স্বভাবসুলভ বিরক্তিকর মানুষের সাথে যেমন আচরণ করা উচিত

বিরক্তিকর মানুষ মানেই খারাপ মানুষ নয়। আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে যারা স্বভাবসুলভ বিরক্তিকর, অর্থাৎ তার আচরণ এবং ক্রিয়া-কলাপ সাধারণের চোখে বিরক্তিকর। এমন মানুষ নিশ্চয়ই আপনার পছন্দনীয় নয়। স্বভাবতই এমন মানুষের সাথে যোগাযোগ করলে আপনি বিরক্ত হয়ে যাবেন। আবার কেউ কেউ সাহায্যের প্রয়োজনে বিরক্ত করেন। এক্ষেত্রে তাকে যথাযথ সাহায্য করলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আমি ইতিপূর্বে একটি নিবন্ধে বিরক্তিকর মানুষকে নিয়ন্ত্রণের কিছু কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছি। আজকের নিবন্ধ এমন কিছু বিরক্তিকর মানুষ এবং অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করবো যারা সত্যিকারঅর্থে আপনাকে বিরক্ত করতে চায় না।

photo: rd

নিশ্চয়ই প্রশ্ন জেগেছে তাহলে কেন তার আপনার বিরক্তির কারণ হয়? আশা করি নিবন্ধটি সম্পূর্ণ পড়লে উত্তর পেয়ে যাবেন। সাথে আরও জানতে পারবেন কিভাবে এমন বিরক্তিকর মানুষদের নিয়ন্ত্রণ করবেন।

১. ব্যক্তিগতভাবে নিবেন না

কোনো কোনো ব্যক্তির বিরক্তিকর অভ্যাস থাকে। সে শুধুমাত্র আপনাকে বিরক্ত করছে এমন নয়, অন্যদের সাথেও সে একই রকম আচরণ করে থাকে। যেমন আপনার সব বন্ধুর মধ্যে হয়তো এমন কোনো বন্ধু থাকতে পারে যে প্রচন্ড মাত্রায় নেতিবাচক মানসিকতার। আপনাদের দুজনের মধ্যে আলাপ চলাকালে সে নানান রকম নেতিবাচক ক্রিয়াকলাপ প্রদর্শন করবে। আপনার হয়তো মনে হতে পারে সে আপনার ব্যাপারে কোনো কিছু অপছন্দ করে।

photo: publico

কিন্তু আপনি যদি অন্য বন্ধুদের সাথে তার আচরণ দেখেন তবে স্পষ্ট বুঝতে পারবেন সুনির্দিষ্ট কারো সাথে তার কোনো বিরোধ নেই, তার বিরোধ আসলে নিজের সাথে। সে নিজেই নেতিবাচক মানসিকতার মানুষ। তাই সবকিছুতেই নেতিবাচকতার ইঙ্গিত খুঁজে পায়। এমন বন্ধু, আত্মীয় বা সহকর্মীর আচরণ ব্যক্তিগতভাবে নিবেন না। তার সকল আচরণ তার বৈশিষ্ট্যের অংশ হিসেবেই ধরে নিন, তাহলে এই সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন।

২. অন্যদের ক্রিয়াকলাপ পর্যবেক্ষণ করুন

বিরক্তিকর মানুষকে অন্যরা কিভাবে নিয়ন্ত্রন করে তা জানার চেষ্টা করুন। ধরা যাক আপনার কোনো সহকর্মী আপনার বিরক্তির কারণ। ভাল করে পর্যবেক্ষণ করলে দেখবেন, সে শুধু আপনাকে বিরক্ত করে না, স্বভাবগত কারণে সে সবাইকেই বিরক্ত করে।

এক্ষেত্রে আপনি সুকৌশলে লক্ষ্য করুন অন্যরা তার সাথে কিভাবে যোগাযোগ করে। তৃতীয় অবস্থান থেকে পর্যবেক্ষণ করলে অন্যদের দেখে তাকে নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল আপনি পেয়ে যাবেন। এরপর থেকে তার সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে অন্য ব্যক্তিদের ব্যবহার করা কৌশল সূক্ষ্মভাবে ব্যবহার করুন। আপনি খুব সহজেই এভাবে কোনো বিরক্তিকর সহকর্মীকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

photo: aliwaa

যদি সে আপনার উর্ধ্বতন হয়, তবুও কৌশলী হয়ে আপনার সকল যোগাযোগ দক্ষতা ব্যবহার করুন। বিরক্তিকর ব্যক্তি যদি আপনার পরিবারের সদস্য বা কোনো আত্মীয় হয়, তাহলে লক্ষ্য করুন পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠরা তাকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। বয়োজ্যেষ্ঠদের থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে আপনি নিজের সম্পর্কের ভিত্তিতে কৌশলী হয়ে তার সাথে যোগাযোগ করুন। দেখবেন সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

অফিস, পরিবার বা বন্ধু মহল, সমস্যা যেখানেই হোক, কোনো বিষয়কে ব্যক্তিগতভাবে গ্রহণ না করে অন্যদের মতো করে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করুন। কেননা আপনি চাইলেই সহকর্মী, পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুদের ত্যাগ করতে পারবেন না। সুতরাং কৌশলী হয়ে মানিয়ে চলায় শ্রেয়।

৩. উদারপন্থী হোন

কখনো কখনো মানুষ একই ভুল বারবার করে জানার অভাবে। এক্ষেত্রে আপনাকে উদারপন্থী হতে হবে। আপনাকে বিরক্ত করা ব্যক্তি কী বলতে চায়, কেন বলতে চায়, তা স্পষ্ট করে শুনুন। তার প্রতি কিছুটা দয়াশীল হোন। তাকে সমস্যা সমাধানে সাহায্য করুন। বিরক্তি বন্ধ করার এটি একটি চমৎকার কৌশল হতে পারে।

photo: opus meeting rooms

আপনি একজন বিরক্তিকর ক্রেতাকে একদিন দীর্ঘক্ষণ সময় দিয়ে তার সমস্যার সমাধান করে দিন। এরপর দেখবেন সে আপনাকে আর বিরক্ত করছে না। আগে যে সমস্যার সমাধান করতে দীর্ঘ সময় ব্যয় করতে হয়েছে, এরপর থেকে আপনি একটি ছোট্ট মেসেজ দিয়ে সেই সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। একটা সময় তাকে আর সাহায্য করার প্রয়োজন হবে না।

সুতরাং মনে রাখতে হবে, সব মানুষ বিরক্তিকর নয়। কিছু মানুষ সমস্যায় পড়ে বিরক্ত করে। তার সমস্যার সমাধান করে দিলেই বিরক্তি দূর হয়ে যাবে।

৪. সাহায্য করুন

বিরক্তির অন্তরালে কখনো কখনো সাহায্যের আবেদন থাকে। সুতরাং বিরক্ত করা মানুষের কোনো সাহায্যের প্রয়োজন থাকলে তাকে সাহায্য করুন। অনেক সময় সাহায্যের প্রয়োজন হওয়া সত্ত্বেও মানুষ স্পষ্ট করে তার প্রত্যাশার কথা বলতে পারে না। আপনি বিচক্ষণ হলে নিশ্চয়ই তার সমস্যা বুঝতে সক্ষম হবেন এবং তাকে সাহায্য করতে পারবেন।

অনেক সময় মানুষ জটিল সমস্যায় পড়ে, কিন্তু কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করবে তা বুঝে উঠতে পারে না। কিন্তু আপনাকে সম্ভাব্য সাহায্যকারী জ্ঞান করে বিরক্ত করতে শুরু করে। আপনি যদি এমন বিরক্তিকর মানুষকে উপেক্ষা করেন বা দুষ্কৃতিকারী ভাবেন তাহলে আপনার ভুল হবে।

photo: corporate compliance insights

বস্তুত ব্যক্তিগতভাবে তিনি আপনাকে বিরক্ত করতে চান না। তিনি শুধু সমস্যাটির সমাধান চান। প্রয়োজনে তার কাছে স্পষ্ট করে জানার চেষ্টা করুন তার সমস্যা কী এবং সম্ভব হলে যথাযথভাবে তার সমস্যার সমাধান করে দিন। দেখবেন এই বিরক্তিকর মানুষটি আপনার সবচেয়ে ভালো বন্ধুতে পরিণত হবে।

বিরক্তিকর মানুষ সব সময় খারাপ হয় না। আবার স্বভাবিকভাবে সব মানুষ বিরক্তিকর হয় না। সুতরাং বিরক্তির কারণ বুঝে তবেই বিরক্তিকর মানুষের সাথে যোগাযোগ করুন এবং তার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন। দেখবেন, বিরক্তিকর মানুষের সাথে যোগাযোগ সহজ হয়ে যাবে, আর আপনার বিরক্তিও দূর হবে।

মোস্তাফিজুর রহমান: তরুণ কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট এবং সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা যশোরে। পৈতৃক নিবাস যশোরের সদর থানার খোজারহাট গ্রামে। বাবা-মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান সবার বড়। লেখাপড়া করেছেন যশোরের খোজারহাট মাধ্যামিক বিদ্যালয়, ছাতিয়ানতলা চুড়ামনকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ডা: আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ এবং ঢাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার প্রকৌশল নিয়ে পড়াশোনা করলেও আত্মনিয়োগ করেছেন সাহিত্য সাধনা এবং সাংবাদিকতায়। শিল্প-সাহিত্যের প্রতি তীব্র অনুরাগী মোস্তাফিজুর রহমান স্কুল জীবন থেকেই লেখালেখি করেন। বাংলাদেশ ও কলকাতার সাহিত্য পত্রিকা, দৈনিক এবং ম্যাগাজিনে লিখে থাকেন। এছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে দৈনিক পত্রিকায় কলাম লেখেন নিয়মিত। ২০০৯ সাল থেকে সাংবাদিকতার সাথে জড়িত, একটি অনলাইন পত্রিকা সম্পাদনাসহ কাজ করেছেন বিভিন্ন পত্রিকায়। সাম্প্রতিককালে তারুণ্য, শিল্প-সাহিত্য, চলচ্চিত্র এবং ট্রেন্ডিং বিষয় নিয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে আলোচনা করেন। ইউটিউব সহ সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মোস্তাফিজুর রহমানকে @MustafizAuthor ইউজারে খুঁজে পাওয়া যাবে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘দ্বন্দ ও পথের খেলা’ প্রকাশিত হয়। _____________________________________________________________________________________________________________________________________________________________ find him everywhere @MustafizAuthor | email: mustafizauthor@gmail.com