যিনি ডেটাবেজ ও এর সফটওয়্যার তৈরি এবং ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করেন, তিনিই হচ্ছেন ডেটাবেজ ডেভেলপার। ডেটাবেজ ডেভেলপার বা ডেটাবেজ প্রোগ্রামাররা মূলত একটি কোম্পানির ওয়েবসাইট ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট টিমে কাজ করেন। যেকোনো সফটওয়্যার বা ওয়েবসাইটের ব্যাক এন্ডে তথ্য ব্যবস্থাপনা ও সম্পাদনা করার জন্যে ডেটাবেজ ডেভেলপারের প্রয়োজন হয়।
চলুন দেখা যাক, কীভাবে ডেটাবেজ ডেভেলপার হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেন।
একজন ডেটাবেজ ডেভেলপারের কাজ
একজন ডেটাবেজ ডেভেলপার মূলত নতুন ডেটাবেজ তৈরি করা থেকে শুরু করে পুরোনো ডেটাবেজ সম্পাদনা করা, ডেটাবেজ কোড লিখা, প্রোগ্রাম থেকে ডেটাবেজ এক্সট্রাক্ট করা, কোনো অ্যাপ্লিকেশনের ডেটাবেজ সম্পাদনা করে থাকেন। Source: hunterbusinessschool.edu
এছাড়া নির্দিষ্ট কোম্পানির জন্য বিজনেস ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট তৈরি করা ও সেই রিপোর্টের সাথে ডেটাবেজ সংযুক্ত করা, ডেটাবেজের জন্যে যেসকল প্রযুক্তি ও সফটওয়্যার ব্যবহৃত হয় সেগুলো দেখাশোনা করা, যেকোনো ডেটাবেজ প্রজেক্ট লিড করা, নতুন ও পুরোনো ডেটাবেজের জন্যে ডকুমেন্টেশন তৈরি করাসহ ডেটাবেজের সাথে সম্পৃক্ত সকল ধরনের কাজ তিনি করে থাকেন।
ডেটাবেজ ডেভেলপারকে যেসকল প্রোগ্রামিং ভাষা ও ডিবিএমএস ব্যবহার করতে হয়
একজন ডেটাবেজ ডেভেলপার প্রধানত এসকিউএল বা স্ট্রাকচার্ড কুয়েরি ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করে থাকেন। মূলত কোনো ডেটাবেজ থেকে ডেটা সংগ্রহ করার জন্যে এসকিউএল ব্যবহৃত হলেও এর সাহায্যে ডেটা ইনপুট, ডেটা আপডেট, ডেটা ডিলিট, ডেটা এক্সট্রাক্ট, টেবিল সেটআপসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করা যায়।
যদিও বেশিরভাগ কোম্পানিতেই ডেটাবেজ ডেভেলপাররা এসকিউএল ব্যবহার করে থাকেন, ভেন্ডরভেদে ডেটাবেজের প্রোগ্রামিং ভাষাতে পার্থক্য দেখা যায়। অনেক বিক্রেতাদের নিজস্ব পণ্যের জন্য নিজস্ব ডিবিএমএস (ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) রয়েছে, যেগুলো শুধুমাত্র তাদের অ্যাপ্লিকেশন ও ওয়েবসাইটেই ব্যবহৃত হয়।
এসব ডিবিএমএসের মধ্যে যেগুলো সবচেয়ে বেশি প্রচলিত, সেগুলো হচ্ছে, ওরাকল ডেটাবেজ, মাইক্রোসফট এসকিউএল সার্ভার, মাইএসকিউএল, আইবিএম ডিবি ২, পোস্টগ্রি এসকিউএল, এসকিউএল লাইট, মাইক্রোসফট এক্সেস, টেরাডেটা, মারিয়া ডিবি ইত্যাদি।
Source: marketstreettalent.com
কোন ডিবিএমএস শিখবেন এবং কীভাবে বাছাই করবেন
প্রশ্নটা আসলে একটু কঠিনই। কারণ, এতগুলো প্রচলিত ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম থেকে একটি ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বাছাই করাটা বেশ কঠিন একটি। আপনি নিশ্চয়ই সবগুলো ডিবিএমএস শিখতে চাইবেন না। কারণ, এতগুলো ডিবিএমএস শেখা অসম্ভব না হলেও, সময় সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। সেক্ষেত্রে আপনাকে মার্কেট অ্যানালাইসিস করতে হবে। অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করে একটি ডিবিএমএস বাছাই করে সেটাই শিখতে হবে।
আপনি যদি বড় কোনো কোম্পানিতে ডেটাবেজ ডেভেলপার বা প্রোগ্রামার হিসেবে চাকরি করতে চান, তাহলে আপনার ওরাকল অথবা মাইক্রসোফট এসকিউএল সার্ভার শেখা উচিত। খুব কম কোম্পানিই আছে, যারা ডেটাবেজে কাজ করার জন্যে এই দুটো ডিবিএমএস ব্যবহার করে না। যেকোনো দেশের সবচেয়ে বড় বড় কোম্পানি কিংবা সরকারি প্রতিষ্ঠানেও ওরাকল অথবা মাইক্রোসফট এসকিউএল সার্ভার ব্যবহৃত হয়।
আর আপনি যদি ছোটোখাটো কোম্পানিতে ডেটাবেজ ডেভেলপার বা প্রোগ্রামার হিসেবে চাকরি করতে চান, তাহলে আপনার মাইএসকিউএল অথবা পোস্টগ্রি এসকিউএল শেখা উচিত। সাধারণত ছোটোখাটো কোম্পানিগুলো ডেটাবেজ ডেভেলপার পরিবর্তন করতে চায় না, কারণ এটি অনেক ব্যয়বহুল একটি কাজ। তাই শেখার সময় বুঝেশুনে শেখার চেষ্টা করুন।
যেকোনো কোম্পানিই একবার কোনো ডিবিএমএসের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লে তা আর বদলাতে চায় না। তাই ডিবিএমএস বাছাই করার সময় ভালোমতো গবেষণা করুন। আবার আপনি যদি বেসিক হিসেবে মাইএসকিউএল শিখে থাকেন, তাহলে অন্য যেকোনো ডিবিএমএস শেখাটাও আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে। কারণ মাইএসকিউএল ও অন্যান্য ডিবিএমএসের গঠন কাঠামো প্রায় কাছাকাছিই।
একজন ডেটাবেজ ডেভেলপার হতে চাইলে যেসব দক্ষতার প্রয়োজন পড়বে
একজন ডেটাবেজ ডেভেলপার হতে চাইলে আপনার যেসকল দক্ষতার প্রয়োজন পড়বে,
- যেকোনো একটি ডিবিএমএস সম্পর্কে গভীর জ্ঞান ও কমপক্ষে ২ থেকে ৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
- বিজনেস ডোমেইন, ডেটা মডেল ও ডেটাবেজ ডিজাইন সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে।
- প্রতিটি ডিবিএমএসের ট্র্যান্সেকশনাল স্ট্রাকচার সম্পর্কে যথেষ্ট ধারনা থাকতে হবে।
- জটিল সমস্যা সমাধান করার দক্ষতা থাকতে হবে।
- ডেটা ওয়্যারহাউজিং ও ইটিএল প্রসেস সম্পর্কে জানতে হবে।
- একইসাথে একের অধিক ডিবিএমএস সম্পর্কে জানলে চাকরি পাওয়া সহজ হয়ে যাবে।
- উইন্ডোজ, লিনাক্স ও ইউনিক্স অপারেটিং সিস্টেমের স্ক্রিপ্টিং ও অ্যাডমিন্সিট্রেশন ম্যানেজমেন্টের দক্ষতা থাকা লাগবে।
ডেটাবেজ ডেভেলপারকে যেসব অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার শিখতে হবে
সাধারণত অন্যান্য প্রোগ্রামারের মতো ডেটাবেজ ডেভেলপারকেও আইডিই (ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট এনভায়রনমেন্ট) ব্যবহার করতে হবে। প্রোগ্রামিং ও ডিবিএমএসের বেশিরভাগ কাজই যেকোনো আইডিই দিয়েই করা যাবে।
একজন ডেটাবেজ ডেভেলপারকে আরো যেসকল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা শিখতে হবে, সেগুলো হচ্ছে,
-
অ্যান আইডিই
এটি এসকিউএল ডেভেলপারদের জন্য ওরাকলের তৈরী করা একটি এসকিউএল সার্ভার ম্যানেজমেন্ট স্টুডিও।
-
মাইক্রসফট ভিজিও
এটি মাইক্রোসফট এসকিউএল ডেভেলপারদের জন্য মাইক্রোসফটের তৈরি একটি ডিজাইন ও মডেলার অ্যাপ্লিকেশন।
-
মাইএসকিউএল ওয়ার্কবেঞ্চ
এটি ওরাকলের তৈরি একটি ডিজাইন ও মডেলার অ্যাপ্লিকেশন।
-
উইন্ডোজের জন্য কমান্ড প্রম্পট ও পাওয়ার শেল, লিনাক্সের জন্য শেল স্ক্রিপ্ট
-
নোটপ্যাড প্লাস প্লাস ও সাবলাইম টেক্সট এডিটর
-
মাইক্রোসফট এক্সেল ও এক্সেস
একজন ডেটাবেজ ডেভেলপারের বেতন যেমন হয়ে থাকে
দেশ, অঞ্চল, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাভেদে একজন ডেটাবেজ ডেভেলপারের বেতন কাঠামোতে পরিবর্তন আসে। বাংলাদেশে এন্ট্রি লেভেলের একজন ডেটাবেজ ডেভেলপারের বেতন ৪০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বাড়ার সাথে সাথে এই বেতন ৭০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকায় উন্নীত হতে পারে।
একজন ডেটাবেজ ডেভেলপার হতে প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা
ডেটাবেজ ডেভেলপার হতে হলে যেকোনো একটি ইউনিভার্সিটি কিংবা প্রতিষ্ঠান থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অথবা কম্পিউটার টেকনোলজির উপর ডিগ্রি নেয়ার প্রয়োজন পড়বে। যদিও বর্তমানে বেশিরভাগ কোম্পানিতেই ডিগ্রি দেখে চাকরি দেয়া হচ্ছে না। তবে ডিগ্রির বদলে কিছু বেসরকারি সার্টিকেশন কোর্সের উপর অনেক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
এসব সার্টিফিকেশন কোর্সের মধ্যে ওরাকল ও মাইক্রোসফটের কিছু কোর্স, ওরাকল ডেটাবেজ সার্টিফাইড এসকিউএল অ্যাসোসিয়েট, ওরাকল ডেটাবেজ সার্টিফাইড পিএল/এসকিউএল অ্যাসোসিয়েট, এমটিএ ডেভেলপার এবং এমসিএসএ এসকিউএল ২০১৬ ডেটাবেজ ডেভেলপমেন্ট কোর্স অন্যতম। সাধারণত যেকোনো একটি কিংবা একাধিক সার্টিফিকেশন কোর্স করলে বেশিরভাগ কোম্পানিতেই শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াই চাকরি পাওয়া সম্ভব।
Featured Image: doblerconsulting.com