কয়েকবছর আগের কথা -তখন কেউ চিন্তাও করতে পারতো না যে অফিসে না গিয়েও, বাসায় বসে কাজ করে অর্থ উপার্জন সম্ভব। অথচ বর্তমানে প্রায় কয়েক লক্ষ লোক অনলাইনে আয় করেন! অনলাইনে আয় করার সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতিটি হচ্ছে ফ্রীল্যান্সিং আর সেই ফ্রীল্যান্সিং এ আপনার উপার্জন নির্ভর করে আপনার দক্ষতার উপর, আপনি কোন দক্ষতাটি বিক্রি করছেন তার উপর। প্রযুক্তির পরিবর্তনের সাথে সাথে যেমন কাজের স্থানের পরিবর্তন এসেছে, তেমন তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন দক্ষতার ক্ষেত্রও।

আজ যে দক্ষতাটি আপনার আছে, কাল সেটির চাহিদা নাও থাকতে পারে। তাই সময়ের সাথে সাথে নতুন নতুন কাজে দক্ষ হওয়াটা খুবই জরুরী। একটা সময় ডাটা এন্ট্রির কাজের অনেক চাহিদা ছিল কিন্ত এখন অনেক স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যার দিয়ে সেসব কাজ অনেকাংশেই করে ফেলা যায় বলে এর চাহিদা কমে আসছে। তাই আজ আমরা এমন কয়েকটি স্কিল সম্পর্কে জানবো, যেগুলোর উপর নির্ভর করছে ফ্রীল্যান্সিং এর ভবিষ্যৎ!

বিটকয়েন

এককথায়, বিটকয়েন হচ্ছে একধরনের সাংকেতিক মুদ্রা যার লেনদেন হয় ওপেন সোর্স ক্রিপ্টোগ্রাফিক প্রোটোকলের মাধ্যমে। বিটকয়েন লেনদেনের জন্য কোন ধরনের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বা নিকাশ ঘরের প্রয়োজন হয় না।

বিটকয়েন image source: bestonlinesportsbooks.info

অতি সম্প্রতি বিটকয়েনের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এটি নতুন করে আবার আলোচনায় এসেছে। বর্তমানে বেশ কিছু অর্থ আদান প্রদান মাধ্যমে বিটকয়েন ইতিমধ্যে সংযুক্ত হয়ে গেছে এবং ভবিষ্যতে যে এটিই অর্থ আদান প্রদানের সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হয়ে উঠবে – এ সম্পর্কে কোন দ্বিধা নেই। তাই আজকেই জেনে নিন বিটকয়েনের আদ্যোপান্ত!

পেনিট্রেশন টেস্টিং

সাইবার সিকিউরিটি হচ্ছে বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেখানে প্রচুর দক্ষ লোক প্রয়োজন। আর পেনিট্রেশন টেস্টিং এর প্রয়োজন পড়ে সেখানেই। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা যায়, ৩৬% ব্যবসার অনলাইন সিস্টেম হ্যাকারদের দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং এই সংখ্যাটি দিনে দিনে বড় হচ্ছে।

সাইবার সিকিউরিটি হতে যাচ্ছে একবিংশ শতাব্দীর বড় চ্যালেঞ্জ image source : www.armolon.com

একটা সিস্টেম কতটুকু সক্ষম, কতটুকু কার্যকর এবং কতখানি নিরাপদ – এই বিষয়গুলো সম্পর্কে নিশ্চিত হতে প্রয়োজন পেনিট্রেশন টেস্টিং, জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস আপওয়ার্কের শীর্ষে রয়েছে এই দক্ষতাটি। এর চাহিদা বাড়ছে খুবই দ্রুত। তাই দেরি না করেই অর্জন করে নিন এই দক্ষতাটি!

রিয়েক্ট জে এস( React.js)

জাভাস্ক্রিপ্ট বর্তমানে সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ। একসময় এটি শুধুমাত্র ওয়েবসাইটের ফ্রন্ট এন্ড এর জন্য ব্যবহৃত হলেও, বর্তমানে জাভাস্ক্রিপ্টের অসাধারণ সব ফ্রেমওয়ার্ক আসার পর – ব্যাকএন্ডেও ব্যবহৃত হচ্ছে জাভাস্ক্রিপ্ট।

React.js;image source: valueCoder

এখন অনেক জায়গায় এন্ড্রয়েড এবং আই ও এস এর এপ্লিকেশনও বানানো হয় জাভাস্ক্রিপ্ট দিয়ে। এতে এন্ড্রয়েড এবং আইওএস এর জন্য আলাদা করে এপ্লিকেশন তৈরি করতে হয় না- একই এপ্লিকেশন সব রকম প্লাটফর্মে চলে বলে এর জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে দিনে দিনে এবং আপওয়ার্কের সম্প্রতি গবেষণা বলছে-  সবচেয়ে বেশী কাজ বেড়ে চলেছে জাভাস্ক্রিপ্টের রিয়েক্ট জে এস ফ্রেমওয়ার্কটির। তাই আপনি যদি অনলাইনে প্রোগ্রামিং করে টাকা উপার্জন করে থাকেন – আজই শিখে ফেলুন ফ্রেমওয়ার্কটি!

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স

একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার ক্ষুদ্র ব্যবসা হোক – কিংবা কোন বিশাল ব্যবসায়ীর কোটি কোটি টাকার ব্যবসাই হোক, সব রকম ব্যবসা নির্ভর করে তার কাস্টমারের উপর। আর সেই কাস্টমারকে সপ্তাহে সাত দিন, দিনে ২৪ ঘণ্টার সাপোর্ট দিতে সবচেয়ে কার্যকর ব্যবস্থাটি হলো “চ্যাটবট” ।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সই ভবিষ্যৎ; image source: Allevi8 Marketing

চ্যাটবট আসলে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে বানানো একটি সফটওয়্যার যেটি কাস্টমারের প্রশ্ন বুঝে এক সেকেন্ডের ও কম সময়ে কাস্টমারকে সঠিক উত্তরটি দিয়ে দেয়। এতে যেমন কাস্টমারের কোন সময় নষ্ট হয় না, তেমনি একই সাথে ব্যবসায়ীও শুধুমাত্র একটি সফটওয়্যার দিয়েই তার ব্যবসাকে চালিয়ে নিতে পারছেন। আপওয়ার্কের বর্তমান গবেষণায় তাই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সও উঠে এসেছে শীর্ষে!

অগমেন্টেড রিয়েলিটি

অগমেন্টেড রিয়েলিটি হলো এমন একটি প্রযুক্তি যার মাধ্যমে আপনি আপনার চারপাশের জগতেই ভার্চুয়ালি কোন বস্তু যোগ করতে পারবেন।

বাড়ছে কাজ অগমেন্টেড রিয়েলিটির; image source: Search Engine Land

গত কয়েক বছরে ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতির কারণে বর্তমানে অগমেন্টেড রিয়েলিটি অনেক বেশী বাস্তব- অনেক বেশী বিশ্বাসযোগ্য। বর্তমানে প্রচুর মোবাইল এপ্লিকেশন এবং মোবাইল গেইমে ব্যবহৃত হচ্ছে অগমেন্টেড রিয়েলিট। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অনলাইনে কাজের পরিমাণও। তাই আর দেরী কেন? আজই শেখা শুরু করে দিন এই স্কিলটি!

ফাইনাল কাট প্রো

ভিডিও এডিটিং এর জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় সফটোওয়্যারটি হলো ফাইনাল কাট প্রো। বর্তমানে ইউটিউবিং একটি জনপ্রিয় পেশা হয়ে উঠেছে। এটি মূলত ভিডিও নির্ভর পেশা হওয়াতে ভিডিও এডিটিং এর কাজ ও বেড়ে চলেছে। আপওয়ার্কের গবেষণায় দেখা যায় তিন বছরের তুলনায় গত দুই বছরে ভিডিও এডিটিং এর কাজ অনলাইনে বেড়েছে প্রায় কয়েকগুণ! ইউটিউবের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়তে থাকায় ফাইনাল কাট প্রো এর কাজ যে দিনে দিনে আরো বাড়তে থাকবে – এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই! তাই আজই শিখে নিন ফাইনাল কাট প্রো দিয়ে ভিডিও এডিটিং কাজটি!

আসলে, ফ্রীল্যান্সার হতে হলে প্রয়োজন প্রতিনিয়ত শিখে নেয়ার মানসিকতা। একটি স্কিল অর্জন করে শুধুমাত্র সেটি নিয়েই কাজ করতে থাকলে একসময় স্বাভাবিকভাবেই কাজ শেষ হয়ে যাবে – কেননা প্রযুক্তি বদলে যাচ্ছে খুবই দ্রুত। কাজেই, প্রতিদিন নিজের দক্ষতায় কাজ করার পাশাপাশি শিখতে থাকুন নতুন নতুন কাজ। বিশেষভাবে উপরে লেখা স্কিলগুলো। কারণ আজ না হয় কাল – মার্কেটে রাজত্ব করতে যাচ্ছে এই কাজগুলোই!