আর্থিক ঘাটতি আমাদের জীবনের বড় আফসোসের কারণ। আর যদি তা একটু স্থায়ীভাবে, যেমন চাকরিচ্যুতির কারণে হয়ে থাকে, তাহলে তা মহাবিপদ‌। যদি কখনো এমন পরিস্থিতির সম্ভাবনা থেকে থাকে, তখন আসন্ন সংকটকাল কীভাবে অতিবাহিত করবেন, বা কেমন প্রস্তুতি নিয়ে সমস্যার মোকাবেলা করবেন তা নিয়েই এই লেখাটি।

আর্থিক সংস্থানের পূর্ব-প্রস্তুতি নেয়া জরুরি; image source: amp.businessinsider.com

নিত্যদিনের খরচ সম্পর্কে ধারণা নিন

নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় খরচ বলতে সেসকল খরচকে বোঝায় যেগুলো ছাড়া একেবারেই চলতে পারবেন না। বাড়ি ভাড়া, খাবার খরচ, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের খরচ, এরকম অনেক ব্যয়ের হিসাব ভালোভাবে জেনে নিন। যাতে বিপদের সময় আপনার নিতান্তই যে খরচগুলো না করলেই নয়, সেগুলো আপনার জন্য বোঝা না হয়ে যায়। সংকটের সময় এই নিত্যদিনের ব্যয়ের হিসাব আপনার অনেক অসুবিধা কমিয়ে দিতে পারে।

নিত্যদিনের খরচ হিসাব; image source: impulsapopular.com

ইমার্জেন্সি সেভিংস বা জরুরি সঞ্চয় রাখুন

চিকিৎসা ব্যয়, বাড়ি বা গাড়ি মেরামত, বা অন্য কিছু যেখানে আপনার নিয়মিত বাজেটের বাইরে নগদ অর্থ লাগতে পারে তার জন্য ইমার্জেন্সি সেভিংস আলাদা করে রাখা উচিত। আপনি সেই সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্টে কতটা অবদান রেখে চলেছেন তা বিবেচনা করুন। আপনার যদি ইতোমধ্যে জরুরী সঞ্চয় না থেকে থাকে তবে একটি নতুন তহবিল তৈরি করার কথা ভাবুন। আপনার আয়ের উৎস থাকাকালীন সময় থেকে একটা অংশ জমাতে শুরু করে দিন। যাতে যতদিন আপনার কর্মসংস্থান না হয় ততদিন কিছুটা হলেও আপনার নিতান্ত প্রয়োজনীয় কাজগুলো চলতে পারে। তিন থেকে ছয় মাসের মোটামুটি সময়ের মধ্যে আপনি অন্য কোনো কাজের সন্ধান যেন আলাদা মানসিক চাপমুক্ত থেকে করতে পারেন।

সবসময়ই ইমার্জেন্সি সেভিংস আলাদা করে রাখা উচিত ; image source: business-review.eu

ধারদেনা থেকে নিজেকে দ্রুত মুক্তি দিন

আয় থাকাকালীন অবস্থায়ও অনেক সময় ঋণ পরিশোধ করা একটি বড় ব্যাপার। আর আপনি যখন বেকার থাকবেন তখন এগুলো পরিচালনা করতে আরও কঠিন এবং একটি বিশাল চাপের কারণ হতে পারে। সাথে একটি নতুন কর্মসংস্থান সন্ধানের জটিলতাতো থাকছেই। সুতরাং আপনি যখন এখনও প্রতি মাসে বেতন পাচ্ছেন, আপনার লোন শোধ করার জন্য পরিকল্পনা করুন এবং সময়ের সাথে এটি পরিশোধ করুন। প্রথমে উচ্চ-লাভের ঋণ পরিশোধের বিষয়ে মনোনিবেশ করুন অথবা এমন কোনো কিছু যা থেকে আপনি দ্রুত মুক্তি পেতে পারেন।

উচ্চ-লাভের ঋণ পরিশোধের বিষয়ে মনোনিবেশ করুন ; image source: gauntletfunding.com

মাথায় রাখুন আপনার বিশিষ্টতা

আপনি যদি আপনার মূল কাজের বাইরে কোনো বিষয়ে আগ্রহী হন তবে সেসব নিয়ে ভাবতে থাকুন এবং তা অনুসরণ করার চেষ্টা করুন। সেগুলো হতে পারে ফ্রিল্যান্স রাইটিং, ডিজাইনিং বা ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এরকম আরও অনেক কিছু। এভাবে একক উৎসে নির্ভর না থেকে যেকোনো ধরনের সৎ কাজ করে নিজেকে আর্থিক সাবলম্বী করতে পারেন সহজেই।

চাকরির বাইরেও আপনার পারদর্শিতা কাজে লাগান; image source: impconsults.com

আপনার জীবনবৃত্তান্তের হালনাগাদ করুন

আপনার মনে হতেই পারে বর্তমান অবস্থানটি যদি পরিপূর্ণ, লাভজনক এবং স্থিতিশীল হয় তবে আপনি কেন নতুন চাকরীর সন্ধান করবেন? আপনার কাজের পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, আপনার বায়োডাটাকে হালনাগাদ রাখুন এবং কাজের নতুন সুযোগের দিকে নজর রাখবেন। এই সামান্য সতর্কতা কখনোই আপনার জন্য পীড়াদায়ক হ‌ওয়া উচিত নয় এবং আপনার জীবনবৃত্তান্তটি তৈরি করাই আছে তা জানা থাকলে সংকটের সময় এটি আপনার চাপ কমিয়ে আনতে সহায়তা করবে এবং আপনার জন্য অন্যত্র যাওয়া সহজ হবে।

জীবনবৃত্তান্ত হালনাগাদ করণ; image source: coda.newjobs.com

নেটওয়ার্কিং বজায় রাখতে চেষ্টা করুন

এটি আপনাকে সরাসরি আর্থিক সাহায্য নাই করতে পারে। কিন্তু নতুন লোকের সাথে সাক্ষাত করা, নেটওয়ার্কিং ইভেন্টগুলোতে অংশ নেওয়া, পেশাদার দলে যোগ দেওয়া এবং পুরানো সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখা এগুলো অনেকটা আপনার বর্তমান কাজের ব্যাক-আপ। যাতে আপনি যদি চাকরিতে ছাঁটাইয়ের শিকার হন তবে আপনার যোগাযোগ লিংক থেকে যেন আপনি কাজের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পান।

নেটওয়ার্কিং সবসময় গুরুত্বপূর্ণ; image source: chamberforge.com

দুর্ভাগ্যবশত, চাকরিচ্যুতি, ব্যবসা মন্দা এসব ঘটবেই, এবং কখনো কখনো তখন‌ই ঘটবে যখন আমরা ঘটনাটি সহ্য করতে প্রস্তুত ন‌ই। সুতরাং বেকার অবস্থায় আপনার কাছে থাকা বিকল্পগুলো বুঝতে এখনই সময় নিন। তাহলে আপনি একটু হলেও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে পারবেন, আপনি আপনার সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করতে পারবেন।

Featured image source: m.economictimes.com