কর্পোরেট জগতের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে রয়েছে একাধিক একাউন্টেন্ট। অধিক চাহিদা আর ভালো সেলারির কারণে অনেকেই পেশা হিসেবে পছন্দ করছেন একাউন্টিংকে। আপনি এই কর্মক্ষেত্রে যোগদানে আগ্রহী হলেও নিজের দক্ষতা নিয়ে সন্দিহান থাকতে পারেন। তাই হয়তো দুশ্চিন্তা করছেন, একাউন্টিংয়ের কোন কোন ক্ষেত্রে নিজের কর্মদক্ষতা বাড়ানোর প্রয়োজন। অথবা হতে পারে আপনি ইতিমধ্যে একাউন্টেন্ট হিসাবে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলছেন, তবে নিজের কর্মদক্ষতা বাড়াতে ইচ্ছুক। তেমন যদি হয়ে থাকে, তাহলে এই
১. সাংগঠনিক দক্ষতা
একাউন্টেন্ট প্রতিটি ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ কর্মী। কারণ তাদেরকে বিভিন্ন সাংগঠনিক দায়িত্বপালন করতে হয়। এ নিয়ে তাদের অধিকাংশ সময় ব্যস্ত থাকতে হয়। এই ব্যস্ততার মধ্যে কর্ম সম্পাদনের উদ্দেশ্যে প্রতিটি একাউন্টেন্টকে তাদের কাজের সাথে মিলিয়ে সময় ব্যবস্থাপনা করতে জানতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন কাজের ডেডলাইনের দিকে লক্ষ্য রাখা, বাজেট এবং তথ্য আদান প্রদান নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা থাকা জরুরি।
এই দক্ষতা বাড়ানোর জন্য আপনি ক্যালেন্ডার পদ্ধতি, বর্ণমালা পদ্ধতিতে বিভিন্ন ফোল্ডার সাজানো, প্রতিদিনের কর্মসূচির লিখিত ব্যবহার এবং কালার কোডিং নোটের সহায়তা নিতে পারেন। সাথে সাথে স্মার্ট ডিভাইস যেমন , মোবাইল, কম্পিউটারের বিভিন্ন অ্যাপস আর সফটওয়্যার ব্যবহার করে স্বল্প মেয়াদী এবং দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেন।
নিজের কাজে সচেতনতা এবং সুশৃঙ্খলতা যেমন আপনার কাজে সহায়তা করবে, তেমনি সহকর্মীদের সামনে নিজের যোগ্যতার বহিঃপ্রকাশও ঘটাবে। তাই কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের পূর্বে নিজের সাংগঠনিক দক্ষতায় শান দিয়ে শক্তিশালী করে তুলুন। কারণ প্রতিটি কোম্পানি চায় তাদের কর্মীদের যথাযথ সাংগঠনিক দক্ষতা থাকুক।
২. সময় ব্যবস্থাপনা
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে সময় ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা। একাউন্টিং পেশাও এক্ষেত্রে ভিন্ন নয়। কোন ক্ষেত্রে আপনি কতটুকু সময় ব্যয় করবেন, কত সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করবেন এবং কোন কাজটি আগে শেষ করতে হবে, এই বিষয়গুলো সময় ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এছাড়া ডেডলাইনের পূর্বে নিজের কাজগুলোকে প্রাধান্য অনুসারে সাজিয়ে নিলে যেমন আপনার কাজে সফলতা আসবে তেমনি নিজের সহকর্মী আর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছেও নিজের কাজের গুনগত মান দেখানো সম্ভব হবে। শুধু একাউন্টিং পেশাতেই নয়, জীবনের সর্বক্ষেত্রে সময় ব্যবস্থাপনার বিষয়ে জোর দিন এবং একে অভ্যাসে পরিণত করুন।
৩. অভিযোজন করার ক্ষমতা
এখানে অভিযোজন করা বলতে ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ আর পরিস্থিতিতে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়াকে বোঝানো হয়েছে। একাউন্টেন্টরা বিভিন্ন ধরনের ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের কর্মক্ষেত্র খুঁজে নেন। হতে পারে, সেটা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কোন সেক্টর অথবা কোন কসমেটিকস ইন্ডাস্ট্রি। তাই একাউন্টেন্টদের নিজেদের কর্মক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব, খাপ খাইয়ে নিতে হবে। কারণ ক্লায়েন্টদের উপযুক্ত সার্ভিস দেওয়ার জন্য প্রতিটি সেক্টরের কর্মীদের সে অনুযায়ী কাজ করতে হয়। আর একাউন্টেন্টদের তো বলা চলে এসব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু।
