প্রযুক্তির এই যুগে আইটি খাতে নিজের পছন্দমতো ক্যারিয়ার গড়ে তোলা ও ভালো বেতনে চাকরি খুঁজে পাওয়া অনেকটাই সহজ হয়ে উঠেছে। তবে আইটি খাতে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। তাই একটি চাকরি পেতে হলে অন্যদের চেয়ে নিজেকে আলাদাভাবে তুলে ধরতে করতে হবে । আর সেজন্য সাজানোগোছানো একটি সিভির সাথে থাকতে হবে বেশ ভারি কিছু ডিগ্রি। আজ আমরা কথা বলবো, আইটি খাতে ক্যারিয়ার গড়ার জন্যে সেরা সাতটি ডিগ্রি নিয়ে।
Source: engineeringdegreecentral.com
কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং
কম্পিউটার সায়েন্স (সিএস) বা কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) হচ্ছে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্যে সবচেয়ে বেসিক কোর্স। সাধারণত কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে যেসকল বিষয়ের উপর জ্ঞান অর্জন করা যায়, সেগুলো হচ্ছে, ক্লাউড কম্পিউটিং, কম্পিউটার আর্কিটেকচার ও ডিজাইন, ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ডিজাইন এন্ড অ্যানালাইসিস অফ অ্যালগরিদম, অপারেটিং সিস্টেম, ইউনিক্স প্রোগ্রামিং, কম্পাইলার ডিজাইন, কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং, ডেটা স্ট্রাকচার এন্ড অ্যালগরিদম, ডিস্ট্রিবিউটেড কম্পিউটিং সিস্টেম এবং সফটওয়্যার টেস্টিং।
কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স শেষ করার পর আপনি যেকোনো কোম্পানিতে জাভা প্রোগ্রামার, সি প্লাস প্লাস প্রোগ্রামার ও সফটওয়্যার ডেভেলপার হিসেবে কাজ করতে পারবেন। বাংলাদেশের বেতন কাঠামো অনুসারে একজন সফটওয়্যার ডেভেলপারের মাসিক বেতন হয়ে থাকে ৩০ হাজার টাকা থেকে ৭০ হাজার টাকার মধ্যে। তবে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার উপর বেতন কাঠামো পরিবর্তিত হয়ে থাকে।
বিজনেস ইনফরমেশন টেকনোলজি
বিজনেস ইনফরমেশন টেকনোলজি (বিআইটি) কোর্সের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে ব্যবসায়িক প্রচারণা ও পরিচালনার জন্য আইটি ব্যবহার করা। সাধারণত বিজনেস ইনফোরমেশন টেকনোলজি থেকে যেসকল বিষয়ের উপর জ্ঞান অর্জন করা যায়, সেগুলো হচ্ছে, সফটওয়্যার ডিজাইন সিস্টেম, টেকনোলজি ইন বিজনেস, প্রোগ্রামিং স্কিল, প্র্যাকটিক্যাল সফটওয়্যার ডিজাইন এবং সফটওয়্যার টেস্টিং।
বিজনেস ইনফরমেশন টেকনোলজি কোর্স শেষ করার পর আপনি যেকোনো কোম্পানিতে বিজনেস অ্যানালিস্ট, ডেটা অ্যানালিস্ট ও প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতে পারবেন। বাংলাদেশের বেতন কাঠামো অনুসারে একজন প্রজেক্ট ম্যানেজারের মাসিক বেতন হয়ে থাকে ৩০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে।
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং মূলত কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটি শাখা যেখানে সফটওয়্যার তৈরি, ডিজাইন, স্ট্রাকচার ও সিস্টেম সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়। এছাড়াও এই কোর্স থেকে আপনি যেসব বিষয়ের উপর জ্ঞানার্জন করতে পারবেন, সেগুলো হচ্ছে, সায়েন্টিফিক প্রিন্সিপাল মেথড, সফটওয়্যার টেস্টিং, প্রোগ্রামিং, প্র্যাকটিক্যাল ডিজাইন ও অ্যানালিটিক্যাল স্ট্রাকচার।
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স শেষ করার পর আপনি যেকোনো কোম্পানিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, মোবাইল ডেভেলপার ও ক্যাড টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করতে পারবেন। বাংলাদেশের বেতন কাঠামো অনুসারে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের মাসিক বেতন হয়ে থাকে ৩০ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকার মধ্যে।
ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট কোর্স
ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট মূলত থার্ড পার্টি কোর্স, অর্থাৎ এ বিষয়ের উপর চার বছরের কোনো ডিগ্রির কোর্স নেই। বেশিরভাগ কোর্সই ৩ মাস থেকে শুরু করে ২ বছরের মধ্যে হয়ে থাকে। এই কোর্স থেকে আপনি যেসব বিষয় শিখতে পারবেন, সেগুলো হচ্ছে, স্ট্যাটিক ও ডাইনামিক ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব প্রোগ্রামিং, ওয়েব মার্কেটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, ফ্রেমওয়ার্ক, আইডিই এবং হাই লেভেল প্রোগ্রামিং ভাষা।
ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট কোর্স শেষ করার পর আপনি যেকোনো কোম্পানিতে ওয়েব ডিজাইনার, ফ্রন্ট এন্ড ডেভেলপার ও ইউএক্স ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতে পারবেন। বাংলাদেশের বেতন কাঠামো অনুসারে একজন ফ্রন্ট এন্ড ওয়েব ডেভেলপারের মাসিক বেতন হয়ে থাকে ২০ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকার মধ্যে। যদিও অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার উপর বেতন কাঠামো পরিবর্তিত হয়।
কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং কোর্স
কম্পিউটার নেটওয়ার্কিংয়ের উপর চার বছরের ডিপ্লোমা কোর্স রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অধীনে ৩ থেকে ২ বছরের কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং কোর্স করা যায়। এই কোর্স করার পরে আপনি যেসব বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন, সেগুলো হচ্ছে, হাব, সুইচ ও রাউটার ফাংশন, ইথারনেট ও আইপি স্ট্রাকচার এবং ফাংশন, ওএসআই ও টিসিপি মডেল, বিভিন্ন ক্যাবল স্ট্রাকচার ও ফাংশন, আইপি কনফিগ, পিং, এনএস লুকআপ এবং গেটওয়ে ও সিকিউরিটি সিস্টেম স্ট্রাকচার।
কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং কোর্স শেষ করার পর আপনি যেকোনো কোম্পানিতে নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইঞ্জিনিয়ার ও সিকিউরিটি অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ করতে পারবেন। বাংলাদেশের বেতন কাঠামো অনুসারে একজন সিকিউরিটি অ্যানালিস্টের মাসিক বেতন হয়ে থাকে ৪০ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার মধ্যে।
Source: securityintelligence.com
ডেটা সায়েন্স কোর্স
ডেটা সায়েন্স মূলত ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্টের মতোই থার্ড পার্টি কোর্স। অর্থাৎ, চার বছর মেয়াদী কোনো কোর্স নেই, তবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ৩ মাস থেকে শুরু করে ২ বছর মেয়াদী কোর্স করানো হয়। এই কোর্স করার পরে আপনি যেসব বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন, সেগুলো হচ্ছে, আর (R) প্রোগ্রামিং ভাষা, স্ট্যাটিসটিক্যাল কনসেপ্ট, টাইডিভার্স, ডেটা ভিজুইয়ালাইজেশন, জিজিপট ২, ডেটা র্যাংগ্লিং, গিট ও গিটহাব রেপোজিটরি, ইউনিক্স, লিনাক্স ও আর (R) স্টুডিও এবং মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম।
ডেটা সায়েন্স কোর্স শেষ করার পর আপনি যেকোনো কোম্পানিতে বিগ ডেটা সায়েন্টিস্ট, ডেটা অ্যানালিস্ট ও হ্যাডপ ডেভেলপার হিসেবে কাজ করতে পারবেন। বাংলাদেশের বেতন কাঠামো অনুসারে একজন ডেটা অ্যানালিস্টের মাসিক বেতন হয়ে থাকে ৫০ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার মধ্যে।
কম্পিউটার গেমস ডেভেলপমেন্ট কোর্স
কম্পিউটার গেমসের উপর ৪ বছরের কোনো ডিগ্রি বা কোর্স না থাকলেও, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার গেমস ডেভেলপমেন্টের জন্যে বিভিন্ন ধরনের শর্ট কোর্স করানো হয়। এগুলো ৩ মাস থেকে ২ বছর মেয়াদী হতে পারে। এই কোর্স করার ফলে আপনি যেসকল বিষয় সম্পর্কে দক্ষ হতে পারবেন, সেগুলো হচ্ছে, কম্পিউটার সিস্টেম, ডিজিটাল গ্রাফিক্স, থিডি ও টুডি মডেলিং, জাভা, পাইথন ও ওয়েব প্রোগ্রামিং ভাষা, অবজেক্ট অরিয়েন্টেড ও মোশন অ্যানিমেশন ডিজাইন ও মডেল।
কম্পিউটার গেইমস ডেভেলপমেন্ট কোর্স শেষ করার পর আপনি যেকোনো কোম্পানিতে ডেস্কটপ গেম ডেভেলপার, ডট নেট প্রোগ্রামার, জাভা ডেভেলপার, ইউক্স ডিজাইনার ও সফটওয়্যার টেস্টার হিসেবে কাজ করতে পারবেন। বাংলাদেশের বেতন কাঠামো অনুসারে একজন গেইম ডেভেলপারের মাসিক বেতন হয়ে থাকে ২০ হাজার টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকার মধ্যে।
Featured Image: tdtnews.com