কেমন দল নিয়ে মাঠে নামছে পোল্যান্ড !!!

Image result for poland football team

ইউরোপে ফুটবলে অন্যতম একটি ফুটবল সমৃদ্ধ দেশ পোল্যান্ড। পোল্যান্ড ফুটবল ফেডারেশনের নাম “পোলিশ ফুটবল এসোসিয়েশন”। এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল  ২৫ জুন ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে। আর ফিফা এং উয়েফার অনুমোধন পেয়েছিল যথাক্রমে ১৯২৩ এবং ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে। এটির পূর্ব নাম ছিল পোলিশ ফুটবল ইউনিয়ন। যেটা পূর্বে অস্ট্রিয়া ফুটবলের অংশ হিসেবে ছিল। পোল্যান্ডের জাতীয় স্টোডিয়াম ন্যাশনাল ওয়ারশাও কে নিজেদের হোম ভেন্যু হিসেবে ব্যাবহার করে থাকে তারা। পোল্যান্ড কে “বিয়ালো-জের‍্যোনি” অর্থাৎ “দ্য হোয়াইট এন্ড রেড” অথবা “অরলি” অর্থাৎ “দ্য ইগল” নামে ও ডাকা হয়ে থাকে।
পোল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার কৃতিত্ব আছে মাইকেল জেউলাকৌর। দেশের হয়ে তিনি ১০২ টি ম্যাচ খেলেছেন। আর ৫২ টি গোল করে শীর্য গোলদাতা হলেন বর্তমান অধিনায়ক রবার্ট লেওয়ান্ডস্কি। এর আগে সবচেয়ে বেশি  গোলের মালিক ছিলেন লোডজিমিয়েরজ লুবান্সকি। লুবান্সকি পোল্যান্ডের হয়ে করেছেন ৪৮ টি গোল।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

Related image

পোল্যান্ড প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ ডিসেম্বর হাঙ্গেরির সাথে। হাঙ্গেরির রাজধানী বুধাপেষ্টে ১-০ গোলে নিজেদের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে হারে তারা। পোল্যান্ডের ফুটবলে দসচেয়ে বড় জয় স্যান মারিনোর বিপক্ষে। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের ১ এপ্রিল পোল্যান্ডের কিয়েলসে সান ম্যারিনো কে ১0-0 গোলে হারায় পোল্যান্ড। আবার ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের  ২৬ জুন ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে ডেনমার্কের বিপক্ষে ৮-০ গোলে হেরে যায় পোল্যান্ড। যা কিনা তাদের ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পরাজয়। এছাড়া ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ৪ সেপ্টেম্বর নরওয়ে কে ৯-০ গোলে হারায় পোল্যান্ড। যেটি তাদের ইতিহাসের দ্বিতীয় বড় জয়। এই ম্যাচে অভিষেক হয়েছিল লোডিজিমিয়ের লুবান্সিকির। আর অভিষেকে করেছেন একটি গোল। আর দলের হয়ে ১৯৬৩ থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত ৭৫ টি ম্যাচ খেলেছেন পোল্যান্ডের এক সময়ের সর্বোচ্চ গোলদাতা। পোল্যান্ডের  প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ জয় পায় ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে। সুইডেনের স্টোকহোমে সুইডেন কে ২-১ গোলে হারায় পোল্যান্ড।

