পর্যাপ্ত পানি পান করার ব্যাপারে হয়তো আপনি ইতিমধ্যে সচেতন। কেননা আপনি জানেন যে, পানি ছাড়া দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা সম্ভব না। কিন্তু কেন পর্যাপ্ত পানি পান করা প্রয়োজন তার কোনো বৈজ্ঞানিক কারণ কি জানেন?

photo: pk radio

এই নিবন্ধে বৈজ্ঞানিকভাবে ল্যাবরেটরিতে প্রমাণিত পানির এমন কিছু উপকারিতার কথা আলোচনা করবো, যা পড়ে নিশ্চয়ই আপনি আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারবেন কেন পর্যাপ্ত পানি পান করে হাইড্রেটেড থাকা প্রয়োজন।

পানির পুষ্টি মূল্য

পুষ্টিবিদদের মতে, সমতলের পানি ক্যালরি শূন্য। তাই পানি ইচ্ছামত পান করা যায়। অন্যান্য খাদ্য উপাদানের মত পানি শর্করা, আমিষ, প্রোটিন বা চর্বির উৎস না। এটা শুধুমাত্র আপনাকে আর্দ্র রাখতে কাজ করে। সুতরাং পর্যাপ্ত পানি পান করায় কোন ওজন বাড়ার ঝুঁকি নেই।

photo: reaching utopia

পানি পানের ৫টি বৈজ্ঞানিক উপকারিতা

পানির এত এত স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে যে তা এক নিবন্ধে লিখে শেষ করা যাবে না। তারপরও এখানে খুবই উল্লেখযোগ্য ও বৈজ্ঞানিক ভাবে ল্যাবরেটারিতে প্রমাণিত পানির ৫টি উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করছি।

১. সর্বোচ্চ কর্মক্ষমতা

পর্যাপ্ত পানি পান না করলে আপনার শারীরিক কর্মক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। এমনকি আপনার শারীর থেকে মাত্র ২ শতাংশ পানি কমে গেলেও লক্ষণীয়ভাবে আপনার শরীরের কর্মক্ষমতা হ্রস পেতে পারে। এর ফলে আপনি অল্পতেই ক্লান্ত বোধ করবেন, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে, স্বাভাবিক কাজকর্মে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন, এমনকি ব্যায়ামও করতে ইচ্ছা করবে না।

photo: massimo spattini

অন্যদিকে, গবেষণায় দেখা গেছে শরীরে পানির একটি নির্দিষ্ট মাত্রা শুধু উপর থেকে শারীরিক সক্ষমতা দেয় না, বরং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তথা শ্বাসপ্রশ্বাস চাপও সহজ করে যা শরীরকে আরও উদ্দীপ্ত ও কর্মক্ষম করে তোলে। আসলে মানব শরীরের ৮০ শতাংশ মাংসপেশী পানির সাহায্যে সজীব থাকে, যার ফলে আপনি কর্মক্ষম হয়ে ওঠেন। সুতরাং কর্মক্ষম, উদ্দীপ্ত ও চনমনে শরীর পেতে পর্যাপ্ত পানি পানের বিকল্প নেই।

২. মস্তিষ্ক সচল রাখতে

মস্তিষ্কের কার্যকলাপের উপর আপনার শরীরের জলের পরিমাণের একটি বড় ধরণের প্রভাব আছে। গবেষণায় দেখা গেছে, মস্তিষ্কের কোষ থেকে মাত্র ১ থেকে ২ শতাংশ জল কমে গেলে মস্তিষ্ক দুর্বল হয়ে পড়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কানেক্টিকাট বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকজন তরুণীর উপর পরিচালিত এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় আরও দেখা যায় ব্যায়ামের মাধ্যমে মেয়েরা শরীর থেকে মাত্র ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ তরল হারানোর পর দূর্বল হয়ে পড়ে, তাদের মস্তিষ্কের চনমনে ভাব চলে যায় আর মাথা ব্যথা শুরু হয়।

photo: big think

একইভাবে কয়েকজন পুরুষের উপর গবেষণা পরিচালনা করে দেখা যায়, তারা ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ তরল হারানোর পর ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তাদের মস্তিষ্কে উদ্বেগ কাজ করে ও কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়।

