ভালো পরিকল্পনা, বিশাল কর্মী বাহিনী এবং যথাযথ আত্মবিশ্বাস থাকার পরও অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসে না। এক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক কর্মমুখীতা একটি বড় বিষয়, অর্থাৎ যেকোন সাফল্যের জন্য কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগে সব সময় কর্মমুখী থাকা খুবই কঠিন কাজ। নিজেকে সব সময় সমান কর্মমুখী রাখতে এবং ধারাবাহিকভাবে কাজ এগিয়ে নিতে নিচের পরামর্শগুলো অনুসরণ করতে পারেন।

photo: career-intelligence

১. কর্মক্ষমতা চিহ্নিত করুন

যেকোনো কাজ শুরু করার আগে একটি নূন্যতম সাফল্য নির্ধারণ করুন, নির্ধারণ করুন কাজ শেষে যা আপনি অর্জন করতে চান। যেকোনো কাজের শুরুতে একটি ন্যূনতম সাফল্যের মাত্রা চিহ্নিত করলে নিজের মধ্যে কাজ করার একটা অনুপ্রেরণা সৃষ্টি হয়। যে কারণে নিজের সচেতন মন ওই নূন্যতম সাফল্য অর্জন করতে সবসময় উৎপাদনমুখী এবং কর্মঠ থাকতে অনুপ্রাণিত করে। এই প্রবণতা অস্বস্তি বা মন খারাপের সময়ও মানুষের মধ্যে সমানভাবে কাজ করে।

photo: patimes

শিশুকালে খরগোশ ও কচ্ছপের গল্প নিশ্চয়ই সবাই শুনেছেন! ন্যূনতম সাফল্যের মাত্রা নির্ধারণ করা এজন্য খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। খরগোশ নিঃসন্দেহে অনেক দ্রুত দৌড়াতে পারে। কিন্তু সে ন্যূনতম সাফল্যের মাত্রা নির্ধারণ না করে বিশ্রাম নিয়েছিল। ফলশ্রুতিতে সে দৌড়ে হেরে গিয়েছিল, অথচ তার চেয়ে অনেক ক্ষীণ গতিসম্পন্ন হয়েও কচ্ছোপ শুধুমাত্র নিজের ন্যূনতম সাফল্যের মাত্রা নির্ধারণ করে তা সামনে রেখে সমান গতিতে কাজ করে যাওয়ায় সাফল্য পেয়েছিল।

সুতরাং অস্বস্তি বা মন খারাপের সময়ও কর্মমুখী থাকতে সাফল্যের একটি ন্যূনতম মাত্রা নির্ধারণ করুন। কোনক্রমে ব্যর্থ হলেও আপনি এই ন্যূনতম সাফল্য নিশ্চিতভাবে অর্জন করবেন। তাহলে মন খারাপের সময়ও খুব সহজেই কর্মমুখী থাকতে পারবেন।

২. কাজের সীমানা নির্ধারণ

সব সময় কর্মমুখী থাকার জন্য কাজের সীমানা বা মাত্রা নির্ধারণ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। দৈনন্দিন কাজের মাত্রা নির্ধারণ করলে আপনি নিজেকে যেমন বেশি কাজ করতে উৎসাহিত করবেন না, তেমনি কম কাজ করা থেকেও বিরত রাখবেন। যা সব সময় আপনার মধ্যে কাজের একটা সাম্যবস্থা বজায় রাখবে।

আমরা অনেক সময় অতিরিক্ত কাজ দেখে খুব বেশি আত্মবিশ্বাস নিয়ে একনাগাড়ে দীর্ঘক্ষণ কাজ করে যাই, যা খুব দ্রুতই আমাদের ক্লান্ত করে ফেলে। যে কারণে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগেই আমারা কাজ করার শক্তি হারিয়ে ফেলি।

photo: edmonton gazette

একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ প্রতিদিন ছয় থেকে আট ঘণ্টার সময়ে ২০ মাইল দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। কিন্তু আপনি যদি কোনোরকম বিশ্রাম না নিয়ে ক্রমাগত প্রতি ছয় থেকে আট ঘন্টায় ২০ মাইল করে দূরত্ব অতিক্রম করতে চান, তাহলে অচিরেই আপনি দৌড়ানোর শক্তি হারিয়ে ফেলবেন।

সুতরাং এক্ষেত্রে মাত্রা নির্ধারণ করা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি ছয় থেকে আট ঘণ্টায় ২০ মাইল দূরত্ব অতিক্রম করার পর পরবর্তী ছয় সাত ঘন্টা সমানভাবে বিশ্রাম নেন তাহলে আবারও আপনি পরদিন সমান গতিতে ছুটে যাওয়ার শারীরিক সক্ষমতা অর্জন করবেন। কাজেই সবসময়ই সমান কর্মমুখী থাকবে কাজের সীমানা নির্ধারণ করুন।

৩. কাজের পরিকল্পনা এবং সরঞ্জাম নিজের অনুকূলে রাখুন

কোনো কাজই সহজ নয়। সব কাজই শ্রমসাধ্য। কিন্তু যেকোনো কাজের সাফল্য নির্ভর করে উক্ত কাজ নিয়ে আপনার পরিকল্পনা এবং ব্যবহৃত সরঞ্জাম কতটা সহজ ও অভিনব তার উপর। যে কোনো কাজ করতে সকল সরঞ্জাম, সুযোগ আপনি কতটা দক্ষতার সাথে ব্যবহার করতে পারেন তার উপর নির্ভর করে সাফল্য কত দ্রুত আসবে।

যেমন যেকোনো বড় কাজে সাফল্যের জন্য শুধু ভালো কর্মীদল থাকলেই হবে না। নিশ্চিত করতে হবে সেই দলের সাথে আপনার যোগাযোগও খুব গভীর। দলের সক্ষমতা এবং কাজ সম্বন্ধে আপনাকে নিশ্চিতভাবে জানতে হবে।

photo: startupdonut

আপনার কাছে একটি চমৎকার পরিকল্পনা, আর পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ কর্মীদল আছে। কিন্তু আপনার পরিকল্পনা যদি এই কর্মী দলের পক্ষে বাস্তবায়নযোগ্য না হয় তবে এই দল ও পরিকল্পনা কোনটিই আপনার কাজে আসবে না।

সুতরাং পরিকল্পনা ও কর্মকৌশলের মধ্যে সমন্বয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। হতে পারে কাজের জন্য আপনার কোনো দল নেই, কিন্তু চমৎকার পরিকল্পনা আছে। তাহলেও আপনি কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবেন না। সুতরাং পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন কৌশলের সমন্বয় করলে যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে সবসময়ই কর্মমুখী রাখা সম্ভব, এমনকি প্রতিষ্ঠানের মন্দাকালীন সময়েও।

৪. নিয়ন্ত্রণ রাখা

নিজের কাজে সার্বক্ষণিক নিয়ন্ত্রণ রাখা কাঙ্ক্ষিত সাফল্য ছিনিয়ে আনার জন্য কর্মতৎপরতার মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। কাজ করতে গিয়ে আপনি কখনও কখনও দেখবেন অনেকেই আপনাকে টপকে আপনার চেয়ে ভালোভাবে কাজ করছে। আপনার কাজটি ছিনিয়ে নিতে চাইছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আপনার কাছে মনে হবে আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যক্তিটি আপনার চেয়ে যোগ্য এবং বিশ্বাসী।

photo: linkedin

এ অবস্থায় নিজের কাজের নিয়ন্ত্রণ হারানো অনেকটা ইচ্ছা করে নিজের সাফল্য অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার সামিল। সুতরাং নিজের কাজের নিয়ন্ত্রণ রাখা শিখুন। আপনি চমৎকার ভাবে পরিকল্পনা করুন এবং নিজের পরিকল্পনা নিজের কাছে গচ্ছিত রাখুন। কাজ এমনভাবে আটকে রাখুন যেন মাঝপথে অন্য কেউ আপনার থেকে ছিনিয়ে নিতে না পারে, অথবা আপনার আগেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ পূরণ করতে না পারে। এভাবে কৌশলী হয়ে নিজের কাজ নিজের দখলে রাখলে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করা সহজ হয়।

উপরিউক্ত বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে পারলে আশা করা যায় সার্বক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান কর্মক্ষম রাখা সম্ভব। তবে এটি একটি বিস্তৃত বিষয়। পরবর্তী আরও একটি নিবন্ধে এ সম্পর্কিত আরো কিছু সুনির্দিষ্ট পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করার আশা রাখছি।