ফর্মেশন : ৪-১-২-৩
Attack is the best defiance. কথাটা খুবি সহজ একটি উক্তি হলেও এর গভীরতা অনেক। আপনারা যদি কোনো যুদ্ধসম্পর্কিত মুভি দেখেন বা কোনো যুদ্ধের ইতিহাস পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই যেনে থাকবেন যে যুদ্ধের ময়দানে সৈন্য থেকে শুরু করে সেনাপতি সবার মাথায় শুধু একটিই কথা ঘুরতে থাকে “মারো নয়তো মরো”। যদি আপনি বাচার জন্য শুধু ডিফেন্ড করে যান তাহলে আপনার বাচার চান্স হয়তো ২০% এরো কম। কিন্তু যদি আপনি আক্রমনের হাত থেকে বাচতে উলটো আক্রমন করার পন্থা বেছেনেন তাহলে আপনার বাচার চান্স ৬০% এরো বেশি বৃদ্ধি পায়। যুদ্ধের ময়দানে বিপক্ষ দলের আক্রমণ শুধু ডিফেন্ড করার চেয়ে উলটো বিপক্ষ দলকে আক্রমন করে কাবু করতে পারলে জয় নিশ্চিত। এখন কথা হলো এই যে আমি এতোখন এসব অবান্তর কথা বলে গেলাম এর অর্থ কি দাড়ালো বা ক্যানোই বা বললাম? বা এই লেখার সাথে ওই অবান্তর কথা গুলার সম্পর্কটাই বা কোথায়??? হ্যা সম্পর্ক আছে এই কথা গুলোর সাথে আজকের যে টপিকে কথা বলবো সেই টপিকের যোগসূত্র রয়েছে। আর সেটা খুবি নিগূঢ় সম্পর্ক। যাই হোক আজ আমি যে বিষয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো তা হলো বর্তমান ব্রাজিল টিম এর ফর্মেশন এবং গেমপ্লে নিয়ে। আর ব্রাজিলীয় কোচ হয়তো উপরের সেই Attack is the best defiance উক্তিতেই বিশ্বাসী। কারন জোরেশোরে গুঞ্জন রয়েছে ব্রাজিল এবার তাদের ষষ্ঠ বিশ্বকাপ ঘরে তোলার উদ্দেশ্যে যে টিম নিয়ে মাঠে নামছে সেই টিম এবার বিশ্ব মঞ্চে নিজেদের উপস্থাপন করবে ৪-১-২-৩ আল্ট্রা এটাকিং ফর্মেশনে। আর আমি আজ এ ব্যাপারেই আলোচনা করবো।।।
৪-১-২-৩ ফর্মেশন এটি মুলত ৪-৩-৩ ফর্মেশন এরি আরেকটি রুপ। এবং একটু বেশিই আক্রমণাত্মক ফর্মেশন। প্রথমত চলুন যেনে নেই এই ফর্মেশন এ প্লেয়ারদের কি কি পজিশন রয়েছে।
মুলত এই ৪-১-২-৩ ফর্মেশনের প্রথমেই যে ধাপ সেখানে থাকবে ৪ জন ডিফেন্স। যেখানে দুই সাইডে দুই ফুলব্যাক সহ মাঝখানে দুই জন সলিড CB বা সেন্ট্রাল ব্যাক থাকবে। যাদের হাতেই মুলত দলের পুরো ডিফেন্স এর ভার থাকবে। এরপর এই ৪ ডিফেন্স এর একটু উপরে যে একজন থাকবে সে হবে একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। আর এই ফর্মেশনে এই ডিফেন্সিভ মিড ফিল্ডার একটি বড় ভুমিকা পালন করে।
আর এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার এর একটু উপরে যে দুইজন অবস্থান করবে তাদের মধ্যে একজন হবে এটাকিং মিড আর বাকি একজন থাকবে বক্স টু বক্স মিডফিল্ডার। আর সবার উপরে থাকবে ৩ ফরোয়ার্ড যেখানে দুইদিকে দুই উইংগার এর মাঝখানে একজন জাত স্ট্রাইকার। আর এই যে দুইজন উংগার থাকবে এদের মধ্যে একজন হবে ফলস উইংগার। খাতা কলমে সে উইংগার হিসেবে থাকলেও সে মুলত একজন প্লে মেকার এর রোল প্লে করবে। এই পজিশন গুলাই মুলত এই ৪-১-২-৩ ফর্মেশন এ থাকবে।
যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন তাহলে এই ফর্মেশনে আমার পছন্দের একাদশটা হবে এইরূপ
৪-১-২-৩
LB – CB – CB – RB
DM
AM – box to box mid
LW – CF- RW
মার্সেলো-সিলবা-মার্কুইনহোস-দানিলো
ক্যাসেমিরো
কৌতিনহো-পৌলিনহো
নেইমার-জেসুস-উইলিয়ান
