কীভাবে নিজেকে আরও স্মার্ট ও বুদ্ধিমান করে গড়ে তুলবেন

কেউ জন্ম থেকেই বুদ্ধিমত্তা নিয়ে জন্মায় না, সময়ের সাথে তা অর্জিত হয়। আর আপনি একটু পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে আরও স্মার্ট ও বুদ্ধিমান করে তুলতে পারেন। এজন্য পাজল সলভ এবং সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে মস্তিষ্কের ব্যায়াম করতে পারেন; আরও নানা কাজের মাধ্যমে নিজের অভিজ্ঞতা বাড়ান। বুদ্ধিমত্তা বাড়ানো কঠিন মনে হলেও যদি আপনার দৃঢ় ইচ্ছা থাকে তবে আপনি অবশ্যই তা পারবেন।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

নিচে মস্তিষ্ক খাটিয়ে বুদ্ধিমত্তা বাড়ানোর কিছু কৌশল তুলে ধরা হল।

ক)মস্তিষ্ক খাটান:

১. প্রতিদিন পাজল সলভ করুন:   পাজল সলভের মাধ্যমে মস্তিষ্ক সচল থাকে এবং মানসিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। পাজলের একটি ভাল উদাহরণ হচ্ছে সুডোকু। এটি আপনার চিন্তার পরিধি বৃদ্ধি করবে। মনে রাখবেন, মস্তিষ্ক এক ধরনের পেশি, একে সবল রাখতে হলে আপনাকে এর জন্য পরিশ্রম করতেই হবে। তাই প্রতিদিনের সংবাদপত্র, বই, ম্যাগাজিন, এমনকি অনলাইন – যেখানে পাবেন তা সমাধান করুন। (নিচের সুডোকুটি দিয়ে এখনই শুরু করতে পারেন)।

{ "slotId": "", "unitType": "in-article", "pubId": "pub-6767816662210766" }

২. যেকোনো শৈল্পিক কাজ করুন:   ছবি  আঁকা, পেইন্টিং, ভাস্কর্য তৈরি সহ আরও নানা ধরনের শৈল্পিক কাজ আপনার সৃজনশীল ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে। এতে করে আপনার যেকোনো সমস্যা সমাধানের দক্ষতাও বাড়বে। নানা ধরনের সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে আপনার মস্তিষ্ক প্রচলিত গৎবাঁধা চিন্তার বাইরে গিয়ে ভাবতে শিখবে, এবং আরও দ্রুত সমস্যা সমাধানের দক্ষতাও বাড়বে।

৩. অঙ্ক কষুন:   মানসাঙ্ক ও রকেট ম্যাথ শিখুন। এর জন্য যে জটিল চিন্তার প্রয়োজন, তা আপনার মস্তিষ্কের নিউরনের সংযোগ আরও উন্নত করবে। এতে করে আপনি আরও ভালো ও দ্রুত চিন্তা করতে পারবেন।

৪. লেখালেখি করুন:   কোনো গল্প বা কবিতা লেখার মাধ্যমে আপনার মস্তিষ্ক কোনো নতুন পরিবেশ, সেই অবস্থার উপযোগী কথোপকথন, চরিত্র সম্পর্কে ভাবতে বাধ্য করবে। এর মাধ্যমে আপনি দ্রুত নানা তথ্য প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে দক্ষ হয়ে উঠবেন। ভাষার এরূপ সৃজনশীল চর্চার মাধ্যমে আপনি আপনার শব্দভাণ্ডার ও বাচনভঙ্গিরও উন্নতি সাধন করতে পারেন। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে যে, আপনার কল্পনাশক্তিকে ব্যবহার করে আপনি যে লেখনি তৈরি করলেন, এটি সবার কাছে আপনার চিন্তাধারার প্রকাশ ঘটাতে পারবেন।

খ)জনসংযোগ বাড়ান:

১. সবার সাথে সহজে মিশুন:   সবার সাথে সহজে মেশার উপায় হচ্ছে, সবাই যে ব্যাপারে কথা বলতে আগ্ৰহী সে ব্যাপারে কথা বলা। আপনি এমন ব্যাপারে কারো সাথে গল্প করছেন যে ব্যাপারে তিনি কথা বলতে আগ্রহী নন বা তা তার বোধগম্য নয়, তা আপনাকে স্মার্ট করে তুলবে না। বরং জটিল কোনো বিষয়কে সহজভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করুন এবং সহজ ও পরিষ্কার ভাষায় কথা বলুন।

