শিশু মানেই তো অন্যরকম। যার মাঝে থাকবে না কৃত্রিমতা, থাকবে না সুদ-কষার হিসেব নিকেশ। কেবলই উচ্ছলতা আর পবিত্রতার ছাপ সারাগায়ে নিয়ে,তবেই তো শিশু। শিশুদের নতুন কিছু শেখানোর ইচ্ছাটা মন্দ নয় নিশ্চয়ই? তবে আর দেরি কেন, চলুন জেনে নেওয়া যাক, বাচ্চাদের নতুন কিছু শেখানোর ক্ষেত্রে কী কী ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে-

প্রথমত, বাচ্চাদের সম্পূর্ণ নতুন কিছু শেখার প্রক্রিয়াটি হতে পারে উপভোগ্য, আনন্দদায়ক, আর যদি শেখানোর প্রক্রিয়াটি আবার তাদের মতো করেই হয়
তবে সোনায়-সোহাগা। তাই বাচ্চাদের ক্ষেত্রে নতুন কোনো কিছু শেখার ব্যাপারটি অবশ্যই হওয়া চাই সহজ এবং আনন্দদায়ক। কোমলমতি শিশুদের মস্তিষ্কে এমন বীজ বপন করতে হবে যেন, তারা একবারে কোনো ব্যপারে মজা পেয়ে বাড়তি আগ্রহ প্রকাশ করতে পারে।

নীচে বিশেষ কয়েকটি প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা হলো।

ওদের ভাবতে দিন

আপনি চাইলেই খাটে শুয়ে কক্সবাজার যেতে পারবেন না, কিন্তু পারবেন? আশ্চর্য হচ্ছেন? হওয়ারই কথাই। কিন্তু এমনটাও সম্ভব। কল্পনায় সবই সম্ভব।
শিশুদের কোনো কিছু শেখার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে, যা কিছু এখন হচ্ছে বা শিখছে তা নিয়ে কল্পনা করতে পারার শক্তি মনে আনয়ন করা।

ছবিসূত্র:flickr.com

তাই আপনার শিশুকে বলুন, সে এখন যা পড়লো তা যেন কল্পনা করে এবং ব্যপারটি নিয়ে বিস্তারিতভাবে আপনাকে কিছু বলে। খুব তাড়াতাড়ি লক্ষ্য করে দেখবেন, সে প্রচণ্ড আগ্রহ নিয়ে দারুণ একটি চিন্তাশক্তি তুলে ধরছে আপনার সামনে। দরকার হলে ভিজ্যুয়াল গেম, প্লে কার্ড বা মজার মজার ছবি সমৃদ্ধ কাগজ ব্যবহার করতে পারেন।

শিখতে হবে আপনাকেও

কড়া তেলে কিছু জিনিস বেশি ভাজলে কুড়মুড়ে হতে হতে পুড়েও যেতে পারে! পোড়া জিনিস বরাবরই খারাপ লাগে খেতে। অনুরূপভাবে বাচ্চাদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে বাবা-মায়েদের কঠিন না হওয়াই ভালো। তার চেয়ে শেখানোর প্রক্রিয়ায় আপনি ওর সাথে খোলামেলা মানসিকতা রাখুন। তাকে এও বলুন, সে নতুন যা শিখলো তা যেন আপনাকেও শেখায়। আপনাকে শেখাতে গিয়ে তার চিন্তাশক্তি আরও প্রসারিত হবে, যা অবশ্যই মঙ্গলজনক।

আড্ডা

অনেক সময় খুব সহজ কিছু ব্যাপারস্যাপারও দাওয়াই এর মতোই কাজ করে। আপনি চাইলে আপনার শিশুকেও এর আওতায় আনতে পারেন। খুব সহজ কিছু প্রশ্নও আপনার শিশুর মস্তিষ্ককে দারুণরকম মসৃণ করতে পারে। ধরুন, আপনার শিশু যে চকোলেট খেয়েছিল তার রঙ কি ছিলো? সেই রঙ কি তার পছন্দের? স্কুলের বন্ধুদের নাম জিজ্ঞাসা করা প্রভৃতি রকম প্রশ্ন কিন্তু শিশুদের মস্তিষ্ক তৈরিতে দারুণভাবে কাজ করে।

রঙের ব্যবহার

বাচ্চাদের মন নিয়ে কথা উঠলে, শিমুল তুলাকে টানতে হবে, কেননা বাচ্চাদের মন তুলার মতোই তুলতুলে। এ মনে তাই রঙের আনাগোনা প্রচণ্ড আনন্দের সৃষ্টি করে। তাই আপনার শিশুকে পড়ার সময় দৃষ্টি আকর্ষণ করে এমন রঙ পেনসিলের সহায়তায় পড়াতে পারেন। তাকে আপনি এও বলতে পারেন যে, যা পড়ে তোমার গুরুত্বপূর্ণ মনে হবে তা তুমি নিজেই নানারঙে দাগিয়ে পড়বে।

ছবিসূত্র:mridubhashan.com

ভাগ করে পড়া

প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে সবার সবকিছু আয়ত্ত করার মাত্রা একই নয়। বড়দের ক্ষেত্রে এক, ছোটদের ক্ষেত্রে আরেক। আপনার কাছে যা খুব সহজ মনে হচ্ছে তা আপনার বাচ্চার কাছে সবচেয়ে কঠিনও মনে হতে পারে। তাই মাথা ঠান্ডা করে সামনে আগানোটা মঙ্গলের। মনে রাখা ভালো, ভারী কোনো খাবার আস্ত গিলতে চাইলে হজমে সমস্যা হবেই, তদ্রুপ ছোটো ছোটো খন্ডে ভাগ করে পড়তে দিলে শিশুরা খুব সহজেই ব্যপারটি নিতে পারে।

পরীক্ষিত ব্যপারগুলো

তথ্যের অভাব নেই, জানার শেষ নেই, আর সামঞ্জস্যের ব্যাপারে কোনো কমতি নেই। তাই সব তথ্যকে এক সাথে না গুলিয়ে, একই তথ্যের সাথে আপনার জানা তথ্যকে মিলিয়ে মনে রাখার নিয়মটি শিশুদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করুন। খুব ভালো কাজ হয় এতে।

ছবিসূত্র:bostikcreativelearning.co.uk

বাইরের জগতে শিশুদের মিশতে দিন

শিশুরা অনুকরণ প্রিয়। তাই এদের বাইরের জগত সম্পর্কে কৃত্রিমতা বর্জিত ব্যপারগুলো উপভোগ করতে দিন। এতে নতুন করে শেখার যে আগ্রহটা তা চমৎকারভাবে ক্রমশই বৃদ্ধি পাবে।

অভ্যাস

কোনো কিছুরই বাড়তি ব্যাপার মঙ্গলজনক নহে। টিভি থেকে শিশুকে দূরে রাখা কষ্টকর ব্যাপার তবে দুঃসাধ্য না। তাই লক্ষ্য রাখতে হবে টিভি দেখাটা যেন অভ্যাসে পরিণত না হয় এবং শিক্ষণীয় অনুষ্ঠানগুলোর দিকে যেন শিশুর পূর্ণ আগ্রহ থাকে।

কম্পিউটার

বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে কম্পিউটার একটি অনবদ্য সরঞ্জাম। তবে হুট করেই শিশুকে ভার্চুয়াল জগতে ছেড়ে দিবেন না।

আত্মশক্তি

আপনার শিশুকে অন্যের ইচ্ছা বুঝে কিছু করার শিক্ষা দিন। এতে ছোটবেলা থেকেই তার ভেতরে আত্মশক্তি অর্জনের ব্যপার গড়ে উঠবে। যা সমাজ তথা গোটা মানব জীবনের জন্যই কার্যকর ভূমিকা রাখে।

সঠিকভাবে ধর্ম শিক্ষা

ধর্ম শিক্ষা অবশ্যই প্রয়োজনীয় একটি শিক্ষা। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, ধর্মের দোহাই দিয়ে আপনার শিশুকে ভুল শিক্ষা দেবেন না। ধর্মীয় গোঁড়ামি থেকে শিশুকে দূরে রাখুন, এতে শিশুর মধ্যে ইতিবাচক প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। যা একজন বাবা অথবা মা হিসেবে শিশুর মধ্যে এই ব্যপারটি আসুক নিশ্চয়ই আপনি বরাবরই চান?

তাই মনে রাখতে হবে, আজকের শিশুরাই আগামীর কর্ণধার। তাদের সঠিকভাবে শিক্ষা দেবার ইচ্ছা, চেষ্টা অবশ্যই আমাদের থাকতে হবে। নয়তো, আশার আলো দেখার প্রত্যাশা করা নেহাত বোকামিই হবে বটে। শিশুরা বেড়ে উঠুক পূর্ণতায়, শিশুরা ছুঁয়ে দেখুক আকাশটা।