বর্তমান সময়ে টেকনোলজি জগতে সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত এবং সবচেয়ে বেশি শোনা যায় এই তিনটি নাম। আমরা যারা নুতুন এই টেকনোলজি নিয়ে পড়তে কিংবা জানতে আসি, মাঝে মাঝেই এই তিনটি টেকনোলজি নিয়ে জটলা/গড়বড় করি। তবে আমার মতে নুতুন অবস্থায় গড়বড় করার যথেষ্ট কারণও আছে। কারণ এই টেকনোলজি গুলো একই সুতায় বাধা এবং টেকনোলজি গুলো একে ওপরের সাথে অত্তপত্ত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে। বর্তমানে এই টেকনোলজিগুলোর সমন্বয় করে অনেক কিছু তৈরী কিংবা আবিষ্কার করার উদাহরণ আমাদের বাস্তবিক জীবনে অনেক রয়েছে।
আমরা এই টেকনোলজিগুলোর সমন্বয়ের যদি কোনো উদাহরণ দিতে চাই তাহলে মনে হয় এখনকার সময়ের যে সবচেয়ে আলোচিত চালকবিহীন গাড়ি কথাই বলতে প্রথমে বলতে হবে। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত কি আমরা কখনো ভেবেছিলাম যে চালক ছাড়াই কোনো গাড়ি চলবে ? তবে এটা এখন সম্ভব, আর চালকবিহীন গাড়ি শুধু সম্ভব এই টেকনোলজি গুলো ব্যবহার করে। আমি এই উদাহরণ দিয়েই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মেশিন লার্নিং এবং ডিপ লার্নিং মধ্যে পার্থক্য এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে বলতে চেষ্টা করব।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স: প্রথমত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বলতে আমরা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তাকেই বুঝতে পারি। আমরা সাধারণত আমাদের বুদ্ধি দিয়ে করি, কখন কোন অবস্থায় আমাদের কি করা উচিত আর এই কাজ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দ্বারাও করা সম্ভব। এবার আমাদের উদাহরণ নিয়ে চিন্তা করি যে একটা গাড়ি একজন চালকের নির্দেশনা ছাড়াই কিভাবে রাস্তায় বাঁক নেওয়া, ট্র্যাফিক সিগন্যালে ব্রেক করা, গাড়ির গতি নির্ণয় করা [ কখন গাড়ির গতি বেশি থাকবে কখন কম থাকবে , সামনে হটাৎ করেই কিছু আসলে তাৎক্ষণিক গাড়িটি ব্রেক করা এসব কি গাড়িটি বুদ্ধিমত্তার পরিচয় নয়? অন্যান্য সাধারণ গাড়িগুলো আর এই গাড়িটির প্রধান পার্থক্য হলো গাড়িটির কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা, যার মাধ্যমে গাড়িটি নির্ধারণ করতে পারে যে কোন অবস্থায় কি করবে।
মেশিন লার্নিং: লার্নিং বলতে স্বাভাবিক আমরা অর্থে কোনো কিছু পড়া কিংবা শেখা–টাকেই বুঝি। একটা মেশিনকে কোনো কিছু শিখিয়ে দেওয়া বা শেখানোই হলো মেশিন লার্নিং। একটা মেশিনকে একটি অবস্থার বিভিন্নরূপ সম্পর্কে শেখানো হয়, দেখানো হয় যাতে পরবর্তীতে ওই অবস্থাগুলো সহজেই সনাক্ত করতে পারে। এবার আমরা যদি চালকবিহীন গাড়িটির কথা চিন্তা করি তাহলে দেখুনতো গাড়িটির মেশিন গুলো যদি পারিপার্শ্বিক অবস্থান সম্পর্কে কিছু না জানতো তাহলে কি আদৈও গাড়িটি ১কি.মি. পর্যন্ত যেতে পারতো ? সুতরাং আমরা বলতেই পারি গাড়িটিকে আগেই থেকে শেখানো কিংবা দেখানো হয়েছে যে তার পারিপার্শ্বিক অবস্থাগুলো কেমন হতে পারে। আর এটাই হচ্ছে মেশিন লার্নিং।