নিজের এই অভিযোজন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য হয়তো আপনাকে সঠিকভাবে ব্রিফ করা হবে না। তবে হাল না ছেড়ে লক্ষ্য করুন, আপনার সহকর্মীরা কীভাবে তাদের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। নিজের বিশ্লেষণাত্মক ক্ষমতা বাড়ান। খেয়াল করুন, তারা কোন কাজটি কেন করছেন, কীভাবে করছেন।
এছাড়া কাজ সম্পূর্ণ করতে তারা যে পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন, তাছাড়াও অন্য ভালো কোন পদ্ধতি রয়েছে কিনা ভেবে দেখুন। আর সে নতুন পদ্ধতি কেন তারা ব্যবহার করছেন না, সেটিও বিবেচনা করুন। এ বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখলে কর্মক্ষেত্রে খাপ খাইয়ে নেয়ার ক্ষমতা দ্রুত বৃদ্ধি করা সম্ভব।
৪. যোগাযোগ
আপনি যে কোন ধরনের সেক্টরের কাজ করুন না কেন, ভালো যোগাযোগের দক্ষতা থাকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ । প্রতিটি ইন্ডাস্ট্রি অথবা অর্গানাইজেশন তাদের চাকরির সার্কুলারে প্রথম যে দক্ষতার কথা উল্লেখ করে, সেটি হচ্ছে ভালো যোগাযোগের দক্ষতা। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সহকারী অথবা অধীনস্থদের সাথে যোগাযোগের জন্য চিঠি, ই-মেইল অথবা ফোন ব্যবহার করতে হয়। তাই ভালো যোগাযোগ দক্ষতা থাকা একজন একাউন্টেন্টের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
কর্পোরেট জীবনে বিভিন্নস্তরের কর্মীদের সাথে নেটওয়ার্কিংয়ের দক্ষতা শুধু ইন্ডাস্ট্রি অথবা অর্গানাইজেশনের উন্নয়নই ঘটায় না, ভবিষ্যতে নিজেরও কাজে আসে।
৫. নিজের কাজের বিষয়ে স্বচ্ছতা
কর্মক্ষেত্রে নিজের সততা সবচেয়ে দামী। একজন একাউন্টেন্ট প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন আর্থিক বিষয়ের হিসাব রাখেন এবং সেগুলোর পূর্নাঙ্গ তথ্য তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পেশ করেন। বিভিন্ন লেনদেনের বিষয় একজন একাউন্টেন্ট সবচেয়ে ভালো খবরাখবর রাখেন। তাই তিনি যদি নিজের কাজে একটু হেরফের ঘটান, তাহলে সেটা বুঝতে এবং সমস্যা সমাধান করতে অন্যদের কালো ঘাম ছুটে যায়।
তাই নিজের কাজে দক্ষতা অর্জন আর নিজের কাজের বিষয়ে স্বচ্ছতা রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন সিদ্ধান্ত স্পষ্টভাবে অন্যদের জানানো গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া অন্যদের কাজেও যখন আপনি মতামত আর সাজেশন প্রদান করবেন, তখন তাদের কাজগুলো যেমন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে, তেমনি তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় থাকবে। মনে রাখতে হবে একাউন্টেন্ট প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ব্যক্তি। তাই বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভালোভাবে ভেবে দেখতে হবে।
৬. নেতৃত্ব প্রদান করার ক্ষমতা
একজন একাউন্টেন্টকে প্রতিষ্ঠানের মুনাফা অর্জন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হয়। সাথে সাথে বিভিন্ন কাজে নেতৃত্বে প্রদান করতে হয়। তাই নিজের নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতা বাড়াতে হবে।
তিনিই ভালো নেতা, যিনি তার অধীনস্থ এবং সহকর্মীদের কাজের বিষয়ে লক্ষ্য রাখার পাশাপাশি তাদের সঠিক পথ প্রদর্শিত করেন। একজন একাউন্টেন্ট প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য কর্মীদের কাজের বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন। তাই কর্মীদের কাজের গতি ও মানের দিকে লক্ষ্য রাখার পাশাপাশি নিজেকে রোল মডেল হিসাবে উপস্থাপন করাও জরুরি। কারণ তিনি যদি নিজের কাজে মনোযোগী না থাকেন, সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানে সৃষ্টি হবে অরাজকতা।