কার্ডিফে আরেক রূপকথার জন্ম দিল বাংলাদেশ

কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন বাংলাদেশকে এবারও শূন্য হাতে ফেরায়নি। অস্ট্রেলিয়া-বধের ১১ বছর পর তাদের প্রতিবেশী নিউজিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়ে একই গৌরবগাথা লিখল বাংলাদেশ। এই জয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে শেষ চারে পা রাখার সম্ভাবনাটাও বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশ।
৫ উইকেটের জয় আসলে কিছুই বলছে না। বাংলাদেশের ৪ উইকেট যে পড়ে গিয়েছিল মাত্র ৩৩ রানে। সেখান থেকেই সাকিব-মাহমুদউল্লাহর ২২৪ রানের কী এক অবিশ্বাস্য জুটি! সাকিব ১১৪ রান করে জয় থেকে ৯ রান দূরে বাংলাদেশকে রেখে আউট হন। তবে মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত সেঞ্চুরি(১০২*) করেই ফিরেছেন।
অথচ নিউজিল্যান্ডের দেওয়া ২৬৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা কী ভীতিকরই না হয়েছে! ১২ রানে তারা হারিয়েছে ৩ উইকেট। চোখের পলকে সেটি হয়ে গেল ৩৩/৪। ভীষণ আশাবাদী মানুষ ছাড়া বাংলাদেশের পক্ষে বাজি তখন কে ধরবে?
পরাজয়ের শঙ্কা যখন চোখ রাঙানি দিচ্ছে, তখনই পাল্টা প্রতিরোধ, কিউই পেসারদের দুর্দান্ত জবাব দেওয়া শুরু সাকিব আল হাসান-মাহমুদউল্লাহর। বাংলাদেশ দলের এই দুই ভরসার টিকিটি ছুঁতে পারেনি নিউজিল্যান্ডের শক্তিশালী বোলিং আক্রমণ। অবিচ্ছিন্ন পঞ্চম উইকেট জুটিতে রেকর্ড ২২৪ রান যোগ করে বিপর্যয় থেকে দলকে টেনে তুলে দুজন দলকে পৌঁছে দিয়েছেন নিরাপদ জায়গায়।
ভয়াবহ শুরুটা আর বুঝতেই দেননি সাকিব-মাহমুদউল্লাহ। দুই ম্যাচ বিরতি দিয়ে সাব্বির রহমান আজ যখন তিন নম্বর পজিশনে নামলেন, বাংলাদেশের স্কোর তখন ০ /১! কোনো রান যোগ না করে টিম সাউদির বলে এলবিডব্লু হয়ে তামিম ইকবাল ফিরে যাওয়ার ধাক্কা সামলানোর দায়িত্বটা পালন করতে পারেননি সাব্বির। সাউদির বলেই লুক রনকির ক্যাচ হয়ে ৮ রানে ফিরেছেন তিনি। খানিক পর একই বোলারের বলে সাব্বিরের পথ ধরেছেন সৌম্য সরকারও (৩)। ১২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ঘোর বিপদে বাংলাদেশ! দেখতে দেখতে ফিরে গেছেন মুশফিকুর রহিমও (১৪)।
দ্রুত উইকেট হারিয়ে নিউজিল্যান্ডের দেওয়া ২৬৬ রানের লক্ষ্যটা পাহাড় হয়ে যায় বাংলাদেশের সামনে। সেই পাহাড়টা সাবলীল ব্যাটিংয়ে সহজেই অতিক্রম করেছেন সাকিব-মাহমুদউল্লাহ। বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন দুর্দান্ত এক জয়।
বিশ্বকাপের পর সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট, হারলেই বিদায় নিশ্চিত; সেই চাপের মুখে ম্যাচ বের করে আনল বাংলাদেশ। ২০০৫ কার্ডিফ রূপকথার তুলনায় কোনো অংশে কম নয়! বরং আরও বেশিই হয়তো।
আর সাকিব? তাঁর জন্যও কি কম চাপের ছিল ম্যাচটি? আজ বোলিং করার সময় থেকে সাকিবের চোখেমুখে ভেসে উঠছিল মরিয়া ভাবটা। তাঁকে নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন উঠছে! সাকিব সেরা মুহূর্তটাই বেছে নিলেন নিজেকে চেনানোর।
আগামীকাল অস্ট্রেলিয়াকে ইংল্যান্ড হারিয়ে দিলে সেমিফাইনালে চলে যাবে বাংলাদেশ। বৃষ্টিতে ম্যাচটা ভেসে গেলেও হবে। অবশ্য অস্ট্রেলিয়া জিতলে হতাশ হতে হবে।
তবে এ এমন এক জয়, যার ছায়া থেকে যাবে আরও অনেক দিন!

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউজিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৬৫/৮ (গাপটিল ৩৩, রনকি ১৬, উইলিয়ামসন ৫৭, টেলর ৬৩, ব্রুম ৩৬, নিশাম ২৩, অ্যান্ডারসন ০, স্যান্টনার, মিলনে ৭, সাউদি; মাশরাফি ০/৪৫, মোস্তাফিজ ১/৫২, তাসকিন ২/৪৩, রুবেল ১/৬০, সাকিব ০/৫২, মোসাদ্দেক ৩/১৩)
বাংলাদেশ: ৪৭.২ ওভারে ২৬৮/৫ (তামিম ০, সৌম্য ৩, সাব্বির ৮, মুশফিক ১৪, সাকিব ১১৪, মাহমুদউল্লাহ ১০২*, মোসাদ্দেক ৭*; সাউদি ৩/৪৫, বোল্ট ১/৪৮, মিলনে ১/৫৮, নিশাম ০/৩০, স্যান্টনার ০/৪৭, অ্যান্ডারসন ০/১৯, উইলিয়ামসন ০/১৯)।
ফল: বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সাকিব আল হাসান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *