সিংহভাগ মানুষের স্বপ্ন থাকে প্রচুর টাকার মালিক হওয়া! এই স্বপ্ন সফল করতে গিয়ে তারা দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। এই পরিশ্রমের ফাঁকে নিজের শরীর এবং মনের সুস্থতার জন্য বিশ্রামের প্রয়োজনীয়তার কথাও অনেকে ভুলে যান। যার ফলে হয়তো প্রচুর টাকার মালিক হওয়া যায়, কিন্তু মন এবং শরীর সুস্থ থাকে না। আবার কখনো কখনো অঢেল টাকার মালিক হওয়ার স্বপ্ন শরীর-মনের অসুস্থতার কারণে সফল হয় না।

photo: HuffingtonPost

সুতরাং শুধু পাগলের মতো কাজ করে যাওয়া নয়। বরং সেই কাজ সঠিক এবং সুন্দর ভাবে করার জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম প্রয়োজন। আমি ইতিপূর্বে একটি নিবন্ধ এ সম্পর্কিত কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আজকের নিবন্ধে জানাবো আরো কয়েকটি বিষয়, যা অনুভূত হলে বুঝতে হবে আপনার বিশ্রাম প্রয়োজন, নিজেকে সময় দেওয়া প্রয়োজন।

১. বিক্ষিপ্ত মেজাজ অথবা অসুস্থ ভাব

কাজের চাপে কখনো কখনো এমন হয় যে, সহকর্মীদের দৈনন্দিন স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপও অসহ্য লাগে। তাদের স্বাভাবিক কথা আপনাকে বিরক্ত করে তোলে। অফিসের পরিবেশ শান্ত থাকার পরও আপনার মনে হয় কোনো কিছুই ঠিক নেই। আপনি সবকিছু নিয়ে একটা বিক্ষিপ্ত মেজাজে থাকেন। অকারণে সহকর্মী এবং অধস্তনদের উপর বাড়তি নজরদারি শুরু করে দেন।

photo: simply linda blog

এমন হলে বুঝতে হবে, আপনার এবার কিছুটা বিশ্রাম প্রয়োজন। অতিরিক্ত কাজের চাপ আপনাকে যান্ত্রিক করে তুলেছে, যা আপনার মানসিক অসুস্থতার জন্ম দিচ্ছে।

২. কাজের মনোযোগ নষ্ট হয়ে যাওয়া

আপনি ফোনটা হাতে নিয়েছেন কিন্তু কী করবেন তা ভুলে গেছেন! কিছুক্ষণ আগে যে গেম খেলছিলেন তা শেষ করেছেন কিনা অথবা কোন পর্যায়ে রেখে এসেছেন তা মনে করতে পারছেন না! আপনি কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছেন কিন্তু কি দেখছেন সে ব্যাপারে আপনি নিশ্চিত না। সামনে কেবল একটা জ্বলজ্বলে বিশাল মনিটর দেখতে পাচ্ছেন। তাতে কি লেখা আছে, কেন লেখা আছে আর কেনইবা আপনি তা খুলে বসে আছেন এই তথ্য গুলোর কোনো সমন্বয় নেই আপনার কাছে।

photo: grantcardonetv

যদি মাঝে মাঝে কয়েক মুহূর্তের জন্য এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় তবে বুঝতে হবে আপনি কোনো কাজে ফোকাস তথা মনঃসংযোগ করতে পারছেন না। এ অবস্থায় যদি আপনি কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু করেন তবে দীর্ঘক্ষণ কেটে যাওয়ার পরও দেখবেন আপনার কাজের কোনো অগ্রগতি হয়নি। লম্বা সময় কাজ করার পর আপনি হিসাব মিলাতে গিয়ে দেখবেন আসলে কিছুই করা হয়নি!

সুতরাং কাজে ফোকাস করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এটা আপনার পারদর্শিতা, দক্ষতা ও কর্মক্ষমতার পরিচায়ক। এমন অবস্থার সৃষ্টি হলে দ্বিধান্বিত হবার কিছু নেই। বুঝতে হবে আপনার কিছুটা বিশ্রাম প্রয়োজন। তাৎক্ষণিকভাবে কিছু সময়ের জন্য সব কাজ থেকে বিরত থাকুন। কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নিন, অথবা দুই এক দিন ছুটি কাটাতে পারেন।

