আমরা জীবনের তিনভাগের এক ভাগই ঘুমিয়ে পার করি। কেউ যদি ৬০ বছর বাঁচে তাহলে তার জীবনের প্রায় ২০ বছর ঘুমিয়েই কেটেছে। অনেক বড় একটা সময় তাই না! তাহলে এই সময়টাতে আপনি কী করছেন-কীভাবে ঘুমাচ্ছেন, কীভাবে ঘুমাতে যাচ্ছেন তার উপর আপনার শারিরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য অনেকাংশে নির্ভরশীল।

তাহলে আপনাকে যা করতে হবে তা হচ্ছে, ঠিকমত ঘুমাতে হবে, ঠিকমত ঘুমাতে যেতে হবে। নাহলে আপনি সুস্থ থাকবেন না। আজ তাই আমাদের ঘুমজনিত সমস্যা ও এর সমাধান নিয়েই আলোচনা করবো। কীভাবে ঘুমালে আপনি ঘাড় ব্যথা, পিঠ ব্যথা, কোমর ব্যথাসহ আরো অনেক ধরনের সমস্যাই এড়িয়ে যেতে পারবেন

১। কাধে ব্যথা

ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখলেন কাধে প্রচন্ড ব্যথা। তাহলে পাশ ফিরে শোয়া বন্ধ করুন, বিশেষ করে যে পাশে ব্যথা সেই পাশে তো অবশ্যই না। পেটের উপর ভর দিয়ে শোয়া ঠিক না। কারণ এর ফলে কাধের অবস্থান খারাপ হয়। ঘুমানোর সবচেয়ে ভালো দেহভঙ্গি হচ্ছে পিঠের উপর শোয়া। মাথার নিচে একটি বালিশ দিন এবং পেটের উপরে একটি বালিশ রেখে জড়িয়ে ধরুন। আপনার কাধ এই অবস্থাতেই সবচেয়ে ভালো থাকবে।

Image result for shoulder pain when sleeping

কাধের ব্যথা নষ্ট করতে পারে আপনার ঘুমের আনন্দ। Image source  – Unilad

যদি পিঠের উপর ঘুমাতে অসুবিধা হয় কিংবা ভলো না লাগে তাহলে – যে পাশে ব্যথা নেই সেই পাশে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। পা একটু উচু করে হাঁটুর নিচে বালিশ দিয়ে নিন। তাহলে আরাম পাবেন। কাধের ব্যথা হবে না। তবে মাথার নিচে হাত দিয়ে ঘুমানো উচিত নয়।

২। পিঠে ব্যথা

পিঠে ব্যথা থাকলে নিয়ম মেনে ঘুমান, ভাল থাকবেন। ছবিসুত্র – howsleepworks

যদি আপনার পিঠে ব্যথা থাকে তাহলে ঘুমানোর সময় মেরুদন্ডকে খুব বেশি না বাঁকিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় রাখাটা খুব জরুরি। যদি আপনার বিছানা খুব বেশি নরম হয় তাহলে একে বদলে ফেলুন। আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে পিঠের উপর ঘুমানো। হাঁটুর নিচে একটি বালিশ দিয়ে নিন যাতে মেরুদন্ডের বাঁকাটি স্বাভাবিক থাকে। পায়ের পেশিকে শিথিল করে দিন। আরো ভালো হয যদি একটি টাওয়েল পাকিয়ে কোমরের নিচে দিয়ে নেন। যদি পেটে ভর দিয়ে ঘুমাতে পছন্দ করেন তাহলে পেট ও কোমরের মাঝখানে একটা বালিশ দিয়ে নিন যাতে পিঠের পেশি খুব বেশি নড়াচড়া না করে। পাশ ফিরে শোয়া বেশি পছন্দ করলে পা কে বুকের কাছাকাছি এনে দুই হাঁটুর মাঝে বালিশ দিয়ে নিন। আরামে ঘুমাতে পারবেন।

৩। ঘাড় ব্যথা

ঘাড়ের ব্যথা নিত্য একটি সমস্যা। Image source- harvard health publications

যাদের ঘাড়ের ব্যথা আছে তাদের জন্য এক বালিশে পিঠের উপর শুয়ে এবং দুই হাতের নিচে দুটি বালিশ দিয়ে ঘুমানো সবচেয়ে ভালো। আর বালিশ পছন্দের বিষয়েও একটু সচেতন হতে হবে। খুব ভালো হয় যদি অর্থোপেডিক বালিশ বা কোলবালিশের মত রোল বালিশ ব্যবহার করতে পারেন। পাশ ফিরে ঘুমালে বালিশ যেন খুব বেশি উঁচু না হয় সেটা খেয়াল রাখবেন।

বিশেষ করে ৬ ইঞ্চির চেয়ে উঁচু যেন না হয়। আসলে বালিশের উচ্চতা আপনার কাধের দৈর্ঘের অর্ধেক হলে সেটা ঘাড়কে সঠিক অবস্থানে রাখতে পারবে।যার ফলে ব্যথা হবে না। যদি পেটে ভর দিয়ে সরিসৃপের মত ঘুমান তাহলে বালিশ যত পাতলা হবে ততই ভালো। কিন্তু এই অবস্থানে বেশিক্ষণ ঘুমানো ঠিক না। এভাবে পেটে ভর দিয়ে ঘুমালে মাথা একপাশে থাকতে থাকতে ঘাড় ব্যথা হয়ে যাবে

৪। ঘুমাতে পারছেন না?

ঘুম না আসলে  উপায় কি?  Image source – wzzm

ঘুমানোর সময়টিতে ফোন কিংবা ল্যাপটপ ছাড়া থাকা কঠিন আসলে। কিন্তু আপনার যদি সময়মত ঘুম না আসার সমস্যা থেকে থাকে তাহলে এই সময় ফোন, ল্যাপটপ দূরে রাখতে হবে। ফোন, কম্পিউটারের স্ক্রিনের আলো ঘুমের স্বাভাবিক চক্র নষ্ট করে দেয়। ঘুমানোর ৬ ঘন্টা আগে কফি, চা, সিগারেট, এনার্জি ড্রিংকস, সোডা, চকলেট খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

সকাল-বিকাল ব্যায়াম করুন – এটা হতে পারে হাঁটা, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা, দৌঁড়ানো কিংবা অন্য কোন পছন্দসই পরিশ্রমের কাজ করা। এই কাজগুলো আপনার রক্তপ্রবাহ বাড়াবে এবং শোয়ার পর খুব দ্রুত ঘুমাতে সাহায্য করবে।

৫। রাতে বারবার ঘুম ভাঙে, একটানা ভালোভাবে ঘুমাতে পারছেন না?

গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যাচ্ছে?   Image source – youtube

রাতে ঘুমাতে যাবার আগে এলকোহল পান থেকে বিরত থাকুন। এলকোহল শরীরে পানির সমন্বয় নষ্ট করে দেয়। যার ফলে আপনার ঘুম নষ্ট হয়। এবং খেয়াল রাখবেন রুমের তাপমাত্রা যেন ২২-২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে তাহলে ঘুম ভালো হবে। ঘন ঘন ঘুম ভাঙবে না।

৬। সকালে সময়মত উঠতে পারছেন না?

সকালে ঘুম থেকে ওঠা ভাল গুণ।  Image source – youtube.com

প্রায় প্রত্যেকেই এই সমস্যায় পরেন। সকালে ঠিকমত ঘুম থেকে উঠতে না পারার জন্য গাড়ি মিস হয়, ক্লাস মিস, পরীক্ষায় দেরি করে যাওয়া, অফিসে যেতে দেরি, ডেটিংয়ে যেতেও দেরি হয়ে যায়। এই সমস্যা সমাধান করা খুবই সহজ, সপ্তাহে সাতদিন সকালে ফোনের এলার্ম একই সময়ে সেট করে রাখবেন। এমনকি ছুটির দিনগুলোতেও। আর সকালে সময়মত ঘুম থেকে উঠতে গেলে বেশি রাত না করে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়া উচিত। তাহলে সকাল সকাল ওঠা যাবে। Maintain ‘Early to bed’ and you can be early to rise!

৭। ঘুমের মধ্যে নাক ডাকছেন?

নাক ডাকা একটা বিব্রতকর সমস্যা। এর জন্য পাশের মানুষ যেমন বিরক্ত হয় তেমনি হাসপাতাল কিংবা অনেক মানুষ আছে এমন জায়গায় ঘুমালে অন্যদের তো সমস্যা হয়ই পাশাপাশি নিজেকেও খুব বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। এজন্য আপনাকে পিঠের উপর ঘুমানো বন্ধ করতে হবে। এভাবে ঘুমালে গলার ভেতরের পেশি ঝুলে পরে যার জন্য জিহ্বা শ্বাস নেওয়ার পথ ছোট করে দেয় যার জন্য শব্দ হয়।

নাক ডাকার ফলে অন্যরা বিরক্ত হয়।  Image source – online health wiki

বালিশ বাছাই করতে হবে বুঝেশোনে,কারণ খুব নরম বালিশ হলে মাথা পেছনের দিকে হেলে পরে যার জন্য নাক ডাকা বেড়ে যায়। আরো একটি বালিশ মাথার নিয়ে দিয়ে তারপর ঘুমান যাতে গলার চেয়ে মাথা উপরে থাকে। তাহলে নাক ডাকা বন্ধ হবে। পাশ ফিরে শোয়া উচিত এক্ষেত্রে,তাহলে নাক ডাকা কমবে। কিছু বিশেষ এক্সারসাইজ করতে পারেন যা নাক ডাকা কমাবে।

৮। পেশিতে টান লাগা, পায়ে ঝিঝি ধরা

হঠাৎ করে পায়ের পেশিতে টান লাগতে পারে। পায়ে ঝিঝি ধরতে পারে। বিভিন্ন বয়সের প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ এই সমস্যায় ভুগে থাকে। এটা রাতে হয় সাধারণত বিভিন্ন রোগের জন্য যেমন নার্ভ ড্যামেজ কিংবা অন্য কোন কারণে।

পেশিতে টান লাগা, অবসের মত হয়ে যাওয়া ভাল লক্ষণ নয়।  Image source-quickcash4tesstrips.com

এরকম হলে ডাক্তার দেখাতে হবে। ঘুমানোর আগে যোগব্যায়াম করতে পারেন, ম্যাসেজ করাও ভালো ফল দেয়। ভালো ফল পেতে হলে ব্যায়াম নিয়মিত চালিয়ে যেতে হবে।

তথ্যসুত্র
১। http://my.clevelandclinic.org/health/diseases_conditions/hic_Nocturnal_Leg_Cramps
২। http://www.mayoclinic.org/symptoms/night-leg-cramps/basics/causes/sym-20050813