৩. মাথা ব্যথার মহৌষধ

ঠিক এর পূর্বের অনুচ্ছেদ থেকে নিশ্চয়ই জেনেছেন মস্তিষ্কের সুস্থ কার্যকলাপের জন্য পানি কতটা প্রয়োজনীয়। অনেক মানুষের মাইগ্রেনের ব্যথার অন্যতম প্রধান কারণ ডিহাইড্রেশন বা পানি শূন্যতা।

photo: md premier

নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত পানি পান প্রাথমিক পর্যায়ে মাথা ব্যথা প্রতিকারে খুবই কার্যকরী, এমনকি মাথা ব্যথা প্রতিরোধেও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

৪. শরীরের পুষ্টি বিতরণকারী

যদিও বিশুদ্ধ পানিতে কোনো পুষ্টি উপাদান থাকে না, তবে পানি কিছু খনিজ উপাদান শোষণ করে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে বিতরণ করে। উদাহরণস্বরূপ, বোতলজাত খনিজ পানিতে সেডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়ামের মত কিছু স্বাস্থ্যকর খনিজ উপাদান মিশ্রিত থাকে, যা পান করার পর শরীরের বিভিন্ন অংশে পানি প্রবাহের সাথে সাথে পৌঁছে যায়।

photo: kobieta

বাজার থেকে কেনা বোতলজাত পানির লেভেল দেখলে পানিতে বিদ্যামান খজিন উপাদান সম্বন্ধে আপনিও জানতে পারবেন।

৫. শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

শরীরের তাপ কমানো তথা পরিবর্তনের জন্য পানি খুবই কার্যকর উপাদান। এমনকি, মানব শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের প্রাথমিক উপাদান পানি। শরীরের অন্যান্য উপাদানের চেয়ে পানি অপেক্ষাকৃত বেশি তাপ শোষণ করতে পারে। যে কারণে হঠাৎ পরিবর্তীত তাপমাত্রার বিরুদ্ধে মানব শরীরের প্রতিটি কোষের মধ্যে থাকা পানি ঢাল হিসেবে কাজ করে। এই কারণে বিশেষজ্ঞরা গরম আবহাওয়া বা পরিবেশে প্রচুর পানি পান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

দিনে কী পরিমাণ পানি পান করবেন?

এখন নিশ্চয়ই আপনি জানেন কেন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করবেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো সেই পর্যাপ্ত পরিমাণটা কত বা কী পরিমাণ? ইন্টারনেটে ছড়ানো অসংখ্য ভুয়া ও মনগড়া তথ্যের মতো এমন একটি প্রচারণাও চালানো হয় যে, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ৮ গ্লাস পানি পান করা প্রয়োজন।

photo: pixabay

কিন্তু বিজ্ঞানী এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, ব্যক্তির লিঙ্গ, বয়স, ওজন, দৈনন্দিন শারীরিক কাজের পরিমাণ ও আবহাওয়ার তারতম্যের উপর ভিত্তি করে প্রয়োজনমত পানি পান করা সবচেয়ে উত্তম।

কিভাবে অধিক পরিমাণ পানি পান করবেন?

শারীরিক পরিশ্রম করার পর আপনার কী পরিমাণ জল পান করা উচিত? এই নিবন্ধ পড়ার পর নিশ্চয়ই ভাবছেন প্রয়োজনের তুলনায় আপনি কম জল পান করছেন। যদি সত্যিই এমন হয় আর বেশি পানি গ্রহণে আপনার অনীহা থাকে তবে দৈনন্দিন পানির চাহিদা পূরণ করতে সরাসরি পানি পান করার বদলে অন্য পন্থা অবলম্বন করতে হবে। আপনি চাইলে তরমুজ বা এ জাতীয় পানিযুক্ত ফল খেতে পারেন। চাইলে কোন ফলের জুস খেতে পারেন। আবার প্রতিবার কিছু খাওয়ার পূর্বে এক গ্লাস পানি খেয়ে নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।