২. অন্যের মতামত মনোযোগ দিয়ে শুনুন:   সবার সাথে আপনি সহমত নাও হতে পারেন, কিন্তু মনে রাখবেন, প্রত্যেকের কাছ থেকেই শেখার কিছু না কিছু আছে। উদার মানসিকতার অধিকারী হোন। প্রশ্ন করুন; যত প্রশ্ন করবেন তত আপনার চারপাশে সম্পর্কে জানবেন। এবং প্রশ্ন করার মাধ্যমে আপনি আপনাকে পুনঃমূল্যায়ন করতে পারবেন এবং অন্যের ভুলগুলো ধরতে পারবেন।

 

৩. সবার প্রিয়পাত্র হওয়ার চেষ্টা করুন:   যখন আপনি উদার মানসিকতা পোষণ করবেন তখন আপনার মধ্যে এক ধরনের পূর্ণতা প্রাপ্তি হবে, আপনার বুদ্ধিমত্তা বাড়বে এবং আপনি অন্যের বিশ্বাস অর্জন করতে পারবেন। অন্যের বিশ্বস্ততা অর্জনের দ্বারা আপনি তার জীবন এবং অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে পারবেন।মনে রাখবেন, সবার কাছ থেকেই আপনার কিছু না কিছু শেখার আছে। আপনি এর মাধ্যমে দারুন কিছু শিখতে ও পারেন।

গ) নিজেকে গড়ে তুলুন:

১. সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে খোঁজ রাখুন:   শুধুমাত্র স্কুল-কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি থাকলেই কেউ পুরোপুরি শিক্ষিত হয় না। এর জন্য আপনাকে আপনার চারপাশ সম্পর্কেও জানতে হবে। কারণ সত্যিকারের বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা সবসময়ই তাদের চারপাশ সম্পর্কে সচেতন। তাই মনে মনে নিজেকে তৈরি করুন, নিজের প্রতি নিজেই প্রতিজ্ঞা করুন। ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা, আকর্ষণীয় কোনো তথ্য, অনুপ্রেরণা মূলক কোনো উক্তি, নতুন কোনো বই বা মুক্তিপ্রাপ্ত কোনো চলচ্চিত্র, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ইত্যাদি সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর রাখুন। শুধু খোঁজ রাখলেই চলবে না বরং এদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে তা মনে রাখার চেষ্টা করুন। যত বেশি আপনি ভাববেন, তত বেশি তা আপনার মনে থাকবে। কারণ যেকোনো সময় যেকোনো তথ্য কাজে আসতে পারে। আর সঠিক সময়ে সঠিক তথ্যটি উপস্থাপন করতে পারলেই আপনি স্মার্ট বলে বিবেচিত হবেন।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

শুধু তাই নয়, এসব সাম্প্রতিক ঘটনা আপনার মধ্যে এক ধরনের সচেতনতা তৈরি করবে যা আপনাকে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সাহায্য করবে।

২. নিজের শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ করুন:   চেষ্টা করুন প্রতিদিন নতুন কিছু শব্দ শিখতে। এজন্য আপনি অভিধান বা বিভিন্ন অনলাইন উৎসের সহায়তা নিতে পারেন। বিভিন্ন ম্যাগাজিনে প্রকাশিত নানা প্রবন্ধ থেকেও আপনি নতুন শব্দ শেখার কাজটি চালিয়ে যেতে পারেন। তবে অবশ্যই সবসময় অভিধান অনুসরণ করবেন। এভাবে নিয়মিত চর্চা করলে বছর শেষে আপনার কাছে থাকবে এক সমৃদ্ধ শব্দভাণ্ডার, যা আপনার বুদ্ধিমত্তার উপরেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

৩. বিভিন্ন ধরনের বই পড়ুন:   নিজেকে আরও বুদ্ধিমান ও স্মার্ট করে তোলার গোপন রহস্য হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে বই পড়া। বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা প্রতিদিন বই পড়েন এবং সেই অভ্যাস বজায় রাখেন।  সব বই যে আপনার ভালো লাগবে এমনটা কখনও ভাববেন না। কিছু বই অবশ্যই বিরক্তিকর লাগবে, তবুও সেই বইটি সম্পূর্ণ শেষ করুন। এরকম বিভিন্ন বিষয়ের বই পড়লে আপনি আপনার চিন্তাধারার প্রসার ঘটাতে পারবেন এবং নতুন ধারনা ও অভিজ্ঞতাও অর্জন করবেন। তাই চেষ্টা করুন নির্দিষ্ট কোনো প্রকারের মধ্যে আটকে না থেকে বিভিন্ন বিষয়ের বই পড়তে, যেমনটা কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আসার জন্য করতে হয়।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

ঘ)কিছু ভালো অভ্যাস গড়ে তুলুন:

