ইতিহাস বিখ্যাত ৫ গোয়েন্দার গল্প

Source: antibody.tv

গোয়েন্দা উপন্যাসের কথা তুললেই মাথায় সর্বপ্রথমে চলে আসে শার্লক হোমস, ফেলুদার কথা। আরো আছে ব্যোমকেশ আর কাকাবাবু। প্রতিবার বই মেলায় বের হয় অসংখ্য মৌলিক গোয়েন্দা উপন্যাস। যার পাতায় পাতায় লুকিয়ে থাকে অসংখ্য টুইস্ট আর বিভিন্ন আকর্ষণ। বিংশ শতাব্দী থেকে গোয়েন্দা উপন্যাসের চাহিদা বেড়ে গেলেও প্রথম এর দেখা মিলে আঠারোশো শতকে চীন দেশে। তবে সত্যিকারের গোয়েন্দা উপন্যাস দেখা মিলেছিলো এগার এলান পো আর আর্থার কোনান ডয়েলের হাত ধরে। এলান পো এর লেখা “দ্য মার্ডার ইন দ্য রু মর্গ”, “দ্য মিস্টিরি অফ মেরি রোগেট”, “দ্য ফার্ষ্ট ডিটেকটিভ”, “দ্য ম্যান অফ দ্য ক্রাউড” সৃষ্টি করেছে অসংখ্য ডিটেকটিভ উপন্যাস প্রেমী। তবে থেমে থাকেননি আর্থার কোনান ডয়েল। তার সৃষ্ট চরিত্র শার্লক হোমস বিশ্বের সকল ধরনের বইপ্রেমীদের কাছে পরিচিত।

তবে বাস্তবতা আর ফিকশন এক নয়। গল্পে ডিটেকটিভের ভাগ্যে কী ঘটবে এটা লেখকের হাতের ইশারায় ঘটলেও বাস্তবে গোয়েন্দাদের নিজেকেই নিজের ভাগ্য গড়ে নিতে হয়। তাদের প্রখর বুদ্ধিমত্তা আর বিচক্ষণতার উপর নির্ভর করে অপরাধী বিচারের। আর তেমন প্রখর বুদ্ধিমত্তার জোরে ইতিহাসে জায়গা করে নেওয়া কয়েকজন গোয়েন্দাদের নিয়ে এই ফিচার।

১. ডেভ তোশি

Source: SFGate

আপনি যদি জোডিয়াক কেসের নাম শুনে থাকেন তাহলে অবশ্যই ডেভ তোশির নাম শুনে থাকবেন। বিখ্যাত সিরিয়াল কিলার ডুডলার কেসেও তিনি তদন্ত করেছিলেন। যে দুইটি কেস এখনো আন সলভ কেসের মধ্যে রয়েছে। ১৯৬৮ সালের ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী বছরের অক্টোবর পর্যন্ত জোডিয়াক কিলার সানফ্রান্সিসকোর মাটিতে দাপিয়ে বেড়িয়েছিলো। সাইফার কোড সংবলিত অদ্ভুত চিঠি, পুলিশ থেকে সাধারণ জনগণকে হুমকি, স্কুলবাচ্চাদের টার্গেট করার কারনে জোডিয়াক কিলার ইতিহাসের কুখ্যাত সিরিয়াল কিলারদের কাতারে ঠাই পেয়েছে।

Source: SFGate

সানফ্রান্সিসকো পুলিশ ডিপার্টমেন্টের অন্যান্য গোয়েন্দাদের সাথে নিয়ে জোডিয়াক কিলারের প্রধান তদন্তকারী হিসাবে ডেভ তোশি এক বছর খুনিকে অনুসরণ করে গিয়েছিলেন। দুঃখজনক হচ্ছে শেষ পর্যন্ত খুনিকে ধরা যায়নি। তবে আর্থার লেই এলেন নামে একজনকে তিনি গ্রেফতার করেছিলেন। যাকে তিনি বলেছিলেন, “সবথেকে বেশি সন্দেহভাজন সাসপেক্ট”। তবে আর্থার যে জোডিয়াক কিলার এটা প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। জোডিয়াক কেসে তোশি ব্যর্থ হলেও তার অসাধারণ তদন্ত আর বিচক্ষণতার জন্য তিনি হয়েছিলেন বিখ্যাত। এছাড়া ১৯৭৫ এর দিকে দ্যা জেব্রা মার্ডার কেসেও তিনি তদন্ত করেছিলেন।

তোশি ১৯৫২ সালে সানফ্রান্সিসকোর পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ইন্সপেক্টর হিসাবে যোগদান করেছিলেন। তার সুদর্শন ড্রেসআপ, তদন্তে অতিসর্তকতা আর পিস্তল দ্রুত ড্র করার ক্ষমতা ছিলো সবার মুখে মুখে। ১৯৮৩ সনে ডেভ তোশি অবসর গ্রহণ করেন।

২. জনি ব্রোদেরিক

Johnny Broderick; 2nd From Left Side.
Source: NYPD

১৯২৩ সাল থেকে ১৯৪৭ সন পর্যন্ত জনি ব্রোদেরিক নিউইয়র্কের পুলিশ ডিপার্টমেন্টে পেট্রলম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ম্যানহ্যাটান গ্যাসহাউসের এক আইরিশ-আমেরিকান পরিবারে জনির জন্ম হয়েছিলো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নেভিতে চাকরির পর বাড়ি ফিরে সাধারণ শ্রমিক হিসাবে তিনি কাজ করতেন। সেখান থেকে পরবর্তীতে আমেরিকান ফেডারেশন অফ লেবারের প্রতিষ্ঠাতা স্যামুয়েল গমপার্সের বডিগার্ডের দায়িত্ব নেন। এরপর দমকলকর্মী হিসাবে সল্প সময় কাজের পর ১৯২৩ সালে যোগদান করেন পুলিশে পেট্রলম্যান হিসাবে।

পুলিশ ফোর্সে থাকাকালীন সময়ে তিনি অসংখ্য মারদাঙ্গায় সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছিলেন। এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছিলো যে, নিউইয়র্কের প্রায় প্রতিটি মাফিয়াদের সদস্যের সাথে তার হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছিলো। এমনকি নিউইয়র্কের কুখ্যাত মাফিয়া সম্রাট জ্যাক ডায়মন্ডও তার হাত থেকে রক্ষা পায়নি। জ্যাককে আচ্ছামত শায়েস্তার পর তোশি তাকে ছুঁড়ে মেরেছিলেন ময়লার ডাস্টবিনে। নিউইয়র্কের অপরাধ কর্মকান্ড বন্ধ করার জন্য তার ছিলো প্রবল চেষ্টা। যার কারণে সেখানকার মানুষের মনে একটি ভালোবাসার স্থান তিনি তৈরি করে নিয়েছিলেন।

৩. ইগনাশিউস পলাকি

Source: ScienceBlogs

ইংলান্ডের রানী ভিক্টোরিয়ার সর্বপ্রথম গোয়েন্দা ছিলো ইগনাশিউস পলাকি। তদন্তে অসাধারণ নৈপুণ্যের কারণে ১৮৬০ থেকে ‘৭০ সাল পর্যন্ত পলাকি অসাধারণ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনি এতটাই দক্ষতা অর্জন করেছিলেন যে, স্কটল্যান্ডে ইয়ার্ডের গোয়েন্দারা প্রায়শই তার শরনাপন্ন হতো। অপরাধ দমনমূলক কাজের ক্ষেত্রে তার দৃঢ় আগ্রহের সাথে সাথে ছিলো ছয়টি ভাষার উপরে অগাধ জ্ঞান। যা তাকে দুর্দান্ত গোয়েন্দা বানাতে সহায়তা করেছিলো। তার বিভিন্ন কেসের মধ্যে সবথেকে বিখ্যাত হয়েছিলো ১৮৬০ সালের “রোড হাউস মার্ডার” নামের কেসটি। যেটাকে নিয়ে কেট সামারস্কেল লিখে ফেলেন “দ্য সাসপিশন অফ মিস্টার হুইচার”। ১৮৮০ সালের দিকে এই বিখ্যাত গোয়েন্দা অবসর গ্রহণ করেন।

