আতলেতিকোর স্বপ্ন ভেঙে ইউরোপ সেরা রিয়াল

আবারও আতলেতিকো মাদ্রিদের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দিল রিয়াল মাদ্রিদ। মিলানে টাইব্রেকারে ৫-৩ গোলে জিতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের একাদশ শিরোপা তুলে নিয়েছে জিনেদিন জিদানের দল।
 
শনিবার রাতে নির্ধারিত সময়ের খেলা ১-১ গোলের সমতায় শেষ হওয়ার পর অতিরিক্ত সময়ে কোনো গোল হয়নি। টাইব্রেকারে হুয়ানফ্রান ছাড়া গোল পেয়েছেন সবাই। শেষ স্পটকিকে রোনালদো গোল করতেই উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন রিয়ালের খেলোয়াড়রা; সঙ্গে মিলানের গ্যালারির অর্ধেক আর টিভির সামনে থাকা মাদ্রিদের অর্ধেক দর্শক। দুই বছর আগেও লিসবনে ‘অল মাদ্রিদ’ ফাইনালে আতলেতিকোর প্রথম শিরোপার স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছিল সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ের দলটি।
 
ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটে একটুর জন্য গোল পায়নি রিয়াল। ডি-বক্সের একটু বাইরে থেকে গ্যারেথ বেলের ফ্রি-কিকে পা ছুঁইয়েছিলেন কাসেমিরো। দারুণ দক্ষতায় বল জালে যাওয়া ঠেকান গোলরক্ষক ইয়ান ওবলাক।
 
 
১৫তম মিনিটে আর ঠেকাতে পারেনি ওবলাক। টনি ক্রুসের ফ্রি-কিক থেকে বেলের হেডে গোলপোস্টের সামনে বল পেয়ে জালে জড়িয়ে দেন রিয়াল অধিনায়ক সের্হিও রামোস।দুই বছর আগের ফাইনালে একই প্রতিপক্ষের হৃদয় ভেঙেছিলেন রামোস। যোগ করা সময়ে তার গোলেই সমতা ফেরায় ম্যাচটি হারতে বসা রিয়াল। ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে গড়ালে ৪-১ গোলে জিতে দশম শিরোপা ঘরে তোলে রিয়াল। সেই ফাইনালের পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এই প্রথম গোল পেলেন রামোস।
 
গোল খেয়ে আক্রমণে বেশি মনোযোগী হলেও প্রথমার্ধে উল্লেখযোগ্য কোনো সুযোগই তৈরি করতে পারেনি আতলেতিকো।
 
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই পেনাল্টি থেকে গোলের সুযোগ হারায় আতলেতিকো। ডি-বক্সে পেপে ফের্নান্দো তরেসকে ফাউল করলে স্পট-কিকের নির্দেশ দিয়েছিলেন রেফারি। গ্রিজমানের শট লাগে ক্রসবারের মাঝে।
 
৫৫তম মিনিটে সমতা ফেরানোর সহজ সুযোগ হারান স্তেফান সাভিচ। ছয় গজ দূর থেকে পোস্টের বাইরে দিয়ে মারেন মন্টেনেগ্রোর এই ডিফেন্ডার।
 
৭১তম মিনিটে বল নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়া বেনজেমার শট ফিরিয়ে আতলেতিকোকে ম্যাচে রাখেন ওবলাক।
 
 
৭৯তম মিনিটে রোনালদোর শট ওবলাক রুখে দেওয়ার পর বেলের শট গোললাইন থেকে ফেরান সাভিচ। পরক্ষণেই আক্রমণে উঠে সমতা ফেরায় আতলেতিকো। ডান দিকে হুয়ানফ্রানের ক্রসে খুব কাছ থেকে বল জালে জড়িয়ে দেন বিরতির পর বদলি হিসেবে নামা ইয়ানিক কারাসকো।চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আতলেতিকোর হয়ে প্রথম গোল পেলেন বেলজিয়ামের এই উইঙ্গার। দুই বছর আগের ফাইনালের মতো ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
 
সতর্ক খেলা দুই দলের কেউই ভালো কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি বাড়তি এই ত্রিশ মিনিটে। শেষ দিকে রিয়াল মাদ্রিদের লুকাস ভাসকেস ফাঁকায় বল পেয়েছিলেন। তবে শট নিতে দেরি করায় সুযোগটা কাজে লাগতে পারেননি বদলি এই খেলোয়াড়।
 
 
 
