যাদের প্রায় প্রতিদিনই ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তাদের সাথে কাজ করতে হয়, তাদের ক্ষেত্রে ইতিবাচক আত্মপ্রচার খুবই কাজে দেয়। এটি যারা ভালোভাবে, কাউকে বিরক্ত না করেই করতে পারে তারা আসলেই প্রশংসার যোগ্য। সাফল্যের পথে এগিয়ে যাবার একটি ভালো উপায় হচ্ছে নিজেকে, আপনার দল, আপনার সংস্থার সম্পর্কে খুব ভালো, সুন্দর এবং স্মার্ট বর্ণনা দেওয়া। অর্থাৎ নিজের ঢোল নিজে পেটানো আরকি।

P.T. Barnum বলেন , “প্রচার ছাড়া ভয়ানক কিছু ঘটে আর সেটা হচ্ছে – কিছুই না!”

এক্ষেত্রে কীভাবে মনোযোগ আকর্ষণ করবেন, কাউকে প্রভাবিত করবেন সে বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রায় সবাই আত্মপ্রচারকে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখেন। অনেকেই আত্মপ্রচার করতে গিয়ে দাম্ভিক ব্যবহার করে বসেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আত্মপ্রচার করে অন্যের বিরক্তির কারণ হতে হয়। তাই ভালোমতো জানতে হবে কারো বিরক্তির কারণ না হয়ে, দাম্ভিক ব্যাবহার না করেও কীভাবে আত্মপ্রচার করা যায় ।

সচেতন থাকুন

Image Source – shutterstock.com

অনেকেই একা কিংবা দলগতভাবে নিজেদের সম্পর্কে ক্রমাগত কথা বলেই যান, কিন্তু যারা শুনছেন তাদের বিরক্তি খেয়াল করছে না। এরকম হলে মানুষের কাছে আপনি একজন বিরক্তিকর ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হয়ে যাবেন এবং পরবর্তীতে অসুবিধায় পড়তে হবে। তাই শ্রোতাদের মানসিকতা বোঝার চেষ্টা করুন। তাদের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন, তাদের অঙ্গভঙ্গির দিকে খেয়াল রাখুন। তাহলে কেউ বিরক্ত হচ্ছে কিনা সেটা যেমন বুঝতে পারবেন তেমনি কেউ খুব আগ্রহী কিনা সেটাও বুঝতে পারবেন। এবং আপনার কাজ অনেক বেশি সহজ হয়ে যাবে। তাই এক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে।

শোভন ও অমায়িক থাকুন

Image Source – Youtube.com

মাঝেমধ্যে আপনার কথার উত্তরে কেউ হয়তো ‘ধন্যবাদ’ জানালো। কিন্তু তাতেই আপনি ধরে নিতে পারেন না যে তিনি আরও শুনতে আগ্রহী। যদি কেউ আসলেই আগ্রহী হয় তাহলে প্রশ্ন করবে, জানতে চাইবে এবং আপনাকে আরও বলার সুযোগ করে দেবে। ফরাসী দার্শনিক  Jacques Maritian বলেন –

“কৃতজ্ঞতা প্রকাশ হচ্ছে শিষ্টাচারের সুন্দরতম উপায়।”

কেউ যদি ধন্যবাদ জানায় তাহলে কথা সংক্ষেপে শেষ করাই ভদ্র উপায়। এর মাধ্যমে কাউকে সহজে মুগ্ধ করতে পারবেন।

উদার হতে চেষ্টা করুন

Image Source- medium.com

আপনার সংগঠন ও সফলতার পেছনে অন্যদের কী কৃতিত্ব আছে সেটি স্বীকার করুন। যারা আপনাকে সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রশংসা করা মানবিকই হয় না তাদের অনুপ্রাণিতও করে। অন্যরাও জানবে যে, আপনি একা কাজ করছেন না, সফল হবার জন্য প্রয়োজনীয় নেটওয়ার্কটি আপনার আছে। তাহলে আপনার কর্মীদের কাছে আপনার গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। আস্থা বাড়বে। এবং আপনার এই দলগত কাজ দেখে আরও অনেকেই অনুপ্রাণিত হবে। সর্বোপরি প্রচারণাটি হবে সর্বোচ্চ।

আপনার গল্পটা আকর্ষণীয় করে তুলুন

Image source – Medium.com

শুধু বিভিন্ন পরিসংখ্যান নিয়ে কথা বলবেন না। আপনার সাফল্যের পরিসংখ্যান নিজের কাছে উৎসাহব্যাঞ্জক মনে হতেই পারে, কিন্তু হয়তো অপরের কাছে সেটি বিরক্তিকর হয়ে দাঁড়ায়। তথ্য ও পরিসংখ্যানে কথাকে ভারী করে তুললে মানুষ তাতে সহজে আগ্রহী হবে না। তাই যথাসম্ভব তথ্যের বাহুল্য এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করুন। তার চেয়ে বরং যারা শুনছেন তাদের কাছে গল্পের মত করে আপনার কথাগুলো উপস্থাপন করুন, কিংবা আপনার সাফল্যের গল্পতাই বলুন না কেন? তাহলে তারা অনেকদিন আপনাকে মনে রাখবে। এবং আপনার উদ্দেশ্য সফল হবে।

3M executive Gordon Shaw অনেক আগেই সাফল্যের গল্পের আবেদন বুঝতে পেরেছিলেন । তিনি একে বলেন  “Strategic Narratives”। এর মাধ্যমেই “3M” এর মত প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে।

প্রতিযোগিতা করবেন না

Image source – Enterprenure.com

প্রতিযোগীদের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করুন। শুধুই প্রতিযোগিতা করতে যাবেন না। সবার সাথেই ভালো সম্পর্ক থাকলে আপনার প্রচার অনেক বেশি হবে। এমনকি দেখা যাবে হয়তো এখনকার প্রতিযোগীই আপনার ভবিষ্যতের বিজনেস পার্টনার! তাই কারো সাথে আপনার প্রতিযোগিতা থাকতেই পারে। কিন্তু সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রাখলে ভবিষ্যতে অনেক কাজে লাগবে। প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে ভালো ব্যাবহারের ফলে আপনার সুনাম ছড়াবে, যা আপনাআপনি প্রচারের কাজে লেগে যাবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্যদের প্রশ্নের উত্তর দিন

Image source – creativewebsiteings.com

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আত্মপ্রচারের জন্য ভালো মাধ্যম। নিজস্ব ওয়েবসাইটে পণ্যের প্রচারের চেয়ে এরকম ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমেই অতি সহজে প্রচারের কাজটা করতে পারেন। এখানে যে কেউ আপনার কাজ, পণ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারবে। আপনিও সহজেই উত্তর দিতে পারবেন। অনেক সহজে আপনার ক্লায়েন্টদের কাছে পৌছাতে পারছেন। বর্তমানে বেশিরভাগ পণ্যের বিজ্ঞাপন ফেসবুক কেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে।