বাংলাদেশের রিজার্ভের অর্থ চুরি সুইফটের সিস্টেম হ্যাক করে হয়নি বলে দাবি করেছে ব্রাসেলসভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি। ফিলিপাইনের মাকাতি সিটিতে গতকাল এ দাবি করেন সুইফটের এশিয়া-প্যাসিফিক, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা অঞ্চলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যালেইন রেস। তিনি বলেন, অর্থ চুরির ক্ষেত্রে সুইফট সিস্টেমের সুরক্ষা ভাঙা হয়নি। লেনদেনের জন্য ব্যাংকগুলোই দায়ী।
যদিও ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক তাদের কম্পিউটার ব্যবস্থায় অনুপ্রবেশের কোনো প্রমাণ নেই বলে প্রথম থেকেই বলে আসছে। গত ৮ মার্চ নিউইয়র্ক ফেডের মুখপাত্র আন্দ্রিয়া প্রিস্ট এক বিবৃতিতে বলেন, অর্থ চুরির ক্ষেত্রে ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমসে অনুপ্রবেশের চেষ্টার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফেডের সিস্টেমস লঙ্ঘনের কোনো প্রমাণ নেই।
বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অর্থ স্থানান্তরে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। সুইফটের মেসেজিং সিস্টেম ব্যবহার করে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান অর্থ স্থানান্তরের নির্দেশনা পাঠায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির ক্ষেত্রে সুইফট নেটওয়ার্ক হ্যাকের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে গতকাল দাবি করে প্রতিষ্ঠানটি।
এদিন মাকাতি সিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সুইফট কর্মকর্তা অ্যালেইন রেস বলেন, আমরা শতভাগ নিশ্চিত যে, আমাদের সিস্টেমে কোনো সমস্যা হয়নি। আমাদের নেটওয়ার্কে কোনো হ্যাকের ঘটনা ঘটেনি। যেকোনো ধরনের লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শেষাবধি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তার উদ্ধৃতি দিয়ে ফিলিপাইনের জিএমএ নিউজ ও র্যাপলার গতকাল এ খবর প্রকাশ করে।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্ক ফেডে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনে (আরসিবিসি) স্থানান্তরের অনুরোধ যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই অর্থ আরসিবিসিতে স্থানান্তর হয়। পরে নিউইয়র্ক ফেড এ বিষয়ে রয়টার্সকে জানায়, সাধারণ পদ্ধতি অনুসরণ করেই ওই অর্থ আরসিবিসিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ওই অনুরোধ সুইফটের মাধ্যমে আসায় তা নির্ভরযোগ্য ছিল। যদিও ফেডারেল রিজার্ভ এ ঘটনার দায় এড়াতে পারে না বলে বাংলাদেশেরে পক্ষ থেকে সে সময় বক্তব্য দেয়া হয়।
অ্যালেইন রেস বলেন, সুইফট ও ব্যাংকগুলোর দায়িত্বের পার্থক্য সম্পর্কে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত। ব্যাংকের আওতাধীন অংশের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব শুধু সংশ্লিষ্ট ব্যাংকেরই। সুইফট শুধু সব গ্রাহকের লেনদেন সম্পর্কে অবহিত করার কাজটি করে থাকে। পাশাপাশি সুইফট অংশের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্বও প্রতিষ্ঠানটির ওপর। নিরাপত্তা সম্পর্কিত বাস্তবিক অবস্থা সবাইকে অবহিত করাটা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। বাংলাদেশের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ অর্থ চুরির ঘটনায় বেশকিছু তদন্ত কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এ তদন্তের ভার সত্যিই তাদের। আমরাও চাই, তাদের নেতৃত্বেই যেন তদন্তগুলো সম্পন্ন হোক।
বাংলাদেশের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনার পর সুইফট নিরাপত্তা বিধানে বাড়তি কোনো পদক্ষেপ নেবে কিনা জানতে চাইলে অ্যালেইন রেস বলেন, আমরা প্রতিটি লেনদেনকে একইভাবে দেখতে চাই। সব লেনদেনই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের নিরাপত্তার মূলনীতি এক।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে গত ফেব্রুয়ারিতে খোয়া যায় রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার। এর মধ্যে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ফিলিপাইনে। এর অধিকাংশই বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়কারী প্রতিষ্ঠান ফিলরেমের মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রা পেসোয় রূপান্তর করা হয়। পরে তা স্থানান্তর হয় ওয়েইকাং জু (জুয়া ব্যবসার সঙ্গে জড়িত), ইস্টার্ন হাওয়াই লেইজার কোম্পানি লিমিটেড ও ব্লুমবেরির (সোলেয়ার অপারেটর) হিসাবে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পের জন্য নেয়া ঋণ পরিশোধের কথা বলে এ অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয় বলে জানা গেছে। মেঘনা-গোমতী দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ প্রকল্পে জাইকা থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধের নামে চলে যায় ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রান্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের বিপরীতে জাইকার ঋণ পরিশোধের কথা বলে স্থানান্তর হয় ৩ কোটি ডলার। এছাড়া পরামর্শক ফি হিসেবে বেরিয়ে যায় ৬০ লাখ ডলার। আর ভেড়ামারা কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুত্ প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ারিং ফি পরিশোধের নামে চুরি যায় ১ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
Courtesy: bonikbarta