ব্যবসায়িক গবেষণা চুরির হাত থেকে রক্ষার ১০টি পরামর্শ

একটি নতুন পণ্য বাজারজাত করা কখনোই সহজ কাজ নয়। বর্তমান যুগে এসে এই প্রতিযোগিতা আরো কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। ইন্টারনেটের বদৌলতে আমরা নিজেদের প্রচারের নতুন মাধ্যম আর ক্ষেত্র পেয়েছি। কিন্তু অপর পাশে কেউ একজন ঘাপটি মেরে বসে আছে, আপনার নতুন কৌশল কিংবা চিন্তাকে চুরি করার জন্য। আপনি যদি একজন উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হতে চান, তবে আপনার প্রতিটি পদক্ষেপ হতে হবে নিখুঁত। মনে রাখতে হবে এটি ব্যবসা, যেখানে প্রতি মুহূর্তেই কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়। আপনাকে এই অর্থ আয় করে নিতে হবে, নতুবা অন্য কেউ এই অর্থ লুফে নেবে। তাই অভিযোগ করে সময় নষ্ট না করে, খেলায় তথা ব্যবসায় ঢুকে পড়ুন। ব্যবসা আর যুদ্ধে সঠিক আর ভুল বলে কিছু নেই। অনেক নতুন গবেষক আছেন, যারা নিজের নতুন ভাবনা কিংবা পণ্য নিয়ে কোনো কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করে।

Source: vice.com

তারপর একদিন দেখতে পায়, সেই কোম্পানি তার নতুন গবেষণা নিজেদের করে নিয়েছে। সেসময় নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারে না। তখন তার কী করার থাকে? অনেক গবেষকের ক্ষেত্রে এটি প্রায়ই ঘটে থাকে। বড়-বড় কোম্পানিগুলো সবসময়ই এরকম গবেষক আর উদ্যোক্তাদের খুঁজে থাকে। তাই যখন আপনি কোনো কোম্পানির সঙ্গে কথা বলবেন, তখন নিশ্চিত থাকুন কোনো কোম্পানিই আপনার বন্ধু নয়। তাই কোম্পানির ব্যাপারে আগে খোঁজ-খবর নিন, তারপর এগিয়ে যান। ভয় পাওয়া এখানে কোনো সমাধান বয়ে আনবে না, আপনার জ্ঞানকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে অগ্রসর হতে হবে। আপনি নিজেকে শুধুমাত্র একজন গবেষক না ভেবে, উদ্যোক্তা হিসেবে ভাবতে পারবেন, ততই আপনার নতুন ভাবনা ও চিন্তাগুলো নিরাপত্তা পাবে। আপনার ভাবনা ও চিন্তাগুলোকে কোনো কোম্পানির চুরির হাত থেকে বাঁচাতে কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন। এসব পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে এ আর্টিকেলটি পড়ুন।

১. প্রচারের পূর্বে দরকার পূর্ব সতর্কতা

কখনোই আপনার নতুন গবেষণার বিষয়বস্তু সামাজিক মাধ্যমগুলোতে প্রকাশ করে দেবেন না। সঠিক লোকটিই আপনাকে খুঁজে নিবে। এটি স্বাভাবিক যে, আমরা নতুন কোনো কিছু করলে সেটার খুশি সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে চাই। কিন্তু আপনার ভবিষ্যতের স্বার্থেই এই যাত্রায় আপনাকে চুপ থাকতে হবে। এটিই আপনার ভাবনাকে নিরাপত্তা দেওয়ার প্রথম ধাপ হতে পারে।

২. সাবধানে অর্থ সংগ্রহ করুন

একটি নতুন উদ্যোগকে সফল করতে হলে এবং মানুষের কাছে পৌঁছাতে হলে অর্থের প্রয়োজন হয়। এই অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে আবার নিজের ভাবনাকে অন্যের হাতে তুলে দেবেন না।

Source: theverge.com

আপনার নতুন গবেষণার একটা পূর্ণাঙ্গ নকশা তৈরি করুন এবং প্রয়োজনে পণ্যের ট্রেডমার্ক সংগ্রহ করুন। ট্রেডমার্ক নথিভূক্ত হতে বেশ কিছুটা সময় লাগতে পারে। আবার যাচাই-বাছাইয়ের জন্য কিছু অর্থেরও খরচ হতে পারে।

৩.পণ্যের নকশাটির লাইসেন্স তৈরি করুন

একটি পণ্যের লাইসেন্স লাভ করাই পণ্যকে কিংবা পণ্যের নকশাকে সঠিক নিরাপত্তা দিতে পারে। আপনার নতুন পণ্যটি সম্পর্কে যখনই কেউ জানবে, তখন থেকেই অন্যরা চাইবে পণ্যটির লাইসেন্স তৈরি করে নিতে।

Source: time.com

আর আপনি যদি আগেই পণ্যটির লাইসেন্স করে নিন, তখন কোনো প্রতিষ্ঠান যদি পণ্যটি উৎপাদন শুরু করেও থাকে, তারপরও মামলার রায় আপনার পক্ষে যাবে। কারণ পণ্যটি আপনিই সর্বপ্রথম লাইসেন্স করেছেন। তাই এই ধাপটি কখনোই বাদ দিয়ে সামনে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করবেন না।

৪. কাদের সঙ্গে কাজ করবেন, সেটা যাচাই করুন

যে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আপনার ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে উঠতে যাচ্ছে, তাদের ব্যাপারে শুরুতেই খোঁজ-খবর নিন। তাড়াহুড়ো করে আবেগের তাড়নায় কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। আবার লোভের ফাঁদেও পা দেবেন না। কোম্পানির অতীত নথিগুলো থেকে কোম্পানির ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করুন।

Source: aroundtheworldin80jobs.com

অন্যান্যদের সঙ্গে কোম্পানির ব্যবহার কেমন ছিলো, বর্তমান বাজারে তাদের প্রতি আস্থাশীলতা কতটুকু এবং তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ইত্যাদি ব্যাপারে জেনে নিন। যদি সবকিছু জানার পর আপনি সন্তুষ্ট হন, তবেই কোম্পানির সঙ্গে পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হতে পারেন।

৫. গোপন তথ্য প্রকাশের আগে নথি রাখুন

আপনার পণ্যের ব্যাপারে কোনো তথ্য কারো সঙ্গে আলাপ করার পূর্বে, পণ্যটির বিবরণসহ একটি নথি তৈরি করুন এবং পেটেন্ট আবেদন করে রাখুন। এই নথিগুলো আপনার পণ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। কোনো প্রতিষ্ঠান চাইলেই আপনার তথ্য অনুযায়ী নিজে থেকে, কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে না। মূল চাবিকাঠি আপনার হাতেই থাকবে। পণ্য বিপণন কৌশল হিসেবে এটি যুগান্তকারী।

৬. লভ্যাংশ নির্ধারণ

যখনই প্রতিষ্ঠান আপনার কাছে পণ্যের কারিগরি কোনো তথ্য জানতে চাইবে; তখন এটি নিশ্চিত হয়ে নেবেন যে, আপনার অনুমতি ছাড়া ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান অন্য কারো সঙ্গে, এই তথ্য নিয়ে আলোচনা করবে না।

Source: legalzoom.com

সেইসঙ্গে নকশা কিংবা পণ্যটির অগ্রগতি হলে সেটাও যেনো আপনার পক্ষে যায়। এসব ব্যাপারগুলো প্রতিষ্ঠান লিখিতভাবে মেনে নিলে তবেই সামনের দিকে অগ্রসর হবেন। আর এরকম পারস্পরিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে তৈরি নথিগুলো, অন্তত ৫ বছরের জন্য সচল রাখবেন। আর পুরো প্রক্রিয়াটি যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন করবেন ।

