ইসরাইল আয়তনে বাংলাদেশের দুই-তৃতীয়াংশের সমান হলেও পারমানবিক শক্তি হিসেবে দেশটি ভারত ও পাকিস্তানের চেয়েও অগ্রগামী। ষাটের দশকেই দেশটি পারমাণবিক বোমার অধিকারী হয়। ১৯৬৭ সালে মিসরসহ আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরাইলের সর্বাত্মক যুদ্ধ বেধে যায়। যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রথম প্রহরেই ইসরাইলের নেগেভ মরুভূমিতে পারমাণবিক কর্মসূচী গুড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল মিসরীয় বাহিনীর। কিন্তু প্রেসিডেন্ট আবদুল নাসের ইসরাইলের পারমাণবিক প্রকল্পে বোমা বর্ষণের পরিকল্পনা বাতিল করে দেন। প্রেসিডেন্ট নাসের ভেবেছিলেন যে, ইসরাইল তখনো পারমাণবিক বোমা বানাতে পারেনি। তাই নেগেভ মরুভূমিতে দিমোনা প্রকল্প গুঁড়িয়ে দেয়া হবে অর্থহীন। কিন্তু তিনি জানতেন না যে, ইতিমধ্যেই ইসরাইল দু’টি বোমা বানিয়ে ফেলেছ এবং বোমা দুটি নিক্ষেপের জন্য প্রস্তুতও করে রেখেছে। প্রেসিডেন্ট নাসেরের এ তথ্য জানা থাকলে তিনি ইসরাইলের দিমোনা প্ল্যান্টে বোমা বর্ষণের পরিকল্পনা বাতিল করতেন কিনা সন্দেহ। ১৯৬৭ সালে আর মাত্র দু’সপ্তাহ আগে যুদ্ধ শুরু হলে আজ মধ্য প্রাচের ইতিহাস হতো অন্যরকম। সম্মিলিত আরব শক্তির কাছে ইসরাইলের শোচনীয় ভাবে পরাজিত হওয়া ছাড়া গত্যন্তর ছিল না।
জন্ম থেকেই পরমাণু শক্তিধর হবার খায়েশ
১৯৪৮ সালে ইসরাইলের জন্মের পর থেকেই ইসরাইলি নেতৃবৃন্দ এ কথা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, চারেদিকে বৈরি আরব শক্তি পরিবেষ্টিত অবস্থায় পারমানবিক অস্ত্রই হচ্ছে রাষ্ট্র হিসেবে ইসরাইলের টিকে থাকার গ্যারান্টি। ত্রিশ ও চল্লিশ দশকে বহু মেধাবী ইহুদী বিজ্ঞানী ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে অভিবাসী হিসেবে বসতি স্থাপন করেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন আর্নেস্ট ডেভিড বার্গম্যান। বার্গম্যান ইসরাইল আণবিক শক্তি কমিশনের পরিচালক নিযুক্ত হন এবং তিনিই হলেন ইসরাইলের পারমাণবিক বোমার জনক।
১৯৪৮ সালের গোড়ার দিকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ইহুদী বিজ্ঞানীরা ইউরেনিয়াম মজুদের জন্য নেগেভ মরুভূমি খুঁজে বের করেন এবং ১৯৫০ সাল নাগাদ তারা বীরশেবার কাছে নিম্নমানের ইউরেনিয়াম মজুদ খুঁজে পান। ১৯৪৯ সাল নাগাদ বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়াইজম্যান ইন্সটিটিউট সক্তিয়ভাবে পারমাণবিক গবেষণাকে সমর্থন করেন। সরকারি ব্যয়ে পারমাণবিক প্রকৌশল ও পদার্থ বিজ্ঞান অধ্যয়নের জন্য প্রতিশ্রুতিশীল ইসরাইলী ছাত্ররা বিদেশে গমন করে। ১৯৫২ সালে ইসরাইল গোপনে আণবিক শক্তি কমিশন প্রতিষ্ঠা করে। আনবিক শক্তি কমিশন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই ইসরাইল পারমানবিক কর্মসূচীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়।
ফ্রান্সের অবদান
১৯৪৯ সালে ফরাসি আণবিক শক্তি কমিশনের সদস্য ও বার্গম্যানের বন্ধু পারমাণবিক বিজ্ঞানী ফ্রান্সিস পেরিন ওয়াইজম্যান ইন্সটিটিউট পরিদর্শন করেন। তিনি ফ্রান্সে একটি নতুন পারমাণবিক গবেষণা স্থাপনায় ইসরাইলি বিজ্ঞানীদের যোগদানে আমন্ত্রণ জানান। পরবর্তীকালে দু’টি দেশে একটি যৌথ গবেষণা সংস্থা স্থাপন করা হয়। ১৯৮৬ সালে পেরিন প্রকাশ্যে স্বীকার করেন যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটন ও কানাডায় কর্মরত ফরাসি বিজ্ঞানীদের বলা হয়েছিল যে, গোপনীয়তা রক্ষা করতে পারলে তারা ফ্রান্সে তাদের জ্ঞান ব্যবহার করতে পারবেন। একই যুক্তিতে ফরাসি বিজ্ঞানী পেরিন ইসরাইলের কাছে পারমাণবিক উপাত্ত পাচার করেছিলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্সের পারমাণবিক গবেষণা সামর্থ্য সীমিত হয়ে পড়ে। অথচ যুদ্ধের আগে দেশটি ছিল এক্ষেত্রে সকলের শীর্ষে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্স ও ইসরাইলের পারমাণবিক জ্ঞান একই পর্যায়ে এসে ঠেকে। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের গোড়ার দিকে ফ্রান্স ও ইসরাইলের মধ্যে বহুক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। তখন ফ্রান্স ছিল ইসরাইলের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী। সে সময় উত্তর আফ্রিকায় ফরাসি ঔপনিবেশগুলোতে বিশৃংখলা বিরাজ করেছিল। ইসরাইল উত্তর আফ্রিকায় ফরাসি ঔপনিবেশগুলোতে বসবাসকারী যাযাবর ইহুদীদের কাছ থেকে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে সেসব তথ্য ফ্রান্সের কাছে পৌছে দিতো। এরই বিনিময়ে পেতো পারমানবিক সহযোগিতা।
সহায়তা দানে ফরাসি যুক্তি
এখন প্রশ্ন হলো কেন ইসরাইলকে পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণে সহায়তা করতে গেলো? ফ্রান্স ইসরাইলকে তাদের কৌশলগত স্বার্থের জন্য গুরুত্ব দিতেন। ফ্রান্স তখন আলজেরিয়া মুক্তি সংগ্রাম দমনে হিমসিম খাচ্ছিল। মিসর আলজেরিয়া মুক্তি সংগ্রামে সহায়তা দিতো। এ বাস্তবতার পরি প্রেক্ষিতে ফ্রান্স হিসেব করে দেখেছিল যে, যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণে সহায়ক কম্পিউটার প্রযুক্তি ফ্রান্সে রপ্তানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ইসরাইলের সহযোগিতায় ফ্রান্স এ সংকট কাটিয়ে উঠে। তেলআবিব যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এ প্রযুক্তি সরবরাহ পেতে থাকে এবং ফ্রান্সের কাছে পাচার করে। যুক্তরাষ্ট্র ‘এটম ফর পীস’ কর্মসূচীর আওতায় রিএক্টরের জন্য ইসরাইলে হেভি ওয়াটার সরবরাহ করে। ফ্রান্স পারমানবিক গবেষণা রিএক্টরের জন্য ইসরাইলে হেভি ওয়াটার সরবরাহ করে। ফ্রান্স পারমাণবিক গবেষণা ও প্রযুক্তিতে পেছনে পড়ে থাকায় ইসরাইল ফ্রান্সের কাছে এ হেভিওয়াটারের একটি অংশ পাচার করে।
আমেরিকা – ইসরাইল সম্পর্কে টানাপড়েন
১৯৫৮ সালের শেষদিকে যুক্তরাষ্ট্র ইউ-২ গোয়েন্দা বিমানের সাহায্যে দিমোনা প্ল্যান্টের ছবি গ্রহণ করে এবং স্থানটিকে একটি সম্ভাব্য রিএক্টর কমপ্লেক্স হিসেবে চিহ্নিত করে। ১৯৬০ সালের ২ ডিসেম্বর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে জানায় যে, ইসরাইলে একটি গোপন পারমাণবিক স্থাপনা রয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর নিউইয়র্ক ডিসেম্বর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে জানায় যে, ইসরাইলে একটি গোপন পারমাণবিক স্থাপনা রয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর নিউইয়র্ক টাইমসে এ ব্যাপারে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হলে সবকিছু জানাজানি হয়ে যায়। ২১ ডিসেম্বর ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেন গুরিয়েন ঘোষণা করেন যে, ইসরাইল ‘শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে‘ ২৪ মেগাওয়াটের একটি রিএক্টর স্থাপন করছে। যার ফলে আমেরিকা- ইসরাইল সম্পর্কে টানাপড়েন দেখা দেয়।
আমেরিকার সহযোগিতা
১৯৬১ সালে দিমোনা রিএক্টর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সম্পর্কে টানাপড়েন দেখা দেয়। যুক্তরাষ্ট্র পারমানবিক অস্ত্র নির্মাণে ইসরাইলের যুক্তি মেনে নেয়। তবে গোপনে চাপ অব্যহত রাখে। যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের কাছ থেকে এ স্বীকৃতি আদায় করে যে, সে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে তার পারমানবিক কর্মসূচী ব্যবহার করবে এবং বছরে দু’বারপরিদর্শকদের পরিদর্শনের অনুমতি দেবে। ১৯৬২ সালে এ পরিদর্শন শুরু হয় এবং ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত তা অব্যহত থাকে। মার্কিন পরিদর্শকরা ইসরাইলের পারমাণবিক স্থাপনার শুধু বহির্ভাগই পরিদর্শন করেন। কিন্তু স্থাপনার ভূগর্ভস্থ অংশ পরিদর্শনের বাইরে থেকে যায়। এছাড়া মার্কিন পরিদর্শকগণ বছরে পরিদর্শন করতেন মাত্র একবার। ভূ গর্ভের উপরিভাগে ভুয়া কন্ট্রোল রুম ছিল। কিন্তু ভূগর্ভে প্রবেশ করার পথগুলো পরিদর্শনকালে গোপন রাখা হতো। সিঁড়ি গুলো ইটের আস্তরণ দিয়ে ঢেকে রাখা হতো।ইসরাইলি পারমানবিক স্থাপনায় পরিদর্শনের তথ্যও গোপন রাখা হতো।
ইসরাইলের লুকোচুরি
ফ্রান্সের সাথে যৌথ উদ্যোগের ফলে ইসরাইল পরমাণু অস্ত্র তৈরীর বিভিন্ন উপকরণ যেমন- একটি রিএক্টর, নি:শেষিত জ্বালানি থেকে প্লুটোনিয়াম সংগ্রহে একটি কারখানা এবং একটি ডিজাইন লাভ করে। শুরুতেই এটা স্পষ্ট ছিল যে, রিএক্টর ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহে ইসরাইলের লক্ষ্য ছিল সামরিক। দিমোনা নিউক্লিয়ার গবেষণা কেন্দ্রে নিরাপত্তা ছিল নিচ্ছিদ্র। দিমোনা উদাহরণ থেকেই তা বুঝা যায়। ১৯৬৭ সালে ৬ দিন ব্যাপী আরব-ইসরাইল যুদ্ধকালে দিমোনার আকাশে ইসরাইল শত্রু বিমান মনে করে নিজেদের একটি মিরেজ জেট নিয়ে জংগীবিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করে। একইভাবে ১৯৭৩ সালে ১০৪ জন যাত্রী নিয়ে একটি লিবীয় বিমান ভুল করে সিনাইয়ের আকাশে উড়ে এলে ইসরাইল গুলি করে এটি ধ্বংস করে দেয়। এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে, ষাটের দশকের শেষদিকে কোন একসময় ইসরাইল বিশ্বের ষষ্টতম পারমাণবিক শক্তি হিসেবে ইউরেনিয়াম ও অতিরিক্ত হেভি ওয়াটারের প্রয়োজন ছিল। নরওয়ে, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র – এ তিনটি দেশ ইসরাইলকে হেভি ওয়াটার সরবরাহ করেছিল এবং ‘অপারেশন প্লামবাট‘ এর আওতায় ইউরেনিয়াম সংগ্রহ করা হয়।
১৯৬৭ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর ফ্রান্স ইসরাইলে ইউরেনিয়াম সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। সাবেক ফরাসি ঔপনিবেশগুলো থেকে এ ইউরেনিয়াম সরবরাহ করা হতো। নেগেভ ফসফেট খনি থেকে ইসরাইল সামান্য পরিমাণ ইউরেনিয়াম সংগ্রহ করেছিল। আর্জেন্টিনা ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকেও ইউরেনিয়াম সংগ্রহ করা হয়। একটি গোপন অভিযানের মাধ্যেমে ইসরাইল ‘ইয়োলো কেক’ হিসেবে পরিচিত ইউরেনিয়াম অক্সাইড সংগ্রহ করেছিল। একটি জার্মান কোম্পানির সহযোগিতায় এবং ভূমধ্যসাগরে একটির পর একটি জাহাজ পরিবর্তনের মাধ্যমে তারা ২শ’ টন ইয়েলো কেকে সংগ্রহ করে। পাচারকারীরা ৫৬০ টন ওজনের তেলের ড্রামের গায়ে প্লামবাট শব্দটি এটে দেয়। প্লামবাট মানে হচ্ছে সীসা। অর্থাৎ তেলের ড্রামে ‘সীসা’ বহন করা হচ্ছে। জার্মান সরকার ইসরাইলের কাছে ইউরেনিয়াম পাচারে সরাসরি জড়িত ছিল।
নরওয়ে ১৯৫৮ সালে ইসরাইলের কাছে ২০ টন হেভি ওয়াটার বিক্রি করে। তবে নরওয়ে ৩২ বছর ধরে পরিদর্শনের একটা দাবি জুড়ে দিলেও ১৯৬১ সালের এপ্রিলে একবার ছাড়া প্রদর্শন করেনি। ইসরাইল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, এ হেভি ওয়াটার ‘শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে’ ব্যবহারের জন্য আমদানি করা হয়েছে। কিন্তু শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের জন্য যতটুকু হেভি ওয়াটার প্রয়োজন তার চেয়ে ঢেড় বেশী হেভি ওয়াটার ক্রয় করা হয়েছিল। ১৯৯০ সালে নরওয়ে ও ইসরাইল একটি চুক্তি সাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী নরওয়ের কাছে ইসরাইলের ১০.৫ টন হেভি ওয়াটার বিক্রি করার কথা ছিল। কিন্তু পরে দেখা গেছে যে, ইসরাইল মাত্র ২ টন নরওয়ের কাছে বিক্রি করে বাদবাকি ৮ টন নিজের কাছে রেখে দেয়।
ইসরাইলের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরী
ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল মোশে দায়ান ১৯৬৮ সালে পারমানবিক অস্ত্র তৈরি শুরু করার গ্রীন সিগনাল দেন। প্লুটোনিয়াম বিভাজন প্রক্রিয়া দ্রুতগতিতে এগিয়ে যেতে থাকে। ইসরাইল বছরে তিন থেকে পাঁচটি পরমাণু বোমা বানাতে শুরু করে। প্রতিরক্ষা সাময়িকী ক্রিটিক্যাল ম্যাস-এ বলা হয়, ১৯৬৭ সালে ইসরাইল দু‘টি পরমাণু বোমা তৈরি করে। ইসরাইল এন্ড দ্য বম্ব শিরোনামে প্রকাশিত পুস্তকে এভনার কোহেন উল্লেখ করেছেন, ১৯৬৭ সালেই ইসরাইলের বহনযোগ্য পারমাণবিক ক্ষমতা ছিল।
ইসরাইলের পরমাণু পরীক্ষা
আজ পর্যন্ত যত দেশ পারমাণবিক শক্তির অধিকারী হয়েছে তাদের প্রত্যেকেই পারমানবিক পরীক্ষা চালিয়েছে। কিন্তু পারমাণবিক পরীক্ষা ছাড়া ইসরাইল পরমাণু শক্তিধর হলো কিভাবে? কয়েকভাবে এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায়-
প্রথমত: পুরনো পদ্ধতিতে সংযোজিত পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা করার কোন প্রয়োজন হয় না। গবেষকগণ পরমাণু অস্ত্রের উপকরণ গুলো আলাদা আলাদা ভাবে পরীক্ষা করতে পরীক্ষা করতে পারেন এবং ব্যাপক ভাবে কম্পিউটারেও এ পরীক্ষা করা যায়। ১৯৬০ সালে ফ্রান্স যে পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল ইসরাইল তা থেকে পর্যাপ্ত তথ্য পেয়েছিল। শুধু তাই নয়, ভূগর্ভে পারমাণবিক পরীক্ষা চালালেও তা শনাক্ত করা কঠিন। সাবেক পশ্চিম জার্মানির আর্মি ম্যাগাজিন ওয়ারটেকনিক ১৯৭৬ সালে এক রিপোর্টে জানিয়েছিল, ১৯৬৩ সালে নেগেভে ইসরাইল পরামাণু পরীক্ষা চালিয়েছিল। মার্কিন উপগ্রহে ১৯৭৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ভারত মহাসাগরে একটি উজ্জ্বল আভা ধরা পড়ে। ব্যাপকভাবে ধারণা করা হয়, এ আভা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইসরাইলের তৃতীয় পরমাণু বিস্ফোরণের। তবে প্রথম দু’টি বিস্ফোরণের দৃশ্য ধরা পড়েনি। কারণ তখন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। দুর্ঘটনাক্রমে তৃতীয় বিস্ফোরণের দৃশ্যটি ধরা পড়ে যায়। কারণ তখন আকাশ ছিল মেঘমুক্ত। ১৯৯৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার উপ- পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজিজ পাহাদের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি ইসরাইলি পত্রিকা জানায়, ভারত মহাসাগরে মার্কিন উপগ্রহে যে দৃশ্য ধরা পড়েছিল তা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার সহযোগিতায় ইসরাইলের পরমাণু পরীক্ষা।
শেষকথা
ইসরাইল পরমাণু অস্ত্রের জোরে আরবদের বিরুদ্ধে অন্তত দু’টি যুদ্ধে জয়লাভ করেছে। মুসলিম দেয়াহ ইরাকের পরমাণু স্থাপনা উড়িয়ে দিয়েছে। আর তার এই পরমাণু খায়েশের উপায় ও উপকরণ যুগিয়েছে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রবক্তা আমেরিকা, ফ্রান্স, নরওয়ে, সাবেক বর্ণবাদী দক্ষিণ আফ্রিকা, জার্মানি প্রভৃতি দেশ। এসব দেশের সহায়তায় ক্ষুদ্র দেশ ইসরাইল আজকের প্রলয়ঙ্করী পরমাণু শক্তিধর।
মোঃ দেলোয়ার জাহান সোহাগ
সভাপতি চুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাব &
কমিউনিকেশন ম্যানেজার, ইয়ুথ কার্নিভাল
তথ্য সূত্রঃ বিশ্বের আলোড়িত বিশটি ঘটনা; উইকিপিডিয়া;