১৯৭০ এর দশকে চালু হওয়া ই-মেইল এখন পৃথিবীজুড়ে যোগাযোগের প্রধানতম মাধ্যম। কর্পোরেট জগতে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ই-মেইল হয়ে উঠেছে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ই-মেইলের বিনিময় হয়ে থাকে। ছোট বড় যেকোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরির বিজ্ঞাপনগুলো যত বেশি অনলাইন নির্ভর হচ্ছে চাকরীর আবেদনের মাধ্যম হিসেবে ই-মেইল ততই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। ঝক্কিঝামেলা ছাড়াই চাকরিপ্রার্থীরা জমা দিতে পারছেন তাদের আবেদনপত্র আর বাছাইকারী কর্তৃপক্ষ বেছে নিতে পারছেন তাদের দৃষ্টিতে যোগ্য প্রার্থীকে। কিন্তু এত ই-মেইলের ভিড়ে আপনার ই-মেইলের বিষয়বস্তুর শিরোনামটি অর্থাৎ ‘সাবজেক্ট লাইন’টি যদি যথাযথ না হয় তাহলে তা হয়তো নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি এড়িয়ে যাবে। অর্থাৎ ভালো সাবজেক্ট লাইনের অভাবে যদি চাকরীদাতা আপনার ই-মেইলটি খুলেই না দেখেন তাহলে আপনার চাকরি পাবার স্বপ্ন হয়তো স্বপ্নই থেকে যাবে। তাই আপনার ই-মেইলের সাবজেক্ট লাইন এমন হওয়া চাই যাতে আপনার ই-মেইলের সাবজেক্ট লাইন পড়েই চাকরিদাতা বিজ্ঞাপনের মত অপ্রয়োজনীয় ই-মেইল থেকে আপনার দরকারী বার্তাকে আলাদা করতে পারেন।
সাবজেক্ট লাইন হতে হবে সংক্ষিপ্ত
সাধারণত ই-মেইলের সাবজেক্ট লাইনে ৫০-৬০টি অক্ষরের বেশি জায়গা হয় না। স্মার্টফোনের ই-মেইল এপ্লিকেশনে তা কমে দাঁড়ায় ২৫-৩০ অক্ষরে। তাই আপনার ই-মেইলের সাবজেক্ট লাইনে অপ্রয়োজনীয় সকল কথা বাদ দেওয়া অত্যন্ত জরুরী। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ চাকরী প্রত্যাশীদের ই-মেইল সাবজেক্ট লাইনটি হতে হবে ৬-৮ শব্দের। তাই “hello”, “thanks” কিংবা যেকোনো সম্বোধনবাচক শব্দ ব্যবহার করা মোটেই উচিত নয়। উদাহরণ হিসেবে বল যায় আপনার সাবজেক্ট লাইনটি হতে পারে এইরকম ‘Human Resources Assistant Application’।
শুরুতেই দিতে হবে দরকারী তথ্য
ই-মেইল নিয়ে কাজ করে এমন বিশেষজ্ঞদের মতে স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি মানুষ স্মার্টফোনেই তাদের ই-মেইল চেক করেন। ই-মেইল ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস ‘SaneBox’ এর প্রধান নির্বাহী দিমিত্রি লিওনভ এর মতে এখন ৫০ শতাংশ মানুষ তাদের ই-মেইল ব্যবহার করেন স্মার্টফোন এপ্লিকেশনের মাধ্যমে। আর স্মার্টফোন ই-মেইল এপ্লিকেশনগুলো আপনি যে ৬-৮ টি শব্দ লিখবেন তার সব কয়েকটিই হতে হবে দরকারী তথ্য। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে চাকরির আবেদন করার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার মত জরুরী বিষয়গুলোকেই তুলে আনতে পারেন সাবজেক্ট লাইনেই। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় আপনার সাবজেক্ট লাইনের অভিজ্ঞতাকে তুলে আনতে পারেন ঠিক এভাবে, ‘Marketing Manager with 5 Years of Experience’।
সাবজেক্ট লাইনটি হওয়া চাই স্পষ্ট এবং নির্দিষ্ট
বিশেষজ্ঞদের মতে একজন নিয়োগদাতার কাছে আসা হাজার হাজার ই-মেইল থেকে একটি ই-মেইলকে বাছাই করে নেওয়ার জন্যে তারা গড়ে ছয় সেকেন্ড সময় নেন। তাই আপনার সাবজেক্ট লাইনটি এমন হওয়া বাঞ্চনীয় যাতে এই ছয় সেকেন্ডের মধ্যেই নিয়োগদাতা আপনার ই-মেইলের গুরুত্ব বুঝতে পারেন। তাই সাবজেক্ট লাইনে “resume for opening” এই জাতীয় শব্দ ব্যবহার না করাই ভালো। এর চেয়ে বরং আপনার নাম এবং আপনি ঐ কোম্পানিতে কোন অবস্থানের জন্যে আবেদন করছেন তা উল্লেখ করাই ভালো। আপনার সাবজেক্ট লাইনটি হতে পারে এইরকম, ‘Abdul Karim Following Up on Sales Position’।
সঠিক কিওয়ার্ড ব্যবহার করুন
নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চাকরী প্রার্থীদের ই-মেইলগুলোকে অন্য ই-মেইল থেকে আলাদা করার জন্য ফিল্টার ব্যবহার করে। আর তা করা হয়ে থাকে মূলত ই-মেইলের সাবজক্ট লাইনে ব্যবহৃত কিওয়ার্ডের উপর ভিত্তি করে। তাই আপনার ইমেইলের সাবজেক্ট লাইনে “job application”কিংবা “job candidate” এর মত শব্দ ব্যবহার করলে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আপনার ই-মেইলটি হয়তো সহজেই খুঁজে পাবে। তাই এধরনের পরিস্থিতিতে আপনার ই-মেইলের সাবজেক্ট লাইনটিকে সাজাতে পারেন এইভাবে “Job Application: Rafid Raihan for Social Media Manager”।
বিজ্ঞাপনে দেওয়া শনাক্তকারী নাম্বারটি উল্লেখ করে দিন
সাধারণত চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে চাকরিটির একটি বিজ্ঞপ্তি নাম্বার কিংবা শনাক্তকারী নাম্বার দেওয়া থাকে। অনেক সময় চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান একই সাথে বিভিন্ন পদের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। তাই আপনি যে চাকরির আবেদন করছেন বিজ্ঞাপনে তার কোনো শনাক্তকারী নাম্বার দেওয়া থাকে তবে তা অবশ্যই সাবজেক্ট লাইনে উল্লেখ করে দেওয়া ভালো। নয়তো আপনার ই-মেইলটি খুব সহজেই হারিয়ে যেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে এই ই-মেইলের সাবজেক্ট লাইনে যোগ করা হয়েছে জ়ব আইডি, ‘Data Scientist, Job ID: 123456, Jakaria Hasan Application’।
মনোযোগ কাড়তে সংক্ষেপে লিখে দিতে পারেন শিক্ষাগত যোগ্যতাও
সাবজেক্ট লাইনে সংক্ষেপে শিক্ষাগত যোগ্যতা লিখে আর সবার চেয়ে আলাদাভাবে নজর কাড়তে পারেন। যেমন, আপনি চাইলেই সাবজেক্ট লাইনে MBA, CPA কিংবা Ph.D এর মত যোগ্যতাকে জুড়ে দিতে পারেন আপনার নামের পরেই। যেমন চাকরির সাথে সামঞ্জস্য রেখে সাবজেক্ট লাইনটিকে লিখতে পারেন এইভাবে, ‘Marketing Director – Mahmud Hasan, MBA’।
আপনাকে যদি কেউ রেফার করে, তার নাম উল্লেখ করতে ভুলবেন না
যদি আপনাকে কেউ চাকরির জন্যে রেফার করে কিংবা সেই কোম্পানির সাথে সংশ্লিষ্ট কারো রেফারেন্স দিতে চান তাহলে তা অবশ্যই ই-মেইলের সাবজেক্ট লাইনে উল্লেখ করে দিন। বিশেষজ্ঞদের মতে ই-মেইলের ভিতরে দিলে তা হয়তো কর্তৃপক্ষের নজরে এড়িয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত ব্যক্তির নাম শুরুতে দিয়ে এইভাবে ই-মেইলের সাবজেক্ট লাইন শুরু করতে পারেন, ‘Referred by Saiful Islam for Technical Writer position’।
বড় হাতের অক্ষরের ব্যাপারে সতর্ক হোন
বড় হাতের অক্ষর ব্যবহার করলে সহজেই মনোযোগ আকর্ষণ করা যায়। কিন্তু পুরো লাইনটি যাতে বড় হাতের অক্ষরে লেখা না হয় সে ব্যাপারটি খেয়াল রাখা জরুরী। কারণ সেটি অনেকের বিরক্তির উদ্রেক করে। তাই আপনার চাকরির আবেদনের সাথে সংগতিপূর্ণ যে শব্দটিতে আপনি জোর দিতে চান সে শব্দটিতেই শুধু ব্যবহার করুন বড় হাতের অক্ষর। এইক্ষেত্রে আপনার ই-মেইলের সাবজেক্ট লাইনটি হতে পারে এইরকম, ‘Job Inquiry: Award-Winning Creative Director now in Dhaka’।
একটি ভাল সাবজেক্ট লাইন আপনার ই-মেইলটিকে আর দশজন প্রার্থীর চেয়ে এগিয়ে রাখতে পারে। তাই পরিস্থিতি বিবেচনা করে ভালো একটি ই-মেইল লেখার পাশাপাশি আকর্ষণীয় একটি সাবজেক্ট লাইন লিখতে পারা হয়তো আপনার চাকরি পাওয়া আর না পাওয়ার মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।
তথ্যসূত্রঃ ১. http://www.businessinsider.com/the-perfect-email-subject-line-for-job-hunting-2014-3 ২. http://mashable.com/2012/11/27/email-stats-infographic/#ocPV3q9ybGql