প্রত্যেকদিন প্রায় ২.৪ মিলিয়ন ইমেইলের আদানপ্রদান হয়। যদিও এতগুলো ইমেইলের মধ্যে খুব কম সংখ্যক ইমেইলই প্রফেশনাল হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ইমেইলেই সাবজেক্ট লাইন থাকে না, বানানের ভুল, টাইপিংয়ে ভুলসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণেই ইমেইল তার প্রফেশনালিজম হারায়। যার ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইমেইলের প্রাপক আপনার ইমেইল পড়ে না এবং মাঝে মাঝে তা ডিলিট করে দেয়। আজকের আর্টিকেলে আমি একটি প্রফেশনাল ইমেইল লেখার পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে বলবো।

Source: thebalancecareers.com

আপনার অডিয়েন্স সিলেক্ট করুন

একই ধরণের ইমেইল সবার কাছে প্রেরণ করা উচিত নয়। সেজন্যে আপনাকে আপনার অডিয়েন্স সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। ধরুন আপনি আপনার ওয়েবসাইটের ট্র্যাফিক বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট কিছু মানুষের কাছে ইমেইল সেন্ড করতে চাচ্ছেন। এখন আপনার মূল লক্ষ্য যেহেতু ট্র্যাফিক বাড়ানো সেহেতু আপনাকে শুধুমাত্র তাদের কাছেই ইমেইল সেন্ড করতে হবে যারা আপনার ওয়েবসাইটে ঢুকতে আগ্রহী। আপনার ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট যদি টেকনোলজি সম্পর্কিত হয় তাহলে আপনাকে শুধুমাত্র তাদের কাছেই ইমেইল পাঠানো উচিত যারা টেকনোলজি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী।

Source: asana.com

একইভাবে আপনার ওয়েবসাইটটি যদি একটু ই-কমার্স শপ হয়ে থাকে তাহলে আপনার শুধুমাত্র তাদের কাছেই মেইল পাঠানো উচিত যারা আপনার ই-কমার্স শপ থেকে পণ্য কিনতে আগ্রহী। কখনো এমন কারো কাছে ইমেইল পাঠাবেন না বা এমন কোনো ইমেইল পাঠাবেন না যেটার বিপরীতে কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন হলে আপনি ‘হ্যাঁ সূচক’ জবাব দিতে পারবেন না। সঠিক মানুষের কাছে ইমেইল পাঠালে, আপনার ইমেইলের সফলতা পাওয়ার সম্ভাবনা ২০ শতাংশ বেড়ে যায়।

গ্রাহকের সঠিক ইমেইল অ্যাড্রেস বাছাই করুন

ধরুন আপনি ইমেইল সংগ্রহ করার সময় এমন কিছু ইমেইল সংগ্রহ করেছেন যেগুলো আসলে উপযুক্ত গ্রাহকের ইমেইল নয়। হতে পারে সেই ইমেইলে ভুল আছে কিংবা হতে পারে সেই ইমেইলটি গ্রাহক শুধুমাত্র অফিশিয়াল কাজে ব্যবহার করেন। সাপোর্ট ইমেইল বা অফিশিয়াল ইমেইল কিংবা ওয়েব মেইলে যেকোনো কিছু লিখে প্রেরণ করা উচিত নয়। কারণ এতে করে সেটা ফিল্টারিং হয়ে বেশিরভাগ সময়েই সঠিক গ্রাহকের কাছে পৌঁছায় না।

Source: mailgun.com

তাই সঠিক গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর পূর্বে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে আসলেই সঠিক ইমেইল অ্যাড্রেসটি আমরা পেয়েছি কি না। যদি সঠিক ইমেইল অ্যাড্রেস খুঁজে না পাই তাহলে ইমেইল পাঠানো সম্পূর্ণরূপে বোকামি হবে। অনেক সফটওয়্যার এবং ওয়েবসাইট রয়েছে যেখান থেকে আপনি খুব সহজেই ইমেইল খুঁজে বের করতে পারবেন।

সেকশনে ভাগ করে ইমেইল লিখুন

ইমেইল লেখার সময় আমাদের মাঝে শুধু ক্রিয়েটিভিটি থাকলেই হবে না। যদি আমরা ইমেইল লেখার সময় একসাথে পুরো ইমেইলের অবস্থা বর্ণনা করি তাহলে সেক্ষেত্রে গ্রাহক কিছুই বুঝবেন না। তাই গ্রাহকের সুবিধার্থে ইমেইলকে অবশ্যই সেকশনে ভাগ করে লেখা উচিত। ইমেইল লেখার সময় খেয়াল রাখবেন, ইমেইলের শুরুতেই আপনাকে গ্রাহকের মন জয় করে নিতে হবে। অর্থাৎ আপনি যদি ইমেইলের প্রথম কয়েক লাইনের মধ্যেই গ্রাহকের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিশ্লেষণ করতে না পারেন তাহলে গ্রাহক আপনার ইমেইল পড়বে না।

Source: wiki.mq.edu.au

এই সেকশনের পরে আপনাকে বেছে নিতে হবে গ্রাহকের প্রশ্নগুলো সম্পর্কে। অর্থাৎ গ্রাহক যদি প্রথম সেকশন পড়ে আপনার ইমেইলের উপর আগ্রহী হয় তাহলে সে আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে চাইবে। এই প্রশ্নগুলো যদি আপনি ইমেইলের নিচের দিকে পয়েন্ট আকারে বর্ননা করে দিতে পারেন তাহলে গ্রাহকের সুবিধার জন্য গ্রাহক আপনাকে খুব সহজেই রিটার্ন ইমেইল পাঠাতে পারবে। যা গ্রাহককে এই বিষয়ে আগ্রহী করে তুলবে।

সঠিক ও উপযুক্ত ইমেইল টেমপ্লেট বাছাই করুন

অনেকেই নিজের পছন্দমতো ইমেইল টেমপ্লেট তৈরি করে সেভাবে ইমেইল পাঠিয়ে থাকেন। কিন্তু বিশেষ কিছু টেমপ্লেট রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি উপযুক্ত ও অসাধারন ইমেইল পাঠাতে পারবেন। এমন কিছু ইমেইলকে বলা হয় কোল্ড টেমপ্লেট। আপনার গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর জন্য আপনাকে বিভিন্ন নিয়ম মেনে চলতে হবে ও বিভিন্ন ডিসকাউন্ট ও অফারের ব্যবস্থা করতে হবে এবং সাইকোলজিক্যালি গ্রাহককে দুর্বল করে ফেলতে হবে।

Source: saleshandy.com

একাধিক ইমেইল পাঠাতে হলে নির্দিষ্ট সময় বজায় রাখুন

যদি আপনার গ্রাহকের সাথে বেশ কয়েকবার ইমেইল আদান প্রদান হয়ে থাকে তাহলে চেষ্টা করবেন সেই গ্রাহককে একই সময়ে ইমেইল করতে। অর্থাৎ প্রথম ইমেইলটি যদি সকাল ১০ টায় করে থাকেন তাহলে চেষ্টা করবেন পরের ইমেইলটিও একই সময়ে অর্থাৎ সকাল দশটায় করতে। একইভাবে সেই গ্রাহকের সাথে আপনার যতগুলো ইমেইল আদান প্রদান হবে সবগুলোই সকাল দশটায় পাঠানোর চেষ্টা করবেন। এতে করে আপনাদের মাঝে সময়ের বোঝাপড়াটা চলে আসবে যা গ্রাহককে সাইকোলজিক্যালি দুর্বল করে দেবে।

Source: pro.regiondo.com

বাটন ও লিংক যুক্ত করতে ভুলবেন না

গ্রাহককে আপনি ইমেইল পাঠিয়েছেন কিন্তু এমনও তো হতে পারে যে গ্রাহক আসলে ইমেইলের মাধ্যমে কথা বলতে ততটা আগ্রহী নয়। গ্রাহক হয়তো আপনার সাথে লিংকডিন কিংবা ফেসবুক অথবা সরাসরি কথা বলতে আগ্রহী। সেজন্যে সবসময়েই প্রত্যেকটি ইমেইলের পরেই আপনার ফেসবুক আইডির লিংক, লিংকডিন আইডির লিংক ইত্যাদি বাটন আকারে যুক্ত করে দেবেন। এতে করে গ্রাহক আপনার সম্পর্কে আরো বেশি জানতে আগ্রহী হবে।

Source: crowdster.com

উপযুক্ত সাবজেক্ট অবশ্যই ব্যবহার করবেন

অনেক ইমেইলেই দেখা যায় সাবজেক্ট ছাড়া সরাসরি ইমেইল পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ইমেইলের সৌন্দর্যের পাশাপাশি প্রফেশনালিজমও নষ্ট হয়ে যায়। আর তাই চেষ্টা করবেন উপযুক্ত ও ইমেইলের মূল পয়েন্টের সাথে সম্পর্ক রেখে সাবজেক্ট যুক্ত করতে। সাবজেক্ট তৈরি করার জন্য কিছু বিশেষ পয়েন্টের দিকে খেয়াল রাখবেন,

১. কখনো আপনার প্রথম ইমেইলের সাবজেক্টে ‘Re:’ অথবা ‘Fwd:’ ব্যবহার করবেন না। একই গ্রাহককে দুটোর বেশি ইমেইল পাঠালে এগুলো ব্যবহার করতে পারেন।

২. সাবজেক্টে কখনোই প্রশ্ন যুক্ত করা উচিত নয়।

৩. সাবজেক্টে সংখ্যা বা মাসের নাম ব্যবহার করা যেতে পারে।

৪. কখনোই সাবজেক্টে আশ্চর্যবোধক চিহ্ন ব্যবহার করবেন না।

৫. সাবজেক্ট লেখার সময় একটি আর্টিকেলের টাইটেল লেখার মতো করে লিখতে পারেন।

৬. সাবজেক্টে কখনোই ‘Hi’, ‘Hello’, ‘Bye’ ইত্যাদি ব্যবহার করবেন না।

৭. সাবজেক্টে সর্বোচ্চ ৫ টি শব্দ ব্যবহার করা উচিত।

Source: yourdigitalresource.com

ইমেইল লেখার ক্ষেত্রে আপনি যেকোনো ফরম্যাট ও ডিজাইন বাছাই করে লিখতে পারেন। কিন্তু ইমেইল লেখার পর সেটা খতিয়ে দেখাও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে পড়ে।

Featured Image: theverge.com