বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের জন্য কর প্রদান বাধ্যতামূলক হলেও আদায়ের পরিমাণ সন্তোষজনক নয়। এ অবস্থার উত্তরণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্প্রতি নানামুখী পদক্ষেপ বাস্তবায়নে নেমেছে।
সূত্রমতে, এনবিআর বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে পাওনা কর আদায়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। বিনিয়োগ বোর্ড, বেপজা, এনজিও ব্যুরো, এনএসআই, এসবি, পাসপোর্ট ও বহির্গমন বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিটিআরসি থেকে বিদেশি নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ, সমন্বয় ও সহযোগিতার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করে টাস্কফোর্সকে অধিকতর সমন্বিত করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজস্ব বোর্ড। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে বসবাসকারী করখেলাপি বিদেশি নাগরিক ও তাদের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের আয়কর ও জরিমানা আরোপ করতে সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) সহযোগিতায় তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। দেশে বৈধ-অবৈধভাবে কর্মরত বিদেশি নাগরিকের প্রকৃত সংখ্যা কত, তার সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে বিভিন্ন সেক্টরে প্রায় ৫ লাখ বিদেশি কাজ করছে। তাদের অধিকাংশই নথিভুক্ত না হওয়ার সুযোগে যাঁরা বৈধভাবে চাকরি করেন, তাঁরাও নানা কৌশল অবলম্বন করে কর ফাঁকি দিচ্ছেন।
সূত্রমতে, এখন থেকে কোনো বিদেশি নাগরিক কর পরিশোধ না করলে তাকে বাংলাদেশ ত্যাগ করতে দেওয়া হবে না। বিমান ও স্থলবন্দরে তাদের আটকে দেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে দেশের সব স্থল ও বিমানবন্দরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আলাদা ডেস্ক বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেসব বিদেশি দেশত্যাগ করবেন, তাদের অবশ্যই এনবিআরের ডেস্কে গিয়ে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ১০৭ ধারা অনুযায়ী ট্যাক্স পরিশোধের সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। যারা সার্টিফিকেট প্রদর্শনে ব্যর্থ হবেন, তাদের আটকে দেওয়া হবে। প্রয়োজনে তারা তাৎক্ষণিকভাবে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে স্থাপিত ডেস্কে আয়কর জমা করতে পারবেন। একই সঙ্গে বিদেশিদের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানেও এনবিআরের গোয়েন্দা সেল অভিযান চালাবে। নিয়োগকর্তার ওপর আরোপ করা হবে জরিমানা।
উল্লেখ্য, বৈধ-অবৈধ উপায়ে বসবাসকারীরা কাজ করছেন কেউ পরামর্শক হিসেবে কেউ-বা টেকনিকাল এক্সপার্ট হিসেবে। এর মধ্যে বড় অংশই অবৈধভাবে কাজ করছে এবং অনেক বিদেশি স্বল্প সময়ের জন্য কাজ করে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করলেও তাঁরা কর না দিয়েই বাংলাদেশ ত্যাগ করছেন। এ অবস্থায় বৈধ-অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের এবং তাঁদের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের ওপর আয়কর কার্যক্রম মনিটরিং অত্যন্ত জরুরি।
এ প্রসঙ্গে এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, যেসব বিদেশি নাগরিক বর্তমানে বাংলাদেশে কাজ করছেন, তাঁদের কাছ থেকে যথাযথ আয়কর সংগ্রহ করা এবং ভবিষ্যতে যাঁরা এদেশে আসবেন, তারাও যেন বৈধভাবে কাজ করতে পারেন, সে লক্ষ্যে এনবিআর নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এগোচ্ছে। প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হলে দেশে অবৈধভাবে আর কোনো বিদেশি নাগরিকের কাজ করার সুযোগ থাকবে না। পাশাপাশি যারা বৈধভাবে কাজ করছেন, তারা আয়কর আইন অনুযায়ী কর পরিশোধ করে কাজ করার সুযোগ পাবেন।
বিনিয়োগ বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বছরে গড়ে ১২ হাজার বিদেশি তাঁদের কাছ থেকে ওয়ার্ক পারমিট নেন। এর বাইরে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো ও বেপজায়ও কয়েক হাজার বিদেশি কর্মীর নিবন্ধন রয়েছে। বিদেশি কর্মীদের সিংহভাগই ভারতের। এ ছাড়া পাকিস্তান, চীন, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও আফ্রিকার নাগরিকেরাও বাংলাদেশে কর্মরত রয়েছেন। বিশেষ করে দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত গার্মেন্ট, বায়িং হাউস, এনজিও, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, টেক্সটাইলসহ বিবিধ প্রতিষ্ঠানে বিদেশিরা কাজ করেন। অথচ, তাদের প্রকৃত সংখ্যা জানা নেই কারও। এমনকি তাদের বেতন-ভাতার পরিমাণও গোপন রাখা হয়।
পৃথক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসায় প্রায় পাঁচ লাখ বিদেশি কর্মরত আছেন। এর মধ্যে মাত্র ১০ হাজার জনের বৈধ ওয়ার্ক পারমিট থাকলেও তাঁদের অনেকেই আয়কর দেন না। এর বাইরে অবৈধভাবে যেসব বিদেশি এখানে কাজ করছেন, করের আওতায় না থাকায় তারাও বিপুল অঙ্কের কর ফাঁকি দিচ্ছেন। প্রসঙ্গত, আয়কর আইন অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের উপার্জিত আয়ের ৩০ ভাগ কর দিতে হয়।
এনবিআর সংশ্লিষ্টদের আশা, বিভিন্ন স্থল ও বিমানবন্দর এলাকায় এনবিআরের ডেস্ক চালু করা হলে বিদেশিরা যেমন কর প্রদানে বাধ্য হবেন, তেমনি তাঁদের কর না দেওয়ার প্রবণতা কমে আসবে।
Courtesy: shampratikdeshkal