দেশের জন্য কিছু করতে পারাতেই গর্ব সাকিবের

0

নাম্বার ওয়ান সাকিব আল হাসান। সাকিব আবারও বলতে পারবেন, ‘আমিই এক নম্বর!’ দেশের হয়ে সর্বোচ্চ টেস্ট ইনিংসটা যে এখন তাঁরই।

আজ ৫ রানে দিন শুরু করে প্রায় সারাটা দিন ব্যাটিং করে ২১৭ রানের ইনিংস খেলেছেন। মুশফিকের সঙ্গে গড়েছেন রেকর্ড গড়া ৩৫৯ রানের জুটি। মুশফিক নিজে ১৫৯ করে আউট হয়েছেন। বাংলাদেশও ওয়েলিংটন টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে ৭ উইকেটে ৫৪২ রান নিয়ে। আজকের সবচেয়ে ব্যস্ত মানুষটা বোধ হয় ছিলেন বেসিন রিজার্ভের স্টেডিয়ামের লাউড স্পিকারের ঘোষক। বাংলাদেশ একের পর এক মাইলফলক পেরিয়ে গেছে, তার গমগমে কণ্ঠে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন সেই কীর্তির কথা।

দিনের খেলা শেষে সাকিব-মুশফিক দুজনকেই টিভি সাক্ষাৎকারে ধরলেন আতহার আলী খান। বন্ধু তামিম ইকবালের সঙ্গে রানের লড়াইটা তাঁর চলে আসছে অনেক দিন ধরেই। তামিম একে একে সিঁড়ি ভেঙে টেস্ট-ওয়ানডে দুই ধরনের ক্রিকেটেই সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটা নিজের করে নিয়েছেন। আতহার তাই কৌতুক করেই জানতে চাইলেন, সাকিবের ভাবনায় কী চলছিল তখন? রেকর্ডটা শুধু নাকি তামিমও…?

সাকিব এই অর্জনে কতটা তৃপ্ত বোঝা গেল তাঁর কথায়, ‘আমরা ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে ভালো করতে পারিনি। অন্তত কাগজে-কলমে সে রকমই মনে হবে। টেস্টে ভালো কিছু করা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তো অবশ্যই, দেশের জন্যও। আমার এই ইনিংস দলকে ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে, সেই তৃপ্তি আছে। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি এমন একটা ইনিংস খেলতে পেরেছি।’

কী পরিকল্পনা নিয়ে খেলেছেন সাকিব? নিজে ২৭৬ বল খেলেছেন। মুশফিকের সঙ্গে রেকর্ড জুটিতে পার করে দিয়েছেন ৮২ ওভারেরও বেশি। ইনিংসের ৩৮তম ওভারে ব্যাট হাতে নেমেছিলেন। আউট হয়েছেন ইনিংসের ১৩২তম ওভারে। এত দীর্ঘ সময় খেলার অভিজ্ঞতাও তো তাঁর জন্য নতুন।

সাকিব জানালেন, ‘আমরা আমাদের মতো করে খেলতে চেয়েছি। ওয়েলিংটনের উইকেট আজ ব্যাটিং করার উপযোগী ছিল। কিন্তু এটাও সত্যি, ওদের দুর্দান্ত কিছু বোলার আছে। কিছু কিছু বল খেলার জন্য কঠিনও ছিল। আর আউট হতে তো একটা মাত্রই বল লাগে। আমরা পরিকল্পনা করেছিলাম বলের ধরন বুঝে খেলব। আমি নিজে বল খুব ভালো দেখছিলাম। নিজেকে বোঝাচ্ছিলাম, মাথা ঠান্ডা করে খেললে রান আসবেই।’

মুশফিকের তৃপ্তিটা বাড়ছে তিনি একই সঙ্গে দলের অধিনায়ক বলেও। ওয়ানডে সিরিজে চোট পেয়ে মাঠের বাইরে ছিলেন। আজকের ইনিংস দেখে মনে হয়নি এত লম্বা সময় খেলায় ছিলেন না। নিজের ইনিংসটার চেয়ে মুশফিকের তৃপ্তি বেশি করে ঝরল দলের এমন শক্ত অবস্থানে।

তবে কাজটা যে এখনো অনেক বাকি, তা-ও মনে করিয়ে দিলেন টেস্ট অধিনায়ক, ‘মাত্র দুই দিনের খেলা শেষ হলো। এখনো তিন তিন আর তিন ইনিংস বাকি। আমাদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। তবে হ্যাঁ, এখন পর্যন্ত যা হয়েছে, তাতে অনেক তৃপ্তি তো আছেই। উইকেট অনেক ভালো আচরণ করছে। তবে এই উইকেটে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করলে নিউজিল্যান্ডের জন্য কাজটা অনেক কঠিন হয়ে যাবে।’

মুশফিক নিজেদের এই রেকর্ড জুটির কোনো বাহবা নিলেন না। বরং তামিম ও মুমিনুলের পিঠ চাপড়ে দিলেন শুরুর দিকে পথ দেখানোর জন্য, ‘আমাদের শুরুটা ভালো হয়েছিল। যেভাবে ওরা শুরুটা এনে দিয়েছিল, সেটা আমাদের মধ্যে সাহস আর আত্মবিশ্বাস ছড়িয়ে দেয়। আমরা তার ওপর ভর করেই খেলেছি।’

দুই দিনে খেলা হওয়ার কথা ছিল ১৮০ ওভার। ৪৪ ওভারের মতো খেলা কম হয়েছে। বাংলাদেশকে তাই প্রতিটা ছক কষতে হবে হিসাব করে। বাংলাদেশের নিশ্চয়ই লক্ষ্য থাকবে কাল সকালে দ্রুত কিছু রান তুলে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে আনা। প্রথম ইনিংসে ভালো একটা লিড পাওয়ার ওপর নির্ভর করবে বাংলাদেশের পরবর্তী পরিকল্পনা। তবে এই ম্যাচে বাংলাদেশের ইতিবাচক থাকাই উচিত। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ড্র ভালো ফল, কিন্তু বাংলাদেশ জয়ের কথাই ভাবুক।

PROTHOM ALO

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *