“যদি লক্ষ্য থাকে অটুট
বিশ্বাস হৃদয়ে
হবেই হবে দেখা
দেখা হবে বিজয়ে।”
স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে চান? তাহলে আপনার জন্য প্রথম উপদেশ থাকবে এখন এই মুহূর্ত থেকেই আবেদন করা শুরু করে দিন এবং হাল ছাড়বেন না। চেষ্টা করে যান যতদিন না লক্ষ্যে পৌঁছান। বিজয়ের হাসি আপনি হাসবেনই। কিন্তু বললেই কি আর শুরু করা যায়? হাজার রকমের স্কলারশিপের ভিড়ে আপনি কীভাবে বুঝবেন, কোনটি আপনার জন্য? তাহলে এক কাজ করুন কী কী কারণে স্কলারশিপ দেয়া হয়, কোন কোন প্রতিষ্ঠানগুলো তা প্রস্তাব করে তাদের খুঁজে বের করুন প্রথমে। তারপর তালিকা করে শুরু করে দিন আবেদন করা।
প্রখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিস বলেছেন “নিজেকে জানুন”। তাই সব কিছুর আগে নিজেকে জানুন। নিজের সম্পর্কে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক গুলো খুঁজে বের করে তালিকা তৈরি করুন। স্কলারশিপ পাবার ক্ষেত্রে সুবিধা কিংবা প্রতিবন্ধকতার কারণ হতে পারে এমন দিকগুলো চিহ্নিত করুন। সুযোগ আর প্রতিবন্ধকতার মাঝ থেকে পথ তৈরি করে নিন আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকে।
স্কলারশিপের সাধারণ ৭ উপায়
১. প্রাতিষ্ঠানিক অর্জন (Academic Achievement)
আপনি যদি মেধা তালিকার প্রথম দিকের শিক্ষার্থী হন তাহলে আপনি সহজেই স্কলারশিপ জিতে নিতে পারেন আপনার পরীক্ষার ফলাফলের মাধ্যমে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে স্কলারশিপ প্রস্তাব করে। ইন্ডিয়ানা ইউনিভারসিটি মেরিট এর উপর নির্ভর করে চার বছরের আন্ডার গ্রাজুয়েট স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। তেমনি ওহিও স্টেট ইউনিভারসিটিও মেরিটের উপর নির্ভর করে স্কলারশিপ দেয়।
একই ধরণের আরও স্কলারশিপ প্রোগ্রাম খুঁজতে হলে স্কলারশিপ খোজার টুলে স্কোলে (Scholly) ও ফাস্টওয়েব (Fastweb) লিখে সার্চ করুন।
২. নাগরিক সেবা বা কমিউনিটি সার্ভিস (Community Service)
পিছনের সারির ছাত্রদের মন খারাপ করার কারণ নেই। কারণ স্কলারশিপ শুধুমাত্র শীর্ষস্থানীয় ছাত্রদের জন্যই, এমনটা নয়। যারা বিভিন্ন সেবামূলক কাজে নিজেদের নিয়োজিত করেছেন তাদের জন্যও আছে স্কলারশিপের সুযোগ।
এএক্সএ অ্যাচিভমেন্ট স্কলারশিপ, প্রডেনসিয়াল স্পিরিট কমিউনিটি অ্যাওয়ার্ড এই ধরণের কিছু প্রোগ্রাম। এই প্রোগ্রামগুলো স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্কলারশিপের সুযোগ দিয়ে থাকে সেবামূলক কাজের উপর ভিত্তি করে।
৩. অ্যাথলেটদের জন্য (Athletic Achievement)
যদি খেলার মাঠ আপনার স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা হয়ে থাকে তবে অ্যাথলেটিক স্কলারশিপটি আপনার জন্য। আপনি যদি খেলতে ভালবাসেন এবং আপনার মন পড়ার টেবিলে বসতেই চায় না। যার ফলশ্রুতিতে পরীক্ষার ফলাফলের কথা উঠলেই আপনাকে পালাতে হয়। তবে সেক্ষেত্রে স্কলারশিপটি আপনাকে পালানোর হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। আপনার ক্রীড়া প্রতিভার জন্য স্কলারশিপ। বাস্কেটবল, ফুটবল, সাঁতার ইত্যাদি খেলা গুলোর ক্ষেত্রে সাধারণত এই ধরণের স্কলারশিপ অফার করা হয়ে থাকে।
এনসিএএ ডিভিশন-১ ও ডিভিশন-২ এই দুটি ক্যাটাগরিতে স্কলারশিপ অফার করে অ্যাথলেট ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য। যদিও অ্যাথলেট স্কলারশিপের সংখ্যা বেশ কম, প্রতিষ্ঠানের মোট ছাত্র-ছাত্রীর প্রায় ১-২%।
৪. বিচিত্র প্রতিভা কিংবা বৈশিষ্ট্য (Unique Hobbies or Trait
অ্যাকাডেমিক ও অ্যাথলেটিক স্কলারশিপ সম্পর্কে জানার পর নিশ্চয়ই এখন ভেবে অবাক হচ্ছেন আর কী কী উপায়ে স্কলারশিপের জন্য চেষ্টা করা যেতে পারে। থামুন অবাক হবার পালা এখনো অনেক বাকি।
এই ধরণের স্কলারশিপ গুলো হচ্ছে,
চিক অ্যান্ড সফি মেজর মেমোরিয়াল ডাক কলিং কন্টেস্ট
এই ধরণের স্কলারশিপ হাইস্কুল সিনিয়রদের জন্য যারা হাঁসের ডাক ডাকতে পারেন।
কি, খুব অবাক হচ্ছেন?
মনে হচ্ছে পাগলের প্রলাপ?
তাহলে গুগল করে দেখুন ডাক হান্টিং কম্পিটিশন লেখে। রিলেটেড লিংক হেসেবে “৮ ধরণের হাঁসের ডাক , হাঁস শিকারের জন্য জানতেই হবে আপনাকে।“, “কীভাবে সফলভাবে হাঁসের ডাক শিখবেন?” এই ধরণের কিছু সম্ভাব্য উত্তর পাবেন।
কি, গুগল করেছেন? এখন বুঝতে পারছেন হাঁসের ডাক জানা কতো জরুরী!
স্কলারশিপ রেড-
“চুল তার, কবে কার, অন্ধকার বিদিশার নেশা”
লাল চুল ধারীদের জীবনানন্দের উপর খুব রাগ হতেই পারে এই লাইনটার জন্য। তবে রাগটা এবার কমে যাবে এই খবর শোনার পর। যে লাল চুলের জন্য আপনার দুঃখের শেষ নেই, সেই চুল আপনার জন্য তৈরি করে দিতে পারে স্কলারশিপের সুযোগ।স্কলারশিপ রেড এমনই একটি স্কলারশিপ লাল চুলধারী শিক্ষার্থীদের জন্য।
স্টাক অ্যাট প্রম স্কলারশিপ কন্টেস্ট
যদি আপনি ডাক টেপ দিয়ে প্রম ড্রেস বানাতে পারেন তবে এই স্কলারশিপটি আপনার জন্য।
৫. ব্যক্তিগত পটভূমি (Personal Background)
এমন কিছু স্কলারশিপ আছে যেগুলো বিশেষ কিছু শ্রেণিতে, বিশেষ কিছু শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য।যেমন, গুগলের ওম্যান টেকমেকার স্কলার প্রোগ্রামে মেয়েদের জন্য কম্পিউটার প্রকৌশল, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্কলারশিপ দেয়া হয়ে থাকে।
হিস্পানিক স্কলারশিপ ফান্ড
আপনি হিস্পানিক ঐতিহ্যের ছাত্র হয়ে থাকলে এই স্কলারশিপ প্রোগ্রামটি আপনার জন্য।
আমেরিকার কমিউনিটি সার্ভিসের রেকর্ড আছে এমন ছাত্রদের জন্য আছে রন ব্রাউন স্কলারশিপ প্রোগ্রাম।
৬.অর্থনৈতিক কারণ (Financial Need)
বেশ কিছু স্কলারশিপ প্রোগ্রাম আছে, যাদের টাকা দিয়ে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের সামর্থ্য নেই তাদের জন্য। পুটার স্কলারশিপ ফান্ড এমনই একটি স্কলারশিপ প্রোগ্রাম। এই ধরণের প্রোগ্রামগুলোর জন্য কিছু অতিরিক্ত শর্ত পূরণ করতে হতে পারে আপনাকে। যেমন- আপনি কোন দেশের নাগরিক তার উপর ক্ষেত্র বিশেষে আপনার জন্য সুযোগ কিংবা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করতে পারে এই ধরণের স্কলারশিপগুলোতে। এ জন্য স্কলারশিপে আবেদন করার আগে অতিরিক্ত শর্তগুলো জেনে নিন।
৭.পারিবারিক কর্মস্থল (Family’s Workplace or Military Affiliation)
সর্বশেষ স্কলারশিপের ধরণটি হচ্ছে পারিবারিক সূত্র। অনেক সময় অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের এমপ্লয়ির সন্তানদের স্কলারশিপের সুযোগ দিয়ে থাকে। আবার সামরিক বাহিনীতেও ফান্ডিং এর সুবিধা থাকে সামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য। অয়ালমার্ট , সিভিএস এমন প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ।
দেশের বাইরে পড়তে চাইলে স্কলারশিপের বিকল্প নেই। দেশে কিংবা দেশের বাইরে একটা স্কলারশিপ জিতে নেওয়া আপনার যোগ্যতার আলাদা মাপকাঠি হিসেবে কাজ করে। তাহলে এখন জানা হয়ে গেল তো ৭ রকমের স্কলারশিপ সম্পর্কে। এর মধ্যে আপনার জন্য কোনটি? আর দেরি কেন, খুঁজে বের করে শুরু করে দিন আবেদন করা।