বর্তমানে যে হারে কোম্পানি ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে নিত্য নতুন ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রবর্তন করছে, তাতে এটা স্পষ্ট যে, প্রযুক্তির বাজারে উপযুক্ত কর্মীর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, চাহিদানুযায়ী উপযুক্ত ও দক্ষ প্রতিভাবান কর্মীর প্রচুর অভাব রয়েছে।
তাই অনেক উদ্যোক্তা ও শিল্পপতিদের মধ্যে এখন একটাই প্রশ্ন যে, কীভাবে পরবর্তী প্রজন্মের টেক-ট্যালেন্টদের প্রযুক্তি নির্ভর কাজে লাগানো যায়? এখানে এ সংক্রান্ত কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করা হলো।
১. টেক ট্যালেন্টদের প্রযুক্তিগত কাজে সবরকম সহায়তা প্রদানের নিশ্চয়তা দিন
দিনে দিনে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যত প্রযুক্তির প্রসার হচ্ছে, ততই প্রযুক্তি ও প্রকৌশলগত মেধাশক্তির চাহিদা বাড়ছে। অনেক তরুণরা কেবল নিজ আগ্রহে ছোট খাট প্রোজেক্টে অংশ নিচ্ছে। এ ধরণের তরুণ প্রতিভাবানদের হাতে কলমে কাজ করার সুযোগ করে দেয়া যেতে পারে। এতে তাদের আত্মবিশ্বাস ও বাস্তব জ্ঞান বাড়বে এবং মেধার বিকাশ ঘটবে।
শুধু তাই নয়, তাদের যে কোন প্রয়োজনে সাহায্য করার জন্য একটি টেকনিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা যেতে পারে। এতে তারা যে কোন সমস্যার সমাধানের সময় ঐ টিমের সাহায্য নিতে পারবে। ফলে যে কোন নতুন কাজ তারা চ্যালেঞ্জরূপে গ্রহণ করতে পারবে এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে যে কোন প্রজেক্টে তারা সফল হওয়ার সাহস পাবে। এভাবে অন্যান্য তরুণ টেক ট্যালেন্টরাও এ কাজে যুক্ত হবার প্রেরণা পাবে।
২. কাজের পাশাপাশি জ্ঞানচর্চা অব্যাহত রাখার উৎসাহ দিন
তরুণ কর্মীদের মধ্যে ক্যারিয়ারের প্রথম থেকেই জ্ঞান চর্চার অভ্যাস গড়ে তোলা আবশ্যক। নিজের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করার জন্য পড়াশোনার বিকল্প নেই। তাই আপনার কোম্পানির টেক ট্যালেন্টদেরকে পড়াশোনায় আগ্রহী করে তোলার জন্য কিছু প্রযুক্তি সংক্রান্ত প্রতিযোগিতা ও পুরষ্কারের ব্যবস্থা করতে পারেন। আপনার কোম্পানির কর্মস্থলেও একটি লাইব্রেরির ব্যবস্থা করতে পারেন, যেন অবসর সময়ে কর্মীরা সেখানে জ্ঞানচর্চা করতে পারে।
দিন দিন প্রযুক্তি আরও উন্নত ও পরিবর্তিত হচ্ছে। এ সম্পর্কে টেক ট্যালেন্টদের জানাতে সেমিনার, পেপারওয়ার্ক, প্রেজেন্টেশন, ওয়ার্কশপ, ট্যুর ইত্যাদিতে তাদের নিয়োজিত রাখতে পারেন।
৩. অভিনব প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করাটা রেওয়াজে পরিণত করুন
আপনি যদি বর্তমান টেক ট্যালেন্টদের নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হোন, তবে আপনাকেও এই তরুণ টেক ট্যালেন্টদের কাছে পরিচিত হতে হবে। এতে তারা নিজে থেকেই আপনার সাথে কাজ করার আগ্রহ পাবে। এই পরিচিতি পাওয়ার জন্য নিত্য নতুন অভিনব প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা যেতে পারে। কিন্তু প্রতিনিয়ত নতুন প্রযুক্তিগত আইডিয়া বের করা সহজ নয়। এক্ষেত্রে তরুণ টেক ট্যালেন্টদেরকে নতুন আইডিয়া বের করার জন্য উৎসাহ দিতে পারেন।