৩. কাজের প্রতি অবহেলা

সব সময় পাগলের মতো কাজ করে গেলেন, এই কাজই একসময় আপনাকে সত্যিকারের পাগল বানিয়ে ছাড়বে। অতিরিক্ত কাজের চাপ আপনার কাজের প্রতি ভালোবাসা নষ্ট করে দেয়। এমন অবস্থায় খুব শখের এবং আগ্রহের কাজটিও আপনার কাছে নিরর্থক মনে হবে।

photo: 401ktv

এমন অবস্থার সৃষ্টি হলে বুঝতে হবে আপনার কিছুটা বিশ্রাম প্রয়োজন। শুধু কাজের প্রতি সর্বশক্তি বিনিয়োগ জীবনের অন্যান্য প্রয়োজন থেকে আপনাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। গুরুত্বপূর্ণ কাজটিও নিরর্থক মনে হয়। এমতাবস্থায় আপনার প্রথমেই একটি ছুটির প্রয়োজন। নিজেকে সময় দেওয়া প্রয়োজন। সব কাজ এবং দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হওয়া প্রয়োজন।

৪. কাজের প্রতি অনুপ্রেরণা হারিয়ে ফেলা

আপনার যখন চাঙ্গাভাব থাকে, তখন আপনি অনেক কঠিন কাজ করেন। এমনকি কাজ করতে শুরু করলে টানা কাজ করে যান। এভাবে বিরতিহীন কাজ করে গেলে একসময় মনে হবে এই কাজটি আপনার থেকে চিরতরে দূরে সরে গেলেই বোধহয় ভালো হয়। কাজ থেকে ঘনঘন বিরতি নিতে মন চাইবে। এই কাজের ব্যাপারে সব রকম অনুপ্রেরণা আপনি হারিয়ে ফেলবেন।

photo: saba

এমন অবস্থার সৃষ্টি হলে বুঝতে হবে আপনি অতিরিক্ত কাজ করছেন, যা আপনার ধারণ ক্ষমতার বাইরে। সুতরাং আপনার অবশ্যই বিশ্রাম প্রয়োজন।

৫. আপনার জীবন লক্ষ্যহীন হয়ে পড়বে

অতিরিক্ত কাজ করার সবচেয়ে খারাপ দিক হলো জীবনের লক্ষ্য হারিয়ে ফেলা! যেকোনো কাজে যোগ দেয়ার আগে মানুষের নানান রকম স্বপ্ন থাকে, লক্ষ্য থাকে। কিন্তু কাজ শুরু করার পর কোম্পানির উন্নতি করবেন না নিজের জীবনের উন্নতি করবেন তা ঠিক করা বড় কঠিন হয়ে পড়ে।

দৈনন্দিন প্রচন্ড কাজের চাপ আমাদের জীবনকে লক্ষ্যহীন করে তোলে। তিলে তিলে নিজের স্বপ্ন ধ্বংস হতে থাকে। একসময় আমরা উচ্চাকাঙ্ক্ষা বা দূরবর্তী কোনো লক্ষ্য চিন্তা করতেও ভুলে যায়। সুতরাং নিজের জীবনকে এমন বিক্ষিপ্ত করা থেকে বাঁচাতে আপনার অবশ্যই বিশ্রাম নেয়া প্রয়োজন।

photo: HuffingtonPost

অন্ধকার ছাড়া যেমন আলো মূল্যহীন তেমনি বিশ্রাম ছাড়া কাজ নিরর্থক। কাজ জীবনের জন্য। সুতরাং সেই কাজ করতে গিয়ে যদি জীবন বিপন্ন হয় তবে সেই কাজের কোনো মূল্য নেই। কাজ যদি আপনার জীবনকে সুখী না করে, স্বাচ্ছন্দ্যময় না করে, আরো বেশি ভবিষ্যৎমুখী না করে তবে বুঝতে হবে আপনার কাজের ধরণ পরিবর্তন করা প্রয়োজন।

কাজের সাথে সাথে পর্যাপ্ত বিশ্রাম আপনার প্রয়োজন। আপনি যদি টানা দীর্ঘদিন বিশ্রাম করেন তবে আপনি হতাশ হয়ে পড়বেন। আবার বিশ্রাম ছাড়া যদি দীর্ঘদিন টানা কাজ করে যান তাহলে আপনি হতাশ হয়ে পরবেন। সুতরাং সুস্থ, সুন্দর, সফল জীবনের জন্য কাজ এবং বিশ্রাম এর চমৎকার সমন্বয় প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আপনি যতটা পারদর্শিতা দেখাতে পারবেন ব্যক্তি এবং কর্মজীবনের ততটা সফল হবেন।