Image result for poland football team
পোল্যান্ড ফুটবলের সবেচেয়ে বিখ্যাত ফুটবল দল ছিল ৭০ এর দশকে। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের বিশ্বকাপের বাচাই পর্বে ইংল্যান্ডের ওম্বেলিতে একটি নাটকীয় ড্র করে বিশ্বকাপে কোয়লিফাই করে। সেই বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে উঠেছিল পোল্যান্ড। সেমিফাইনালে তারা জার্মানীর কাছে ১-০ গোলে হেরে যায়। তবে তৃতীয় স্থান নির্ধারণি ম্যাচে ব্রাজিল কে ১-০ গোলে হারিয়ে তৃতীয় হয় পোল্যান্ড। এটিই তাদের বিশ্বকাপে সেরা অর্জন। সেই বিশ্বকাপে স্ট্রাইকার জেগর্জ লাটো ৭ গোল করে গোল্ডেন শু জয় লাভ করে। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দের বিশ্বকাপে ও তৃতীয় স্থান অর্জন করে পোল্যান্ড। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ফ্রান্স ৩-২ গোলে হারায় তারা।
১৯৭২ খ্রিস্টাব্দর মিউনিখে অনুষ্ঠিত গ্রিষ্মকালীন অলম্পিকে স্বর্ণ পদক জয় লাভ করে পোল্যান্ড। আবার ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে মন্ট্রিয়েলে সামার অলিম্পিকে রোপ্য লাভ করে তারা। ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের বার্সেলোনা তে অনুষ্ঠিত অলিম্পুকে ও রোপ্য লাভ করে।উয়েফা ইউরোপিয়ান কাপে পোল্যান্ড প্রথম কোয়ালিফাই করে ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে। আবার ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে ইউক্রেনের সাথে ইউরোর আয়োজক হওয়ায় অটোমেটিক ভাবে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন করে। দুইবার তারা গ্রূপ অর্ব থেকে বাদ পড়ে। ইউরোতে তারা প্রথম জয় পায় ১২ জুন ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে নর্দান আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। পোল্যান্ড সেইবার  কোয়ার্টার ফাইনালে গিয়েছিল, ইউরোতে এটিই পোল্যান্ডের সর্বোচ্চ। ১৭ মে ২০১৮ অনুযায়ী পোল্যান্ডের বর্তমান ফিফা র‍্যাংকিং ১০। সর্বোচ্চ ফিফা র‍্যাংকিং হয়েছিল ২ ,সেটি ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে। আর সর্বনিন্ম হয়েছিল ৫৮; সেটি ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে।

বিশ্বকাপে পোল্যান্ড

{ "slotId": "", "unitType": "in-article", "pubId": "pub-6767816662210766" }


১৯৩৮ ফিফা বিশ্বকাপ। এবারই প্রথম বিশ্বকাপে অংশ নেয় পোল্যান্ড। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে অংশ নেয় ৮ বার। প্রথম বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছিল যুগোশ্লাভিয়া কে হারিয়ে । এই বিশ্বকাপে সরাসরি নকআউট সিস্টেম পোল্যান্ড কে মুখোমুখি হতে হয় ব্রাজিলের। যদিও ব্রাজিল তখন এতট ভয়ংকর ছিল না, যতটা এর পরবর্তী যুগে হয়েছিল। পোল্যান্ড ব্রাজিল ম্যাচটি কে ধরা হয়ে থাকে বিশ্বকাপের ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় একটি ম্যাচ হিসেবে। ম্যাচটি শেষ হয়েছিল ৬-৫ গোলে। অর্থাৎএক ম্যাচেই ১১ গোল। না এটি কোন ট্রাইব্রেকার ছিল না। ম্যাচ শুরুর ১৮ মিনিটেই গোল দেয় ব্রাজিলের লিওনিদাস,  ২৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল পরিশোধ করেন পোল্যাডের ফ্রেড্রিখ ইগন। ২৩ মিনিটে ব্রাজিল কে এগিয়ে দেন রোমেও, ৪৭ মিনিটে ব্যাবধান বাড়ান পেরাসিও। বিরতির পর ৫৩ এবং ৫৯ মিনিটে পোল্যান্ডের পক্ষে দুইটি গোল করে ব্যাবধান কমান উইলমোওস্কি। এবার ৭১মিনিটে ব্রাজিলের পক্ষ থেকে পেরাসিওর আবার গোল। কিছুক্ষন পরেই ৮৯ মিনিটে উইলমোওস্কির আবার গোল। স্কোর দাঁড়ায় ৪-৪। খেলা গড়ায় অতরিক্ত সময়ে। আর অতিরিক্ত সময়ে ব্রাজিলের হয়ে ৯৩ মিনিটে এবং ১০৪ মিনিটে দুইটি গোল করেন। আর ১১৮ তম মিনিটে উইলমোওস্কি নিজের চতুর্থ আর পোল্যান্ডের হয়ে পঞ্চম গোল টি করেন। জিতে যায় ব্রাজিল আর হেরে ও জিতে যায় পোল্যান্ড। পোল্যান্ডের এই চমৎকার ফুটবল প্রসংসা পায় ফুটবল বোদ্ধাদের কাছে।

Image result for poland football team



১৯৭৪ এর বিশ্বকাপে দ্বিতীয় বারের মত আবার বিশ্বকাপে অংশ গ্রহন করে পোল্যান্ড।এই বিশ্বকাপে গ্রূপ ৪ এ আর্জেন্টিনা, ইতালি এবং হাইতির সাথে পড়ে পোল্যান্ড। আর্জেন্টিনা কে ৩-২ গোলে, হাইতি কে ৭-০ গোলে এবং ইতালিকে ২-১ গোলে হারিয়ে গ্রূপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরবর্তী রাউন্ডে যায় পোল্যান্ড। পরবর্তী রাউন্ডে সুইডেন কে ১-০ গোলে, যুগোশ্লাভিয়াকে ২-১ গোলে হারায় তারা। কিন্তু পশ্চিম জার্মানীর কাছে ১-অ গোলে হের যায়। আর তৃতীয়  স্থান নির্ধারনী ম্যাচে ব্রাজিল কে ১-০ গোলে হারায়। আর এটাই ছিল তাদের বিশ্বকাপে সেরা রেজাল্ট। ৭ গোল দিয়ে গোল্ডেন বুট পায় পোল্যান্ডের জেগর্জ লাটো আর সেরা উদীয়মান খেলোয়াড় হয় পোল্যান্ডের উলাদায়স্লাও জমুদা।১৯৭৮ এর বিশ্বকাপে গ্রূপ ২ এ পশ্চিম জার্মানী, তিউনিশিয়া এবং মেক্সিকোর সাথে পড়ে পোল্যান্ড। পশ্চিম জার্মানীর সাথে 0-0 গোলে ড্র, তিউনিশিয়া কে ১-০ গোলে আর মেক্সিকো কে ৩-১ গোলে হারিয়ে গ্রূপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরবর্তী রাউন্ডে যায় পোল্যান্ড। দ্বিতীয় রাউন্ডে আর্জেন্টিনার সাথে ২-০ গোলে আর ব্রাজিলের সাথে ৩-১ গোলে হার। পেরুকে ১-০ গোলে হারালে ও তাদের বিশ্বকাপের সমাপ্তি ঘটে।১৯৮২ বিশ্বকাপে গ্রূপ ১ এ ইতালি, ক্যামেরুন, এবং পেরুর সাথে পড়েছিল পোল্যান্ড। ইতালির সাথে গোল শূন্য ড্র,  ক্যামেরুনের সাথে গোল শূন্য ড্র, আর পেরু কে ৫-১ গোলে হারিয়ে গ্রূপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরবর্তী রাউন্ডে যায় পোল্যান্ড। পরবর্তী রাউন্ডে বেলজিয়াম কে ৩-০ গোলে আর সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে গোল শূন্য ড্র করে নক আউট স্টেজে চলে যায় পোল্যান্ড। আর নক আউট স্টেজে ইতালির সাথে ২-০ গোলে যায় পোল্যান্ড। আর তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ফ্রান্স কে ৩-২ গোলে হারিয়ে বিসশ্বকাপে আবারো তৃতীয় স্থান লাভ করে পোল্যান্ড। ১৯৮৬ এর বিশ্বকাপে মরোক্ক, ইংল্যান্ড এবং পর্তুগালের সাথে গ্রূপ এফ এ পড়ে পোল্যান্ড। মরোক্কর সাথে গোল শূন্য ড্র,ইংল্যান্ডের সাথে ৩-০ গোলে হার আর পর্তুগালের সাথে ১-০ গোলের জয়ে গ্রূপে ৩য় হয় পোল্যান্ড। আর নক আউট স্টেজে ব্রাজিলের কাছে ৪-০ গোলে হেরে বিদায় নেয় পোল্যান্ড। ২০০২ কোরিয়া জাপান বিশ্বকাপে অনেক দিন পর আবার ফিরে আসে পোল্যান্ড। গ্রূপ ডি তে স্বাগতিক দক্ষিণ কোরিয়া, পর্তুগাল, আর যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পড়ে পোল্যান্ড। দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে ২-০ গোলে পর্তুগালের সাথে ৪-০ গোলে হেরে যায় আর যুক্তরাষ্ট্র কে ৩-১ গোলে হারিয়ে গ্রূপে চতুর্থ হয়ে বিদায় নেয় বিশ্বকাপ থেকে।২০০৬ বিশ্বকাপে জার্মানী, ইকুয়েডর এবং কোস্টারিকার সাথে গ্রূপ এ তে পড়ে পোল্যান্ড। গ্রূপ স্টেজে কোস্টারিকাকে ২-১ গোলে হারালেও জার্মানির সাথে ১-০ গোলে , ইকুয়েডরের সাথে ২-০ গোলে হার বিশ্বকাপ থেকে আবারো ছিটকে দেয় তাদের।


২০১৮ বিশ্বকাপে পোল্যান্ড প্রাথমিক দলঃ
পোল্যান্ডের বর্তমান কোচ এডাম নাওয়াল্কা। অধিনায়ক এবং দলের প্রধান তারকা বায়ার্ন মিউনিখ স্ট্রাইকার রবার্ট লেওয়ান্ডস্কি।
পোল্যান্ডের প্রাথমিক দল : বার্তোজ বিয়ালকোস্কি, লুকাজ ফ্যাবিয়ানস্কি, লুকাজ স্কোরুপস্কি, ওজসিয়াখ এসচিজনি (গোলরক্ষক)। জ্যান বেন্ডনারেক, বার্তোজ বেরেসজিনস্কি, থিয়াগো সিওনেক, কামিল গ্লিক, আর্তার জেদরেজেজিক, মার্সিন কামিনস্কি, টমাস কেদজিওরা, মাইকেল পাদজান, লুকাজ পিসজজেক (ডিফেন্ডার)। জ্যাকব ব্লাসজিকোস্কি, পাওয়েল দাউইদোইকজ, প্রিমাইসলস ফ্রাঙ্কোসস্কি, জ্যাক গোরালস্কি , কামিল গ্রোসিকি, ড্যামিয়ান কাদজিওর, গ্রেগোরিজ ক্রিচোইয়াক, রাফাল কুরজাওয়া, ক্যারোল লিনেত্তি, মাসিয়েজ মাকুসজেওয়াস্কি, ক্রিজেস্টফ ম্যাকজিনস্কি , স্লাওমির পেসজকো,ম্যাকিয়েজ রাইবাস, সেবাস্তিয়ান জিমানস্কি , পিওতর জিয়েলিনস্কি, সাইমন জুরোকোস্কি  (মিডফিল্ডার)। দাউদ কুয়োনাকি, রবার্ট লেওয়ানডস্কি, আর্কাদিয়াজ মিলিক, ক্রিজেস্টফ পাইটেক, লুকাজ টিওডোরজকি, কামিল উইলজেক (ফরোয়ার্ড)।
পোল্যান্ডের ফার্মেনশন হতে ৩-৪-২-১ অথবা ৩-৪-৩। এবার পোল্যান্ডের প্রধান তারকা লেওয়ান্ডস্কি আছেন ভালো ফর্মে,তাই যেকোন দলকে বিপদে ফেলার জন্য সক্ষমতা রয়েছে তাদের। বিশ্বকাপে কলম্বিয়া, জাপান এবং সেনেগালের সাথে আছে তার। অলরেডী কলম্বিয়ার বায়ার্ন সতীর্থ জেমস রুদ্রিগেজ কে হুমকি দিয়েই রেখেছেন এবার বিশ্বকাপে দেখাবেন সেরা লেওয়ান্ডস্কিকে। তাই সবাই সাবধান! লেওয়া আসছে। পোল্যান্ড আসছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *