‘বন্ধুত্ব’ খুবই চমৎকার একটি শব্দ। একজন মানুষের জীবনে সৃষ্টিকর্তা যেসব মানুষকে আশীর্বাদ স্বরুপ পাঠিয়ে থাকেন, একজন সত্যিকারের বন্ধু তাদের মাঝে অন্যতম। তবে সত্যিকারের বন্ধু খুঁজে পাওয়া আসলেই বেশ ভাগ্যের ব্যাপার। কারণ ব্যাপারটা তো আর এমন নয় যে, আমি কাউকে গিয়ে বলবো, ‘তুমি কি আমার সত্যিকারের বন্ধু হবে’? আর সে বলবে, ‘ঠিক আছে’। আসলে সময়, পরিবেশ আর পরিস্থিতিই আমাদের জীবনের সেই সত্যিকারের বন্ধুটিকে খুঁজে বের করে দেয়।
এমন দুই বন্ধুকে নিয়েই আজকের এ লেখা, যাদের বন্ধুত্ব আসলেই উদাহরণ দেয়ার মতো। যে উদাহরণ বন্ধুত্বের, যে উদাহরণ মানবসেবার…
জিয়া হাইজিয়ার বয়স ৫৩ বছর, থাকেন চীনে। জন্মগতভাবেই চোখে ছানি ছিলো তার, ফলে মাত্র এক চোখে দেখতে পেতেন তিনি। তবে ১৫ বছর আগের এক দুর্ঘটনায় তার অবশিষ্ট চোখটিও দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে। তিনি হয়ে যান পুরোপুরিই অন্ধ।
জিয়া ওয়েনকির বয়সও ৫৩ বছর। তিনিও চীনেই থাকেন। হাইজিয়ার সাথে তার এক দিক দিয়ে অদ্ভুত মিল আছে, আর তা হলো দুর্ভাগ্যে। মাত্র ৩ বছর বয়সে এক দুর্ঘটনায় দুটি হাতই হারান তিনি। এরপর থেকে তার জীবনের অর্ধ-শতাব্দী কেটে গেছে এমন অসহায় অবস্থাতেই।
আজ থেকে ১৪ বছর আগেকার কথা। ২০০১ সালে হাইজিয়া এবং ওয়েনকি কেউই কাউকে চিনতেন না। তবে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার লড়াইয়ে লিপ্ত ছিলেন দুজনই। তাদের শারীরিক অক্ষমতা এ যুদ্ধকে আরো কঠিন করে তুলেছিলো। এমনই এক পরিস্থিতিতে একদিন দেখা হয়ে যায় দুজনের, ধীরে ধীরে তাদের মাঝে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব।
দুই বন্ধুর কেউই জীবন সংগ্রামে হার মানতে রাজি ছিলেন না। কারো কাছে হাত পেতে নিজেদের মাথা নত করতে তারা চাননি। তাই তারা বেছে নিলেন অন্য এক উপায়। সিদ্ধান্ত নিলেন, তারা গাছ লাগাবেন। আর সেই গাছ থেকেই জীবিকা উপার্জনের একটি রাস্তা তারা বের করে নেবেন।
যেমন চিন্তা, তেমন কাজ। সরকারের কাছ থেকে ৩ একর জমি লিজ নিয়ে কাজ শুরু করলেন তারা। প্রতিদিনই সকাল ৭টায় ঘুম থেকে ওঠেন তারা। তারপর প্রাতরাশ সেরে বেরিয়ে পড়েন গাছ লাগাতে। পথে অনেক সময়ই খরস্রোতা নদী পার হতে হয় তাদের। কিন্তু হাইজিয়া তো অন্ধ। তিনি কীভাবে নদী পার হবেন? এখানেই যেন লুকিয়ে আছে বন্ধুত্বের অনুপম নিদর্শন। ওয়েনকির দুটি হাত না থাকতে পারে, কিন্তু তার আছে আকাশের মতোই বিশাল বড় এক মন। তাই তিনি হাইজিয়াকে কাঁধে তুলে পার করে দেন সেসব নদী।
মাঝে মাঝেই অর্থ সংকটে পড়েন তারা। তবু কাজ থামে না তাদের। তখন পুরনো গাছের কলম লাগিয়ে নতুন জীবনের স্পন্দন ছড়িয়ে দিতে থাকেন তারা। গাছে উঠতে তো হাত, চোখ আর পা- এ তিনটি জিনিস অবশ্যই দরকার। কিন্তু ওয়েনকির তো হাত নেই, ওদিকে হাইজিয়ারও নেই দুটি চোখ। তাহলে? এক্ষেত্রে আবারো তারা প্রমাণ রাখেন তাদের অসাধারণ বন্ধুত্বের। ওয়েনকিই হাইজিয়াকে গাছে উঠতে সাহায্য করেন। সতর্কতার সাথে দিয়ে যেতে থাকেন দিক নির্দেশনা। সত্যিই অসাধারণ, তাই না?
Allah blessed both of them ..