১. প্রায়ই প্রশ্ন করুন:   স্মার্ট হতে হলে অবশ্যই আপনাকে আপনার চারপাশ সম্পর্কে জানতে হবে এবং জানার জন্য আপনাকে প্রশ্ন করতে হবে। কোনো ব্যাপার সম্পর্কে জানলেই সেটি কেন এবং কিভাবে ঘটল সেটিও জেনে নিন। সবাই সব ব্যপারে অবগত নয়, তাই জানার জন্য অবশ্যই সংকোচ দূরে রেখে প্রশ্ন করতে হবে। এটিকে অভ্যাসে পরিণত করুন।

২. সবসময়ই নতুন কিছু শিখুন:   ইন্টারনেটের কল্যাণে পুরো পৃথিবী আজ আমাদের হাতের মুঠোয়। তাই আপনি চাইলেই যখন তখন নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে ও শিখতে পারেন। যেকোনো বিখ্যাত বই, গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ, জনপ্রিয় কিছু চলচ্চিত্র, এমনকি ইউটিউবে ভিডিও দেখেও আপনি অনেক কিছু শিখতে পারেন। মনে রাখবেন, যতবেশি শিখবেন, ততবেশি জানবেন।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

৩. প্রতি সপ্তাহে একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করুন:   গত সপ্তাহে কি কি কাজ করেছিলেন তা নোট করুন। এরপর সেই অনুযায়ী এবার পরবর্তী সপ্তাহে কি কি কাজ করবেন তা নির্ধারণ করুন। আপনার নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে চেষ্টা করুন। আর এজন্য আপনাকে গোছানোও হতে হবে। এলোমেলোভাবে কাজ করলে আপনি কখনই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন না। তাই কখন কোন কাজ করবেন তা আগে নির্ধারণ করুন এবং সে অনুযায়ী আগাতে থাকুন। এরকম গোছালোভাবে কাজ করতে থাকলে একসময় আপনি খেয়াল করবেন, আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে গেছেন।

৪. পড়াশোনার প্রতি সময় দিন:   নিজেকে সুশিক্ষিত করে তোলার জন্য আপনাকে অবশ্যই এর পেছনে সময় দিতে হবে, পাশাপাশি একান্ত চেষ্টা থাকাও জরুরি। রাতারাতি এটি সম্ভব নয়, এর জন্য আপনাকে প্রচুর সময় দিতে হবে। এর মাধ্যমেও আপনি আরও নতুন নতুন বিষয় জানতে পারবেন।

ঙ)নিজের বিচরণক্ষেত্র বাড়ান:

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

১. নতুন কোনো ভাষা শিখুন:   চেষ্টা করুন নতুন কোনো ভাষা শেখার। আপনি আপনার খুশিমত যেকোনো ভাষা শিখতে পারেন। মাতৃভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষা আপনার জানা থাকলে তখন আপনি এ দুই ভাষার মধ্যে পার্থক্য করতে পারবেন। একইসাথে সেই ভাষা এবং তৎসংশ্লিষ্ট সংস্কৃতি সম্পর্কেও জানতে পারবেন, তারা কীভাবে চিন্তা করে তা উপলব্ধি করতে পারবেন। সে ভাষার একজন বন্ধু পেলে এ ব্যাপারটি তো একদমই সহজ হয়ে যায়। সবসময় চেষ্টা করুন সে ভাষাটিকে হৃদয়ঙ্গম করার এবং ইতিবাচক ধারণা পোষণ করার।

২. নতুন নতুন জায়গায় ভ্রমণ করুন:   কোনো বিখ্যাত স্থান, দর্শনীয় স্থান, এমনকি তা হতে পারে নতুন কোনো দেশ — যেসব জায়গায় আপনি আগে কখনো যাননি, সময় করে সেসব জায়গা ঘুরে আসুন। নতুন জায়গা, নতুন দেশ, নতুন পরিবেশ, নতুন সংস্কৃতি এবং তাদের চালচলন, দৈনন্দিন জীবনে ভিন্নতা আপনার চিন্তার পরিধিকে আরও বিস্তৃত করবে এবং উদার মানসিকতার অধিকারী করে তুলবে।

আশা করি এতক্ষণ ধৈর্য্য সহকারে পুরো লেখাটি পড়েছেন। এখন কাজ শুরু করে দিন। উপরোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করে এগোতে থাকলে আপনি অবশ্যই পারবেন বছর শেষে আরও স্মার্ট এবং আরও বুদ্ধিমান একজন মানুষে পরিণত হতে। এবার সিদ্ধান্ত আপনার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *