আপনার প্রতিটি সকাল অস্বস্তি দিয়ে শুরু হয়! ঘুম ভাঙার পরও আপনি ইচ্ছা করে দীর্ঘ সময় বিছানায় শুয়ে থাকতে। তারপর অলসভাবে বিছানা ছেড়ে কাঠি দিয়ে দাঁতের ময়লা পরিষ্কার করতে শুরু করেন! এইসব অলস কাজ করেন আর নিজেকে নিয়ে অজানা অস্বস্তিতে ভোগেন। মাঝে মাঝে হয়তো আপনার মনে হয়, আপনার এই জীবন এবং আপনাকে প্রচন্ড রকম ঘৃণা করেন আপনি! কিন্তু কেন?

আসলে মানুষ এত কিছু করে কাজে না যাওয়ার বাহানায়। আপনার বর্তমান চাকরিটা আপনি খুব অপছন্দ করেন। মাঝে মাঝে আপনার মনে হয়, এক্ষণি যদি পদত্যাগপত্র দিয়ে আসতে পারতাম, খুব ভালো হতো!

photo: askmen

বাস্তবতা হলো চাকরি যতই অপছন্দনীয় হোক, আমরা চাইলেই যেকোনো মুহূর্তে এই চাকরি থেকে পালাতে পারি না। কেননা এই চাকরির রোজগারের উপর নির্ভর করে চলতে হয় আমাদের, দৈনন্দিন সব প্রয়োজন মেটাতে হয়। কিন্তু করণীয় কী? এই অস্বস্তি থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় কী? নিজের চাকরি অপছন্দের হলে কী কী করার আছে?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার আগে চলুন অনুসন্ধান করি কেন এমন হয়; বর্তমান চাকরি থেকে পদত্যাগ করা কঠিন, আবার স্থায়ী হওয়া তার চেয়েও কঠিন!

চাকরি নিয়ে রোজ অশান্তি আর অস্বস্তি শুধুমাত্র আপনাকেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে না, বরং আপনাকে ঘিরে থাকা মানুষগুলোকেও ক্রমশ বিরক্ত করে তোলে। রোজ এই অশান্তি ভোগ করা আপনার এবং আপনার পরিবারের সবার জন্য খুবই ক্ষতিকর।

photo: interview-coach

তারপরও কেন এমন হয়? সম্ভবত আপনি কোনোভাবেই আপনার বর্তমান কাজের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছেন না। তাই আপনি আপনার বর্তমান চাকরি প্রচন্ড রকম অপছন্দ করেন। এক্ষেত্রে আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, অপছন্দনীয় হওয়ার পরও অস্বস্তিকর এই চাকরি করে যাওয়ার অর্থ হলো আপনি অদূর ভবিষ্যতে খুব বড় ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে চলেছেন, যা আপনার জন্য খুবই নিদারুণ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। সুতরাং এখনই আপনার ভিন্ন কোনো পথ খোঁজা উচিত।

অপছন্দনীয় হওয়ার পরও মানুষ কেন তাদের চাকরি চালিয়ে যায়, আমরা এ বিষয়ে গবেষণা করেছি এবং পাঁচটি বড় কারণ উদঘাটন করেছি। নিচে সে কারণগুলো আলোচনা করা হলো। যেসব কারণে অপছন্দনীয় চাকরিও মানুষ দিনের পর দিন ধৈর্য্য ধরে করে যায়।

১. নতুন কিছু পরখ করায় ভয়

অপছন্দ করার পরও বিদ্যমান চাকরিতে কর্মীদের বহাল থাকার একটি বড় কারণ হল নতুন চাকরি খুঁজে পাওয়া, না-পাওয়ার ভয়।

photo: kosovapost

তারপরও বাধ্য হয়ে চাকরিতে বহাল থাকেন। চাকরিটা ছেড়ে দেবো, এই ভাবনা ভাবতে ভাবতেই কেউ কেউ অবসর গ্রহণের প্রান্তে চলে আসেন। আবার কেউ মাঝ বয়সে নতুন চাকরি না পাওয়ার অনিশ্চয়তায় অপছন্দ সত্বেও পূর্বের চাকরিতে বহাল থাকে।

সুতরাং নতুন করে চাকরি খোঁজা ও নতুন করে শুরু করার ভয়ে বেশিরভাগ মানুষ অপছন্দ সত্ত্বেও পূর্বের চাকরিতে বহাল থাকে।

২. অর্থনৈতিক উদ্বেগ

সাধারণত অন্যের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ। এই মানুষগুলোর দৈনন্দিন খরচ, শিক্ষা, চিকিৎসা, মাস শেষে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সেবার বিল এবং কারো কারো ঋণের বোঝা – সবসময়ই তাদের একটা অর্থনৈতিক উদ্বেগের মধ্যে রাখে।

photo: digiday

তাদের দৈনন্দিন এইসব সমস্যা সমাধা করতে চাকরি থেকে পাওয়া মাস শেষের বেতনের উপর নির্ভর করতে হয়। তাদের এই ক্ষীণ অর্থব্যবস্থা ভয়ানক রকম ক্ষতিগ্রস্ত হবে যদি অপছন্দের কারণে যেকোনো মুহূর্তে তারা চাকরি ছেড়ে দেয়। সুতরাং অপছন্দ সত্ত্বেও চাকরি না ছাড়ার এটি আরও একটি বড় কারণ।

৩. চাকরির বাজারে মন্দা

মধ্যবিত্তের চাকরি যেন সোনার হরিণ! দেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সাথে সমানতালে কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হয়নি। সে কারণে চাকরির বাজারে একটা বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। তাই বর্তমান চাকরি ছাড়লে খুব দ্রুতই যে নতুন একটি চাকরি পাওয়া যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। হয়তো কয়েক মাস অথবা বছরব্যাপী বেকার থাকতে হতে পারে। এই কারণে বর্তমান চাকরি অপছন্দনীয় হলেও বেশিরভাগ মানুষ তা ছাড়ে না।

photo: flexjobs

৪. এটিই বাস্তবতা

বেশিরভাগ মানুষ ভাবে, আমি আমার কাজকে ঘৃণা করি তাতে কার কী? সারা পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছে যারা তাদের কাজকে ঘৃণা করে, কিন্তু ঘৃণা করে আপনার কিই-বা করার আছে? এটাই বাস্তবতা! এটা জীবনেরই অংশ। আপনি যা করে জীবিকা নির্বাহ করেন তা পছন্দ করার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তার অর্থনৈতিক মূল্য।

বর্তমান চাকরি যদি আমার অর্থনৈতিক মুক্তি দেয়, আমার পরিবারের মুখে তিন বেলা খাবার তুলে দেয়, তাহলে তা অপছন্দ হলেই বা কী! বরং এটাই সত্য, এটাই বাস্তবতা।

৫. সব চাকরি একইরকম

মানুষের সর্বশেষ অভিযোগ হলো, সব চাকরি আসলে সমান। অন্যের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলে নানান কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কাজেই চাকরি নিজের পছন্দ হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। তাছাড়া অপছন্দনীয় বস, প্রতিযোগিতাপ্রবণ সহকর্মী এবং মতানৈক্যের কর্মপরিবেশ; এগুলো সব চাকরির বাস্তবতা।

photo: protempss

সুতরাং চাকরি ছেড়ে কী হবে, বরং যত কষ্টই হোক চাকরিটা চালিয়ে যেতে হবে। তাহলে আর কিছু হোক আর না হোক অর্থনৈতিক মুক্তি অন্তত আসবে।

মোটামুটিভাবে, কর্মক্ষেত্র ও কর্ম অপছন্দনীয় হওয়া সত্ত্বেও এইসব কারণে মানুষ নানান দুঃখ কষ্ট সহ্য করেও চাকরিতে বহাল থাকেন। আজ এ পর্যন্তই। পরবর্তী নিবন্ধে অপছন্দনীয় চাকরির ক্ষেত্রে কী কী করনীয় তা নিয়ে আলোচনা করার আশা রাখছি।