৪. উইলিয়াম জে. বার্নস

Source: Eskify

আমেরিকান শার্লক হোমস নামে তাকে ডাকা হতো। আর তাকে এই উপাধী শার্লক হোমসের স্রষ্টা সয়ং স্যার আর্থার কোনান ডয়েল দিয়েছিলেন। সিক্রেট সার্ভিস আর ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের ডিরেক্টর হিসাবে কাজ করলেও, বার্নস তার খ্যাতি অর্জন করেছিলো প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর হিসাবে। বিংশ শতকের শুরুর দিকে তিনি উইলিয়াম ইন্টারন্যাশনাল ডিটেকটিভ এজেন্সি খুলেছিলেন।

Source: Wallwritings

তার বিখ্যাত কয়েকটি কেসের মধ্যে রয়েছে লস এঞ্জেলেসের টাইমস বিল্ডিয়ের বোম্বিংয়ের ঘটনাটি। সেই কেসের প্রধান গোয়েন্দা হিসাবে তাকে ডাকা হয়েছিলো। এক বছরের মাথায় তিনি জন জে এবং জেমস বি ম্যাকনামারাকে বোম্বিংয়ের অপরাধে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। তার অর্ধযুগ পরে ১৯২০ সালে তাকে আরেকটি অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদের তদন্তের জন্য ডাকা হয়। ১৯২০ সালের ঘটে যাওয়া ওয়াল স্টিটের সেই বোম্বিংয়ে নিহত হয়েছিলো ৩৮ জন আর আহত চার শতাধিকেরও বেশি। বার্নস খুব দ্রুতই ঘটনাস্থলে পৌছান আর খুব সামান্য পাওয়া এভিডেন্স থেকে তিনি নিশ্চিত করেন ঘটনা কমিউনিস্ট পক্ষের সদস্য দ্বারা সংগঠিত। যদিও শেষ পর্যন্ত আসল কালপ্রিটতে ধরা সম্ভব হয়নি।

৫. উইলিয়ামস জে. ফ্লিন

Source: Quora

উইলিয়ামস জে. বার্নস এবং উইলিয়ামস জে. ফ্লিনের প্রথম ও মধ্য নামটাই শুধু মিল এমনটা নয়। তারা দেখতেও প্রায় একরকম। দুইজনই ছিলেন বৃহদাকার ভুড়ি নিয়ে শক্তপোক্ত শরীরের অধীকারি, আর সাথে ছিলো প্রেসিডেন্ট থিউডোর রুসভেল্টের মত তা দেয়া মোচ। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে দুইজন ব্যক্তিই তাদের ল এনফোর্সমেন্ট ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন প্রেসিডেন্ট থিউডোর রুজভেল্টের আন্ডারে থাকা ইউনাইটেড স্টেট সিক্রেট সার্ভিসের প্রাইভেট ইনভেস্টিগেট হিসাবে।

১৯২৪ সালে ফ্লিন সিক্রেট সার্ভিসের চাকরি ছাড়ার পর নিউইয়র্ক শহরের ল’ম্যান হিসাবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে যখন এনওয়াইপিডির ডেপুটি কমিশনার হিসাবে যোগদান করেন। এনওয়াইপিডিতে যোগদানের পর তিনি সেখানকার গোয়েন্দা ব্যুরোকে নতুন করে সংগঠন করেন। তার পুনঃসংগঠিত গোয়েন্দা সংস্থা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড এবং সিক্রেট সার্ভিসকে সাথে নিয়ে তখনকার মাফিয়া সম্রাট জিউসেপ মোরেলোকে থামাতে সক্ষম হয়েছিলো।

এছাড়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রেলওয়ে সিক্রেট সার্ভিসের প্রধান হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৯৮ সালের অক্টোবরের ১৪ তারিখে তিনি মৃত্যবরণ করেন।

সোর্স ঃ

  • bloomberg
  • Carnegie endowment
  • FBI
  • Police in time of change by John J. Broderick
  • San Francisco Police Department

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *