ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর অসাধারণ ক্যারিয়ারের গল্প

(Photo by Chris Brunskill Ltd/Getty Images)


পর্তুগালের মাদেইরা দ্বীপের ফানচালের সাও পেদ্রো গ্রাম,সময়টা ১৯৮৫।মালি হোসে দিনিস আভেইরো ও রাঁধুনি মারিয়া ডোলোরেসের দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয় এক অতি সাধারণ ছেলে।তখন কি কেউ জানত সেই দরিদ্র সাধারণ ছেলেটিই হয়ে উঠবে অসাধারণ;পর্তুগালের সেরা ফুটবলার? হয়ত জানত না। কিন্তু,এখন সবাই জানে;শুধু পর্তুগালের ই নয়,বিশ্বের সেরা ফুটবলারদের একজন সে।বর্তমান সময়ের সেরাদের প্রথম সারিতে সে।তার জন্যই রোনালদো নাজারিওকে বলা হয় ব্রাজিলিয়ান রোনালদো! হ্যাঁ,সে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।

ক্যারিয়ারের পদে পদেই আমাদের বিমোহিত করেছে সে।ছোটবেলায় সে অপেশাদার দল আন্দোরিনহায় খেলত (১৯৯২-১৯৯৫)। তার পর সে আরো দুই বছর সি.ডি.ন্যাশনালে খেলে।


স্পোর্টিং সি.পি.

১৯৯৭ এই সে স্পোর্টিং এর সাথে তিনটি ট্রায়ালে যায় ও মাত্র ১২ বছর বয়সে তারা তাকে সাইনও করে ফেলে।তারপর সে স্পোর্টিং এর ইয়ুথ একাডেমীতে যোগ দিতে মাদেইরা থেকে লিসবনের পাশে আলকোশেটে তে শিফ্ট করে।বয়স ১৪ হতে না হতেই সে বিশ্বাস করতে লাগল যে ফুটবলেই তার ভবিষ্যত ও সে ডোলেরেসের সাথে পরামর্শ করে ফুটবলে পুরোপুরি মন:নিবেশ করে।কিন্তু হায়!এক বছর পরেই তার রেসিং হার্ট ধরা পরে যার কারণে তার ফুটবল খেলার চিরতরে ইতি ঘটতে পারত।কিন্তু রোনালদো তো দমবার পাত্র নয়।সে লেজার অপারেশন করায় ও  কিছুদিনের মধ্যেই অনুশীলনে ফিরে আসে।সে আজকে যা, সবই তার কঠোর পরিশ্রম ও মনোবলের জন্য।তার মনোবল লোহার মত মজবুত।মাত্র ১৬ বছর বয়সে তৎকালীন ম্যানেজার তার ড্রিবলিং এ বিমোহিত হয়ে তাকে স্পোর্টিং এর ইয়ুথ টিমে প্রোমোট করেন।রোনালদোই এমন প্রথম খেলোয়ার যে একই সিজনে ক্লাবটির আন্ডার-১৬,১৭,১৮,দল-বি ও প্রথম একাদশে খেলে।বি দলে ২ এপিয়ারেন্সে তার গোলসংখ্যা ০ ও প্রথম একাদশে ২৫ এপিয়ারেন্সে গোলসংখ্যা ৩।কিন্তু তার অসাধারণ ড্রিবলিং স্কিলের জন্যই স্যার এলেক্স ফারগুসন তাকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এ সাইন করান।


ম্যানচেস্টার_ইউনাইটেড (২০০৩-২০০৯)

স্যার এলেক্স এর মতে, “He’s one of the most exciting young players I’ve ever seen.”  রোনালদো পরে তাকে তার ক্যারিয়ারের পিতা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে আখ্যায়িত করে।রোনালদো ম্যানইউতে ক্লাবটির লেজেন্ডদের ৭ নং জার্সি পায় যা তাকে পারফেকশনিস্ট হতে অবসেস্ট করে তোলে।সে মনোবল নিয়ে পরিশ্রম করতে থাকে।প্রিমিয়ার লিগে তার ডেবিউ ম্যাচে ৬০ মিনিটে সাবস্টিটিউশন হিসেবে এসে সে তার পারফরমেন্সের বেশ প্রশংসা পায়।জর্জ বেস্ট বলেন, “তার ডেবিউ নি:সন্দেহে মোস্ট এক্সাইটিং।”  তার ম্যানইউতে ১৯৬ এপিরিয়েন্সে গোলসংখ্যা ৮৪।ইংল্যান্ডে তার প্রথম সিজনেই সে ম্যানইউকে এফ এ কাপ জেতায়।সে সেখানে আরও ৩টি প্রিমিয়ার লিগ ও ১টি ইউসিএল জেতে।রোনালদো ২০০৯-২০১০ সিজনে তৎকালীন রেকর্ড ট্রান্সফার ফি ৯৪ মিলিয়নে মাদ্রিদে আসে।


রিয়াল_মাদ্রিদ (২০০৯-২০১৮) 

রিয়ালে তার প্রেজেনটেশনের সময় ৮০০০০ ভক্ত উপস্থিত ছিল, যা নাপোলিতে ম্যারাডোনার প্রেজেনটেশনের সময়ের ৭৫০০০ ভক্তের সর্বোচ্চ উপস্থিতির ২৫ বছরের রেকর্ড ভাংগে।রিয়ালের তৎকালীন ক্যাপ্টেন রাউল ৭ নং জারসি পরায় তখন তাকে ৯ নং জারসি পরতে হয়, যা তাকে লেজেন্ড আলফ্রেডো প্রেজেন্ট করেন।২০১০-২০১১ সিজনে রাউল ক্লাব ছারলে সে ৭ নং জারসি পায়।রিয়ালে তার ২৯২ এপিরিয়েন্সে গোলসংখ্যা ৩১১। মাদ্রিদে সে ২ টি লিগ ও ৪ টি ইউসিএল টাইটেল জেতে, যার ৩ টা ছিল পর পর হ্যাটট্রিক। সে মাদ্রিদের অলটাইম টপ স্কোরার । সে অগোছালো, ট্রফিলেস সিজন কাটানো মাদ্রিদে, ইউরোপে বার্সার তৎকালীন ডমিনেন্স কাটিয়ে পর পর ২০১৫-২০১৬,২০১৬-২০১৭,২০১৭-২০১৮ সিজনে রিয়ালকে ইউরোপের সবচেয়ে সম্মানজনক ইউ ই এফ এ চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতায়! ২০১৭-২০১৮ ইউসিএল জেতার পর সে মাদ্রিদে কাটানো সময়কে অতীতকালে আখ্যায়িত করলে তার ক্লাব ছাড়ার ইংগিত পাওয়া যায়।মাদ্রিদ যখন ইউরোপের আনডিস্পিউটেড রাজা তখন বার্নাব্যুতে পোস্ট ম্যাচ সেলিব্রেশনে হাজার হাজার ভক্ত সহ রামোস-মার্সেলোরাও বলে ওঠে, “Cristiano Quédate.” কিছুদিন পরেই, ১০ জুলাই ২০১৮, রোনালদো মাদ্রিদিস্তাদের মন ভেংগে, তাদের অন্ধকারতম দু:স্বপ্ন সত্যি করে, নতুন এডভেন্চার ও চ্যালেন্জের জন্য ইতালীর তুরিনের জুভেন্টাসে চলে যায়।



জুভেন্টাস (২০১৮-    ) 

জুভেতে রন যোগ দেয় ১০০ মিলিয়ন ফি তে, যা একজন ত্রিশ ঊর্ধ খেলোয়ারের জন্য এবং ইতালীর কোনো ক্লাবের ব্যায় করা সর্বোচ্চ।জুভেতেও সে ৭ নং জারসি পরেই খেলবে।তার ফিটনেস দেখে নি:সন্দেহে বলা যায় যে জুভেতেও সে তার সেরাটাই দিবে।


পর্তুগাল ন্যাশনাল টিম

পর্তুগিজ ফুটবল ফেডারেশন ২০১৫ সালে রোনালদোকে পর্তুগালের সর্বসময়ের সেরা ঘোষণা করে।রন পর্তুগালকে তাদের প্রথম মেজর লিগ, ইউ ই এফ এ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ-২০১৬ জেতায়।পর্তুগালকে প্রেজেন্ট করে ১৫৪ টি ম্যাচে তার গোলসংখ্যা ৮৫। ২০০৭ সালে সে প্রথমবারের মত পর্তুগালের ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব পায় এবং এখনও সে পর্তুগাল ন্যাশনাল টিমে প্রথম ক্যাপ্টেনের মর্যাদাপূর্ণ পদে রয়েছে।


রোনালদোর কিছু রেকর্ড
• সর্বোচ্চ ব্যালন ডি অর ( মেসির সাথে যৌথ ভাবে ৫ টি)
• ২০০৯-২০১৩ সিজনের সবচেয়ে দামী খেলোয়ার
• ৪ টি ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু জেতা প্রথম খেলোয়ার
• ইউরোপের অলটাইম টপ ইন্টারন্যাশনাল স্কোরার (৮৫)
• ইউসিএল অলটাইম টপ স্কোরার
• ইউসিএল অলটাইম টপ এসিস্টার
• ফিফা সি ডব্লিউ সি হিসটরি টপ স্কোরার (৭)
• FIFPro World XI most appearance (১১)
• দ্রুত তম ১৫০,২০০,৩০০ লা লিগা গোল স্কোরার
• দুই ভিন্ন ক্লাব থেকে ডমেস্টিক কাপ, ইউসিএল,সি ডব্লিউ সি,গোল্ডেন শু, ব্যালন ডি অর জয়ী ( ম্যানইউ/রিয়াল)

Written By
Mohammad Ali

Rony: