হ্যাক দা মার্কেট
বর্তমানে আমাদের মতো বেশিরভাগ তরুণদের চিন্তাভাবনা থাকে লিখাপড়া শেষ করে নিজে একটা ব্যবসা দিব। আমাদের মাথা থেকে ভালো ভালো আইডিয়া ও বের হয়। আইডিয়া টা নিয়ে চিন্তায় পড়তে হয় -একটা ব্যবসা দাড় করাতে টাকার দরকার। যাহোক অনেক টানাপোরার মধ্যে দিয়ে ওই মূলধন তার ও ব্যবস্থা হয় যায়। ব্যবসা ভালোই চলে কিন্তু হঠাৎ কোনোদিন খোঁজ নিলে দেখা যাই যে ওইটার আর অস্তিত্ব নাই। এর কারণ হচ্ছে সুষ্ঠু মার্কেটিং এর অভাব।
আমাদের দেশে অনেক নতুন ব্যাবসায়ী যাদের আমরা উদ্যোক্তা নামে চিনি ,এদের কাছে একটা বাধা হচ্ছে এই মার্কেটিং। আমাদের দেশে একটি বড় সমস্যা। কারণ ,উদ্যোক্তারা অনেক কষ্ট করে নিজের পণ্য বা সেবাটা কোনো রকমে তৈরি করতে পারে।তারপর সেটা মার্কেটে কিছুদিন চলে। পরের সময় গুলাতে তারা প্রতিযোগিপূর্ণ বাজারের আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে থাকে। ওই পণ্য নিদিষ্ট একটা পর্যায়ে না যাওয়াই , বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী তাদের ফিরিয়ে দেয়। আবার একটা পর্যায় যেতে হলেও ব্যাপক এডভারস্টমেন্ট এর দরকার। মার্কেটিং এর ফান্ডিং এর অভাবে ওই উদ্যোক্তাকে তখন একটা বড় ঝামেলায় পরে যান। এখন কি করবেন ?অনেকে আছে ব্যাবসায় গুটে নিবেন। আবার অনেক এ আছেন যারা Never give up কথাটা মনে ধারণ করে থাকেন ,তারা ভাবেন কি করে মার্কেটিং এ কম খরচে আমার ব্যাবসার ভালো মার্কেটিং করা যায়।
যাহোক আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়টি সেটি নিয়েই। মার্কেটিং এ কম খরচে আমার ব্যাবসার ভালো মার্কেটিং করার একটা মেথড হলো -গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং………
মার্কেটিং কি তা আমরা মোটামোটি কম বেশি সবাই জানি। কিন্তু গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং তা আবার কি?এটা কি মার্কেটিং কে হ্যাক করে ?না , আসলে ওই রকম কিছু না। মার্কেটিং এর একটা পদ্ধতি মাত্র। তাহলে আগে জানা যাক গ্রোথ হ্যাকিং কে -এটি মার্কেটিং এর এমন একটি উপায় ,যে উপায় এর সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে ,সকল উদ্যোক্তা ,তাদের প্রতিষ্ঠিত ব্যাবসায়ের গ্রোথ করা যায়। এখন আপনাদের কাছে গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং বিষয় টা ক্লিয়ার করি। আপনার বা আপনার পণ্যের সম্পর্কে অন্য ব্যক্তির কাছে গুনগান গাইবে কিন্তু বুঝতে পারবে না যে সে আপনার মার্কেটিং করছে। এই ধরুন ,আপনি কোনো ক্যাফেতে খেতে গেছেন। খাওয়া দাওয়ার সাথে কাফের পরিবেশটা আপনার মনে খুব ভালো করে ধরল। এর পর আপনি আপনার দামি ফোনটা বের করে একটা সেলফি তুলে কাফের নাম ও লোকেশনটা দিয়ে ফেইসবুক এ আপলোড করলেন। ফেইসবুক এ ওই ছবিটা আপনার বন্ধুরা সহ আরও অনেকে দেখলো এবং সেই সাথে কিন্তু ওই ক্যাফেটা সম্পর্কে ওকিবহাল হলো। এখানে বিনাপয়সায় আপনি কিন্তু ক্যাফেটির মার্কেটিং করে দিলেন। আর এই মার্কেটিং টা হল এটা হচ্ছে গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং। গুগল ,ফেইসবুক ,উবার -এর মতো বিশ্বের বড় বড় কোম্পানি গুলো তাদের মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিতে এই পদ্ধতিটা ব্যবহার করে।উপরের ঘটনার মতো আরো উদহারণ আমাদের চোখের সামনেই থেকে যায়। আমাদের দেশে উবার এই কয়েকদিন হলো তাদের কার্যক্রম চালু করছে। প্রথম দিকে উবার অতটা জনপ্রিয় লাভ করতে পারিনি যা এখন করছে। ঠিক উবার ও এই গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং করছে। প্রথম রাইড কে তারা ফ্রি দিয়ে তাদের মার্কেটিং করছে। কেননা যে ওই ফ্রি রাইডটা পেয়েছে ,সে এ কথা টা কমপক্ষে অন্য পাঁচ জনের কাছে বলেছে অর্থাৎ উবারের মার্কেটিং করচ্ছে। আর এভাবেই গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং হয়েছে যারফলে আজ বাংলাদেশে উবার বর্তমান অবস্থায়।
যাহোক আশা করা যায় এই হ্যাকিং টা কি কিছুটা হলেই আমরা ধারণা পেয়েছি। এই গ্রোথ হ্যাকিং পদ্ধতিটা মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে কিভাবে কাজ করে অথবা এই পদ্ধতিতে মার্কেটিং করতে হলে কি করতে হবে তা জানবো –
১.উপযুক্ত পণ্য তৈরি
বাজারে কি ধরণের পণ্য চলবে ,কাস্টোমারদের কি ধরণের চাহিদা তারউপর ভিত্তি করে পণ্য বা সেবা তৈরী করতে হবে। অন্যথায় ভালো মার্কেটিং বা এডভারস্টমেন্ট যাই করি না কেন তা ভালো ফল দিবে না। তাই মার্কেটিং এর প্রথম কন্ডিশন হলো ভালো মানের পণ্য উৎপাদন করা ,যেটা মানুষের নিত্য চাহিদার লিস্ট এ থাকবে। ইউনিক কিছু বাজারে নিয়ে আসতে হবে অথবা ওই পণ্যের ভ্যালু বাড়াতে হবে। যেমন–শ্যাম্পুর বা সাবান মিনিপ্যাক।যারা গার্মেন্টসে কাজ করে বা তার চেয়ে গরিব,তারা ১০০–১৫০ টাকা দিয়ে ওই শ্যাম্পু কিনতো না। কোম্পানি যখন ৩ টাকায় বাজরে এই শ্যাম্পু আনলো তখন ওই মানুষগুলো শ্যাম্পু কিনা শুরু করলো।
একসময় দেখা গেলো যে কোম্পানির প্রোডাকশন এবং সেলস বেড়ে গেল। সেই সাথে আরও দেখা গেলো ওই কোম্পানি কে বেশি এডভার্টাইসমেন্ট কস্ট বহন করতে হয় নি। কেননা ওই মানুষ গুলাই এ কাজ তা নিজের থেকেই করে দিয়েছে।এখানে এই শ্যাম্পুর মিনি প্যাক হচ্ছে ইউনিক প্রোডাক্ট। আপনি যদি আজ একটা ইউনিক প্রোডাক্ট বাজরে নিয়ে আসলেন যেটা মানুষের কাজে লাগবে ,তাহলে আপনার ওই প্রোডাক্টটাও শ্যাম্পুর মিনিপাকের মত মার্কেট ছড়িয়ে যাবে।মোদ্দা কথা ,আপনাকে মানুষ কি চায় এমন জিনিস নিয়ে বাজরে নামতে হবে।
২.উপযুক্ত পণ্য বানাবো কি কিভাবে ?
আপনার পণ্যকে উপযুক্ত পণ্য বানাতে হলে ,ওই সম্পর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বসে থাকা যাবে না। আপনাকে শুরু থেকেই পণ্যের মান যাচাই বাছাই করার জন্য মার্কেট বিশ্লেষণ করতে হবে, যা গ্রোথ হ্যাকারা করে থাকে। মার্কেট থেকে ফিডব্যাক নিয়ে সে অনুযায়ী আপনাকে প্রোডাকশন করতে হবে। এখন একটা প্রশ্ন আপনার মনে জাগা স্বাভাবিক যে আমরা এই মার্কেট বিশ্লেষণটা কিভাবে করতে পারি। আমি আগেই বলেছি যে আমাদের টাকা পয়সা কম সে ভাবে মার্কেটিং এর কাজ করতে হবে। আমার পণ্য নুতন হিসেবে আমাকে কাস্টমার এর স্টান্ডার্ডটা ঠিক করে নিতে হবে। আমি যদি শুরুর অবস্থায় ওই পণ্যকে পুরো বাংলাদেশের মানুষের হাতে দেখতে চায় তাহলে আমাকে অনেক টাকা করতে হবে ,তবে সেক্ষেত্রেও ওই পণ্যের ব্যবসা সফল হবে কি না সন্দেহ। যাহোক আমাদের যেহেতু টাকা কম আর ব্যবসা সফল ভাবে করতে হবে সেহেতু আমাদের কাস্টমার এর স্টান্ডার্ডটা ঠিক করতে হবে।
এরপর আপনাকে ওই স্টান্ডার্ড কাস্টমার গুলার কাছে পৌঁছাতে হবে। কিভাবে তাদের নিকট পৌঁছাবেন ?আপনাকে এখন একটা গল্প বলি –এই তো গত ফেব্রুয়ারী মাসে বইমেলা হয়ে গেলো। আবার এই বই মেলায় মুনির হাসান স্যার এর এর একটা বই পাবলিশ হইছে। বইটার নাম ছিল “পড়ো পড়ো পড়ো । “এই বই লিখার শুরু থেকেই ফেইসবুক ওনার ফ্যানস পেজে এ বই এর কিছু কিছু শেয়ার করে তাদের মতামত জানতে চান। এখানে ওই সব ফ্যানস তাদের মতামত দেয়। এতে করে একসাথে তার মার্কেট বিশ্লেষণ ও মার্কেটিং হলো। এর ফলাফল দেখা গেলো বই পাবলিশের এর পরে –তিনি যে কাস্টমার এর স্টান্ডার্ডটা ঠিক করে ছিলেন অতিক্ক্রম করে। সুতরাং ,আপনার মার্কেট বিশ্লেষণের জন্য এবং পণ্যকে উপযুক্ত পণ্য বানানোর জন্য আপনাকে কাস্টমার স্টান্ডার্ড ঠিক করে তাদের কাছে পৌঁছাতে হবে ,জানতে হবে তারা কি চায় ,কিভাবে চায়।
৩.প্রচারেই প্রসার
মার্কেটিং একটা মিনিংই হচ্ছে প্রচারেই প্রসার। আপনার ব্যবসাকে বড়ো করতে হলে মার্কেটিং যে ব্যাপারটা সেটা করতে হবে। উপযুক্ত পণ্য বানানোর পর এটাই আপনার কাজ হওয়া উচিত। এখন কিভাবে এই প্রচারেই প্রসার করবেন ?আমাদের কিন্তু টাকা পয়সা কম চাইলেই আমরা প্রথম আলো ,টিভিতে বা বিলবোর্ড এ বিজ্ঞাপন দিতে পারবো না। আমরা আমাদের হাতের কাছের পাওয়া যায় এমন কিছু দিয়ে কাজ গুলা করতে পারি। এই যেমন –ফেইসবুক,ইউটিউব ,বিভিন্ন ধরণের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট বা ব্লগ মাধ্যমে। মনে করি ,আপনি ফাস্ট ফুড এর ব্যবসা আছে। আপনি নুতন একটা খাবারের আইটেম নিয়ে আসলেন। এর পর এটা আপনার যে ফেইসবুক পেজ বা ইউটিউব চ্যানেল আছে সেখানে ওই আইটেম সম্পর্কে বললেন সাথে আপনি অ্যাড করলেন যে যদি কেউ একটা কিনে তাহলে একটা ফ্রি। তাহলে অবশ্যই আপনার একটা ভালো প্রচার হবে। সেই সাথে প্রসারও হবে। আপনি আপনার পণ্য কে অন্য কোনো পণ্যের সাথে এডজাস্ট করে মার্কেট করতে পারেন। যেমন–আপনার পণ্য যদি মেয়েদের কোনো নতুন মডেল এর ড্রেস হয় ,তাহলে আপনি মেয়েদের জুতা বা কসমেটিক প্রোডিউসার সাথে একটা লিংক আপ করে ,আপনার পণ্যের প্রচার ও প্রসার দুটোই হবে।
গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং এ কাজ করা হয় বর্তমান কাষ্টমেরদের নিয়ে।তাদের দিয়ে মার্কেটিং করে নেওয়া হয়,টেকনিক ব্যবহার করে। ওই কাস্টমার গুলা পণ্যের ওপর এতই মুগ্ধ হয় যে যার সাথে ওই বিষয়ে কথা হয় তারে পণ্য টা সম্পর্কে বলে এবং কিনার জন্য সাজেস্ট করে। মোট কথা হচ্ছে –ওয়ার্ড অব মাউথ(মুখে মুখে প্রচার ) ।যাহোক সুষ্ঠু মার্কেটিং করতে গেলে উপরের কথা গুলো মাথায় রাখতে হবে। গ্রোথ হ্যাকিং এর একটা বিষয় হচ্ছে আপনার পণ্যের ব্যবহারকারী আপনাকে ও হতে হবে। কেন না আপনি যখন ওই পণ্য নিজে ব্যাবহার করবেন ,তখন কাস্টমার একটা নিশ্চয়তা পায়। সব শেষ মূল্যবান একটা কথা –আপনি যত বেশি ইনফোরমেটিভ (তথ্যধারক ),আপনার ব্যবসা তত ভালো হবে। ঠিক একইভাবে ,”তথ্য হচ্ছে গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং এর মূল ভিত্তি। “
আপনি এত কিছু করে মার্কেটিং করলেন অর্থাৎ আপনার ব্যাবসার গ্রোথ করলেন ,এই গ্রোথটা ধরে রাখাও গ্রোথ হ্যাকিং এর মধ্যে পরে। এই গ্রোথ ধরে রাখলে আপনার ব্যবসা আরও গতি পাবে। সেইসাথে আপনার সফলতাও নিশ্চিত হবে।
আজ এখানেই। আশা করি আপনাকে কিছু জানাতে পারছি।
Written By,
Ariful Islam Reza
Dept. of Accounting and Information system
Jagannath University,Dhaka