পার হয়ে গেলো সর্বকালের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন এর জন্মদিন। তিনিই সর্বপ্রথম বলেছিলেন,এই পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য্য সম্পর্কে আমি জানি, সেটা হলো “কম্পাউন্ড ইন্টারেস্ট” .আইনস্টাইনের এই কথা নিয়ে অনেক ভাবনার পরে একমত হয়ে ড্যারেন হার্ডি একটা বই লিখেন “The Compound Effect ”
Source: FarFromAverage (YouTube Channel)
বইটিতে এমন কিছু আইডিয়া আছে যা আমাদের জীবনের জন্য একটি সঠিক রিফ্লেকশন বলতে পারি। ড্যারেন হার্ডি বলেছেন,
“After 31 months or 31 years, the person who uses the positive nature of the compound effect appears to be an overnight success.”
আমরা এই উক্তিটির একটা উদহারণ এর মাধ্যমে বুজতে চেষ্টা করবো। শুভ্র, রোহান, এডওয়ার্ড তিন জন বন্ধু। তিনজনই একই রকম লাইফ স্টাইল লিড করে থাকে। ধরা যাক, তিনজনই বিবাহিত এবং সবারই ওয়াইফের সাথে একটু ঝামেলা চলছে।
Source: http://www.ttcinnovations.com/book-club-the-compound-effect/
দেখতে দেখতে ২০১৭ শেষ করে ২০১৮ তে বছর শুরু হলো , শুভ্র যেমন ভাবে চলে তেমনই থাকলো, কারন তার মনে হয় এটাতেই সে খুশী আছে। কিনতু, ইদানীং যেন মানুষের ভুলগুলো তার চোখেই খালি পড়া শুরু হলো।
অন্যদিকে রোহানএকটি Daily Checklist বানিয়ে নিজের মধ্যে কিছু ছোট ছোট পসিটিভ পরিবর্তন আনা শুরু করল। যেমন-
১) প্রতিদিন ঘুমানোর আগে একটা বইয়ের ২০ পৃষ্ঠা পড়া।
২) প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার বা ফেরার সময় গাড়িতে বসে বা সুবিধামত সময়ে ৩০ মিনিট পডকাস্ট শোনা।
৩) প্রতিদিন ডায়েট প্ল্যান থেকে ২০০ ক্যালরি কমালো।
৪) প্রতিদিন এক্সট্রা অন্তত ৩ লিটার পানি খাওয়া।
৫) প্রতিদিন ২ কিঃমিঃ জগিং।
৬) ব্যবসায়ীক স্বার্থ জড়িত প্রতিদিন অন্তত এমন ২/৪ জনকে ফোন দিয়ে খোজখবর নেয়া বা সম্পর্কোন্নয়ন।
৭) নিজের বউকে নিয়ে প্রতি সপ্তাহে শুধুমাত্র ১ দিন বাইরে ডিনারের জন্য যাওয়া এবং রিফ্রেশমেন্টের জন্য মুভি দেখা, ঘুরাফেরা করা।
এবার অন্যদিকে এডওয়ার্ড কিছু ছোট ছোট Negative Change আনা শুরু করল। যেমন:
১) প্রতিদিন লাঞ্চে একটু করে ফাস্টফুড খাওয়া।
২) কাজের চাপের অজুহাতে সপ্তাহে ৩/৪ দিন জিম মিস দেয়া।
৩) প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার সময় ১ বোতল কোক খাওয়া।
৪) টিভিতে খেলা এবং অন্য প্রোগ্রাম দেখার জন্য ইভিনিং ওয়াক বন্ধ করে দেয়া।
৫) সময়ের অভাবের অজুহাতে অফিসিয়াল যোগাযোগ কমিয়ে দেয়া।
৬) ব্যস্ততার অজুহাতে বউয়ের সাথে বাইরে যাওয়াও বন্ধ করে দিল।
পরব্ররতী ৫ মাসে ৩ বন্ধুর তেমন কোন পার্থক্য দেখা গেল না। ১০ মাস পরেও একই। এবার রোহান একটু একটু ডিপ্রেসেড হলো । কেননা এখনো সে কোন পজটিভ রেজাল্ট দেখতে পায়নি তাও সে কোনরকমে জেদ ধরে চালিয়ে গেল, যেখানে এডওয়ার্ডকম কাজ করে জীবনকে উপভোগ করতে থাকল। আর শুভ্র তো খুশিতেই আছে। কিন্তু ২৫ মাস পর হঠাৎই এদের মধ্যে কিছুটা বড় পার্থক্য দেখতে পাওয়া গেল, আর ২৭ মাস পর সেটা আরো ক্লিয়ারলি দেখতে পাওয়া গেল। ৩১ মাস পর একদম পুরোপুরি পার্থক্যগুলো নজরে আসলো !!! শুভ্র এখন আরো বেশি কম্পলেইন করে সবার ব্যাপারে। বেশিরভাগ সময়ই বিরক্ত আর ঝামেলায় কাটে।
Source: yebook (YouTube channel)