Source: Nokia
ডিপ লার্নিং: ডিপ লার্নিং হলো মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজের একটি টেকনিক। এটি সরাসরি বিভিন্ন ডাটা/তথ্য থেকে শিখতে এবং নির্ভুল ভাবে তথ্য কিংবা যেকোনো বস্তুকে সনাক্ত করতে পারে। ডিপ লার্নিং–এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার হলো এটির গঠন মানুষের ব্রেইনের যেমন গঠন ঠিক সেভাবেই করা হয়েছে। আমাদের ব্রেইনের নিউরন গুলো যেমন একটি আরেকটির সাথে সম্পর্কযুক্ত ঠিক তেমনি ডিপ লার্নিং–এ নিউরন রয়েছে, এগুলোকে আর্টিফিশিয়াল নিউরাল নেটওয়ার্ক (এএনএন) বলা হয়। ডিপ লার্নিং সবচেয়ে বহুল ব্যবহার হয় চিত্র সনাক্তকরণে। ডিপ লার্নিং মাধ্যমে সাদা–কালো চিত্র রঙিন করা কিংবা কোনো বস্তুর চিত্রের মাধ্যমে সেই বস্তুটি কে খুব সহজেই এবং খুব কম সময়ের মধ্যে সনাক্ত করা সম্ভব। এটি বাকি টেকনিক গুলোর চেয়ে সম্পূর্ণ নির্ভুল ফল প্রদান করে। তাহলে আমরা যে উদাহরণ তা নিয়ে বলছিলাম সেখানে ডিপ লার্নিং কে কিভাবে ব্যবহার করলাম বা কিভাবে ব্যবহার করব? আমরা রাস্তায় চলার সময় রাস্তার পাশে বিভিন্ন সাইনবোর্ড দেখতে পাই যেগুতে বিভিন্ন ধরণের দেওয়া থাকে [যেমনঃ গতিসীমা ৪০ কি.মি., সামনে স্কুল, সামনে আঁকাবাঁকা রাস্তা, সামনে কালভার্ট ইত্যাদি ] , রাস্তায় একটু পর পরই সাদা রং দেওয়া, রাস্তাগুলোকে কয়েকটি লেন ভাগ করে দেওয়া থাকে। চালকবিহীন গাড়িতে ডিপ লার্নিং রাস্তার সাইনবোর্ড, লেন, গাড়িটির চারপাশে কোন কোন গাড়ির অবস্থান এবং গাড়িগুলো কতো দূরে রয়েছে সবকিছু নির্ভুল ভাবে সনাক্তকরণে সাহায্য করে। এর ফলে গাড়িটি যে কোনো দুর্ঘটনা এড়াতে পারে এবং নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে যায়।
Source: The StartUp Blog(Medium)
এখন আমরা যদি এই তিনটি টেকনোলজিকে এক সাথে করে চালকবিহীন গাড়িটিতে তাদের কাজগুলোর কথা চিন্তা করি তাহলে বেপার টা এমন যে, ডিপ লার্নিং গাড়িটির চারপাশের অবস্থানগুলোকে সনাক্ত করে, মেশিন লার্নিং সেই অবস্থানগুলোকে তাকে শেখানো অবস্থানগুলোর সাথে মিলিয়ে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি–এর সাহায্যে ওই অবস্থান জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং গৃহীত পদক্ষেপটি সম্পাদন করে।
আমরা কি কোনো কাজে শুধু আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি ব্যবহার করতে পারি ?
হ্যা, পারি। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সির প্রথম দিকের ব্যবহার গুলো দেখলেই বুঝতে পারবো সেটা। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি ব্যবহার করার জন্য জটিল জটিল কোড করতে হতো, কারণ কোডের মাধ্যমেই সমস্ত বিবরণ দিতে হতো। যার ফলে প্রায় লক্ষাধিক কোড করতে হতো। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সিতে মেশিন লার্নিং ব্যবহার শুরু করার পর থেকে কোডের ব্যবহার কমে গেছে।
(চলবে )…
Written By
Data Science and Big Data Enthusiast
Dept. in Software Engineering,
Daffodil International University.