তবে টাইব্রেকারে প্রথম শটে ঠাণ্ডা মাথায় ডান কোণা দিয়ে বল জালে পাঠান ভাসকেস। আতলেতিকোর প্রথম শট নিতে এসে এবার গ্রিজমান কোনো ভুল করেননি। বাঁ দিক দিয়ে কেইলর নাভাসকে ফাঁকি দেন তিনি।রিয়ালের দ্বিতীয় শটে লক্ষ্যভেদ করেন মার্সেলো। আতলেতিকো অধিনায়ক গাবি জোরালো শটে টাইব্রেকারের স্কোর ২-২ করেন।
 
রিয়ালের তৃতীয় শট নিতে আসা বেল কোনো ভুল করেননি। সাউল নিগেসও গোল করে স্কোর ৩-৩ করেন।
 
 
 
রামোস চতুর্থ শটটি ঠাণ্ডা মাথায় জালে পাঠালেও পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা আতলেতিকোর হুয়ানফ্রান পোস্টে মারেন। রোনালদো স্নায়ুর চাপে ভেঙে না পড়ে রিয়ালকে এনে দেন একাদশ শিরোপা।এ মৌসুমে ঘরোয়া কোনো টুর্নামেন্টে শিরোপা না জেতা রিয়ালকে কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম বছরেই মৌসুমের সবচেয়ে বড় শিরোপাটি জেতালেন জিদান।
 
এই জয়ে ইউরোপের সিংহাসন পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি সান সিরোয় হারের গেরোও কাটালো রিয়াল। মিলানের এই মাঠে আগের ১৪ ম্যাচে কোনো জয় ছিল না তাদের।
 
Source: bdnews24
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

মিলানে আজ এক, না এগারো?

0

সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে অনুমোদিত দোকানে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, গ্যারেথ বেল, জিনেদিন জিদানদের যে জার্সি বিক্রি হচ্ছে, সেগুলোর সামনের দিকে অনেক আগেই থেকেই লেখা হয়ে গেছে, ‘ফাইনাল মিলানো ২০১৬, স্তাদিও সান সিরো ২৮ মে
ভিসেন্তে ক্যালদেরনও কি বসে আছে? সেখানে স্টেডিয়ামের পাশে পার্ক করে রাখা প্রায় সব গাড়িতেই শোভা পাচ্ছে মিলানে যাওয়ার বিমান টিকিট, থাকার ব্যবস্থার অনেক প্যাকেজ


মাদ্রিদের দুই ক্লাবেই উৎসবের রং লেগেছে বেশ ভালোভাবে। সেটিই তো স্বাভাবিক। মাদ্রিদের দুই ক্লাব রিয়াল অ্যাটলেটিকো আজ নামছে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ শিরোপার লড়াইয়ে। মিলানে আজ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল শেষে উচ্ছ্বাসে ভাসবে কারা?
মাদ্রিদের রাস্তা ধরে গেলে দুই ক্লাবের মধ্যে মাত্র ১০ কিলোমিটারের ব্যবধান। ট্রফি ক্যাবিনেটেও চ্যাম্পিয়নস লিগের সংখ্যায় ব্যবধান একই১০! রিয়াল যেখানে ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্বের এই প্রতিযোগিতা জিতেছে সবচেয়ে বেশি ১০ বার, অ্যাটলেটিকোর সেখানে শূন্যতার হাহাকার। স্মৃতি বলতে সম্বল শুধু ১৯৭৪ ২০১৪ ফাইনালে খেলা। আজ কার দিকে মুখ ফিরে তাকাবে ট্রফিটা? রিয়াল নিজেদের আরও এক ধাপ ওপরে তুলে নিয়ে জিতবেউনডেসিমা’? নাকি অ্যাটলেটিকো করবে প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপাপ্রিমেরাজয়ের উচ্ছ্বাস?
চ্যাম্পিয়নস লিগে মাদ্রিদই একমাত্র শহর, যেটির দুটি ক্লাব ফাইনালে মুখোমুখি। দুই বছর আগে লিসবনেও প্রথমবার মুখোমুখি হয়েছিল রিয়ালঅ্যাটলেটিকো, আজ দ্বিতীয়বার। কিন্তু মাঠে নামার পর দুই দলের মধ্যে প্রতিবেশীসুলভ ভালো লাগাটা কি আর থাকবে? নামেই শুধু একই শহরের ক্লাব, না হলে রিয়াল অ্যাটলেটিকোর মধ্যে ইতিহাসঐতিহ্যে বিস্তর ব্যবধান। ট্রফি ক্যাবিনেটের কথা তো আগেই বলা হলো। আভিজাত্যের পাশাপাশি রিয়াল ঐতিহ্যেও বনেদি৷ তুলনায় অ্যাটলেটিকো ফুটবলের মধ্যবিত্ত সমাজের প্রতিনিধি। ভালোবেসে সমর্থকেরা ডাকেলস কোলচোনেরোস’ (তোশকের কারিগর) নামে, নামটাই বলে দিচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষের ক্লাব এটি
তবে গত পাঁচ বছরে তফাতটা অনেক কমে এসেছে। কমিয়ে দিয়েছেন ডিয়েগো সিমিওনে। কম বাজেটের ক্লাব, প্রতিবছর তারকারা ক্লাব ছেড়ে যাচ্ছে, তবু দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রবল অনুরাগেই এগিয়ে নিচ্ছেন ক্লাবটিকে। স্প্যানিশ লিগে বার্সেলোনা রিয়াল মাদ্রিদেরদ্বৈতাধিপত্যভেঙে দিয়েছেন। চ্যাম্পিয়নস লিগেও টানা তিন বছরের মধ্যে দ্বিতীয় ফাইনাল খেলছে অ্যাটলেটিকো
দুই বছর আগে লিসবন থেকে ফিরতে হয়েছিল হতাশা নিয়ে, আজ নিশ্চয়ইপ্রতিশোধনিতে চাইবে অ্যাটলেটিকো। সিমিওনে যদিও এই শব্দটাই ব্যবহার করতে রাজি নন, ‘প্রতিশোধ বাজে একটা শব্দ। কারণ, এটা আমাদের হার বাজে সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।তাঁর ভাবনায় বরং সর্বশেষ দুই রাউন্ডের সুখস্মৃতি, ‘আমরা এরই মধ্যে বিশ্বের সেরা তিনটি ক্লাবের দুটিকে (বার্সেলোনা বায়ার্ন মিউনিখ) হারিয়েছি, ফাইনালে তৃতীয় দলটির সঙ্গে খেলব।সিমিওনের প্রেরণা হতে পারে রেকর্ডও, ২০১৪ ফাইনালের পর রিয়ালের সঙ্গে সর্বশেষ ১০ ম্যাচে মাত্র একবার হেরেছে তাঁর দল


শুধু সিমিওনের কথা বললে জিনেদিন জিদানকেও প্রাপ্য সম্মানটা দেওয়া হয় না। তাঁর অর্জনই বা কম কিসে! জানুয়ারিতে ফ্রেঞ্চ কিংবদন্তি যখন রিয়ালের দায়িত্ব নেন, রোনালদোবেলদের মনে হচ্ছিল যেন বিচ্ছিন্ন একেকটি দ্বীপ। সেখান থেকে মাত্র পাঁচ মাসে রিয়ালকে একই তরঙ্গে বেঁধেছেন, নিয়ে এসেছেন মৌসুমের সবচেয়ে বড় শিরোপার দুয়ারে। কে বলবে, এই প্রথম কোনো ক্লাবের মূল দলের দায়িত্ব নিয়েছেন জিজু!


রূপকথার মতো শুরুটাকে আজ কিংবদন্তিতে রূপ দেওয়ার অপেক্ষায় জিদানও। এএফপি
টুর্নামেন্টে দুই দল
রিয়াল মাদ্রিদ অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ
২৭ গোল ১৬
১১ বিপক্ষে গোল
৫৪% গড় বল দখল ৪৬%
৮৬ গোলে শট ৭২
১৮ হলুদ কার্ড ২১
লাল কার্ড
রোনালদো (১৬) সর্বোচ্চ গোলদাতা গ্রিজমান ()

সবাই শুধু ওদের রক্ষণ নিয়ে কথা বলে। কিন্তু ওরা একটা পূর্ণাঙ্গ দল, বল পায়েও সমস্যা তৈরি করতে পারে
জিনেদিন জিদান
ফাইনালের প্রতিপক্ষ নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ কোচ
ফাইনালে খেলাই অসাধারণ একটা ব্যাপার। তবে জয়ের চেয়ে ভালো কিছু আর হতে পারে না
ডিয়েগো সিমিওনে
প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপার স্বপ্নে বিভোর অ্যাটলেটিকো কোচ

Courtesy: Prothom Alo