৭. প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের নথি রাখুন

আপনার কাছে হয়তো কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ, সরাসরি বৈঠক, ফোনে কথা বলার মতো সাধারণ বিষয়গুলোর নথি রাখা অপ্রয়োজনীয় মনে হতে পারে। কিন্তু এই ‘সামান্য’ বিষয়গুলোকেই নোটে টুকে রাখা কিংবা নথি হিসেবে গুছিয়ে রাখার মতো অভ্যাস তৈরি করুন। কখনো যদি আইনি লড়াইয়ে যেতে হয়, তবে এই ছোট-ছোট তথ্যগুলোই হয়তো মামলাকে আপনার অনুকূলে নিয়ে আসবে।

Source: bloomberg.com

অনেক তরুণ উদ্ভাবকই সামান্য বিষয় ভেবে, এইসব যোগাযোগের ব্যাপারগুলোর কোনো তথ্য গুছিয়ে রাখেন না। তারপর প্রয়োজনের মুহূর্তে তারা যথাযথ প্রমাণ হাজির করতে পারেন না।

৮. পেটেন্টে বৈচিত্র্য

পেটেন্ট তৈরি করার সময় নিজেকে একজন ‘চোরের’ দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করুন। আপনি হলে কোনো পণ্যের পেটেন্ট কীভাবে নিজের করে নিতেন সেটা ভাবুন। একই পেটেন্টের অনেকগুলো নথি তৈরি করলে সবচেয়ে ভালো হয়। প্রতিটি আলাদা নথিতে পণ্যের সম্ভাব্য পরিবর্তন আর বৈচিত্র্য তুলে ধরুন।

Source: entrepreneur.com

যাতে কোম্পানি আপনার অজান্তে পণ্যকে অন্যভাবে উপস্থাপন করে, বাজারজাত করার চেষ্টা করলেও, আপনি সেটার বিপক্ষে জয়লাভ করতে পারেন। তাছাড়া ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কিংবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পুরোনো কাজগুলো পর্যালোচনা করে দেখুন। আর আপনার পেটেন্টটি তাদের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে।

৯. বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির ভিন্নতা জানুন

অনেক সময় প্রতিষ্ঠান হয়তো আপনাকে আপনার পণ্যের পেটেন্ট নথিভুক্ত করতে দেবে না। কারণ হিসেবে তারা বলতে পারে, এই পণ্যটি আগেই পেটেন্ট হয়ে গিয়েছে। সেক্ষেত্রে আপনি বাজারে খোঁজ নিন। আপনার পণ্যটি বাজারজাত করা হয়েছে কি না কিংবা সত্যিই কেউ আপনার পণ্যের পেটেন্ট নিয়ে রেখেছে কি না, নিশ্চিত হয়ে নিন।

Source: businessinsider.com

অনেকেই আছে যারা কেবল পণ্যের ধারণা পেটেন্ট করেন, কিন্তু পণ্যটি কীভাবে উৎপাদন করে বাজারজাত করা হবে সেটা উল্লেখ করেন না। আপনি তখন চাইলেই পণ্যের উৎপাদন কৌশল এবং বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া পেটেন্ট করে নিতে পারেন।

১০.আইনজীবী নিয়োগ

আপনার সবগুলো কাজ গুছিয়ে নিজের আয়ত্ত্বে আনার পর; আপনার কাজ হবে আপনার কাগজ-পত্রগুলোর নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য একজন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া। যিনি আগে এইসব ব্যাপারে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন, তার সঙ্গে আপনার দলিল এবং নথিগুলোর ব্যাপারে কথা বলুন। কখনো আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেতে হলে নিয়োগকৃত আইনজীবীর খরচের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নিন।

Source: ipwatchdog.com

এসব পরামর্শগুলোর প্রতি খেয়াল রেখে, আপনি আপনার ব্যবসায়িক গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ করলে; আপনি সহজেই আপনার গবেষণাকৃত পণ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবেন। আর অন্য কেউ চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দিতেও পারবে না।

Featured Image:Entrepreneur.com

aminul: