বাংলাদেশের জাতীয় আইসিটি নীতি, ডিজিটাল বাংলাদেশ ২০২১ এবং ভিশন ২০৪১ লক্ষ্যসমূহ, যা ২০১৮ সালে প্রণীত হয়, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং উচ্চ-পর্যায়ের হস্তক্ষেপের কারণে অবকাঠামো, শাসনব্যবস্থা এবং স্বচ্ছতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
ফ্যাসিস্ট সরকারের আইসিটি মন্ত্রণালয় ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন এবং স্মার্ট বাংলাদেশ প্রকল্পের জন্য ২৩,৬৭৪ কোটি টাকা/২.৫২ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ পেয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), অভিযোগ এবং অভ্যন্তরীণ সূত্র অনুযায়ী, এই অর্থের ২৫% থেকে ৪০%, প্রায় ৬,০০০ থেকে ১০,০০০ কোটি টাকা/১.০৬ বিলিয়ন ডলার, দুর্নীতি, অপব্যবস্থাপনা এবং অদক্ষতায় জর্জরিত।
বাংলাদেশের আইসিটি খাতের সমস্যাগুলো ও সম্ভাব্য সমাধান তুলে ধরা:
অপ্রতুল অবকাঠামো নীতি ও পরিকল্পনা:
জাতীয় আইসিটি নীতির আওতায় একটি কার্যকর অবকাঠামো নীতির অভাব, বাংলাদেশের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। উচ্চগতির ইন্টারনেটের জন্য একটি সমন্বিত পরিকল্পনার অভাবে, বিশেষত গ্রামীণ ও দূরবর্তী অঞ্চলে সংযোগ সীমিত হয়ে আছে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও ডিজিটাল সেবা প্রদান বাধাগ্রস্ত করছে।
অনিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ ও ঘন ঘন লোডশেডিং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থিতিশীল আইসিটি অবকাঠামো বজায় রাখতে বড় অন্তরায়।
বাংলাদেশের আইসিটি খাতে অবকাঠামো নীতি ও পরিকল্পনার অপ্রতুলতা ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সমস্যার সমাধানে সম্ভাব্য উদ্যোগ:
সীমিত ব্রডব্যান্ড অ্যাক্সেস, ধীরগতির ইন্টারনেট, পুরনো টেলিকমিউনিকেশন অবকাঠামো এবং দুর্বল পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে, বাংলাদেশ তার ডিজিটাল অর্থনীতির পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারবে সারা দেশের উচ্চ গতির ইন্টারনেট, 5G/6G, স্টার্লিংক স্থাপনের মাদ্যমে । দীর্ঘমেয়াদী অবকাঠামো কৌশল প্রণয়ন এবং স্থায়িত্ব নিশ্চিত করাঅপরিহার্য, যাতে বাংলাদেশ বৈশ্বিক ডিজিটাল অঙ্গনে শক্তভাবে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে।
আইসিটি প্রকল্পে দুর্নীতি:
ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্পের অধীনে বৃহৎ আইসিটি প্রকল্পগুলো দুর্নীতি ও তহবিলের অপব্যবস্থাপনার মুখে পড়েছে। ব্রডব্যান্ড সম্প্রসারণ এবং ই-গভর্নেন্স প্ল্যাটফর্মের মতো অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের টেন্ডার ও চুক্তি প্রদান প্রক্রিয়ায় পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে।
- সমালোচনা ও অভিযোগ:
- নির্দিষ্ট কোম্পানি বা রাজনৈতিকভাবে সংযুক্ত ব্যক্তিদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব।
- টেন্ডার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতা।
- প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব ও ব্যয়ের অতিরিক্ত বৃদ্ধি।
- ভূতুড়ে প্রকল্প, চুক্তি মূল্যের ফুলিয়ে ফাঁপানো হিসাব, স্বজনপ্রীতি, এবং রাজনৈতিক প্রভাব।
- সরকারি চুক্তিতে ঘুষ এবং কমিশন নেওয়ার অভিযোগ।
এই দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকাণ্ড আইসিটি প্রকল্পের খরচ বৃদ্ধি এবং জনগণের কাছে সেগুলোকে কম সুলভ করে তুলছে।
সমাধানের উপায়:
দুর্নীতি রোধে শক্তিশালী নজরদারি ব্যবস্থা, স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিতকরণ এবং জনসাধারণের জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করতে হবে। তহবিলের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমিয়ে আনা অপরিহার্য।
সাইবার নিরাপত্তা ও তথ্য সুরক্ষায় পূর্ণাঙ্গ নীতি ও আইন প্রণয়নের অভাব:
বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ সাইবার নিরাপত্তা ও তথ্য সুরক্ষা নীতির অনুপস্থিতি ডিজিটাল অবকাঠামো রক্ষা এবং সংবেদনশীল তথ্য সুরক্ষায় বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
- ক্রমবর্ধমান সাইবার হামলার মুখে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও তথ্য চুরি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।
- জাতীয় সংবেদনশীল তথ্য, সরকারি নথি, প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য, এবং ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার জন্য কার্যকর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি।
সমাধানের উদ্যোগ:
- উন্নত আইন প্রণয়ন এবং কঠোর প্রয়োগ ব্যবস্থা চালু করা।
- সাইবার নিরাপত্তার জন্য নির্ধারিত নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন করা।
- ডিজিটাল সেবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ব্যবহারকারীদের আস্থা বৃদ্ধি করা।
সাইবার নিরাপত্তার উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে ডিজিটাল অর্থনীতি বৃদ্ধির পথে দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন সম্ভব।
অকার্যকর ডিজিটাল গভর্নেন্স ট্রান্সফরমেশন নীতি:
বাংলাদেশে সরকারি কার্যক্রমের একটি বড় অংশ এখনও ম্যানুয়াল প্রক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল, যা সেবা প্রদানের গতি হ্রাস এবং স্বচ্ছতা কমিয়ে দিচ্ছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে আইসিটি-ভিত্তিক সমাধান গ্রহণের প্রতি অনীহা ডিজিটাল গভর্নেন্স ট্রান্সফরমেশন প্রকল্পের সম্পূর্ণ বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করছে।
মূল চ্যালেঞ্জসমূহ:
- প্রযুক্তি গ্রহণে ধীরগতি।
- আমলাতান্ত্রিক বাধা।
- সংহতকরণ ও সমন্বয়ের অভাব।
- অবকাঠামোর অপর্যাপ্ততা।
- নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার বিষয়ে উদ্বেগ।
সমাধানের উপায়:
- আন্তঃসংস্থার সমন্বয় উন্নত করা (EQ/EI)।
- অবকাঠামোতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি।
- কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি।
- স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
ইন্টারনেট গতি–সংক্রান্ত সমস্যা:
বাংলাদেশে গড় ইন্টারনেট গতি কম এবং অবকাঠামোগত ত্রুটি, উচ্চ লেটেন্সি, নেটওয়ার্ক জ্যাম, এবং সীমিত ব্যান্ডউইথের কারণে উন্নয়নের গতি ব্যাহত হচ্ছে।
প্রধান প্রতিবন্ধকতা:
- বিকল্প ইন্টারনেট গেটওয়ের অভাব।
- প্রতিযোগিতার অভাব।
- নিয়ন্ত্রণ ও নীতিমালার ফাঁক।
- আইএসপি-দের মধ্যে স্বচ্ছতার অভাব।
প্রস্তাবিত সমাধান:
- বিকল্প সংযোগ যেমন সাবমেরিন, স্টারলিংক, এবং স্যাটেলাইট ভেন্ডর ব্যবহারের পরিকল্পনা তৈরি করা।
- ইন্টারনেট গেটওয়ের জন্য সঠিক পরিকল্পনা এবং রিডান্ডেন্সি নীতি বাস্তবায়ন।
- ইন্টারনেট গতি ও সেবার মান বৃদ্ধির জন্য আরও বিস্তৃত আইসিটি নীতি প্রণয়ন।
অপ্রতুল আইসিটি মূল্য নির্ধারণ নীতি:
আইসিটি সেবার জন্য সঠিক মূল্য নিয়ন্ত্রণের অভাবে মনোপলির ঝুঁকি এবং প্রতিযোগিতার অভাব দেখা দিয়েছে।
চ্যালেঞ্জসমূহ:
- উচ্চমূল্যের ইন্টারনেট সেবা।
- সীমিত সাশ্রয়ী বিকল্প।
- যন্ত্রপাতি এবং ডিভাইসের উচ্চ মূল্য।
- মূল্য নীতির অমিল ও বিভ্রান্তি।
সমাধান:
- নিয়মিত মূল্য নীতি হালনাগাদ করা।
- প্রযুক্তিগত পরিবর্তন এবং বাজার পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নীতি প্রণয়ন।
- ভর্তুকি ও আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে আইসিটি সেবা আরও সাশ্রয়ী করা।
ডেটা সেন্টার অবকাঠামো নীতির অভাব:
বাংলাদেশে ডেটা সেন্টার অবকাঠামোর অপ্রতুলতা ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন এবং শক্তিশালী ডিজিটাল অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার পথে বড় বাধা।
মূল চ্যালেঞ্জ:
- পর্যাপ্ত ডেটা সেন্টারের অভাব।
- গভর্নেন্সের দুর্বলতা।
- আমলাতান্ত্রিক বাধা।
- নিয়ম ও নীতিমালার ফাঁক।
- ডিজাস্টার রিকভারি এবং বিজনেস কন্টিনিউটি পরিকল্পনার অভাব।
সমাধানের উপায়:
- অ্যামাজন এডব্লিউএস, গুগল ক্লাউড, এবং মাইক্রোসফট অ্যাজুরের মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারী অংশীদারিত্ব।
- আন্তঃসংস্থার সমন্বয় উন্নত করা (EQ/EI)।
- ক্লাউড এবং এজ কম্পিউটিংয়ে বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
- আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে পরিচালনার জন্য নীতিমালা তৈরি।
- ডেটা সুরক্ষা, রিডানডেন্সি, ডিজাস্টার রিকভারি এবং সাইবার নিরাপত্তার জন্য কঠোর আইন প্রণয়ন।
- ডেটা সেন্টার অবকাঠামোতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে কর ছাড় এবং ভর্তুকি প্রদান।
ডেটা সেন্টার অবকাঠামো উন্নয়ন বাংলাদেশকে ডিজিটাল অর্থনীতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং জাতীয় ডেটা সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।
টেলিকম খাতের চ্যালেঞ্জসমূহ:
বাংলাদেশের টেলিকম খাত, আইওটি (IoT) এবং ৫জি প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করছে, তবে বিভিন্ন নীতিগত সীমাবদ্ধতা এবং বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সমস্যাগুলি এই সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে বাধা দিচ্ছে।
মূল সমস্যাসমূহ:
- স্পেকট্রাম বরাদ্দ এবং মূল্য নির্ধারণ নীতির ত্রুটি।
- অপর্যাপ্ত টেলিকম অবকাঠামো।
- আইওটি এবং ৫জি-এর জন্য সমন্বিত কৌশলের অভাব।
- নিয়ন্ত্রক কাঠামোর জটিলতা।
সমাধান:
- বিনিয়োগবান্ধব নীতি প্রণয়ন।
- ৫জি এবং আইওটি দ্রুত বাস্তবায়নে কৌশলগত উদ্যোগ গ্রহণ।
- সাইবার নিরাপত্তা উন্নয়ন।
- পাবলিক-প্রাইভেট অংশীদারিত্ব জোরদার করা।
ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেমের অভাব:
বাংলাদেশে একটি কার্যকর ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেম প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ প্রয়োজন।
মূল চ্যালেঞ্জ:
- আন্তঃব্যাংক, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) এবং পেমেন্ট গেটওয়ে সমন্বয়ের অভাব।
- আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ের সীমিত উপস্থিতি।
- সাইবার নিরাপত্তা এবং প্রতারণা প্রতিরোধে দুর্বলতা।
প্রস্তাবিত সমাধান:
- বাংলাদেশ ব্যাংক বা নিরপেক্ষ সংস্থা দ্বারা আন্তঃপরিচালনযোগ্যতা নিশ্চিত করা।
- পেপাল, স্ট্রাইপ এবং গুগল পে-এর মত আন্তর্জাতিক গেটওয়েগুলিকে কার্যকরভাবে অন্তর্ভুক্ত করা।
- পেমেন্ট গেটওয়েতে সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করা।
- পিসিআই-ডিএসএস মান অনুসরণ এবং প্রতারণা প্রতিরোধে ২-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (2FA) বাধ্যতামূলক করা।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব:
উচ্চ আইসিটি খরচ ছোট এবং মাঝারি উদ্যোগের (SMEs) জন্য বড় বাধা তৈরি করছে।
সমাধানের জন্য করণীয়:
- নীতি সংস্কার।
- প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি।
- অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা।
- সাশ্রয়ী আইসিটি সেবা এবং ডিভাইস নিশ্চিত করা।
ডিজিটাল সাক্ষরতা ও দক্ষ কর্মশক্তির অভাব:
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এবং গ্রামীণ এলাকায় আইসিটি শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ এবং দক্ষ শিক্ষক কম।
প্রস্তাবিত উদ্যোগ:
- সরকারের, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি খাতের মধ্যে সমন্বয়।
- সাইবার নিরাপত্তা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), বিগ ডেটা এবং সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের জন্য প্রশিক্ষণ বাড়ানো।
- কর্মশক্তির দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ।
গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) এবং উদ্ভাবনের অভাব:
বাংলাদেশ বিদেশি সংস্থার উপর অত্যধিক নির্ভরশীল, যা স্থানীয় উদ্ভাবন ও গবেষণা উন্নয়নের পথে বড় বাধা।
সমাধানের উপায়:
- R&D-তে বিনিয়োগ বৃদ্ধি।
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিল্প খাতের মধ্যে সহযোগিতা।
- বিশেষায়িত গবেষণা সুবিধার সম্প্রসারণ।
- মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে নীতিমালা তৈরি।
টেকসইতা এবং ই–বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব:
বাংলাদেশে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো সুস্পষ্ট নীতি নেই, যা পরিবেশগত ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
সমাধানের জন্য উদ্যোগ:
- শক্তিশালী নীতি ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি।
- কর্পোরেট জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
- পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ।
উপরোক্ত সমস্যাগুলোর সমাধান বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী ডিজিটাল অর্থনীতিতে রূপান্তরিত করতে সহায়ক হবে।
ভবিষ্যৎ গঠন:
সরকারের পরবর্তী আইসিটি উদ্যোগটি একটি গেম-চেঞ্জার হতে পারে, যার জন্য ৪,০০০ কোটি টাকার ট্রান্সফরমেশন বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা দুর্নীতিতে হারানো টাকার মাত্র অর্ধেক।
এই যাত্রায় দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাফল্য নিশ্চিত করতে হলে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন পেশাদারদের নিয়োগ দেওয়া অত্যাবশ্যক, যারা নীতিমালা ও কৌশল নির্ধারণ, পরিকল্পনা ও নকশা প্রণয়ন এবং উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ফলাফল আনতে সহায়তা করবে।
কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি
এই উদ্যোগের সফল বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিকভাবে মনোযোগ দিতে হবে:
- নীতি ও কৌশল প্রণয়ন: বাস্তবায়নের জন্য উদ্ভাবনী কাঠামো তৈরি।
- পরিকল্পনা ও নকশা প্রণয়ন: বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রয়োজন মেটানোর জন্য সূক্ষ্ম প্রকল্প নকশা।
- বাস্তবায়ন: পরিষেবা ও অবকাঠামো ট্রান্সফরমেশন করার জন্য দৃঢ় বাস্তবায়ন।
প্রত্যাশিত ফলাফল
২ বছরের সময়সীমার মধ্যে, এই উদ্যোগটি ৫ বছরের মধ্যে বছরে ৬০,০০০ কোটি টাকা রাজস্ব সৃষ্টি করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা দেশের সামগ্রিক সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জীবনমান উন্নত করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। এতে উপকৃত হবে নিম্নলিখিত খাতসমূহ:
জনপ্রশাসন: সরকারি নথি (ইলেকট্রনিক ফাইলিং), ডিজিটাল রেকর্ড, ডিজিটাল সাইনিং, সচিবালয়ের E2E ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশন ।
পরিবহন ও রেলপথ: আইওটি-সক্ষম ব্যবস্থাপনা এবং টিকিটিং সিস্টেম।
স্বাস্থ্যসেবা: ডিজিটাল রেকর্ড, টেলিমেডিসিন এবং এআই-চালিত ডায়াগনস্টিক সেবা।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি: স্মার্ট গ্রিড এবং পূর্বাভাসমূলক রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা।
ব্যাংকিং ও অর্থনীতি: উন্নত ই-গভর্নেন্স এবং ফিনটেক সমাধান।
এই উদ্যোগটি আরও নিম্নলিখিতভাবে প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে:
- উদ্ভাবনী পণ্য ও সেবা: সফটওয়্যার রপ্তানি ও স্থানীয় ডিজিটাল সমাধানের মাধ্যমে নতুন রাজস্ব স্রোত।
- সঞ্চয়: দুর্নীতি ও অপচয় হ্রাস করে স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সঞ্চয়।
- দক্ষ জনবল: ভবিষ্যৎ-প্রস্তুত আইসিটি দক্ষতা দিয়ে তরুণ ও পেশাদারদের ক্ষমতায়ন।
পথচলার নির্দেশনা
এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা এবং এই ট্রান্সফরমেশনকারী উদ্যোগের পূর্ণ সম্ভাবনা বাস্তবায়নের জন্য সমন্বিত, বহুমুখী উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:
- সমগ্র নীতি সংস্কার: একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রক, অবকাঠামোগত, সামাজিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা।
- উন্নত নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি: স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং অকার্যকারিতা দূর করা।
- অন্তর্ভুক্তি ও সহযোগিতা: সরকার, বেসরকারি খাত, একাডেমিয়া, নাগরিক সমাজ, এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের একত্রে কাজ করার মাধ্যমে সমষ্টিগত বুদ্ধিমত্তার প্রসার।
ড্রিম বাংলাদেশ ২.০: ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি
এই ট্রান্সফরমেশনকারী আইসিটি উদ্যোগটি বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতি পুনঃসংজ্ঞায়িত করার ক্ষমতা রাখে, উদ্ভাবন এবং স্থায়িত্বকে উৎসাহিত করে। সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং কৌশলগত আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আমরা বাধা অতিক্রম করতে পারব এবং একটি আধুনিক, ন্যায্য এবং সমৃদ্ধ ড্রিম বাংলাদেশ ২.০ এর লক্ষ্য অর্জন করতে পারব।
ইঞ্জিনিয়ার জনি শাহিনুর আলম
প্রযুক্তিবিদ এবং আইসিটি ও ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন বিশেষজ্ঞ