আমরা সবাই জীবনের কোনো সময় দুঃখ, বেদনা, দুশ্চিন্তায় পতিত হই। কারণ, সুখের ন্যায় দুঃখও আমাদের জীবনের একটি অংশ। যখন আমরা কোনো একটি সমস্যার মধ্য দিয়ে যাই, তখন আমরা হতাশ হয়ে পড়ি। এগিয়ে যাবার মতো মানসিক সামর্থ্য হারিয়ে ফেলি। তখন কর্মজীবন ও বাস্তব জীবন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে।

Source: m.wikihow.com

তখন এমন একজন মানুষের প্রয়োজন অনুভব হয়, যিনি পাশে দাঁড়াবেন। সমস্যাগুলো বুঝবেন। একটু সান্ত্বনা দেবেন। সামনে এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা যোগাবেন। আপনার কর্মক্ষেত্রে এরকম কেউ ব্যক্তিগত সমস্যার মধ্যদিয়ে যায় এবং যদি ঐ ব্যক্তি আপনার অধীনস্থ হয়, তাহলে আপনি কি করবেন? কীভাবে ব্যক্তিটির পাশে দাঁড়াবেন? তাকে সাপোর্ট দেওয়া আপনার দায়িত্ব। সেই সঙ্গে অফিসের কাজ সম্পন্ন করাও জরুরী।

Source: independent.co.uk

আজকে আপনাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কিছু স্পেশালিষ্টের দিকনির্দেশনার পাশাপাশি নিজের কিছু মতামত শেয়ার করবো। তাহলে চলুন আলোচনার গভীরে।

অভিজ্ঞদের কিছু কথা

যখন কোনো কর্মকর্তা কর্মচারী ব্যক্তিগত সমস্যার মধ্যদিয়ে যায়, তখন একজন উপরস্থ কর্মকর্তা হিসেবে বিষয়টি সমাধান করে কাজ চালিয়ে যাওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। এ বিষয়ে হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের প্রফেসর লিন্ডা হিল বলেন, “যখন কোনো অফিসের বস এমন পরিস্থিতিতে পড়েন, তখন তার জন্য এটা মোকাবেলা করা বিশাল চ্যালেঞ্জ”। এই বিষয়ে তার একটি জনপ্রিয় বই রয়েছে। তার “বিং দি বস” বইটিতেও বিষয়টি বর্ণনা করেছেন।

Source: thebalancecareers.com

আবার ইউনিভার্সিটি অফ পেনসেল্ভিনিয়ার সিনিয়র ফেলো ইনি ম্যাকি বলেন “আমরা সবাই মানুষ। আমাদের আবেগ, অনুভূতি, সমস্যা রয়েছে। এগুলো এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। যদি একজন কর্মকর্তা কর্মচারী এরকম সমস্যার মধ্য দিয়ে যায়, তাহলে এই পরিস্থিতি মোকাবেলাই হচ্ছে তার জন্য বস হিসেবে পরীক্ষা। যেখানে আপনি আপনার অধীনস্থের পাশেও দাঁড়াবেন এবং অফিসের কাজও আদায় করে নিতে হবে।

অধীনস্থের পাশে দাঁড়ান

ম্যাকি বলেন, “মানুষ যখন এরকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যায়, তখন তারা বিষয়গুলো বসের নিকট বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না”। এজন্য, একজন উপরস্থ কর্মকর্তা হিসেবে ব্যক্তিটির মানসিকতা বুঝতে হবে। তাকে নমনীয়তার সঙ্গে জিজ্ঞেস করতে হবে। তার সমস্যা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন।

Source: adurolife.com

এরপর ব্যক্তিকে এটা বোঝান যে, আপনি সবসময় তার পাশে আছেন। যদি সমস্যা সমাধানযোগ্য হয় তাহলে সমস্যা সমাধানের পথ দেখিয়ে দিন। আর যদি সমাধানযোগ্য না হয়, তাহলে তাকে পরামর্শ দিন কীভাবে এই সমস্যা বেরিয়ে আসতে হয়।

যদি সম্ভব হয়, অফিসে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করুন যাতে ব্যক্তিটি বুঝতে পারে সবাই তার পাশে আছে। তাহলে, এই ক্রাইসিস থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে।

পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করুন

ম্যাকি বলেন, “একজন লিডার হিসেবে আপনি কর্মকর্তা কর্মচারীর সমস্যায় পাশে দাঁড়াবেন এটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু তার আগে আপনাকে এটা বুঝতে হবে যে, ঐ ব্যক্তি আপনাকে পাশে চায় কি না। অর্থাৎ, যদি ব্যক্তিগত সমস্যা আপনার সাথে শেয়ার না করতে চায়, তাহলে বার বার জিজ্ঞেস না করাই ভালো”।

