বর্তমান সময়ের বিবেচনায় ৪ বছর মেয়াদী স্নাতক ডিগ্রি থাকলেই যে কাঙ্ক্ষিত চাকরি পাওয়া যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ইকোনমিক পলিসি ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতক ডিগ্রিধারী বেকারের সংখ্যা ৮ দশমিক ৫ শতাংশ, যা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই হার ২০০৭ সালে ছিল ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। আমেরিকার শ্রমবাজার বলছে, ২০১৪ সালের প্রথমার্ধেই প্রায় ৭ মিলিয়ন কর্মসংস্থানের অভাব ছিল, বর্তমানে যা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে!

photo: slapp makers

অপরদিকে কর্মসংস্থান ঘাটতির অর্থ এই নয় যে, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই। হাজার হাজার স্নাতক ডিগ্রিধারী বেকার থাকলেও এমন অনেক কাজ আছে যা করে বিপুল পরিমাণ টাকা রোজগার করা যায় অথচ সেসব কাজ করতে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রীর প্রয়োজন হয় না। আপনার কি কোনো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রী নেই? আপনি কোনো চাকরি পান না? আত্মীয়-স্বজন এবং আপনজনদের কাছ থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখেন? তাহলে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে এই অপার সম্ভাবনাগুলো।

কয়েক পর্বে আমি এমন কিছু চাকরি নিয়ে আলোচনা করবো যা পেতে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রী প্রয়োজন হয় না। কিন্তু আপনি সম্মানের সাথে এইসব ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন এবং সফল হতে পারেন।

১. ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী

প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা: মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক ডিগ্রি বা সমমান

সবাইকে অন্যের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। তাই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক ডিগ্রিধারীরা চাইলে নিজেই নিজের বস হয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন। নিজের ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করতে এবং তা পরিচালনা করতে কোনো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রী প্রয়োজন নেই। যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি অফিসের ২০১৪ সালের এক প্রতিবেদন মতে, সেদেশের পাইকারি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ৪৫৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে।

photo: the american genius

যদিও নিজের ক্ষুদ্র ব্যবসায় সফল হতে কিছুটা দীর্ঘমেয়াদী প্রচেষ্টা চালাতে হবে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো নিজের ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনার কোনো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রীর প্রয়োজন নেই। এমনকি সফল হওয়ার পর একসময় আপনার প্রতিষ্ঠানে আপনি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রীধারীদের নিয়োগ দিতে পারবেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা গড়ে মাসিক প্রায় ৫১ হাজার মার্কিন ডলার আয় করে।

২. নেটওয়ার্ক বিশেষজ্ঞ

প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা: সম্পর্কিত বিষয়ে বিশেষ কোর্স।

বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রী না থেকেও উচ্চ বেতন পাওয়া মতো অন্যতম একটি চাকরি হলো নেটওয়ার্ক বিশেষজ্ঞ। কম্পিউটারের ব্যাপারে আগ্রহ থাকলে এবং কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং বিষয়ে সম্যক জ্ঞান থাকলেই এই চাকরি পাওয়া সম্ভব। সাধারণত এই চাকরিতে বিভিন্ন নেটওয়ার্কিং এলাকার মধ্যে ইন্টারনেট সংযোগের সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করতে হয়, অর্থাৎ মূল নেটওয়ার্কের সাথে স্থানীয় নেটওয়ার্কের সমন্বয় করতে হয়।

photo: savate training

সাথে সাথে এ সম্পর্কিত বিষয়গুলো সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা, সংশ্লিষ্ট বিষয় বিশ্লেষণ করা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা এবং যেকোনো সমস্যা হলে তা দ্রুত সমাধান করা এই কাজের মূল দায়িত্ব। এই কাজটি করার জন্য আপনি কোনো নেটওয়ার্কিং প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান থেকে স্বল্পমেয়াদী কোর্স করতে পারেন।

২০১২ সালের হিসাব অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই চাকরি করে মাসে প্রায় ৫৯ হাজার মার্কিন ডলার আয় করা যায়। বাংলাদেশেও এখন এই খাতে অসংখ্য উদ্যোক্তা এগিয়ে এসেছেন। সুতরাং আপনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেশি। শুধু কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং সম্বন্ধে একটু অভিজ্ঞতা অর্জন করেই আপনি এই চাকরির জন্য চেষ্টা করতে পারেন।

৩. ঋণ কর্মকর্তা

প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা: উচ্চমাধ্যমিক বা সমমান।

সাধারণত ক্ষুদ্র এবং মাঝারি পর্যায়ের ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলোতে এই পদে চাকরি করা যায়। ঋণদানকারী সংস্থার কাছে ঋণ চেয়ে সাধারণ মানুষের করা আবেদন যাচাই-বাছাই, পর্যবেক্ষণ এবং তার ভিত্তিতে উর্ধ্বতনকে অবহিত করাই এই কর্মকর্তার কাজ। সাথে সাথে তিনি আগ্রহীদের ঋণ সম্পর্কিত পরামর্শ, প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে থাকেন এবং কখনও কখনও সম্ভাব্য ঋণগ্রহীতাদের কাছে প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন করে থাকেন।

photo: realty biz news

ঋণ কর্মকর্তা বিভিন্ন ঋণদানকারী কোম্পানি, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিলারশিপ নিয়েও কাজ করতে পারেন। ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের সাহায্যকারী কর্মী হয়ে কাগজপত্র প্রস্তুত করা এবং ঋণ সরবরাহ নিশ্চিত করাও এই কর্মকর্তার দায়িত্বের আওতায় পড়ে। তবে এক্ষেত্রে আপনার ভালো সাংগঠনিক এবং ব্যক্তিগত যোগাযোগ দক্ষতা থাকতে হবে। ২০১২ সালের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উন্নত বিশ্বে এই কাজ করে মাসে প্রায় ৬০ হাজার মার্কিন ডলার সম্মানী পাওয়া যায়।

৪. নকশা শিল্পী 

প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা: মাধ্যমিক বা সমমান ডিগ্রী।

বর্তমান সময়ে সব কোম্পানির একটি করে নকশা বিভাগ থাকে। সেখানে দক্ষ এক বা একাধিক শিল্পীর প্রয়োজন হয়। শিল্পীদের জন্য এটা একটি চমৎকার সুযোগ। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রী ছাড়াই শুধুমাত্র নকশার দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে যে কেউ এই চাকরি পেতে পারে।

photo: youtube

আপনি যদি সৃজনশীল হয়ে থাকেন এবং আঁকাআঁকি পছন্দ করেন; দেওয়াল লিখন, কাগজে কোনো কিছু আঁকা, স্কেচ করা এবং ভালো নকশার দক্ষতা থাকে তাহলে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে একটি চমৎকার সম্মানজনক পেশা। ২০১২ সালের পরিসংখ্যান মতে, উন্নত বিশ্বে বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করে শিল্পীরা মাসিক প্রায় ৬০ হাজার ডলার সম্মানী পেয়ে থাকে।

৫. মহাকাশ প্রকৌশলী ও অপারেশন টেকনিশিয়ান

প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা: সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষ কোর্স।

বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি না থেকেও বিমান সংস্থায় চাকরি পাওয়া যায় এবং উচ্চ বেতন পাওয়া যায়। আপনার যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রী না থাকে তাহলে কোনো বৈমানিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে সংক্ষিপ্ত কোর্স করে মহাকাশ প্রকৌশলী ও অপারেশন টেকনিশিয়ান পদে আপনি চাকরি পেতে পারেন।

photo: study in belarus

এই কাজে যোগ দেওয়ার পর আপনাকে উড়োজাহাজ বা মহাকাশযান রক্ষণাবেক্ষণ, উন্নয়ন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং এর উৎপাদন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজ করতে হবে। উড়োজাহাজ বা মহাকাশযানের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা এবং প্রযুক্তিবিদদের কাজে সহযোগিতা করা আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়বে।

উন্নত বিশ্বে এই কাজ করে মাসে প্রায় ৬১ হাজার ৫০০ ডলারের ওপরে সম্মানী পাওয়া যায়। বাংলাদেশেও অনেক বেসরকারি বিমান কোম্পানি ইতিমধ্যে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং প্রতিনিয়ত তাদের বিমানের সংখ্যা বাড়ছে। আপনিও চাইলে এই পদে চাকরি নিতে পারেন।