প্রথম_পর্ব।
১৯৩০ উরুগুয়ে বিশ্বকাপ। মাত্র ১৩ টি দল নিয়ে বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু হয়। ৯ টি দল আমেরিকা অঞ্চল থেকে খেলে এবং বাকী ৪ টি দল ইউরোপ থেকে।
“বি” গ্রুপে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ দল গুলো হলো ইয়োগোস্লাভিয়া এবং বলিভিয়া। এখান থেকে ১ টি দল সরাসরি সেমিফাইনাল খেলবে।
১৪’ই জুলাই ১৯৩০ সালে ইয়োগোস্লাভিয়ার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামে ব্রাজিলীয়ান বয়েজরা। প্রথম ম্যাচে ভালো সুবিধা করতে পারেনি ব্রাজিলীয়ানরা। খেলার ২১ মিনিটেই টির্নানিকের এর গোলে এগিয়ে যায় ইয়োগোস্লাভিয়া। প্রথম গোল হওয়ার ৯ মিনিট পর অর্থাৎ খেলার ৩০ মিনিটে বেক এর গোলে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় ইয়োগোস্লাভিয়া। ২-০ গোলে পিঁছিয়ে থেকে প্রথম অর্ধ শেষ করতে হয় ব্রাজিলীনদের।
২য় অর্ধে খেলতে নেমে খেলার ৬২ মিনিটে একটি গোল করেন #প্রেগুইনহো। এক গোলের সুবাদে ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাসে বিশ্বকাপে প্রথম গোল দাতা হিসেবে নাম লেখান তিনি। বাকী সময় টুকু আর কোনো গোলের দেখা পায়নি ব্রাজিলীয়ানরা। ২-১ গোলে পিঁছিয়ে থেকে প্রথম ম্যাচ শেষ করতে হয় ব্রাজিলীনদের।
২০’ই জুলাই ১৯৩০ সালে নিজেদের ২য় এবং গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বলিভিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামে ব্রাজিলের সৈনিকেরা। নিজেদের ২য় ম্যাচে ৪-০ গোলে হারায় বলিভিয়াকে। খেলার ৩৭ ও ৭৩ মিনিটে জোড়া গোল করেন #মডারেটো_ইউসন্টেইনার এবং খেলার ৫৭ ও ৮৩ মিনিটে জোড়া গোল করেন #প্রেগুইনহো।
সেবছর গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয় ব্রাজিলীনদের। প্রথম বিশ্বকাপে ২ ম্যাচে ৩ গোল করে ব্রাজিলীনদের মধ্যে সর্বোচ্চ গোল স্কোরার হোন #প্রেগুইনহো।
#দ্বিতীয়_পর্ব
ইতালি বিশ্বকাপ- ১৯৩৪
২য় বিশ্বকাপে ১৬ টি দল অংশগ্রহন করে এবং প্রথমবারের মতো কোয়ালিফাই করে অংশগ্রহন করে প্রতিটি দল। বাছাই পর্ব ম্যাচে পেরুকে হারিয়ে ২য় বারের মতো বিশ্বকাপে অংশগ্রহন করে ব্রাজিল।
গ্রুপ পর্বে প্রতিটি দলের মাত্র ১ টি করে ম্যাচ। যে দল হারবে সেই দল’ই ইতালি বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হবে।
২৭শে-মে ১৯৩৪ সালে স্পেনের বিপক্ষে মাঠে নামে #ব্রাজিল। শুরুতেই ব্রাজিলকে গোল হজম করতে হয়। খেলার ১৮ মিনিটে প্যানেল্টি থেকে ইররাঙ্গরির গোলে এগিয়ে যায় স্পেন। ২য় গোলটিও আসে ইররাঙ্গরির পা থেকে খেলার ২৫ মিনিটে। খেলার ২৯ মিনিটে ৩য় গোলটি করে ল্যাঙ্গাজে।
৩-০ গোলে পিঁছিয়ে থেকে ১ম অর্ধ্ব শেষ করতে হয় ব্রাজিলকে। ২য় অর্ধ্বে নেমে খেলার ৫৫ মিনিটে ১টি গোল করে ব্রাজিলীয়ান বয় #লিওনিডাস। ৩-১ গোলে শেষ হয় সেদিনের ম্যাচ এবং ব্রাজিলকে বিদায় নিতে হয় ইতালি বিশ্বকাপ থেকে।
#তৃতীয়_পর্ব
ফ্রান্স বিশ্বকাপ ১৯৩৮
মূলত ৩৮ বিশ্বকাপ থেকেই ব্রাজিলের জাত চিনাতে শুরু করে। ১৯৩৪ বিশ্বকাপের মতোই ৩৮ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে একটি দল পায় ব্রাজিল।
হারবে তো মরবে মানে হারলেই বিদায় নিতে হবে বিশ্বকাপ থেকে। পোল্যান্ডের মুখোমুখি হয় ব্রাজিল । খেলার শুরুতেই ক্যালমা দেখাতে থাকে ব্রাজিলীয়ানরা। খেলার ১৮ মিনিটে লিওনিদাসের গোলে ১-০ তে এগিয়ে যায় ব্রাজিল। খেলার ৫ মিনিট পর অর্থাৎ খেলার ২৩ মিনিটে প্যানেল্টি পায় পোল্যান্ড এবং স্ক্রেসের গোলে সমতায় ফিরে পোল্যান্ড কিন্তু এই সমতা বেশীক্ষণ ধরে রাখতে পারিনি পোল্যান্ড তার ২ মিনিট পর অর্থাৎ খেলার ২৫ মিনিটে ব্রাজিলীয়ান বয় রোমিওর গোলে ২-১ এ এগিয়ে যায় ব্রাজিল। খেলার ৪৪ মিনিটে একটি গোল করে পার্সিও তার ১ গোলের সুবাদে প্রথম অর্ধ্ব শেষ হয় ৩-১ গোলে।
২য় অর্ধ্বে নেমে প্রথমে সুবিধা করতে পারিনি ব্রাজিল। খেলার ৫৩ ও ৫৯ মিনিটে ২ টি গোল করে পোল্যান্ডের উইলিমৌসিক তার জোড়া গোলে আবারো ৩-৩ গোলে সমতায় ফিরে পোল্যান্ড।
খেলার ৭১ মিনিটে আরেকটি গোল করে পার্সিও তার ১ গোলের সুবাদে ৪-৩ এ এগিয়ে যায় ব্রাজিল।
খেলার ৮৯ মিনিটে উইলিমৌসিকের গোলে ৪-৪ গোলে ৯০ মিনিট শেষ হয় খেলা । খেলা গড়ায় অতিরিক্ত টাইমে ৯৩ এবং ১০৪ মিনিটে লিওনিদাসের জোড়া গোলে ব্রাজিলের স্কোর গিয়ে দাড়ায় ৬-৪ এ। খেলার ১১৮ মিনিটে একটি গোল করে আবারো ইউলিমৌসিক। ৬-৫ গোলে হেরে বিদায় নিতে হয় পেল্যান্ডকে আর ব্রাজিল চলে কোয়ার্টার ফাইনালে।
#কোয়ার্টার_ফাইনাল
১২’ই জুন ১৯৩৮ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে চেকোস্লোভাকিয়ার মুখোমুখি হয় ব্রাজিল। খেলার ৩০ মিনিটে লিওনিদাসের গোলে এগিয়ে যায় ব্রাজিল। প্রথম অর্ধ্ব ১-০ গোলে শেষ হয়। ২য় অর্ধ্বে খেলতে নেমে ব্রাজিল কোনো গোলের দেখা পায়নি। খেলার ৬৫ মিনিটে চেকোস্লোভাকিয়ার নেজেদলির গোলে ১-১ গোলে খেলা ড্র হয়।
সেই বিশ্বকাপে কোয়ার্টারে প্যানেল্টি শ্যুট ছিলো না। পুণরায় ১৪’ই জুন আবারো দুদল মাঠে নামে। সেদিনের ম্যাচ লিওনিদাসের এবং রেবের্তোর গোলে ২-১ এ জয় পায় ব্রাজিল এবং প্রথম বারের মতো সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ব্রাজিল।
#সেমিফাইনাল
সেমিফাইনালে ইতালির মুখোমুখি হয় ব্রাজিল। প্রথম অর্ধ্বে কোনো দলেই গোল করতে পারেনি। ২য় অর্ধ্বে নেমে খেলার ৫১ মিনিটে ক্লৌসাইর এক গোলে ১-০ তে এগিয়ে যায় ইতালি। খেলার ৬০ মিনিটে ইতালি প্যানেল্টি পায় এবং গোল করে ২-০ গোলে এগিয়ে যায়। খেলার ৮৭ মিনিটে ব্রাজিলের রোমিও ১ টি গোল করে এবং সেদিনের ম্যাচ ২-১ গোলে হেরে যায় ব্রাজিল।
#৩য়_স্থান_নির্ধারণ
৩য় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে সুইডেনের বিপক্ষে মাঠে নামে ব্রাজিল। লিওনিদাসের জোড়া গোল এবং রোমিও ও পার্সিও দুজনের দুগোলের সুবাদে সেদিন সুইডেন কে ৪-২ গোলে পরাজিত করে ৩য় স্থান নিশ্চিত করে ব্রাজিল।
ফ্রান্স বিশ্বকাপে ৭ গোলে করে সর্বোচ্চ গোল স্কোরার হোন ব্রাজিলীয়ান বয় #লিওনিদাস।
#চতুর্থ_পর্ব
ব্রাজিল বিশ্বকাপ ১৯৫০
১৯৪২, ১৯৪৬ বিশ্ব যুদ্ধের জন্য বিশ্বকাপ আসর বসতে পারেনি। ১৯৫০ সালে ব্রাজিলে ৪র্থ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। ব্রাজিলের সমর্থকদের হৃদয়ে ১৯৫০ বিশ্বকাপ এক ট্র্যাজেডির নাম। ১৯৫০? ব্রাজিলের মানুষকে জিজ্ঞেস করে দেখুন। সালটা শুনতেই একটা দীর্ঘশ্বাস আপনা থেকেই বেরিয়ে আসবে। মারাকানার সেই হাহাকার যে ব্রাজিল বয়ে চলেছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।
ঘরের মাঠে খেলা ট্রফির স্বাদ কে না পেতে চায়? কোটি কোটি ভক্তদের স্বপ্ন পূরণের জন্য এগিয়ে যায় ব্রাজিল। ভক্তরা যেমনটা আশা করেছিলো তেমনটাই শুরুতে ঘটতে থাকে।
গ্রুপ পর্বে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ দল গুলো হলোঃ
→মেক্সিকো
→ইয়োগোস্লাভিয়া
→সুইজারল্যান্ড
গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে মেক্সিকোর বিপক্ষে মাঠে নামে স্বাগতিক দেশ ব্রাজিল। প্রথম ম্যাচে ৪-০ গোলে হারায় মেক্সিকোকে। ২য় ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের সাথে ২-২ গোলে ড্র করে মাঠ ত্যাগ করে আদেমির বাহিনী। ৩য় ম্যাচে ইয়োগোস্লাভিয়ার বিপক্ষে ২-০ গোলে জয় পায় ব্রাজিল।
গ্রুপ পর্বে সর্বোচ্চ পয়েন্ট নিয়ে পরের রাউন্ডে চলে যায় ব্রাজিল।
#দ্বিতীয়_রাউন্ড
২য় রাউন্ডে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ দল গুলোঃ
→উরুগুয়ে
→স্পেন
→সুইডেন
২য় রাউন্ডে চমক দেখাতে থাকে ব্রাজিলীয়ানরা। ভক্তদের মনের খোরাক বুঝি আসছে। ২য় রাউন্ডের প্রথম ম্যাচে সুইডেন কে ৭-১ গোলে বিশাল ব্যবধানে হারায় ব্রাজিল। ২য় ম্যাচেও চমক সেই ম্যাচে স্পেনকে ৬-১ গোলে হারায় ব্রাজিল এবং ৩য় ম্যাচে উরুগুয়ের কাছে ২-১ গোলে হেরে যায় ব্রাজিল।
#ফাইনাল
কে জানতো ফাইনাল ম্যাচটা যে এমন হবে? কোটি কোটি ভক্তদের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। ৫০ বিশ্বকাপের ট্র্যাজেডি দেখে ছোট্ট এক বালক শপদ করেছিলো ব্রাজিলকে স্বপ্নের ট্রফি এনে দিবে কে সে বালক? সামনের পর্বে আলোচনা করা হবে সেই বালককে নিয়ে।
ফাইনাল ম্যাচে উরুগুয়ের বিপক্ষে মাঠে নামে ব্রাজিল। প্রথম অর্ধ্বে গোলের দেখা পায়নি দুদলই। ২য় অর্ধ্বে নেমে খেলার ৪৭ মিনিটে ফ্রাইকার গোলে ১-০ তে এগিয়ে যায় ব্রাজিল। খেলার ৬৬ মিনিটে ব্রাজিল ১ গোল হজম করে। ১-১ গোলে খেলা চলছে পরিশেষে উরুগুয়েকে শেষ হাসিটা হাসায় খেলার ৭৯ মিনিটে ঘিগিয়া।
২-১ গোলে হেরে যায় ব্রাজিল। ট্রফির জয়ের খুব কাছে এসেও হাতছাড়া হয়ে যায় ট্রফি।
ব্রাজিল বিশ্বকাপে ৮ গোল করে সর্বোচ্চ গোল স্কোরার হোন ব্রাজিলীয়ান বয় #আদেমির।
#পঞ্চম_পর্ব
সুইজারল্যান্ড বিশ্বকাপ -১৯৫৪
ট্র্যাজেডি বিশ্বকাপের পরের বিশ্বকাপে তেমন সুবিধা করতে পারেনি ব্রাজিলীয়ানরা। সুইজারল্যান্ড বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে বিদায় নিতে হয় ব্রাজিলকে।
গ্রুপ পর্বের প্রথমে ম্যাচে মেক্সিকোর বিপক্ষে মাঠে নামে ব্রাজিল। খেলার ২৩ মিনিটে বালতিজার গোলে এগিয়ে যায় ব্রাজিল। খেলার ৩০ মিনিটে একটি গোল করে দিদি এবং খেলার ৩৪, ৪৩ মিনিটে জোড়া গোল করেন পিঙ্গা। ৪-০ গোলে প্রথম অর্ধ্ব শেষ হয় সেদিনের ম্যাচ। ২য় অর্ধ্বে নেমে খেলার ৬৯ মিনিটে একটি গোল করেন জুলিনহো। ৫-০ গোলে জয় নিয়ে মাঠ ত্যাগ করে ব্রাজিলীয়ানরা।
গ্রুপ পর্বের ২য় ম্যাচে ইয়োগোস্লাভিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামে ব্রাজিল। প্রথম অর্ধ্বে কোন দলই গোল পায় নি। ২য় অর্ধ্বে নেমে খেলার ৪৮ মিনিটে ব্রাঙ্কোর গোলে এগিয়ে যায় ইয়োগোস্লাভিয়া।খেলার ৬৯ মিনিটে দিদির গোলে সমতায় ফিরে ব্রাজিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১-১ গোলে ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় ব্রাজিলীনদের।
#কোয়ার্টার_ফাইনাল
কোয়ার্টারে হাঙ্গেরির মুখোমুখি হয় ব্রাজিল। খেলার শুরুতেই অর্থাৎ খেলার ৪ মিনিটে ন্যানদোরের গোলে এগিয়ে যায় হাঙ্গেরির। খেলার ৭ মিনিটে স্যান্ডোর এক গোলের সুবাদে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় হাঙ্গেরি। খেলার ১৮ মিনিটে ব্রাজিলীয়ান বয় সান্তোস একটি গোল করে এবং ২-১ এ প্রথম অর্ধ্ব শেষ হয়। ২য় অর্ধ্বে নেমে খেলার ৬০ মিনিটে প্যানেল্টি থেকে গোল করে মিহালি এবং খেলার ৬৫ মিনিট একটি গোল করে ব্রাজিলীয়ান বয় জুলিনহো। সেদিনের ম্যাচ ৪-২ গোলে হেরে বিদায় নিতে হয় ব্রাজিলকে।
Written By
Mohammad Ali