পড়াশোনা শেষ করে চাকরি খোঁজার সময়টুকু সম্ভবত জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়। যারা কাঙ্ক্ষিত চাকরি পান তাদের যেমন আনন্দের সীমা থাকে না তেমনি যারা চাকরি পান না তাদের হতাশা ক্রমেই বাড়তে থাকে। চাকরির তীব্র প্রতিযোগিতায় জেতা খুবই কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। এতগুলো বছর পড়াশোনার পর চাকরি না পেলে, নানা জনের নানান কথা শুনতে হয়। পরিবার আপনার দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু আপনি কিছুই করতে পারছেন না। কিন্তু আপনি তো আর বসে নেই, অবিরাম চেষ্টা করেই যাচ্ছেন। একের পর এক চাকরির পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু ভাগ্যের শিকে ছিঁড়ছে না। এইদিকে আবার চাকরি না পাওয়ার কারণও বুঝতে পারছেন না। নিশ্চয়ই খুব খারাপ মুহূর্ত এটি। চাকরি না পাওয়ার অসংখ্য কারণের মধ্য থেকে জেনে নিন ১০টি কারণ –
১. সঠিক নির্দেশনা অনুসরণ না করা
চাকরির আবেদনের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আবেদনের জন্য বিজ্ঞপ্তিতে যেসব নির্দেশনা দেয়া আছে সেগুলো অনুসরণ করুন। তা না হলে চাকরিদাতার প্রথমেই আপনার প্রতি নেতিবাচক ধারণা হয়ে যাবে। আর প্রাথমিক ধারণা ভালো না হলে পরে ইন্টারভিউতে ভালো করলেও সেটা চাকরিদাতার নজর কাড়বে না। কথায় আছে,”প্রথমে দেখনদারি তারপরে গুণ বিচারি!” তাই শুরুতেই সঠিক নির্দেশনা অনুসরণ করুন। খেয়াল রাখবেন, যিনি একটি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন, আবেদনপত্র তার কাছে নাও পাঠাতে হতে পারে। অন্য কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির কথা বলা থাকতে পারে। আবেদনপত্র যার কাছে এবং যে ঠিকানায় পাঠাতে বলবে ঠিক সেখানেই পাঠাবেন। আবেদনপত্রের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সব ঠিকমত দিন।
২. চাকরির জন্য অনুপযুক্ত হওয়া
চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে থাকা সবগুলো যোগ্যতা আপনার থাকা লাগবে এমন কোনো কথা নেই। কিন্তু উল্লিখিত অধিকাংশ যোগ্যতা যদি আপনার না থাকে তাহলে তো হবে না। এমন চাকরিতে আবেদন করুন যেখানে তাদের চাওয়াগুলো আপনার সাথে মোটামুটি ৯০ ভাগ মিলে যায়। যদি কমপক্ষে তিন বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয় কিন্তু আপনার আছে আড়াই বছরের তাহলে অন্যান্য যোগ্যতা সাপেক্ষে আপনি চাকরি পেতে পারেন। কিন্তু মাত্র ছয় মাসের অভিজ্ঞতা নিয়ে আপনি চাকরি পাওয়ার আশা করতে পারেন না।
৩. অতিরিক্ত যোগ্যতা
বেশি যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকার জন্য চাকরি না হওয়াটা অযৌক্তিক মনে হতে পারে। কিন্তু আপনাকে বুঝতে হবে চাকরিদাতারা উক্ত চাকরির জন্য উপযোগী প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে পছন্দ করেন। আপনি স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শেষ করে যদি কল সেন্টারে কাজ করতে যান, তাহলে নিয়োগকর্তারা আপনাকে নিতে চাইবেন না। কারণ কিছুদিন পর কাজটি আপনার কাছে ভালো নাও লাগতে পারে। তখন চাকরি ছেড়ে দিলে প্রতিষ্ঠানকে অসুবিধায় পড়তে হবে। কিন্তু আপনার আগ্রহের বিষয় শুধু এই চাকরি হলে সেটা ভিন্ন কথা। এক্ষেত্রে চাকরির আবেদনপত্রে আপনার আগ্রহের বিষয়টি উল্লেখ করবেন। তাহলে তারা বিষয়টি বিবেচনায় আনবেন।
৪. লক্ষ্য শুধু দু-একটি কোম্পানিতেই সীমাবদ্ধ হলে
অনেকেই গোঁ ধরে বসে থাকেন পছন্দের নির্দিষ্ট দু-একটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া চাকরি করবেন না। তাহলে প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে আপনি পিছিয়ে পড়তে পারেন। কিন্তু আপনার পছন্দ থাকবে না এমন নয়। পছন্দ থাকতে পারে, কিন্তু তার জন্য গোঁ ধরে অন্য কিছু না করতে চাওয়াটাও ঠিক নয়। সব সময় হয়তো নিজের পছন্দের জিনিস পান না, কিন্তু তাই বলে কি বসে থাকেন? না, আমাদের কম পছন্দের অনেক কিছু নিয়েও অনেক সময় সন্তুষ্ট থাকতে হয়। আপাতত যেকোনো একটি কাজ শুরু করুন, পরে পছন্দের কাজটি পেলে সেটি করুন – যদি এরই মধ্যে নতুন কাজটি আপনার ভালো না লেগে থাকে।
আবার, কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পাবার জন্য তাদের প্রতিটি বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে যাবেন না। কেননা একই নাম বারবার দেখে নিয়োগদাতারা বিরক্ত হবে। তারা ভাববেন আপনি যে কোনোভাবে শুধু একটি কাজ বাগাতে চাইছেন। ভালোভাবে কাজ করার ইচ্ছা আপনার নেই। সেক্ষেত্রে আপনার কাজ পাওয়া কঠিন হতে পারে।
৫. আপনার চেয়ে যোগ্যতম প্রার্থী থাকলে
কেউই নিখুঁত হতে পারে না, এটা স্বীকার করে নিতে হবে। আপনার চেয়ে বেশি যোগ্য মানুষ থাকবেই। দেখা যায় চূড়ান্ত পর্বে গিয়ে অনেকেই নিজেদের কিছু বিশেষ যোগ্যতার বলে নির্বাচিত হয়ে যান। চাকরিটির জন্য যোগ্যতাটি ব্যবহার উপযোগী হলে তো একদম সোনায় সোহাগা। আবেদনের সময় খেয়াল করুন, চাকরির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কী কী যোগ্যতা আপনার আছে। সেগুলো সিভিতে, আবেদনপত্রে ভালোভাবে উল্লেখ করুন। তাহলে আপনার চাকরি পাওয়া সহজ হয়ে যাবে।
৬. পূর্বের চাকরি ছাড়ার সঠিক কারণ ব্যাখ্যা করতে না পারা
আপনি পূর্ববর্তী কোনো চাকরি করে থাকলে সেটি ছেড়ে দেয়ার বা বহিস্কার হয়ে থাকলে তার যথাযথ কারণ ব্যাখ্যা করতে না পারলে, চাকরিদাতারা সন্দেহগ্রস্ত হয়ে আপনাকে নির্বাচন নাও করতে পারেন। তাই আগের কোনো চাকরির ইতিহাস থাকলে, চাকরি ছাড়ার যুক্তিযুক্ত কারণটি মাথার ভেতর গুছিয়ে ফেলুন। কারণ অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে বহিস্কার হওয়াটা আপনার বিরুদ্ধে কাজ করবে। তাই এর কোন যৌক্তিক কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে।
৭. বার বার চাকরিগুলো বদলালে
ধরুন, আপনি নিজের প্রতিষ্ঠানের জন্য লোক খুঁজছেন। এমন একজন আবেদন করেছেন যার হুটহাট চাকরি ছেড়ে দেয়ার অভ্যাস রয়েছে। সেক্ষেত্রে নিশ্চয়ই এমন কাউকে নিয়োগ দেবেন না যে চাকরি ছেড়ে দিয়ে আপনাকে অসুবিধায় ফেলবে। তেমনি আপনার যদি বারবার চাকরি ছেড়ে দেয়ার বা বদলানোর অভ্যাস থাকে তবে সে অভ্যাসটি ত্যাগ করুন। অন্যথায় চাকরি পেতে সমস্যা হবে।
৮. ক্যারিয়ার পরিবর্তনের চেষ্টা করলে
পুনরায় নতুন করে ক্যারিয়ার শুরু করছেন যারা, তাদের জন্য নতুন পরিবেশে চাকরি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। অবশ্য অনেকে ক্যারিয়ার পরিবর্তন করেও ভালো চাকরি করছেন, ভালো কাজ করছেন। একই ব্যাপার সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এজন্য বিশেষ যোগ্যতার প্রয়োজন। কারো দেখাদেখি আপনিও ক্যারিয়ার পরিবর্তন করতে চাইলেন, কিন্তু এর জন্য কী করতে, আর কী হবে না হবে তার কিছুই জানেন না, কিংবা আপনি হুজুগের বশে কাজটা করে ফেলছেন। এমনটি কখনও করবেন না। একে চাকরিক্ষেত্রে ঝুঁকি নেয়া বলে। ঝুঁকি নিতে হবে, উন্নতি করতে গেলে ঝুঁকি থাকবেই। কিন্তু সেজন্য আপনার উচিত জেনে, শুনে, বুঝে তারপর ঝুঁকিটা নেওয়া।
৯. অতিরিক্ত বেতন চাইলে
চাকরির সাক্ষাৎকারে একটি সাধারণ প্রশ্ন হলো বেতন জানতে চাওয়া। আপনি চাকরির জন্য অস্বাভাবিক বেশি বেতন চাইলে স্বভাবতই আপনি বাদ পড়ে যাবেন। কেননা এই প্রতিযোগিতার সময়ে কম বেতনে হলেও সবাই একটা চাকরি চায়। তাই কর্মসংস্থানের চেয়ে কম বেতনেই চাকরিটি করতে ইচ্ছুক এমন মানুষের সংখ্যা বেশি। তাই প্রত্যাশিত বেতন জানতে চাইলে-
- আপনি যদি অনভিজ্ঞ হন তাহলে বেতনের বিষয়ে কিছু না বলাই ভালো। বিনয়ের সাথে জানান আপনি নতুন এবং চাকরিটা চাচ্ছেন। আপনার কাছে বেতনের পরিমাণ এই মুহূর্তে তেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।
- অভিজ্ঞ হলে অভিজ্ঞতা, চাকরির অবস্থান, পদ, প্রতিষ্ঠানের বেতন দেয়ার হার তুলনা করে একটা বেতনের সীমা বলে দিন। তবে সেটা বুঝে শুনে বলুন।
১০. নিয়োগদাতার কাছে বিরক্তকর হলে
চাকরির সাক্ষাৎকারে এমন কিছু করবেন না যেন আপনি তাদের কাছে একজন বিরক্তিকর ব্যক্তি হয়ে যান। অনেকেই নিজেদের জ্ঞান জাহির করতে গিয়ে বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ বিষয়টি লক্ষ্য রাখুন।
Feature image source – Fortune.com