এডওয়ার্ড প্রতিদিন একটু করে ফাস্টফুড খেয়ে এবং জিম বাদ দিয়ে ১৫ কেজি ওজন বাড়ালো, সাথে নানান রোগব্যাধি। যোগাযোগ কমিয়ে দেয়ার ফলে বিজনেসের অবস্থাও খারাপ হতে লাগল। ফলস্বরূপ আর্থিক অবস্থাও খারাপ হয়ে গেল সেই সাথে বউয়ের সাথেও সম্পর্ক খারাপ হয়ে ডিভোর্সের পর্যায়ে চলে গেল। খুবই ছোট নেগেটিভ চেঞ্জ লাইফটাকে হরিবল করে ফেললো।
এবার আসা যাক রোহানের ব্যাপারে। এই ৩১ মাসে সে প্রায় ৫০ টি বই এবং ৪৬৫ ঘন্টা পডকাস্ট শুনেছে , যেটাতে তার Knowledge & Wisdom দুটোই আগের থেকে অনেকগুণ বেড়ে গেল।প্রতিদিন শুধু ১২৫ ক্যালরি কমিয়ে আর ১ মাইল হেটে ১৫ কেজি ওজন কমালো যে কারনে সে এখনো আগের মতই স্লিম আর হ্যান্ডসাম। প্রতিদিন মাত্র ৩ লিটার পানি খেয়ে মোট প্রায় তিন হাজার লিটার পানি খেয়ে নিল যা কিনা তার নিজের ভিতরে অনেক রোগকে বেড়ে ওঠা কমিয়ে দিল। আর প্রতিদিন মাত্র দুইটা কল করে সে মোট ১৮০০ কল দিল যাতে সম্পর্ক ভালো হল ফলে বিজনেসও বাড়তে থাকল।সপ্তাহে মাত্র একদিন বউকে ডিনারে নিয়ে গিয়ে মোট ১২৪ টা ডিনার ডেট করে ফেলল, যাতে তার বউ খুশী হল, নিজেদের সম্পর্কটাও মজবুত হল।
“Strong insignificant changes compounded for 31 months brought an outstanding result for him”
কিন্তু!! যদি সাকসেস পাওয়া এতটাই সোজা হয় আর আমরা সবাই প্রসেসটাও জানি, তাহলে কেন আমরা এই সূত্রটা ফলো করতে আমাদের জীবনে ব্যর্থ হয়ে যাই? লেখকের মতে চারটি ফাঁদ আছে যার কারনে আমরা ব্যর্থ হই বা স্থায়িত্ব ধরে রাখতে পারি না।
১) শুরুর ফলাফল থাকে অদৃশ্য :
মনে করুন, যদি আপনি আজ একটা ম্যাক্সিকান চীজ বার্গার খান আর পরদিন সকালে ১০ কেজি ওজন বাড়িয়ে ঘুম থেকে ওঠেন তাহলে কি আপনি কোনদিনও একটা বার্গার খেতেন? অথবা আজ একটি সিগারেট খান আর পরদিন সকালে আপনি গলায় ক্যান্সার নিয়ে ঘুম থেকে ওঠেন, তাহলে কি আপনি কোনদিনও একটা সিগারেট খাওয়ার সাহস করতেন?
কিন্তু সমস্যাটা হল শুরুতে কোন পরিবর্তনই চোখে ধরা পরে না। কিছু মাস বা কিছু বছর পর হঠৎ যেন রাতারাতি কিছু ভয়ানক ফলাফল সামনে এসে যায়, যতক্ষণে সেটাকে আটকানোর আর সুযোগ থাকে না। এই ফাঁদ থেকে বাঁচার জন্য আপনাকে সবসময় এটা মনে রাখতে হবে, মানে আপনাকে সতর্ক হয়ে প্রতিটা চয়েজ মন দিয়ে নিতে হবে।
২) বিপথগামিতা:
জুরিখগামী কোন বিমান যদি ১ ডিগ্রিও Off Route হয়ে যায় তো সেই প্লেন জুরিখ থেকে ১৫০ মাইল দূরে অন্য কোন দ্বীপে গিয়ে ল্যান্ড করবে। এবার আপনি ভাবুন যদি আপনিও নিজের জীবনে শুধুমাত্র ১ ডিগ্রীও Off Route হয়ে যান ১০ বা ১৫ বছরের জন্য, তাহলে জীবনের কোথায় গিয়ে ল্যান্ড করবেন!
এটা থেকে বাঁচার জন্য একটা গাইডলাইন থাকা খুবই দরকার। যেমন একটা প্রতিদিনের চেকলিস্ট যেটা একটা ফুটপ্রিন্টের মত আপনাকে On Track থাকার জন্য সাহায্য করবে। যদি আপনি কোন কারনে কিছুদিনের জন্য অফট্র্যাক হয়েও যান তখন এই চেকলিস্টটা আপনাকে অন ট্র্যাকে ফিরে আসার জন্য অনেকটা সাহায্য করবে।
৩) তাতক্ষনিক পরিতৃপ্তি:
আপনার কাছে দুটো অপশন আছে, ডিনারের পর আপনি একটা ডেজার্ডও খেতে পারেন বা শুধু ১ গ্লাস পানি খেতে পারেন। আপনি পানি বেছে নিলেন আর আপনার একটা বন্ধু নিলডেজার্ডও। বন্ধু খুব আনন্দে ওই ডেজার্ডটাকে আপনার চোখের সামনে মজা করে খেতে লাগল। আর এদিকে আপনি শুধু পানি খাচ্ছেন যেটার এতটুকুও কোন স্বাদ নেই। তখন কেমন লাগবে আপনার?
এটাই ফাঁদ!!! যদি আপনি শর্ট টার্মে দেখেন তাহলে কোন ভাল চয়েজ বেছে নিলে তাতে আপনি কিছুই পান না কিন্তু যদি একটা খারাপ চয়েজকে বেছে নেন তাহলে আপনি অনেক খুশী আর মজা লাভ করেন। এটা একটা প্রচলিত মতের বিরুদ্ধ মত। জীবনে একবার তো আপনাকে কষ্ট করতেই হবে, আপনি এটাকে স্কিপ করতে পারবেন না। এই কষ্ট দুই ধরনের হয়: Pain of Discipline এবং Pain of regret. কিন্তু ডিসিপ্লিনের কষ্টে ওজন শুধু কয়েক গ্রাম এবং কিছুদিনের যেখানে রিগ্রেটের কষ্টের ওজন কয়েক টন এবং আজীবনের। এবার চয়েজ আপনার।
৪) যা করা সহজ হয় তা করাও অনেক সময় সহজ নয়:
চেকলিষ্ট মেনে চলা, প্রতিদিন শুধুমাত্র দুই বোতল পানি খাওয়া, ১ মাইল হাটা; এইসব কাজ করা খুবই সহজ। হ্যা সহজ তো বটেই কিন্তু এটা করা অনেকটা মুশকিলও। লেখক বলেছেন শুধুমাত্র একটা জিনিস এরকম আছে যেটা সফল এবং অসফলদুধনের লোকেদের মধ্যেই আছে , তাদের কেউই ভাল চয়েজটা বেছে নিতে ভালবাসে না। হ্যা এটাই সত্যি! কোকের পরিবর্তে শুধু স্বাদহীন পানি খেতে কেউই ভালবাসে না, কিন্তু সাকসেসফুল লোকেরা তাও যেকোন ভাবে তাদের ইচ্ছাশক্তি বা নিজের কেন শক্তিকে- কে কাজে লাগিয়ে সেই কাজটা করে নেয়। মোহাম্মদ আলী তার একটি উক্তিতে বলেছেন,
“আমি আমার ট্রেনিংকে পছন্দ করি না কিনতু ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন হতে ভালোবাসি”
তো এই ফাঁদ থেকে বাঁচার জন্য আপনার ওই Why টাকে খুজে বের করতে হবে। এই Why যত পাওয়ারফুল হবে আপনিও ততটাই পাওয়ারফুল হবেন।
আমরা এরকম ছোট ছোট চয়েজগুলোতে বেশি মন দিই না, যদি আমি আপনাকে এখন দুটো অপশন দেই: আপনাকে এখন ১০ টাকা দিব যেটা আগামী ১ মাস প্রতিদিন দিগুন হবে অথবা এখনই একবারে ১০০ কোটি টাকা দিব; তাহলে আপনি এর মধ্যে কোন অফারট নিতে পছন্দ করবেন। প্রায় সবাই ২ নাম্বার অপশন অর্থাৎ ১০০ কোটি টাকাই নিবে। আচ্ছা তাহলে আমি ১ নাম্বার অফারটা নিজের কাছে রেখে দিলাম। এবার দেখা যাক ১ মাস পর এর ফলাফল কি আসে। ৫ দিন পর আমার কাছে আছে ৫০ টাকা আর আপনার কাছে ১০ কোটি। ১০ দিন পর আমার কাছে আছে ৫০০ টাকা আর আপনার কাছে সেই ১০ কোটি। ২০ দিন পর আমার কাছে ১০০০ আর আপনার কাছে সেই ১০ কোটি টাকা। আপনি এত টাকায় অনেক মজাতেই আছেন।
কিনতু ১০ বছর পর দেখা গেলো পর আপনার কাছে আছে এখনো সেই ১০ কোটি কিন্তু আমার কাছ আছে ১০৭ কোটি টাকা। যেটা কিনা আপনার থেকে ১০ গুন বেশি। আইনস্টাইন কেন “Compound Interest” ব্যাপারটাকে অষ্টম আশ্চর্য্য বলেছেন আবার হয়তোবা বুজা গেছে !!! সফলতা জিনিসটাও ঠিক এই প্যাটার্নটাই ফলো করে।
(N.B. সম্পূর্ণ লেখাটিই ড্যারেন হার্ডির দা কম্পাউন্ড ইফেক্ট বই থেকে অবলম্বনে লেখা)
Data Science Enthusiast
Dept. of Software Engineering
Daffodil International University
& Communication Manager, Youth Carnival