এবার আসি এই ফর্মেশনটি কিভাবে মাঠে কাজ করবেবে সেই ব্যাপারে। প্রথমেই বলে রাখি এই ফর্মেশনে ডিফেন্সিভ মিড একটি ভাইটাল রোল প্লে করবে। একটা পুল যেভাবে একটি রাস্তার সাথে আরেকটি রাস্তার সংযোগ স্থাপন করে তেমনি ভাবে এই ফর্মেশনে ওই ডিফেন্সিভ মিড মানে ক্যাসেমিরো ডিফেন্সিভ লাইন এবং এটাকিং লাইনের মধ্যে সংযোগস্থাপন বা যোগসূত্র স্থাপন করবে। যেভাবে ব্রাজিলের এটাক শুরু হবে এই ক্যাসেমিরোর মাধ্যমে তেমনি ব্রাজিলের ডিফেন্স ও শুরু হবে এই ক্যাসেমিরোর মাধ্যমে।
মুলত দল যখন এটাক বিল্ডাপ করবে তখন সর্বপ্রথম ডিফেন্স এ কাছ থেকে বল যাবে ক্যাসেমিরোর কাছে। সেই ঠিক করবে যে এটাক টা কোনদিক দিয়ে হবে। সে যদি চায় তাহলে রাইট সাইড দিয়ে এটাক হবে আবার সে যদি চাই তাহলে লেফট সাইড দিয়ে এটাক হবে। যাই হোক তো যখন ক্যাসেমিরোর কাছে বল যাবে তখন ক্যাসেমিরো একটু উপরে রান নিয়ে উপরের দুইজন মিড কৌতিনহো এবং পৌলনহো এর সাথে যোগ হয়ে দলকে ৪-৩-৩ (ডায়মন্ড) বা এটাকিং ফর্মেশনে শিফট করবে। যার ফলে নিজেদের মধ্যে পাসিং লেন ক্রিয়েট হবে এবং বল পাস করতে করতে তারা বলকে যখন এটাকিং জোন বা জোন ১৪-১৫ তে নিয়ে যাবে তখন বল হয় রাইট উইং এ থাকা উইলিয়ান এর কাছে যাবে বা লেফট সাইডে থাকা নেইমার এর কাছে। এরপর হলো ফরোয়ার্ড দের কাজ। আগেই বলেছিলাম যে ওই ৩ ফরোয়ার্ড এর একজন থাকবে ফলস উইংগার হিসেবে মানে যে মুলত খাতাকলমে উইং এ থাকলেও একজন প্লে মেকার এর কাজ করবে। আর এখানে সেই প্লেমাকার এর কাজটা করবে নেইমার।। তো যদি মিডফিল্ড থেকে বল উইলিয়ান এর কাছে যায় তাহলে সে জাত উইং এর মতই কাটইন করে বা ক্রস করে এটাক করবে তবে বল যদি নেইমার এর কাছে যায় তখন নেইমি ফরোয়ার্ড লাইনের একটু নিচে নেমে এসে দলকে শিফট করবে ৪-১-৩-২ ফর্মেশনে এবং একজন প্লে মেকার এর কাজ করবে। আর তখন লেফট সাইড থেকে কৌতিনহো সাইডলাইন ধরে হালকা সামনে রান নিয়ে লেফট উইং পজিশনে গিয়ে একজন পুরোদস্তুর উইংগার এর কাজ করবে। এবং নিজেদের মধ্যে পাসিং লেন ক্রিয়েট করে গোল চান্স ক্রিয়েট করবে।।। এটাই মুলত হবে এই ফর্মেশনের এটাকিং স্টাইল।।।
এরপর আসা যাক পরের ধাপে। মানে যখন দল ডিফেন্সি প্লে করবে তখন কিরকম কাজ করবে এই ফর্মেশন।।। মুলত ৪-১-২-৩ ফর্মেশনে যখন অপজিশন দল এটাক করবে তখন ডিফেন্স শুরু হবে কাউন্টার হাই প্রেসিং এর মাধ্যমে। মানে দল যেখানে বসেই বল হারাক না ক্যান সেখান থেকে ম্যান টু ম্যান হাই প্রেস করা হবে যাতে অপজিশন দল লংবল খেলতে বাধ্য হয় অথবা বল পজিশন লুজ করে। যদি অপজিশন দল বল নিয়ে নিজেদের হাফ ছেড়ে ব্রাজিলের হাফে চলে আসে তখন ফরোয়ার্ড থেকে নেইমি ও উইলিয়ান নিজেদের গতি কাজে লাগিয়ে মিডে চলে আসবে এবং এবং দলকে ৪-৫-১ ফর্মেশনে শিফট করবে। আর তখন সবাই মিলে অপজিশন কে প্রেস করতে থাকবে তাকে ডিসপোজেস করার জন্য। এতে যদি কাজ না হয় তখন ক্যাসেমিরো একটু নিচে নেমে এসে ডিফেন্স এ যোগ দিয়ে দলকে ৫-৪-১ সলিড ডিফেন্সিভ ফর্মেশনে শিফট করবে এবং অনবরত প্রেসিং করে যাবে যার ফলে একটি ক্যাম্প্যাক্ট ন্যারো জোনাল লাইন ক্রিয়েট হবে। ফলে অপজিশিন দল মিডে বিটুইনদা লাইনে স্পেস কমে যাবে যার ফলে পাসিং লেন ও কমে যাবে। এবং অপজিশন দল ওই হাই প্রেসিং এর ফলে হয় লংবল খেলতে বাধ্য হবে অথবা ডিসপোজেজড হয়ে পজিশন হারাবে।।
এভাবেই ব্রাজিল মুলত ৪-১-২-৩ ফর্মেশনে গেম প্লে করবে।।
আমি যতটুকু বুঝি ঠিক ততটাই আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। যানিনা কতটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। যদি কোনো ভুলত্রুটি থেকে থাকে তাহলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি তে দেখবেন ধন্যবাদ।।
Written By
Mohammad Ali