প্রস্তুতি
যদি আপনি একটি ভালো চাকরীর ইন্টারভিউর ফলাফল প্রত্যাশা করে থাকেন তাহলে আবশ্যই এর জন্য প্রয়োজন ভালো প্রস্তুতি। এরজন্য আপনি আপনার নিয়োগ কর্তাকে দেখাতে হবে আপনি চাকরীর জন্য যোগ্য পার্থী। তাই এখনই নিচের স্টেপ গুলো পড়ুন এবং নিজেকে একজন ভালো প্রার্থী হিসেবে তৈরি করুন
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইন্টারভিউর জন্য প্রস্তুতি শুরু করুন
বড় বড় কোম্পানী গুলো সাধারনত বিজ্ঞপ্তি দেয়ার সপ্তাহ অথবা মাসের মধ্যে তাদের ইন্টারভিউ এবং লোক নিয়োগের কার্যক্রম শুরু করে। তাই বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পরপরেই ইন্টারভিউ এর দিন পর্যন্ত আপনার উচিত হবে ঐটার জন্য নিজেকে তৈরি করা। এর জন্য আপনি নিজেকে কিছু প্রশ্ন করুন এবং নিজেই এর উত্তর দিন। যদি সরাসরি নিজ থেকে উত্তর না পান তাহলে উত্তর খুজার জন্য প্রিপায়ার্ড হোন।
কোম্পানির ব্যাপারে রিসার্চ করুন
শুধু মাত্র নিজে নিজেই ইন্টারভিউর জন্য প্রস্তুত হতে বিরত থাকুন। আপনার জন্য বিভিন্ন রিসোর্স রয়েছে যারা আপনাকে সাহায্য করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত।
প্রথমত, আপনি কি ঐ কোম্পানির ব্যাপারে রিসার্চ করেছেন? বিশেষ করে তাদের কাজ সম্পর্কে, তাদের কাজের ধারা সম্পর্কে, তারা কেমন অথবা কি ধরনের প্রার্থীকে নিয়োগ করতে চায় তার ব্যাপারে কি আপনি ধারনা রাখেন?
উত্তর গুলো খুজার জন্য আপনি ইন্টারনেট অথবা বিভিন্ন ওপেন সোর্স ঘাটাঘাটি করতে পারেন। ঐ কর্পোরেট অফিসের ফেইসবুক, লিংকদিন সহ তাদের ওয়েব পোর্টাল গুলোতে খুজ নিন।
এক্সপার্টদের পরামর্শ নিন। আপনার পরিচিত অথবা অপরিচিত অভিজ্ঞদের সাথে কথা বলুন। যারা ঐ সেক্টরে আগে কাজ করেছে অথবা করছে তাদেরকে জিজ্ঞেস করে সব কিছু জেনে নিন।
এছাড়াও আপনি আপনার বন্ধুর কাজ থেকে সাহায্য নিতে পারেন যে একই বিষয়ে প্রিপ্রেয়ার্ড হচ্ছে। নিজেদের মধ্যে আপনার আলোচনা করুন। কেমন হতে পারে? কি হতে পারে? কতটুকু আউটপুট দেয়া যেতে পারে? ইত্যাদি সহ নিজেদের রিসোর্স গুলোকে সমন্বিত করে স্টাডি করুন।
এই ধরণের প্রশ্নের জন্য ভালো ভাবে প্রস্তুতি নিবেন
- এই সংগঠনের সম্পর্কে আপনি কি জানেন?
- আপনার দুবলতা কি, এটা উদাহরণ দেন?
- আপনি কিভাবে আপনার কর্মজীবন উন্নয়নশীল দেখতে চান বা নিজেকে ৫ বছর কোথায় দেখতে চান?
- আপনি বিভাগের প্রধান হলে, আপনার অগ্রাধিকার কি হবে?
তিনটি প্রশ্ন নিয়ে ভাবুন যা আপনাকে জিজ্ঞেস করতে পারে এবং তার উত্তর লিখে ফেলুন
আগে শিওর হয়ে নিন আপনি ঐ কোম্পানী সম্পর্কে অনেক এবং প্রয়োজনীয় সকল ভেলিড তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এবং আপনি আপনার নিজের প্রতি কনফিডেন্স যে আপনি পারবেন। এখন যে কাজটা আপনাকে করতে হবে তা হলো আপনি আপনার নিজেকে তিনটি প্রশ্ন করুন যা আপনাকে ইন্টারভিউতে জিজ্ঞেস করতে পারে। এবং সেই প্রশ্ন গুলোর উত্তর লিখে ফেলুন নোটপেড অথবা অন্য কোথায়ও। বুঝতে চেষ্টা করুন আপনি আসলেই ইন্টারভিউর জন্য প্রস্তুত কি না।
নিজের সম্পর্কে ঐ সকল সাধারন প্রশ্ন গুলোর উত্তর লিখে ফেলুন যে গুলো আপনি ইন্টারভিউ কক্ষে আশা করেন
আপনি এখন ইন্টারভিউর জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। এখন আপনি কিছু সাধারন প্রশ্ন এবং উত্তর খাতায় লিখে ফেলুন যা আপনার মনে হয় ইন্টারভিউ কক্ষে আসতে পারে। ধরুন প্রশ্ন গুলো এমন হতে পারে, আপনার শক্তিমত্তা কি? আপনার দূর্বলতা কি? এই কাজটিই কেন করতে চাইছেন? আপনি কিভাবে একটি ভালো ওয়ার্কিং টিম তৈরি করবেন? ইত্যাদি ইত্যাদি।
নিশ্চিত করুন আপনি উপযুক্ত ভাবে নিজেকে সজ্জিত করেছেন
এবার আপনার ইন্টারভিউর জন্য যাবার পালা। আপনি আপনাকে এমন ভাবে সজ্জিত করুন যেন আপনাকে দেখে প্রফেশনাল মনে হয়। মনে হয় আপনি একজন স্মার্ট এমপ্লয়ী হিসেবে যেকোনো কাস্টমারকে আকর্ষন করতে পারবেন। আপনার ড্রেস আপের মাঝে যেন উদ্দমতা থাকে।
নিজেকে প্রফেশনাল, আত্মবিশ্বাসী এবং মুখে হাসি ধরে রেখে প্রকাশ করুন
প্রত্যেকটা কোম্পানি চায় তাদের আন্ডারে কাজ করা মানুষ গুলো প্রফেশনাল এবং আত্মবিশ্বাসী হোক। তাই আপনার উচিত ইন্টারভিউ কক্ষে প্রবেশের সাথে সাথে নিজেকে স্মার্টলি প্রকাশ করা। নিজের মধ্যে একটা প্রফেশনাল ভাব ফুটিয়ে তুলা। আপনি যে আপনার কাজ সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী তা যেন আপনাকে দেখলেই বুঝা যায়। তাই আপনি ইন্টারভিউ কক্ষে ঢুকার সাথে সাথে নিজের নার্ভাস দিক গুলোকে ভুলে যান। আঙ্গুল ফুটানো, এদিকে উদিক চাওয়া, এমন আচরণ করা যা দেখলে বুঝা যায় আপনি নার্ভাস ফিল করছেন, সে গুলো বয়কট করুন। চেহারায় সব সময় একটুকরো হাসি ধরে রাখুন। যেন আপনি নিশ্চিত হয়েই এসেছেন চাকরিটা আপনি পাওয়ার যোগ্য।
নিজেকে তুলে ধরুন
প্রথমত, আপনার নিজের সম্পর্কে বলুন :
- বর্তমান থেকে ধীরে ধীরে অতীতের দিকে যাবে মানে এখন যা করেছেন সেটা সবার আগে বলবেন, তারপর আর আগে কি করেছেন সেটা বলবেন।
- প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতাগুলো, জ্ঞান বা শিক্ষা গুলো হাইলাইট করবেন।
- প্রাসঙ্গিক নির্দিষ্ট ডিগ্রী বা সার্টিফিকেট বা ট্রেনিং থাকলে সেগুলো হাইলাইট করবেন।
যে কোম্পানিতে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন সেখানে আপনি কতটুকু কাজ করতে পারবেন তার ধারনা আপনার কথার মধ্যে তুলে ধরুন। আপনার আগের কাজ করার পজিটিভ দিক গুলো বলুন। কোন সেক্টরটাতে আপনার কতটুকু দক্ষতা তা জানান। নিজের কাজ নিয়ে ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা গুলো প্রকাশ করুন। তবে লক্ষ রাখুন যেন আপনার নিয়োগদাতা আপনার কথা গুলোতে বিরক্ত হচ্ছে কিনা। তার চেহারার ভাব দেখে নিজের সম্পর্কে বলা কথা গুলো ছোট অথবা দীর্ঘ করুন।
এই কাজের ব্যাপারে আপনার আগ্রহ আছে সেটা প্রকাশ করুন
এইগুলো ভালো ভাবে মেনে চলুন
- সাবধানে প্রশ্ন শুনুন, কিছু না বুঝলে ক্লারিফিকেশন জানতে চাইবেন
- বাস্তব উদাহরণ এবং প্রমাণ সহ উত্তর দিবেন
- ইতিবাচক উত্তর গুলো দিবেন
- উত্তরগুলি নির্দিষ্ট এবং সংক্ষিপ্ত রাখুন
- উত্তর দেওয়ার জন্য সময় নিন – বিরতি দিন
- সাক্ষাত্কারের শরীরের ভাষাতে সতর্ক থাকুন
- নিজেকে উদ্যমি দেখান
নিজেকে কৌতূহলী এবং জিজ্ঞাসু হিসেবে প্রকাশ করুন
আপনি তাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সাথে সাথে নিজে জানতে চেষ্টা করুন। জিজ্ঞেস করুন তাদের কোম্পানীর ভিষন কি? কিভাবে তাদের কাজ নিয়ে তারা আগাতে চায়? তারা হয়তো তাদের নিজের কোম্পানী সম্পর্কে বলবে। আপনি যে একজন ভালো শ্রোতা তা প্রমানের জন্য আপনি তাদের ঐ কথা গুলোর পরিপেক্ষিতে প্রশ্ন করুন। এতে তারা বুঝতে পারবে আপনি একজন জ্ঞানপিপাসু এবং কৌতূহলী। আর প্রত্যেকটা নিয়োগদাতাই চায় তাদের কোম্পানীতে একজন জ্ঞানপিপাসু এমপ্লয়ি নিয়োগ পাক।
শালীন আচরণ করুন
আপনার প্রশ্নকর্তা যখন আপনাকে প্রশ্ন করে তখন মনযোগ দিয়ে শুনুন। তারপর উত্তর দিন। আপনার সিভি পড়ার সময় কোনো উচ্চবাচ্য বাক্য ব্যবহার না করাই আপনাকে চাকরীর পাওয়ার অনেকটা ধাপ এগিয়ে দিতে পারে। এমন কিছু বলবেন না যাতে মনে হয় আপনি ঐ কোম্পানীর কোনো একটা কাজের বিরোদ্ধাচারন করছেন। আপনার সিভি জমা দেয়ার আগে সব সময় যেটা মাথায় রাখবেন, সেটা হচ্চে সিভিতে যেন কোনো ভুল এড্রেস না থাকে। যদি ইন্টারভিউ কক্ষে গিয়ে মনে হয় আপনি কোথাও ভুল করেছেন। তাহলে সংশোধনের জন্য বিনয়য়ের সাথে নিয়োগকর্তা বা প্রশ্নকর্তাকে ব্যাপারটা জানান।
ইন্টারভিউ শেষে অবশ্যই প্রশ্নকর্তাকে ধন্যবাদ দিন। সাথে একটু মুচকি হাসি। যাতে আপনার ভদ্রতা এবং সরলতা প্রকাশ পায়। তাদেরকে বুঝাতে চেষ্টা করুন, আপনি আপনার সিনিয়র এমপ্লয়িদের সম্মান করতে জানেন।
আপনি নিজের উপর এবং আপনার স্বপ্নের উপর আস্থা রাখুন, অটল থাকুন
অধিকাংশ চাকরি প্রার্থী মানুষ গুলো ইন্টারভিউর ফলাফল দেয়ার আগ পর্যন্ত নানান রকম দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকেন। চাকরি হবে কি হবে না তা ভাবতে ভাবতে নিজেরাই অসুস্থ হয়ে পরে। এমনকি ইন্টারভিউর ফলাফলে যদি আশানুরূপ কিছু না আসে নিজের উপর এবং নিজের স্বপ্নের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে। কিন্তু তা না করে যদি নিজের উপর অটল থাকা যায়। বারবার ইন্টারভিউ দেয়ার জন্য নিজেকে তৈরি রাখা যায় তাহলে অবশ্যই আপনার আশানুরূপ চাকরি আপনার দরজায় একদিন করা নাড়বে।
আপনার ফোনটিকে বন্ধ রাখুন
কক্ষে প্রবেশের আগে আপনি নিশ্চিত হয়ে নিন আপনার ব্যাক্তিগত ফোনটির পাওয়ার অফ আছে।
আচ্ছা আবার আরেকবার একটু চেক করে নেওয়া যাক নিচের ছবির মাধ্যমে –