এরপর কোন তরুণ মেধাবী টেক ট্যালেন্ট তার প্রোজেক্ট নিয়ে আপনার কাছে এলে সেটি গুরুত্ব সহকারে দেখুন এবং তাকে তার গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার জন্য পূর্ণ সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা করুন। আপনার আস্থা পেয়ে সে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে কাজ শুরু করবে। এভাবে আপনি টেক ট্যালেন্টদেরকে প্রযুক্তি নির্ভর শিল্পের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে পারেন।
৪. আপনার কোম্পানির টেক ট্যালেন্টদেরকে পরস্পরের সাথে আলোচনা করতে দিন
টেক ট্যালেন্টদের কাজ করার জন্য এমনভাবে কর্মস্থল তৈরী করুন যেন তারা সহজেই একজন আরেকজনের সাথে মিশতে পারে এবং যে কোনো আইডিয়া শেয়ার করতে পারে। তাদেরকে আলাদা ঘর দেবার প্রয়োজন নেই বরং একই জায়গায় যেন অনেকে কাজ করতে পারে সেই ব্যবস্থা করুন। এতে তাদের মধ্যে প্রযুক্তি, তাদের মতামত, কোনো কাজের প্রক্রিয়া ইত্যাদি নানা বিষয়ে আলোচনা ও সমালোচনা হবে। তরুণরা অভিজ্ঞদের থেকে অনেক মূল্যবান পরামর্শ পাবে। এভাবে তাদের কর্মদক্ষতা, জ্ঞান, মেধা ইত্যাদির বিকাশ ঘটবে।
এক্ষেত্রে অবশ্য কর্মীদের অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক যেন আন্তরিকতাপূর্ণ হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এর জন্য ম্যানেজার ও সমমানের পদে নিয়োজিত ব্যাক্তিদের দায়িত্ব হলো সকল কর্মচারীদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখা, প্রত্যেক টেক ট্যালেন্টের কাজ, প্রয়োজন ও ভাবনা ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে রাখা এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা এবং প্রায়ই সিনিয়র সদস্যও তরুণদের একত্রিত করে আলোচনা সভার আয়োজন করা ইত্যাদি।
৫. টেক ট্যালেন্টদের আকৃষ্ট করার জন্য সমাজসেবামূলক ভাবনাকেও গুরুত্ব দিন
পরবর্তী প্রজন্মের টেক ট্যালেন্টদের একটি বিশেষত্ব হলো, তাদের কাছে সে কোম্পানিগুলোই বেশি পছন্দনীয় হয় যারা কেবল কোম্পানির লাভ নিয়ে চিন্তা না করে সামাজিক দায়বোধ নিয়ে বেশি চিন্তা করে। অর্থাৎ যেসব প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তি পণ্য দিয়ে নিজ দেশ ও সমাজকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা করে, সেসব প্রতিষ্ঠান তাদের কাছে অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে।
তাই এমন প্রজেক্ট বা পণ্যের প্রতি আপনিও বেশি গুরুত্ব দিন, যা একইসাথে আপনাকে আর্থিকভাবে লাভবান করবে এবং সমাজের মানুষের উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাছাড়া এর আরেকটি সুবিধা হলো জনগণের কাছে আপনার কোম্পানি খুব দ্রুত পরিচিতি পাবে এবং তাদের ইতিবাচক ধারণা থেকেই আপনার কোম্পানির প্রতি তাদের আস্থা অর্জনও সহজ হবে। এভাবে দ্রুতই আপনার কোম্পানির প্রচার ও প্রসার হবে।
তাই আপনি যদি সত্যিই সফলভাবে টেক ট্যালেন্টদের নিয়ে কাজ করতে চান, তবে কোম্পানির সকল কর্মচারীকে এ ব্যাপারে অবহিত করুন, প্রয়োজনে তাদের সাথে নিয়ে একটি পরিকল্পনা করুন। কারণ এটি কেবল কোম্পানির জনসংযোগ অফিসার বা মানব সম্পদ ব্যবস্থাপকের কাজ নয়। বরং কোম্পানির সবাই মিলে যখন এর জন্য কাজ করবেন, তখনই সকল মেধাবী ও প্রতিভাবানদের সাথে নিয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।
Featured Image: SlideShare