাশের সার্টিফিকেট থাকলেই চলবে।

photo: starboard prokids

যদিও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে এই চাকরি করা সম্ভব না। কিন্তু এদেশের অনেকেই প্রবাসে গিয়ে এই চাকরিতে নিয়োজিত হয়েছেন এবং উচ্চহারে বেতন পাচ্ছেন। ২০১২ সালের এক পরিসংখ্যান মতে, উন্নত বিশ্বে এই কাজ করে ৬৫ হাজার মার্কিন ডলারের উপরে সম্মানী পাওয়া যায়।

৫. কার বা বাইক চালক

প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা: মাধ্যমিক স্কুল পাস বা সমমান। সাথে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও নিজস্ব গাড়ি।

আপনার যদি বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রী না থাকে কিন্তু ড্রাইভিং লাইসেন্স ও নিজস্ব কার বা বাইক থাকে তবে আপনি আজই রোজগারে নেমে পড়তে পারেন। আন্তর্জাতিক কিছু রাইডিং সার্ভিসের পাশাপাশি দেশীয় অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে এই খাতে বিনিয়োগ করা শুরু করেছে। আপনার নিজস্ব কার বা বাইক থাকলে আপনি কোনো একটি রাইড শেয়ারিং কোম্পানিতে রেজিস্ট্রেশন করে কাজে নেমে পড়তে পারেন।

photo: medium

সারাদিন বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীদের পৌঁছে দিয়ে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ রোজগার করতে পারেন। বাংলাদেশী যেকোনো রাইড শেয়ারিং কোম্পানিতে বাইক নিয়ে যোগ দিলে মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার এবং কার নিয়ে যোগ দিলে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা রোজগার করা সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *