বিশিষ্ট ডাটা সায়েন্টিস্ট ও গবেষক আন্তর্জাতিক পেশাজীবী ডক্টর ফয়সাল জামান । বর্তমানে তিনি Accenture (the world’s largest consulting firm as measured by revenues. Reference : https://en.wikipedia.org/wiki/Accenture) এর হেড কোয়াটার ডাবলিনে কর্মরত আছেন। ইয়ুথ কার্নিভালের পক্ষ থেকে আমরা এবার মুখোমুখি হয়েছি ডক্টর ফয়সাল জামানের সাথে । সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন ইয়ুথ কার্নিভালের মূল উদ্যোক্তা এরিকসনের সিনিয়র সলিউশন ম্যানেজার শাহিনূর আলম জনি।
আপনার নিজের সম্পর্কে একটু বলুন?
আমি বর্তমানে Accenture Ireland এর Centre For Innovation(CFI) এ Analytics Consultant পদে কর্মরত আছি, এর পূর্বে Adaptive Mobile Security Ltd এ Data Scientist হিসেবে কর্মরত ছিলাম। আমি নিজেকে Data Scientist হিসেবেই পরিচয় দিতে স্বাছন্দ্য বোধ করি মূলত: এই পদে কাজ করবার অভিজ্ঞতা এবং পারদর্শিতা এর জন্যে ।
CFI তে আমি Public Safety বিভাগে কাজ করছি। এখানে বলে রাখা ভালো CFI প্রতিটি দলে একজন subject matter expert এর অধীনে ২জন analytics কন্সাল্ট্যান্ট কাজ করেন যারা matter expert কে তার use-case সম্পাদনে সাহায্য করেন। আমার মূল কাজ হচ্ছে Security & Policing এর use-case গুলোতে technical advice দেয়া।
Higher স্টাডির অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু বলুন? RU /জাপান / DCU /UDC স্টুডেন্ট লাইফ নিয়ে কিছু বলুন?
উচ্চশিক্ষার প্রথম ধাপ স্নাতক এবং মাস্টার্স শেষ করেছি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৫ এবং ২০০৬ সালে । উচ্চ মাধ্যমিকে পরিসংখ্যান এর প্রতি জন্মানো ভালো লাগা থেকেই স্নাতক এবং মাস্টার্স করেছি পরিসংখ্যানের উপর। আমার শিক্ষা জীবনের মোড় ঘুরে মূলত: নাসের স্যার (প্রফেসর মোহাম্মদ নাসের, ২৮ জানুয়ারি ২০১৬ এ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোকগমন করেছেন) এর সাথে পরিচয়। পরিসংখ্যান বিষয়টি যে উপভোগ্য হতে পারে সেটা বুঝতে শিখেছি স্যার এর কাছ থেকে। স্যার এর কাছে আমি (এবং আরো অনেকেই) যে কারণে কৃতজ্ঞ ছাত্রদের প্রতি তাঁর অকুন্ঠ ভালবাসা এবং দায়িত্ববোধ। তাঁর ঠিক করে দেয়া বিষয়ের উপর মাস্টার্স করবার কারণেই আমি জাপান থেকে পি.এইচ.ডি করার সুযোগ পাই।
জাপান সরকারের বৃত্তি (MEXT )নিয়ে ২০০৭ সালে জাপান গমন করি। Kyushu Institute of Technology (KIT) থেকে Information Science বিষয়ে পি.এইচ.ডি সম্পন্ন করি থেকে ২০১১ এর মার্চে। PhD শেষ করবার আগেই জাপান সরকারের অনুদানে আমার PostDoc ঠিক হয়ে গিয়েছিলো একই ল্যাব এ। ওখানে ছিলাম ২০১২ এর আগস্ট পর্যন্ত।
KIT এর ক্যাম্পাস জাপানের সর্ব দক্ষিনে অবস্থিত Kyushu দ্বীপের Iizuka, KitaKyushu এবং Fukuoka শহরে রয়েছে । আমরা ছিলাম Iizuka ক্যাম্পাস এ; Iizuka দুটি পর্বতের উপত্যকায় গড়ে উঠেছে এবং মূলত শিক্ষা কেন্দ্রিক (কিছুটা রাজশাহীর মত) ছোট শহর। ওখানে সময় গুলো বেশ ভালোই কেটেছে, জাপানিরা অসম্ভব পরিশ্রমী জাতি হলেও বিদেশিদের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই সেকেলে, এই কারণে জাপানে পড়তে যাওয়া বিদেশীদের ভেতর বেশ সুন্দর হৃদ্যতা তৈরী হয়। আমার স্ত্রীও ওখান থেকে তার PhD শেষ করেছে ২০১৩ সালে।
২০১২ এর সেপ্টেম্বর থেকে DCU গবেষক পদে কাজ করা শুরু করি; এখানে আমার কাজ ছিল মূলত Automated Telecommunication Network Monitoring, Prediction & Recommendation সিস্টেম তৈরীতে Machine Learning, Statistics এবং Data Mining বিষয়ে সহায়তা করা। এই প্রজেক্টে আমরা Ericsson ছিল আমাদের Industrial partner অর্থাৎ মূলত Ericsson এর জন্যই আমরা এই সিস্টেমটি তৈরী করেছিলাম, এই প্রজেক্টে আমার সর্বমোট ৫টি গবেষণা পত্র বেশ নামকরা Journal (IEEE Communications Magazine) এবং Conference (IEEE NOMS, IFIP IMS) এ স্বীকৃত হয়েছে। DCU থেকে UCD এ যোগদান করি স্বল্প সময়ের জন্য ২০১৪ সালে এবং এরপর যোগ দেই Adaptive MObile Security এ Data Scientist হিসেবে।
আপনার মতে আপনে কতটুকু সফল?
নাসের স্যার এর সাথে কাজ করবার সময় থেকেই আমার প্রবল ইচ্ছা ছিল বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষক হব, এই কারণেই পি.এইচ.ডি করা, সেই ধারাতেই আমি তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক পদে কাজ করেছি। কিন্তু ২০১৩ সালে যখন সেই সুযোগটি অবশেষে আসলো সময় এবং পেশা বদলের এর সাথে আমার লক্ষ্যও তখন পরিবর্তিত, লক্ষ্য তখন পৃথিবীর প্রথম সারির IT কোম্পানিতে যোগদান করবার। ২০১৬ সালে সেই লক্ষতিও পূরণ হয়েছে, আমি Accenture এ যোগ দান করতে পেরেছি। এই দিক থেকে আমি বলব যে আমি সফল, কিন্তু বয়সের দিক থেকে ভাবলে আমি বলব আমার বয়সে পেশাগত পর্যায়ে আরো এক ধাপ উপরে থাকলে আরো।
ফিউচার প্লান কি ?
আমার দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা হচ্ছে আমার পেশাগত দক্ষতা দিয়ে দেহসের জন্য কিচু করা এবং স্বল্প-মেয়াদি পরিকল্পনা হচ্ছে নিজের যোগ্যতা আরও বৃদ্ধি করা পেশাক্ষেত্রে উত্তরণের জন্যে।
BIG DATA নিয়ে কিছু বলুন?
প্রথমেই বলে রাখা ভালো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই Big Data ভুল অর্থে বেবহার করা হয়। এর দ্বারা আমরা যারা Big Data Analytics এ কাজ করি তারা বুঝি একটি স্বয়ংসম্পূর্ন সিস্টেম যা প্রথম ধাপে “Big Data” (সেটা হতে পারে Batch অথবা Stream) Process করতে পারে এবং দ্বিতীয় ধাপে সেই Distributed Data Analysis করতে পারে। Analytical Output এই পর্যায়ে দুভাবে ব্যবহৃত হতে পারে : ১. Model Build ২. Visualization. সুতরাং আমরা যদি শুধুমাত্র ডাটা এর volume বড় হলেই Big Data বলি সেক্ষত্রে শুধুমাত্র ব্যবহারিক দিকটি তুলে ধরা হয় যা কিনা Marketing এর কাজ; আমাদের উচিত হবে এর প্রয়োগিক দিক (অর্থাৎ Big Data দিয়ে আমরা কিভাবে কি করতে পারি) গুলো নিয়ে বেশি আলোচনা করা।
কিছু motivational গল্প বলুন? সাথে কিছু মজার গল্প?
আমি ২০০৬ এর May মাসে MSc থিসিস জমা দেই এবং June মাস শেষ হবার আগেই জাপান থেকে PhD করবার offer পাই; এর জন্য আমাকে ৫৪ জন প্রফেসর এর কাছে লিখতে হয়েছিল। ২০০৬ এর আগস্ট থেকে আমি আমার প্রথম চাকরি শুরু করি। সেই সময় আমি দিনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করতাম আমার থিসিস সম্পর্কিত গবেষণা পত্র পড়ালেখা করে এবং চাকরি খুঁজে। এখানে আমি যেটা বলতে চাই সেটা হচ্ছে জীবনে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে অধ্যাবসায় এর কোনো বিকল্প নেই।
বিদেশে থাকতে কেমন লাগে আর বিদেশে থেকে দেশের জন্য কাজ করতে কেমন লাগে?
সত্যি কথা বলতে আমি খুবই ঘরকুণো মানুষ এবং এখানে প্রতিটি মুহূর্তে দেশে কাটানো আমার সময় গুলো মনে করি। এবং আমি মনে করি বিদেশে থেকে দেশের জন্য কোনো কিছু করা পারিপার্শ্বিক ভাবে সহজ।
দেশ ও দেশ মানুষ্ কে নিয়ে কেমন সপ্ন দেখেন?
আমাদের দেশ এর মানুষ এর সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে তাদের হৃদয় , মানসিকতা যত ভালো হবে মানুষের শেখার আগ্রহ তত বেশি থাকবে। একারণে আমি মনে করি এই দেশ একসময় এগিয়ে যাবেই।
ইউথদের জন্য কিছু বলুন?
অধ্যাবসায় এর কোনো বিকল্প নেই। জীবেন ব্যর্থতা যদি আসে তাহলে বুঝতে হবে সফলতা অল্প কিছুদূর পরেই অর্থাৎ হতাশ হয় চলবেনা কখনোই।