Source: witter.com

একজন মানুষ ধীরে ধীরে অন্যের নিকট আপন হয়ে ওঠে। যে মানুষটি অন্যের নিকট কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতো না। সেই মানুষটিই সময়ের ব্যবধানে অকপটে বলে যায় জীবনের নানা কথা। তাই একজন লিডার হিসেবে উচিৎ, একটি সহায়তাপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তোলা। তাই বলে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলাও ঠিক হবে না।

অধিকাংশ ম্যানেজার বিশ্বস্ততা এবং সম্মান এই দু’টির মাঝে পার্থক্য গুলিয়ে ফেলেন। এ বিষয়ে ম্যাকি বলেন “একজন লিডার হিসেবে আপনাকে অন্য মানুষদের চাহিদা ও ভাবনার বিষয়গুলো বুঝতে হবে”।

আগে শুনুন পরে বলুন

লিন্ডা বলেন, “যখন কোনো কর্মকর্তা কর্মচারী তার সমস্যার কথা বলবে, তখন মনোযোগ সহকারে শুনুন। কারণ, তার সমস্যার ওপর নির্ভর করেই সমাধানের পথ দেখাতে হবে। এরপর তাকে নমনীয়তার সঙ্গে জিজ্ঞেস করুন, আপনি তার জন্য কীভাবে সাহায্য করতে পারেন? যদি প্রথমেই তাকে ছুটি নেওয়ার পরামর্শ দিন, তাহলে আপনি ব্যক্তিটির ভাবনা সম্পর্কে জানতে পারবেন না। প্রথমে তার মতামত শুনুন। এরপর বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। প্রয়োজনে অন্য সহকর্মীকে চলমান কাজগুলো হ্যান্ডওভার করে ছুটির ব্যবস্থা করতে পারেন”।

Source: oasis-ni.org

এভাবে ক্রাইসিসের মধ্যদিয়ে যাওয়া ব্যক্তিটির সহায়তা করতে পারেন। এতে করে প্রতিষ্ঠানের কাজেরও কোনো স্থবিরতা আসবে না, আবার ঐ ব্যক্তির সাহায্যে এগিয়ে আসাও সম্ভব হবে।

সীমার মধ্যে থেকে সাহায্য করুন

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম নীতি রয়েছে। এই নীতি অনুসরণের মাধ্যমেই পরিচালিত হয় প্রতিটি প্রতিষ্ঠান। ধরুন, আপনি আপনার অধীনস্থদের স্বাভাবিকভাবে এক সপ্তাহ ছুটি দিতে পারেন। হয়ত বিশেষ কারণে কয়েক সপ্তাহ। কিন্তু কোনো কর্মকর্তা কর্মচারী দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার অনেক দিনের ছুটির জন্য আবেদন করলো। এক্ষেত্রে আপনি কি করবেন? অথবা কোনো নারী কর্মকর্তা কর্মচারী প্রেগ্নেন্সির জটিলতার সম্মুখীন হওয়ার অনেক দিনের ছুটির আবেদন করলো। এই পরিস্থিতিতে আপনি কী সিদ্ধান্ত নেবেন?

Source: themuse.com

এক্ষেত্রে অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের নীতির ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মনে রাখবেন, আপনি প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা মাত্র, মালিক নন। তাই আপনি প্রতিষ্ঠানের নিয়ম নীতি মানতে বাধ্য।

এজন্য তাদের ঠিক ততটাই প্রতিশ্রুতি দেবেন যতটা আপনার ক্ষমতাবলে রয়েছে। এমন প্রতিশ্রুতি দেবেন না, যা  আপনার এবং আপনার অধীনস্থ কর্মকর্তা কর্মচারীর জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়।

অতিরিক্ত চাপ দেবেন না

যদি আপনার প্রতিষ্ঠানে এরকম কেউ সমস্যার মধ্য দিয়ে যায়। যদি তাকে আপনি প্রয়োজনীয় ছুটিও দিতে না পারেন, তাহলে অন্তত তার পাশে দাঁড়ান। ঐ ব্যক্তির কাজের চাপ কমিয়ে দিন।

Source: independent.co.uk

প্রয়োজনে তার কাজের কিছু অংশ অন্য সহকর্মীদের ভাগ করে দিন। মানুষটিকে সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার অনুপ্রেরণা দিন।

স্বচ্ছতা ও ধারাবাহিকতার সঙ্গে থাকুন

আপনি যদি মানুষের কাছ থেকে ভালো মানের কাজ পেতে চান। তাহলে আপনাকে তাদের আস্থার মানুষ হতে হবে। কারণ, মানুষ যাকে বিশ্বাস করে তার কথা মতো চলতেই ভালোবাসে।

Source: merchbywitly.com

এজন্য প্রয়োজন স্বচ্ছতা। আর মানসম্পন্ন কাজের জন্য প্রয়োজন ধারাবাহিকতা। তাই স্বচ্ছতা এবং ধারাবাহিকতার মধ্যদিয়ে জীবন পরিচালিত করুন। সমস্যা সমাধান হবেই।

Feature Image Source: adurolife.com